যে-কোনো তিন ধরনের মালভূমি ব্যাখ্যা কর ।

Submitted by avimanyu pramanik on Sun, 12/26/2021 - 10:31

প্রশ্ন :- যে-কোনো তিন ধরনের মালভূমি ব্যাখ্যা কর ।

উত্তর :- 

১) ভূমিকম্পের ফলে সৃষ্টি হওয়া মালভূমি, যেমন- পর্বতবেষ্টিত মালভূমি,

২) ভূপৃষ্ঠের ক্ষয়ের ফলে সৃষ্টি হওয়া মালভূমি, যেমন- ব্যবচ্ছিন্ন মালভূমি,

৩) ভূপৃষ্ঠে সঞ্চয়ের ফলে গঠিত মালভূমি, যেমন- লাভাগঠিত মালভূমি ।

১) পর্বত বেষ্টিত মালভূমি (Intermontane Plateau) : ভূমিকম্পের ফলে ভঙ্গিল পর্বতশ্রেণি সৃষ্টি হওয়ার সময় দুটি সমান্তরাল পর্বতশ্রেণির মধ্যবর্তী অপেক্ষাকৃত নীচু স্থানগুলি কিছুটা উঁচু ও খাড়া ঢালযুক্ত হয়ে মালভূমির আকৃতি নেয় । চারি দিকে পর্বতবেষ্টিত হওয়ায় এই সব মালভূমিকে পর্বতবেষ্টিত মালভূমি বলে ।

উদাহরণ : মধ্যএশিয়ার পামির মালভূমি, তিব্বত মালভূমি, ইরানের মালভূমি, আনাতোলিয়ার মালভূমি, বলিভিয়ার মালভূমি প্রভৃতি মালভূমিগুলি পর্বতবেষ্টিত মালভূমির উদাহরণ ।

২) ব্যবচ্ছিন্ন মালভূমি [Dissected Plateau] : নদীপ্রবাহ, বায়ুপ্রবাহ, হিমবাহ, বৃষ্টির জল প্রভৃতি প্রাকৃতিক শক্তির দ্বারা কোনো প্রাচীন ও বিস্তীর্ণ মালভূমি ক্রমশ ক্ষয়প্রাপ্ত হলে, নরম শিলায় গঠিত অংশ বেশি ক্ষয়প্রাপ্ত হয় এবং কঠিন শিলায় গঠিত অংশ কম ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে উঁচু হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে । পরবর্তী কালে নীচু অংশ দিয়ে নদী প্রবাহিত হয়ে উঁচু অংশগুলোকে ছোটো ছোটো অংশে বিভক্ত করে বা বিচ্ছিন্ন করে, তাই একে ব্যবচ্ছিন্ন মালভূমি বলে ।

উদাহরণ : ছোটনাগপুরের মালভূমি

৩) লাভাগঠিত মালভূমি [Lava Plateau] : ভূবিজ্ঞানীদের মতে, আজ থেকে প্রায় ১৩-১৪ কোটি বছর আগে ভূগর্ভের গুরুমন্ডল বা ম্যান্টল অঞ্চল থেকে অতি উত্তপ্ত তরল লাভা স্রোত বহু ফাটলের মাধ্যমে বাইরে বেরিয়ে এসে কোনো রকম বিস্ফোরণ না ঘটিয়ে ভারতের দাক্ষিণাত্য মালভূমির উত্তর-পশ্চিম ভাগের প্রায় ৫ লক্ষ কিলোমিটার অঞ্চলকে লাভায় ঢেকে ফেলে ছিল, কালক্রমে যা জমাট বেঁধে দাক্ষিণাত্য মালভূমি সৃষ্টি করেছে । মধ্যপ্রদেশ ও কাথিয়াওয়াড়ের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে এই রকম লাভা গঠিত মালভূমি দেখা যায় ।

লাভা মালভূমিতে চ্যাপ্টা মাথা যুক্ত পাহাড় সৃষ্টি হয় । কারণ,

আগ্নেয়গিরির প্রবল অগ্নুৎপাত অথবা বিস্ফোরণ না ঘটিয়ে ভূপৃষ্ঠের একাধিক দূর্বল অংশ বা ফাটলের মধ্য দিয়ে ভূগর্ভের গুরুমন্ডল বা ম্যান্টল স্তর থেকে ব্যাসল্ট জাতীয় উত্তপ্ত তরল শিলা স্রোত বা ম্যাগমা বেরিয়ে এসে লাভা রূপে সেই ভূখন্ডে জমা হতে থাকে। শক্ত ব্যাসল্ট শিলায় গঠিত এই লাভা শীতল ও কঠিন হয়ে দাক্ষিণাত্যের উত্তর-পশ্চিম অংশে লাভা মালভূমির সৃষ্টি করেছে । ব্যাসল্ট জাতীয় কঠিন আগ্নেয় শিলায় গঠিত হওয়ায় বিভিন্ন প্রাকৃতিক শক্তির প্রভাবে কোটি কোটি বছর ধরে ক্ষয়প্রাপ্ত হওয়া সত্বেও লাভা মালভূমি অঞ্চলের পাহাড়গুলি পুরোপুরি ক্ষয়ে না গেলেও ক্ষয়ের ফলে এইসব পাহাড়ের শীর্ষদেশ চ্যাপ্টা হয়ে গিয়েছে ।

তির্যক মালভূমি কাকে বলে ? উদাহরণ দাও ।

উত্তর:  প্রবল ভূমিকম্পে বিস্তীর্ণ ভূখন্ড একদিকে কাত হয়ে বা হেলে গিয়ে যে মালভূমির সৃষ্টি হয়, তাকে তির্যক মালভূমি বলে । যেমন, দাক্ষিণাত্য মালভূমিটি পশ্চিম দিক থেকে পূর্বদিকে কাত হয়ে আছে ।

উদাহরণ:-  ভারতের দাক্ষিণাত্য মালভূমি, মেঘালয় মালভূমি, ইউরোপে স্পেনের মেসেটা মালভূমি, দক্ষিন আমেরিকার ব্রাজিল মালভূমি প্রভৃতি হল তির্যক মালভূমির উদাহরণ ।

*****

 

Comments

Related Items

বায়ুমণ্ডল কী ? গঠন বিন্যাসের তারতম্য অনুসারে বায়ুমণ্ডলের শ্রেণিবিন্যাস কর ।

প্রশ্ন :- বায়ুমণ্ডল কী ? গঠন বিন্যাসের তারতম্য অনুসারে বায়ুমণ্ডলের শ্রেণিবিন্যাস কর ।

অবঘর্ষ (Abrasion) কী ?

প্রশ্ন : অবঘর্ষ (Abrasion) কী ?

অবঘর্ষ হল এক রকমের ক্ষয়সাধনকারী প্রক্রিয়া । এই ক্ষয়সাধনকারী প্রক্রিয়া (ক) নদী,  (খ) হিমবাহ এবং (গ) বায়ুর ক্ষয়কাজের দ্বারা হতে পারে ।

স্বাভাবিক বাঁধ কাকে বলা হয় ?

প্রশ্ন : স্বাভাবিক বাঁধ কাকে বলা হয় ?

থর মরুভূমি অঞ্চলে বায়ুর ক্ষয় কাজ সবচেয়ে বেশি হয় কেন ?

প্রশ্ন : থর মরুভূমি অঞ্চলে বায়ুর ক্ষয় কাজ সবচেয়ে বেশি হয় কেন ?

প্রধানত মরুভূমি অঞ্চলেই বায়ুর ক্ষয়কাজ সবচেয়ে বেশি হয় । এর কারণ হল—

নদী উপত্যকার সঙ্গে হিমবাহ উপত্যকার পার্থক্য লেখ এবং নদী উপত্যকা ও হিমবাহ উপত্যকার আকৃতির পার্থক্যের কারণ কী ?

প্রশ্ন :- নদী উপত্যকার সঙ্গে হিমবাহ উপত্যকার পার্থক্য লেখ এবং নদী উপত্যকা ও হিমবাহ উপত্যকার আকৃতির পার্থক্যের কারণ কী ?

নদী উপত্যকা ও হিমবাহ উপত্যকার পার্থক্য —