Submitted by avimanyu pramanik on Mon, 08/20/2012 - 20:40

বায়ুর আদ্রতা (Humidity):- সূর্যের তাপে সাগর, মহাসাগর, নদনদী, হ্রদ ও অন্যান্য জলাশয় থেকে জল বাষ্পে পরিনত হারে বায়ুর সঙ্গে মিশে । ফলে বায়ু আর্দ্র হয় । শুকনো ও ভিজে কুন্ডযুক্ত হাইগ্রোমিটার (Hygrometer) যন্ত্র দিয়ে বায়ুর আর্দ্রতা নির্ণয় করা হয় । বায়ু সব সময় একই রকম আর্দ্র থাকে না । স্থান ও ঋতুভেদে বায়ুর আর্দ্রতার পরিবর্তন ঘটে । বায়ু যত বেশি উষ্ণ হয় জলীয়বাষ্প ধারণ করার ক্ষমতা তত বেশি হয় ।     

সম্পৃক্ত বায়ু (Saturated) :- এক নির্দিষ্ট পরিমাণ বায়ু নির্দিষ্ট উষ্ণতায় এক নির্দিষ্ট পরিমাণ জলীয়বাষ্প ধারণ করে । যখন তার চেয়ে বেশি জলীয়বাষ্প ধারণ করার ক্ষমতা বায়ুর থাকে না তখন সেই বাতাসকে সম্পৃক্ত বায়ু বা পরিপৃক্ত বায়ু বলে । 

আপেক্ষিক আদ্রতা (Relative Humidity) :- সাধারণভাবে কোনও নির্দিষ্ট পরিমাণ তাপে এক নির্দিষ্ট পরিমাণ বায়ুতে যে পরিমাণ জলীয়বাষ্প থাকে, তাকে ঐ বায়ুর নিরপেক্ষ আর্দ্রতা বা চরম আর্দ্রতা (Absolute Humidity) বলে । আর যে পরিমাণ জলীয়বাষ্প ঐ নির্দিষ্ট তাপে বায়ুতে থাকা সম্ভবপর [অর্থাৎ ঐ বায়ুকে সম্পৃক্ত বা পরিপৃক্ত করার জন্য যে পরিমাণ জলীয় বাষ্পের প্রয়োজন তার সঙ্গে ঐ প্রকৃত পরিমাণের অনুপাতকে সাপেক্ষ আর্দ্রতা বা আপেক্ষিক আর্দ্রতা বলে ।

অর্থাৎ, আপেক্ষিক আর্দ্রতা =                           নির্দিষ্ট পরিমাণ বায়ুতে উপস্থিত জলীয় বাষ্প                        X ১০০

                                                    ওই তাপমাত্রায় সমপরিমাণ বায়ুকে সম্পৃক্ত করতে প্রয়োজনীয় জলীয়বাষ্পের পরিমাণ

 

(i) আপেক্ষিক আর্দ্রতা একটি অনুপাত ।

(ii) সাধারণত এই অনুপাতকে শতকরা হিসাবে প্রকাশ করা হয় ।

(iii) বায়ুর উষ্ণতা ও আপেক্ষিক আর্দ্রতার সম্পর্ক ব্যাস্তানুপাতিক – অর্থাৎ বায়ুর উষ্ণতা বাড়লে আপেক্ষিক আর্দ্রতা কমে এবং বায়ুর উষ্ণতা কমলে আপেক্ষিক আদ্রতা বাড়ে ।

(iv) আপেক্ষিক আদ্রতার সাহায্যে কোনও স্থানের বায়ুর আপেক্ষিক স্যাঁতস্যাঁতে ভাব মাপা হয় ।

(v) কোনো স্থানের আপেক্ষিক আদ্রতা জানার ফলে সেই স্থানে পৃথিবীপৃষ্ঠের তাপ বিকিরণের হার, ঝড়বৃষ্টি ও তুষারপাতের সম্ভাবনা প্রভৃতির পূর্বাভাষ পাওয়া যায় ।

(vi) শুষ্ক ও আদ্রকুণ্ড-যুক্ত হাইগ্রোমিটার (Dry & Wet Bulb Hygrometre) -এর সাহায্যে কোনো স্থানের বায়ুর আপেক্ষিক আদ্রতার পরিমাপ করা হয় ।

বায়ুর আর্দ্রতার সঙ্গে আবহাওয়া ও জলবায়ুর অন্যান্য উপাদানের সম্পর্ক :- বায়ুর তাপ, চাপ, বায়ুপ্রবাহ, মেঘ ও বৃষ্টির সঙ্গে আর্দ্রতার সম্পর্ক বর্তমান ।

(ক) তাপে জল বাস্পীভূত হয় । বায়ু উত্তপ্ত হলে তার জলীয়বাষ্প ধারণ ক্ষমতা বাড়ে ।

(খ) জলীয়বাষ্পপূর্ণ আর্দ্র বায়ু হালকা । এই বায়ুর চাপ কম । ফলে সহজেই উপরে উঠে যায় ।

(গ) সেখানে শীতল বায়ুর সংস্পর্শে এসে শীতল ও ঘনীভূত হয়ে মেঘ ও বৃষ্টির উত্পত্তি ঘটায় । কৃষ্ণবর্ণের কিউমিউলাস মেঘে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয় ।

(ঘ) বায়ুতে থাকা জলীয় বাষ্পের পরিমাণের ওপর স্থানীয় আবহাওয়া অনেকাংশে নির্ভরশীল । মেঘ, বৃষ্টি, কুয়াশা প্রভৃতি নৈসর্গিক ব্যাপার হল জলীয়বাষ্পের ঘনীভবনের ফল ।

(ঙ) কোনো স্থানের বায়ুতে দীর্ঘকাল ধরে জলীয়বাষ্পের অভাব হলে (অর্থাৎ আর্দ্রতা কম হলে) সেখানে মরুভূমির সৃষ্টি হয় ।

(চ) অন্যদিকে কোনো স্থানের বায়ুতে পরে দীর্ঘসময় ধরে জলীয়বাষ্পের পরিমাণ (অর্থাৎ আর্দ্রতা) বৃদ্ধি পেলে সেখানে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বৃদ্ধি পায় এবং মরুপ্রায় অঞ্চল শস্য শ্যামলা হয়ে হয়ে ওঠে ।

*****

Related Items

নর্মদা নদী (The Narmada)

নর্মদা নদী (The Narmada) : মহাকাল পর্বতের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ অমরকন্টক থেকে উৎপন্ন হয়ে নর্মদা নদী উত্তর-পশ্চিমে বেঁকে মধ্যপ্রদেশ, উত্তরপ্রদেশ ও মহারাষ্ট্র হয়ে গুজরাটের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বিন্ধ্য ও সাতপুরার সংকীর্ণ গিরিখাত অতিক্রম করে

ব্রহ্মপুত্র নদ (The Brahmaputra)

ব্রহ্মপুত্র নদ : তিব্বতের মানস সরোবরের নিকটবর্তী চেমায়ুং-দুং হিমবাহ থেকে সাংপো নামে উৎপন্ন হয়ে নামচাবারওয়া শৃঙ্গের কাছে চুলের কাটার মত বেঁকে অরুণাচল প্রদেশের মধ্য দিয়ে ডিহং নামে ভারতে প্রবেশ করেছে । এর মোট দৈর্ঘ্য ২,৯০০ কিমি, এর মধ্

সিন্ধু নদ (The Indus)

সিন্ধু নদ : সিন্ধু নদ তিব্বতের মানস সরোবরের উত্তরে অবস্থিত সিন-কা-বাব জলধারা থেকে উৎপন্ন হয়ে উত্তর-পশ্চিমে প্রথমে তিব্বতের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে পরে লাদাখ অঞ্চল দিয়ে ভারতে প্রবেশ করেছে । সিন্ধু নদের মোট দৈর্ঘ্য ৩,১৮০ কিমি এবং এর মধ

গঙ্গা নদী (The Ganges)

গঙ্গা নদী : গঙ্গা ভারতের শ্রেষ্ঠ নদী এবং ভারতের দীর্ঘতম নদী । গঙ্গানদীর মোট দৈর্ঘ্য ২৫১০ কিমি এবং এর মধ্যে ২০১৭ কিমি ভারতে প্রবাহিত । কুমায়ুন হিমালয়ের গঙ্গোত্রী হিমবাহের গোমুখ তুষার গুহা থেকে ভাগীরথী নামে উৎপন্ন হয়ে সংকীর্ণ গিরিখাতের

ভারতের নদনদী (Rivers of India)

ভারতের নদনদী : ভারতে অসংখ্য নদনদী বিভিন্ন দিকে প্রবাহিত হয়েছে । উৎস, প্রবাহের অঞ্চল, এবং মোহানা অনুসারে ভারতের নদনদীকে প্রধানত দুটি শ্রেণিতে ভাগ করা যায় । যেমন— (১) উত্তর ভারতের নদী এবং (২) দক্ষিণ ভারতের নদী ।