বায়ুপ্রবাহের সঙ্গে আবহাওয়া ও জলবায়ুর বিভিন্ন উপাদানের সম্পর্ক

Submitted by avimanyu pramanik on Wed, 08/15/2012 - 22:15

বায়ুপ্রবাহ (Wind) :- বায়ু এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় প্রবাহিত হয় । গতিশীল এই বায়ুকে সাধারণভাবে বায়ুপ্রবাহ বলে । বায়ু যেমন ভূমির সমান্তরালে প্রবাহিত হয় তেমনি উপর থেকে নীচে এবং নীচ থেকে উপরে চলাচল করে । যে বায়ু ভূপৃষ্ঠের সমান্তরালে বা অনুভূমিক ভাবে চলাচল করে তাকে বায়ুপ্রবাহ বলে । আর যে বায়ু উপর থেকে নীচে এবং নীচ থেকে উপরে অর্থাৎ উলম্বভাবে ওঠানামা করে তাকে সাধারণভাবে বায়ুর স্রোত বলা হয় । এর প্রবাহ ভূপৃষ্ঠে সহজে অনুভূত হয় না ।

আবহাওয়া (Weather):-  কোনো নির্দিষ্ট স্থানের, কোনো নির্দিষ্ট সময়ের বায়ুমণ্ডলের সবচেয়ে নীচের স্তরের কতগুলো পরিবর্তনশীল উপাদানের অবস্থাকে আবহাওয়া বলে । আবহাওয়ার পরিবর্তনশীল উপাদান গুলি হল  বায়ুর উষ্ণতা, বায়ুচাপ, বায়ুপ্রবাহ, বায়ুর আদ্রতা, মেঘ, বৃষ্টিপাত, তুষারপাত প্রভৃতি ।

জলবায়ু (Climate):-  একটি বিস্তীর্ণ অঞ্চলের আবহাওয়ার দৈনন্দিন অবস্থার বহুদিনের (অন্তন্ত ৩৫ বছরের) বিবরণকে সেই অঞ্চলের জলবায়ু বলা হয় । আবহাওয়ার উপাদানসমূহ, যেমন বায়ুর উষ্ণতা, বায়ুর চাপ, বায়ুপ্রবাহ, বায়ুর আদ্রতা, মেঘাচ্ছন্নতা, বৃষ্টিপাত, তুষারপাত ইত্যাদির গড় অবস্থা থেকে কোনো অঞ্চলের জলবায়ু সম্বন্ধে মোটামুটি একটা ধারণা করা যায় ।

বায়ুপ্রবাহের সঙ্গে আবহাওয়া ও জলবায়ুর বিভিন্ন উপাদানের সম্পর্ক:- আবহাওয়া ও জলবায়ুর  উপাদানসমূহ হল বায়ুর উষ্ণতা, বায়ুর চাপ, বায়ুপ্রবাহ, বায়ুর আদ্রতা, মেঘাচ্ছন্নতা, বৃষ্টিপাত, তুষারপাত ইত্যাদি । আবহাওয়া ও জলবায়ুর প্রতিটি উপাদানের সঙ্গে বায়ুপ্রবাহের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আছে । 

(১) বায়ুচাপের তারতম্য হল বায়ুপ্রবাহের প্রধান কারণ ।  কোনো স্থানের বায়ু উত্তপ্ত হলে সেখানে বায়ুচাপ কমে যায় এবং আংশিক স্থান বায়ুশূন্য হয় । এই শূন্যস্থান পূরণের জন্য শীতল উচ্চচাপ যুক্ত স্থান থেকে বাতাস নিম্ন চাপের দিকে ধাবিত হয় । এইভাবে বায়ুপ্রবাহের সৃষ্টি হয় । বায়ুপ্রবাহের বেগ নির্ভর করে বায়ুচাপের পার্থক্যের মাত্রার ওপর । বায়ুচাপের পার্থক্য বেশি হলে বায়ুপ্রবাহের বেগ বৃদ্ধি পায়, অনুরূপভাবে বায়ুচাপ কমে গেলে বায়ুপ্রবাহের বেগও কমে যায় ।

(২) বায়ুপ্রবাহ সমুদ্রের ওপর দিয়ে আসার সময়ে জলীয়বাষ্প সংগ্রহ করে আনে । এই আদ্রবায়ু বৃষ্টিপাত ঘটায় । আবার শুকনো ও উষ্ণ অঞ্চলের উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার সময়ে বায়ু শুষ্ক ও উষ্ণ হয় । আর এই বায়ুতে বৃষ্টিপাত হয় না ।

বায়ুপ্রবাহের কারণ (Cause of wind):- বায়ুচাপের তারতম্য হল বায়ুপ্রবাহের প্রধান কারণ ।  বায়ুর চাপ আবার নির্ভর করে উষ্ণতর উপর । কোনো স্থানের বায়ু উত্তপ্ত হলে সেখানে বায়ুচাপ কমে যায় এবং আংশিক স্থান বায়ুশূন্য হয় । এই শূন্যস্থান পূরণের জন্য শীতল উচ্চচাপ যুক্ত স্থান থেকে বাতাস নিম্ন চাপের দিকে ধাবিত হয় । এইভাবে বায়ুপ্রবাহের সৃষ্টি হয় । বায়ুপ্রবাহের বেগ নির্ভর করে বায়ুচাপের পার্থক্যের মাত্রার ওপর । বায়ুচাপের পার্থক্য বেশি হলে বায়ুপ্রবাহের বেগ বৃদ্ধি পায়, অনুরূপভাবে বায়ুচাপ কমে গেলে বায়ুপ্রবাহের বেগও কমে যায় ।

বায়ুপ্রবাহ পর্যবেক্ষণ :- বায়ু কোনদিক থেকে প্রবাহিত হচ্ছে, তা বাতপতাকার -এর সাহায্যে সহজেই নির্ণয় করা যায় । আর বায়ুর গতিবেগ নির্ণয় করার জন্য বায়ুবেগমাপক যন্ত্র ব্যবহার করা হয় ।

বায়ু প্রবাহের নামকরণ :- বায়ু যে দিক থেকে প্রবাহিত হয়, সেই দিকের নাম অনুসারে বায়ুপ্রবাহের নামকরণ হয়ে থাকে । যে বায়ু পশ্চিমদিক থেকে বয়ে আসে তার নাম পশ্চিমা বায়ু । আমাদের দেশে গ্রীষ্মকালে দক্ষিণ-পশ্চিমদিক থেকে যে মৌসুমী বায়ু ছুটে আসে তার নাম দেওয়া হয়েছে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ু ।  

*****

Related Items

নর্মদা নদী (The Narmada)

নর্মদা নদী (The Narmada) : মহাকাল পর্বতের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ অমরকন্টক থেকে উৎপন্ন হয়ে নর্মদা নদী উত্তর-পশ্চিমে বেঁকে মধ্যপ্রদেশ, উত্তরপ্রদেশ ও মহারাষ্ট্র হয়ে গুজরাটের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বিন্ধ্য ও সাতপুরার সংকীর্ণ গিরিখাত অতিক্রম করে

ব্রহ্মপুত্র নদ (The Brahmaputra)

ব্রহ্মপুত্র নদ : তিব্বতের মানস সরোবরের নিকটবর্তী চেমায়ুং-দুং হিমবাহ থেকে সাংপো নামে উৎপন্ন হয়ে নামচাবারওয়া শৃঙ্গের কাছে চুলের কাটার মত বেঁকে অরুণাচল প্রদেশের মধ্য দিয়ে ডিহং নামে ভারতে প্রবেশ করেছে । এর মোট দৈর্ঘ্য ২,৯০০ কিমি, এর মধ্

সিন্ধু নদ (The Indus)

সিন্ধু নদ : সিন্ধু নদ তিব্বতের মানস সরোবরের উত্তরে অবস্থিত সিন-কা-বাব জলধারা থেকে উৎপন্ন হয়ে উত্তর-পশ্চিমে প্রথমে তিব্বতের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে পরে লাদাখ অঞ্চল দিয়ে ভারতে প্রবেশ করেছে । সিন্ধু নদের মোট দৈর্ঘ্য ৩,১৮০ কিমি এবং এর মধ

গঙ্গা নদী (The Ganges)

গঙ্গা নদী : গঙ্গা ভারতের শ্রেষ্ঠ নদী এবং ভারতের দীর্ঘতম নদী । গঙ্গানদীর মোট দৈর্ঘ্য ২৫১০ কিমি এবং এর মধ্যে ২০১৭ কিমি ভারতে প্রবাহিত । কুমায়ুন হিমালয়ের গঙ্গোত্রী হিমবাহের গোমুখ তুষার গুহা থেকে ভাগীরথী নামে উৎপন্ন হয়ে সংকীর্ণ গিরিখাতের

ভারতের নদনদী (Rivers of India)

ভারতের নদনদী : ভারতে অসংখ্য নদনদী বিভিন্ন দিকে প্রবাহিত হয়েছে । উৎস, প্রবাহের অঞ্চল, এবং মোহানা অনুসারে ভারতের নদনদীকে প্রধানত দুটি শ্রেণিতে ভাগ করা যায় । যেমন— (১) উত্তর ভারতের নদী এবং (২) দক্ষিণ ভারতের নদী ।