বায়ুর চাপ ও চাপের তারতম্যের কারণ

Submitted by avimanyu pramanik on Sun, 08/12/2012 - 19:24

বায়ুর চাপ ও চাপের তারতম্যের কারণ (Air Pressure and Major factors influencing it):- পৃথিবীর যাবতীয় পদার্থের মত বায়ুরও ওজন আছে । ফলে বায়ুও চাপ দেয় । ভুপৃষ্ঠে প্রতি এক বর্গ সেন্টিমিটারে বায়ুর চাপ এক কিলোগ্রামের সমান । বায়ু চারদিক থেকে চাপ দেয় । তাই সাধারণভাবে বায়ুর চাপ অনুভূত হয় না । চাপমান যন্ত্র বা ব্যারোমিটারের পারদ-স্তম্ভের উচ্চতা থেকে বায়ুর চাপ মাপা হয় । সমুদ্রপৃষ্ঠে বায়ুর স্বাভাবিক চাপ ২৯.৯২ ইঞ্চি বা ৭৬০ মিলিমিটার পারদ-স্থম্ভের সমান । বেশির ভাগ দেশে ইঞ্চির বদলে মিলিবার-এ (Milibar) বায়ুর চাপ প্রকাশ করা হয় । ৭৬০ মিলিমিটার বা ২৯.৯২ ইঞ্চি ১০১৩ মিলিবারের সমান । পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন রকমের বায়ুর চাপ দেখা যায় । নিম্নলিখিত কারণগুলির জন্য বায়ুমণ্ডলের চাপের তারতম্য হয়, যেমন:- (i) বায়ুর উষ্ণতা, (ii) বায়ুতে জলীয়বাষ্পের পরিমাণ, (iii) ভূপৃষ্ঠের উচ্চতা,  (iv) পৃথিবীর আবর্তন,  (v) বায়ুস্তরের উচ্চতা ।

(i) বায়ুর উষ্ণতা:- বায়ুর উষ্ণতার জন্য বায়ুর চাপের তারতম্য ঘটে ।  বায়ু উত্তপ্ত হলে বায়ু আয়তনে বাড়ে এবং বায়ুর ঘনত্ব কমে যায় । ফলে বায়ু হালকা হয়ে যায় । হালকা বায়ুর চাপও কম হয় । অতএব, বায়ুতে যখন তাপ বেশি হয় তখন বায়ুর চাপ কম হয় । একইভাবে বায়ুর উষ্ণতা হ্রাস পেলে বায়ূর ঘনত্ব বেড়ে যায় বলে বায়ুর চাপও বৃদ্ধি পায় । বায়ুচাপ সম্পূর্ণভাবে উষ্ণতার ওপর নীর্ভরশীল । উষ্ণতার সঙ্গে বায়ুর চাপ বিপরীত অনুপাতে পরিবর্তিত হয়, অর্থাৎ উষ্ণতা কমলে বায়ুর চাপ বাড়ে এবং উষ্ণতা বাড়লে বায়ুচাপ কমে ।

(ii) বায়ুতে জলীয় বাষ্পের তারতম্য:- বায়ুতে জলীয়বাষ্পের তারতম্যের জন্য বায়ুর চাপের তারতম্য ঘটে । জলীয়বাষ্প বিশুদ্ধ বায়ুর চেয়ে হালকা । সেইজন্য যে বায়ুতে জলীয়বাষ্প বেশি থাকে সেই বায়ু শুকনো বায়ুর চেয়ে হালকা এবং তার চাপ ও অপেক্ষাকৃত কম । এইকারণে বর্ষাকালে বায়ুতে জলীয় বাষ্প বেশি থাকায় বায়ুর চাপ কম হয় । শুষ্ক বায়ু ভারী এবং তার চাপ ও বেশি হয় ।

(iii) ভূপৃষ্ঠের উচ্চতা:- ভূপৃষ্ঠের উচ্চতার জন্য বায়ুর চাপের তারতম্য ঘটে । সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে যত উপরে ওঠা যায় বাযুস্তরের গভীরতা ও ঘনত্ব তত কম হয় । অর্থাৎ উচ্চতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বায়ুস্তরের ঘনত্ব কমতে থাকে ।  বায়ুর ঘনত্ব কমলে স্বাভাবিকভাবে বায়ুর ওজন কমে যায়, এবং ওজন কমলে বায়ুর চাপও কম হয় । সাধারণত প্রতি ৯০০ ফুট উচ্চতায় ১ ইঞ্চি বা প্রতি ২৭৪ মিটারে ৩৪ মিলিবার বায়ুর চাপ কম হয় । তবে এই হারে বায়ুর চাপ উপরের বায়ুস্তরে সব সময়ে কমে না । কারণ উপরের বায়ুস্তর ক্রমশ পাতলা ।   

(iv) পৃথিবীর আবর্তন:- পৃথিবীর আবর্তন গতির জন্যেও বায়ুর চাপের তারতম্য ঘটে । পৃথিবীর আবর্তনের ফলে বায়ুপ্রবাহ বাইরের দিকে ছিটকে চলে যেতে চায় । এর প্রভাবেও বায়ুর চাপের পার্থক্য হয় ।  

(v) বায়ুস্তরের উচ্চতা:- বায়ুস্তরের উচ্চতার জন্য বায়ুর চাপের তারতম্য ঘটে । বায়বীয় পদার্থের নিম্নতম স্তরের যে অংশ মাধ্যাকর্ষণ শক্তির প্রভাবে (Gravitational attraction) ভূপৃষ্ঠের সংলগ্ন হয়ে থাকে, সেই অংশ সাধারণত বায়ুমণ্ডল নামে পরিচিত । বায়ুমণ্ডলের উপরিসীমা প্রায় ১০,০০০ কিলোমিটার ধরা হলেও বায়ুমণ্ডলের ৯৯% ভর ভূপৃষ্ঠের ৩২ কিলোমিটারের মধ্যে অবস্থান করে । বায়ুমণ্ডলের এই অংশেই সৌরতাপ সংরক্ষণ করে এবং এই অংশের চাপই আমরা অনুভব করি ।

*****

Related Items

ভারতের ভূপ্রকৃতি (Physical Emvironment of India)

ভারতের ভূপ্রকৃতি (Physical Environment of India) : ভারত একটি সুবিশাল দেশ ও এর ভূপ্রকৃতি অত্যন্ত বৈচিত্র্যময় । উত্তর ভারতের জম্মু-কাশ্মীরের উত্তর-পশ্চিম দিকে অবস্থিত পামীর গ্রন্থি থেকে বের হওয়া হিন্দুকুশ, সুলেমান, খিরথর কারাকোরাম, হিমালয় প্রভৃতি কয়েক

ভারতের বর্তমান রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল সমূহ

ভারতের বর্তমান রাজ্য সমূহ (২০২১ সাল পর্যন্ত ) :

১. অন্ধ্রপ্রদেশ : এই রাজ্যের আয়তন হল ১,৬০,২০৫ বর্গ কিমি. ও রাজধানী হল অমরাবতী ।

২. অরুণাচল প্রদেশ : এই রাজ্যের আয়তন হল ৮৩,৭৪৩ বর্গ কিমি. ও রাজধানী হল ইটানগর ।

স্বাধীনতা-উত্তর ভারতের রাজ্যগুলির বিন্যাস

স্বাধীনতা-উত্তর ভারতের রাজ্যগুলির বিন্যাস : প্রায় ১০০ বছর প্রত্যক্ষভাবে ইংরেজ শাসনাধীন থাকার পর ব্রিটিশ পার্লামেন্টে পাস হওয়া ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের 'ভারতের স্বাধীনতা আইন' অনুসারে ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ১৫ই আগস্ট অবিভক্ত ভারত দ্বিখণ্ডিত হয়ে স্বাধীনতা লাভ করে এব

ভারতের ভৌগলিক অবস্থান

অবস্থান (Location) : ভারত পৃথিবীর উত্তর গোলার্ধে এশিয়া মহাদেশের দক্ষিণে অবস্থিত একটি দেশ । নিরক্ষরেখার উত্তরে অর্থাৎ উত্তর গোলার্ধে এবং মূলমধ্যরেখার পূর্বে অর্থাৎ পূর্ব গোলার্ধে অবস্থিত অর্থাৎ ভারত উত্তর-পূর্ব গোলার্ধে অবস্থিত । ভারতের মূল ভূখণ্ড দক্ষি

ভারত (India)

ভারত :- প্রাচীন পারসিক লিপিতে 'সপ্ত সিন্ধু' কে বলা হয়েছে হপ্ত হিন্দু । সিন্ধু তীরবর্তী বসবাসকারী মানুষকে বিদেশীরা হিন্দু বলত এবং তার থেকেই হিন্দুস্থান কথাটি এসেছে । প্রাচীন পারসি শব্দ হিন্দুস (Hindus) থেকে উৎপন্ন ইণ্ডাস (Indus) থেকে ইণ্ডিয়া (INDIA) নামট