Submitted by avimanyu pramanik on Tue, 05/08/2012 - 09:36

পর্বত (Mountain)

সংজ্ঞা - সাধারণত ১০০০ মিটারের বেশি উঁচু আর অনেক বিস্তৃত শিলাময় ভূ-ভাগকে পর্বত [Mountain] বলে । পর্বতের মাথায় থাকে অনেকগুলি আকাশ-ছোঁয়া চূড়া বা শৃঙ্গ । শৃঙ্গগুলি অনেক সময় সাদা বরফের আবরণে ঢাকা থাকে ।

উৎপত্তি:- পর্বত (Mountain) সৃষ্টির কারণ সম্পর্কে নানান মতবাদ প্রচলিত আছে । অনেকের মতে পৃথিবী অবিরাম তাপ বিকিরণ করে ঠান্ডা হয়ে চলেছে । এর ফলে ভূ-পৃষ্ঠ শীতল হয়ে সংকুচিত হচ্ছে । ভূ-পৃষ্ঠের সংকোচনই পর্বত গঠনের প্রধান কারণ । সংকোচনের ফলে যে আলোড়ন বা কম্পন হয় তাতে ভূ-ত্বকের কোনো অংশ বসে যায়, আবার কোনো অংশ উঁচু হয়ে উঠে । এর ফলে ভূ-পৃষ্ঠে ভাঁজের সৃষ্টি হয় । ভাঁজের উচু অংশগুলিই পর্বত বা মালভূমি ।

পর্বতের শ্রেণিবিভাগ-

(ক) ভঙ্গিল পর্বত বা ভাঁজ পর্বত (Fold Mountain),

(খ) স্তুপ পর্বত (Block Mountain),

(গ) আগ্নেয় পর্বত বা সঞ্চয়জাত পর্বত (Volcano or Mountain of Accumulation),

(ঘ) ক্ষয়জাত পর্বত (Relict or Erosional or Residual Mountain)

(ক) ভঙ্গিল পর্বত বা ভাঁজ পর্বত (Fold Mountain) 

ভঙ্গিল পর্বতের সংজ্ঞা :- ভূ-ত্বকের শিলা স্তরে স্তরে সাজানো রয়েছে । এই শিলাস্তরে ভাঁজ পড়ে যে পর্বত গঠিত হয় তাকে ভঙ্গিল বা ভাঁজ [Fold Mountain] পর্বত বলে ।

ভঙ্গিল পর্বতের উৎপত্তি:- ভঙ্গিল পর্বত [Fold Mountain] সৃষ্টির কারণ সম্পর্কে নানান মতবাদ প্রচলিত আছে, এদের মধ্যে প্রধান দুটি মতবাদ হল—

১) মহীখাত তত্ত্ব [Geosyncline Theory] :- মহীখাত তত্ত্ব অনুসারে– এখন যেখানে ভঙ্গিল পর্বতগুলো অবস্থান করছে প্রাচীন কালে সেখানে ছিল বিশালাকার গহ্বর, ভূতাত্ত্বিক ভাষায় যার নাম মহীখাত বা অগভীর সমুদ্র । কালক্রমে যুগ যুগ ধরে পলি পড়ে এই সমুদ্রকে প্রায় ভরাট করে ফেলেছিল । ক্রমাগত পলি জমার ফলে ভূ-স্তরে নিম্নমুখী ও পার্শ্বমুখী চাপের সৃষ্টি হয় তার ফলে অগভীর সমুদ্রের সঞ্চিত পলিতে ভাঁজ পড়তে থাকে। পরবর্তী কালে এইসব ভাঁজগুলো দৃঢ়ভাবে সংবদ্ধ ও উঁচু হয়ে ভঙ্গিল পর্বতের [Fold Mountain] সৃষ্টি করেছে।

পাতসংস্থান বা পাতসঞ্চালন তত্ত্ব (Plate Tectonic Theory) : বর্তমানে ভূ-বিজ্ঞানীরা পাতসঞ্চালন (Plate tectonic) মতবাদের ভিত্তিতে ভঙ্গিল পর্বত সৃষ্টির প্রধান কারণ ব্যাখ্যা করেছেন । পাতসঞ্চালন তত্ত্ব অনুসারে, ভূ-ত্বক [Lithosphere] কয়েকটি গতিশীল পাতের সমন্বয়ে গঠিত, যারা গুরুমন্ডলের নীচের দিকে অতি উত্তপ্ত ও তরল ম্যাগমা স্তরের ওপর ভেসে থাকে। একেকটি পাত কেবল মহাদেশ (বা দেশ) কিংবা মহাসাগর অথবা দুইই মিলিয়ে গঠিত হতে পারে, যেমন–  ইউরেশিয়ান প্লেট, আফ্রিকান প্লেট, ভারতীয় প্লেট, প্রশান্ত মহাসাগরীয় প্লেট প্রভৃতি । ভয়ংকর উষ্ণতার ফলে ভূগর্ভের ম্যাগমা স্তরে যে পরিচলন স্রোতের সৃষ্টি হয়, তার ফলে এই পাতগুলো গতি শক্তি লাভ করে এবং অতি ধীরগতিতে বছরে প্রায় ১০ মিলিমিটার চলতে থাকে। এইসব গতিশীল পাতগুলোর মধ্যে যে-কোনো দুটি পাত যখন পরস্পরের মুখো মুখি  হয়, তখন ওই দুটি পাতের সংযোগ রেখা বরাবর উপসাগর, সাগর কিংবা মহাসাগরের তলদেশে সঞ্চিত পাললিক শিলাস্তরের দুদিক থেকে প্রবল পার্শ্ববর্তী চাপে শিলাস্তরে ভাঁজ পড়ার ফলে শিলাচ্যুতি ঘটে এবং ভূমিকম্পের সৃষ্টি হয় ।

পাতসঞ্চালন তত্ত্বের ভিত্তিতে, ভূমিকম্পের ফলে ভঙ্গিল পর্বত [Fold Mountain] দু’ভাবে সৃষ্টি হতে পারে, যেমন—

ক) প্রচন্ড ভূমিকম্পের ফলে পৃথিবীর ওপরকার কোনো জায়গা বসে গিয়ে বা উঁচু হয়ে ভূপৃষ্ঠের শিলাস্তরে ছোটো ছোটো ভাঁজের সৃষ্টি হয় । ভূমিকম্প যতই বাড়তে থাকে, ভাঁজগুলো ততই বড়ো ও উঁচু হয়ে পরস্পরের কাছে চলে এসে ভঙ্গিল পর্বতের [Fold Mountain] সৃষ্টি করে । আবার,

খ) প্রচন্ড পার্শ্ব চাপের ফলেও ভূপৃষ্ঠের শিলাস্তরে ভাঁজ সৃষ্টি হয় । চাপ বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ভাঁজগুলো বড়ো ও উঁচু হয়ে পরস্পরের কাছে এসে ভঙ্গিল পর্বত [Fold Mountain] সৃষ্টি করতে পারে। ‘ভঙ্গিল’ বা ‘ভাঁজ’ শব্দটি পর্বতের একটি বিশেষ গঠন প্রক্রিয়ার ।

ভঙ্গিল পর্বতের (Fold Mountain) বৈশিষ্ট্য:-

১) বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে কোমল পাললিক শিলায় ঢেউয়ের মতো ভাঁজ পড়ে ভঙ্গিল পর্বতের সৃষ্টি হয়;

২) ভঙ্গিল পর্বতগুলি সাধারণত পাললিক শিলায় গঠিত হলেও অনেক সময় ভঙ্গিল পর্বতে আগ্নেয় এবং রূপান্তরিত শিলার সহাবস্থান পরিলক্ষিত হয় (কারণ,  ভঙ্গিল পর্বত সৃষ্টির সময় শিলাস্তরে ফাটল সৃষ্টি হলে, সেই ফাটল দিয়ে ভূগর্ভের ম্যাগমা লাভারূপে ভূপৃষ্ঠে বেরিয়ে আসে যা ধীরে ধীরে জমাট বেঁধে আগ্নেয় শিলার সৃষ্টি করে । এর পর কালক্রমে প্রচন্ড চাপ ও তাপের ফলে আগ্নেয় শিলা ও পাললিক শিলা রূপান্তরিত শিলায় পরিণত হয় );

৩) ভঙ্গিল পর্বতের উপরের দিকের ভাঁজকে ঊর্ধ্বভঙ্গ [Anticline] ও নীচের দিকের ভাঁজকে অধোভঙ্গ [Syncline] বলে;

৪) ভঙ্গিল পর্বতের ভাঁজগুলো বিভিন্ন রকমের হতে পারে, যেমন- প্রতিসম ভাঁজ, অপ্রতিসম ভাঁজ, একটি ভাঁজের উপর অন্য একটি ভাঁজের [overfold] এসে পড়া প্রভৃতি;

৫) প্রবল ভূ-আলোড়নের জন্য ভঙ্গিল পর্বতে ভাঁজ ছাড়াও অনেক চ্যুতি বা ফল্ট (Fault) দেখা যায়;

৬) প্রধানত সমুদ্র গর্ভ থেকে সৃষ্টি হয়েছিল বলে ভঙ্গিল পর্বতে জীবাশ্ম (Fossil) দেখা যায়;

৭) ভঙ্গিল পর্বতগুলো সাধারণত প্রস্থের তুলনায় দৈর্ঘে অনেক বেশি বিস্তৃত হয়;

৮) ভঙ্গিল পর্বতগুলো সাধারণত বহু শৃঙ্গবিশিষ্ট ও ছুঁচালো হয়;

৯) ভঙ্গিল পর্বতের গঠন স্থায়ী নয়;

১০) উৎপত্তিকালের তুলনামূলক বিচারে ভঙ্গিল পর্বতকে নবীন (যেমন- হিমালয়) ও প্রাচীন (যেমন-আরাবল্লী) এই দুই ভাগে ভাগ করা যায় ।

উদাহরণ: (১) ভারতের হিমালয়,  (২) ইউরোপের আল্পস ও জুরা, (৩) আফ্রিকার আটলাস, (৪) উত্তর আমেরিকার রকি, (৫) দক্ষিণ আমেরিকার আন্দিজ প্রভৃতি ভঙ্গিল বা ভাঁজ পর্বতের উদাহরণ ।     

(খ) স্তুপ পর্বত (Block Mountain)

স্তুপ পর্বতের সংজ্ঞা :- ভূ-আন্দোলনের ফলে শিলাস্তরে ফাটল ধরে এবং ফাটলে ফাটলে শিলাস্তর খন্ডে খন্ডে [Block -এ] বিভক্ত হয়ে যায় । সমান্তরাল দুই ফাটলের মধ্যবর্তী খন্ডিত ভূমি অনেক সময় নিচে থেকে চাপ খেয়ে ওপরে উঠে পড়ে পর্বতের আকার ধারণ করে, এইভাবে যে পর্বত গঠিত হয় তাকে স্তুপ পর্বত [Block Mountain] বলে ।     

স্তুপ পর্বতের উৎপত্তি:- ভূপৃষ্ঠের কোনো অংশের শিলাস্তরের চ্যুতির ঝুলন অংশের উত্থান কিংবা বসে যাওয়ার মতো ভূপ্রাকৃতিক ঘটনার ফলেই স্তূপ পর্বতের [Block Mountain] উৎপত্তি হয় ।

১) প্রবল ভূ-আলোড়নের ফলে ভূ-ত্বকের [Lithosphere] কোথাও সংকোচন টান আবার কোথাও প্রসারণ চাপ পড়ে। এর ফলে শিলাস্তরে ক্র্যাক বা গভীর ফাটলের সৃষ্টি হয় । এরপর যদি আবার ভূ-আলোড়ন হয় তবে ওই ফাটল বরাবর শিলার একটি অংশ থেকে আর একটি অংশ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে, একে চ্যুতি [Fault] বলে । ভূত্বকের যে রেখা বরাবর চ্যুতির [Fault] সৃষ্টি হয় তাকে চ্যুতিরেখা এবং যে তলে চ্যুতির সৃষ্টি হয়, তাকে চ্যুতিতল বলে।

২) প্রবল উর্ধ্বচাপ ও নিম্নচাপের ফলে কোনো দুটি চ্যুতির [Fault] মধ্যবর্তী অঞ্চল যখন পাশের অংশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে চ্যুতিরেখা বরাবর খাড়াভাবে ওপরে উঠে আসে এবং পার্শ্ববর্তী অঞ্চল দুটি নীচে বসে যায়, তখন ওপরে উঠে আসা অংশটি স্তূপ পর্বতে [Block Mountain] পরিণত হয় এবং নীচে বসে যাওয়া অংশ দুটি গ্রস্ত উপত্যকা [Rift Valley] রূপে বিরাজ করে । এইভাবে দুটি সমান্তরাল চ্যুতির মধ্যবর্তী অংশের উত্থানের ফলে সৃষ্টি হওয়া স্তূপ পর্বতকে হোর্স্ট (horst) বলা হয়। এর আর এক নাম চ্যুতি পর্বত [Fault Mountain]

৩) ভূপৃষ্ঠের শিলাস্তরের প্রবল চাপের ফলে কোনো সময় দুটি সমান্তরাল চ্যুতিরেখার মধ্যবর্তী অংশ যদি খাড়া ভাবে নীচে বসে গিয়ে গ্রস্ত উপত্যকায় [Rift Valley] পরিণত হয়, তখন গ্রস্ত উপত্যকাটির দু'পাশের  খাড়া অংশ দুটি স্তূপ পর্বতের আকৃতিপ্রাপ্ত হয়। এই ভাবে সৃষ্টি হওয়া গ্রস্ত উপত্যকাগুলি জার্মানিতে ‘গ্রাবেন’নামে পরিচিত।

স্তূপ পর্বতের (Block Mountain) বৈশিষ্টি:-

১) স্তূপ পর্বতের [Block Mountain] মাথা কিছুটা চ্যাপ্টা হয়;

২) এই পর্বতের ঢাল বেশ খাড়া হয়;

৩) এই পর্বতে অনেক চ্যুতি (Fault) ও গ্রস্ত উপত্যকা [Rift Valley] দেখা যায়;

৪) স্তূপ পর্বতের  উচ্চতা খুব বেশি হয় না;

৫) এই পর্বত ভঙ্গিল পর্বতের মতো বিশাল অঞ্চল জুড়ে বিস্তৃত হয় না;

৬) সাধারণত লম্বভাবে ভূ-আলোড়নের ফলে স্তূপ পর্বতের [Block Mountain] সৃষ্টি হয়ে থাকে।

উদাহরণ:-

(ক) দাক্ষিনাত্যের (১) সাতপুরা,  (২) নীলগিরি, (৩) আন্নামালাই, (৪) ফ্রান্সের ভোজ, (৫) জার্মানির ব্ল্যাক ফরেস্ট স্তূপ পর্বতে উদাহরণ । ভারতের সাতপুরা পর্বত হোর্স্ট জাতীয় স্তূপ পর্বতের উদাহরণ ।

(খ) ভারতের (১) নর্মদা নদীর উপত্যকা ও (২) জার্মানির রাইন নদীর উপত্যকা গ্রস্থ উপত্যকার উদাহরণ ।

(গ) আগ্নেয় (Volcano)  বা সঞ্চয়জাত  (Mountain of Accumulaion) পর্বত :-

আগ্নেয় পর্বতের সংজ্ঞা :-  ভূগর্ভের উত্তপ্ত গলিত তরল শিলা বা ম্যাগমা ভূস্তরের ফাটল দিয়ে লাভারূপে বাইরে বেরিয়ে এসে শীতল ও কঠিন হয়ে যে গম্বুজাকৃতি পর্বতের সৃষ্টি হয় তাকে সঞ্চয়জাত পর্বত [Mountain of Accumulaion] বা আগ্নেয় পর্বত [Volcano] বলে।

আগ্নেয় পর্বতের [Volcano] উৎপত্তি:-

পাতসঞ্চালন তত্ত্ব বা Plate Tectonic Theory  অনুসারে আগ্নেয়গিরি বা আগ্নেয়পর্বতের [Volcani] উৎপত্তি:-

১) কোনো একটি মহাসাগরীয় পাত অপর একটি মহাদেশীয় পাতের দিকে অগ্রসর হলে দুইটি পাতের সংযোগস্থলে মহাসাগরীয় প্লেটের প্রান্তসীমা মহাদেশীয় পাতের নীচে ঢুকে যায় (subduction) । এই প্রক্রিয়ার ফলে দুটি পাতের সংযোগস্থলে প্রচন্ড চাপের ফলে ভূপৃষ্ঠের ৮০ থেকে ১৬০ কিলোমিটার নীচে তাপমাত্রা ভয়ানক বেড়ে যায় । এই তাপে ভূ-অভ্যন্তরের বিভিন্ন পদার্থ গলে গিয়ে তরল শিলাস্রোত বা ম্যাগমার [Magma] সৃষ্টি হয় এবং গ্যাসের উৎপত্তি হয় ।

২) গ্যাসীয় বুদবুদগুলোর প্রচন্ড চাপে ভূ-গর্ভের অতি উত্তপ্ত তরল শিলাস্রোত বা ম্যাগমা ভুত্বকের নলের মতো ফাটল বা সুড়ঙ্গ পথে ভূপৃষ্ঠে উঠে আসে এবং আগ্নেয় গিরির শীর্ষদেশে অবস্থিত জ্বালামুখ নামে এক বা একাধিক মুখ বা গহ্বর (crater) দিয়ে লাভা রূপে ছড়িয়ে পড়ে ।

৩) ঊর্ধ্বগামী সমস্ত ম্যাগমা [Magma] একসঙ্গে ভূগর্ভ থেকে ভূপৃষ্ঠে উঠে আসে না, ভূপৃষ্ঠের ৩-৫ কিলোমিটার নীচে ম্যাগমা ঘর (Magma Chamber) নামে একটি ঘরে কিছুক্ষণ থাকার পর গ্যাসের চাপ আরও বৃদ্ধি পেলে ম্যাগমা স্রোত ক্রমান্বয়ে ভূগর্ভ থেকে ভূপৃষ্ঠে উঠে আসে । জ্বালামুখ দিয়ে ভূপৃষ্ঠে নির্গত লাভা ক্রমশ শীতল ও কঠিন হয়ে আগ্নেয়গিরি বা আগ্নেয় পর্বতে [Volcano] পরিণত হয়।

৪) বিভিন্ন সময়ের ব্যবধানে বারংবার লাভা নির্গমনের সঙ্গে সঙ্গে আগ্নেয়গিরির উচ্চতা ক্রমশ বেড়ে যেতে থাকে এবং আগ্নেয় পর্বতটি [Volcano] ক্রমশ শঙ্কুর মতো আকৃতি নেয় । তবে পরবর্তী অগ্নুৎপাতের প্রবল বিস্ফোরণে আগ্নেয়গিরির শঙ্কুর মতো আকৃতি অনেকটা নষ্ট হয়ে যায় । তাই বেশির ভাগ আগ্নেয় পর্বতগুলো মাঝারি উচ্চতাবিশিষ্ট হয় এবং এদের ঢাল মাঝামাঝি রকমের হয় । অগ্নুৎপাতের সময় লাভা ছাড়াও আগ্নেয় ধূলিকণা (Volcanic Dust), ছোটো বড়ো পাথরের টুকরো এবং সালফার ডাই-অক্সাইড (SO2), কার্বন ডাই-অক্সাইড (CO2), নাইট্রোজেন অক্সাইড (NO2) প্রভৃতি বিষাক্ত গ্যাস আগ্নেয়গিরির জ্বালামুখ [Crater] দিয়ে বাইরে বেরিয়ে আসে।

অগ্নুৎপাতের বৈশিষ্ট্য অনুসারে আগ্নেয় পর্বতের (Volcano) শ্রেণিবিভাগ:-

অগ্নুৎপাতের বৈশিষ্ট্য অনুসারে আগ্নেয় পর্বতগুলোকে [Volcano] সাধারণত তিন ভাগে ভাগ করা হয়, যথা—

১) সক্রিয় (Active Volcano)- এই ধরনের আগ্নেয়গিরিতে প্রায়ই অগ্নুৎপাত হয় (যেমন, ভিসুভিয়াস) । সক্রিয় আগ্নেয়গিরিকে আবার দুই ভাগে ভাগ করা যায় যথা —

(ক) অবিরাম: - এই সব আগ্নেয়গিরিতে অবিরাম অগ্নুৎপাত হয়  (যেমন,  ভিসুভিয়াস) এবং

(খ) সবিরাম- এই সব আগ্নেয়গিরিতে কিছুদিন পর পর অগ্নুৎপাত হয় (যেমন, সিসিলি দ্বীপের স্টোম্বলি) ।

২) সুপ্ত (Dormant Volcano) - যেসব আগ্নেয়গিরিতে বহুকাল অগ্নুৎপাত হয়নি কিন্তু ভবিষ্যতে হওয়ার আশঙ্কা আছে (যেমন,  জাপানের ফুজিয়ামা) ।

৩) মৃত (Extinct Volcano)- যেসব আগ্নেয় পর্বতে স্মরণাতিত কাল থেকে কোনো অগ্নুৎপাত হয়নি (যেমন,  মায়ানমার-এর পোপো) ।

আগ্নেয় পর্বতের (Volcano) বৈশিষ্ট্য:-

১) অগ্নুৎপাতের সময় ভূগর্ভ থেকে উঠে আসা গলিত লাভা জমাট বেঁধে আগ্নেয় পর্বতের (Volcano) সৃষ্টি করে;

২) সাধারণত আগ্নেয় পর্বতকে দেখতে অনেকটা ত্রিভুজ বা শঙ্কুর মতো হয়;

৩) আগ্নেয় পর্বতের শীর্ষদেশে এক বা একাধিক জ্বালামুখ (Crater) নামে গহ্বর থাকে যা একটি নলের মতো পথের মাধ্যমে ভূগর্ভের ম্যাগমা গহ্বরের সঙ্গে যুক্ত থাকে;

৪) প্রধানত প্রশান্ত মহাসাগরের উপকূলভাগ এবং সমুদ্রের শৈলশিরার ওপর ভূত্বকের দুর্বল স্থানগুলোতে আগ্নেয় পর্বতের (Volcano) আধিক্য দেখা যায়;

৫) অনেক সময় আগ্নেয় পর্বতগুলো গভীর সমুদ্রতল থেকে সঞ্চিত হতে হতে দ্বীপের মতো সমুদ্রের ওপরে উঠে আসে;

৬) কখনও কখনও আগ্নেয় পর্বতগুলোতে লাভাস্তরের মধ্যে ছাই এবং প্রস্তরখন্ড দেখা যায়;

৭) পরবর্তী অগ্নুৎপাতের প্রবল বিস্ফোরণে কোনো কোনো আগ্নেয় পর্বত (Volcano) অনেকাংশে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়ে যায় (যেমন, ক্রাকাতোয়া আগ্নেয় পর্বতটি ১৯৯৩ সালে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয় );

৮) আগ্নেয় পর্বতের (Volcano) ঢাল  ও উচ্চতা খুব বেশি হয় না ।

উদাহরণ:-(1) ইতালির ভিসুভিয়াস, (2) জাপানের ফুজিয়ামা, (3) আফ্রিকার কিলিমাঞ্জারো, (4) মেক্সিকোর পোপোক্যাটেপেটল, (5) দক্ষিণ আমেরিকার অ্যাকনকাগুয়া, চিম্বোরাজো, কাটোপাক্সি (6) ভারতের আন্দামান ও নিকোবার দ্বীপপুঞ্জের অন্তর্গত ব্যারন ও নারকনডাম দ্বীপের আগ্নেয়গিরি প্রভৃতি । সাম্প্রতিককালে ১৯৯১ সালের এপ্রিল মাসে ও ১৯৯৫ সালের জানুয়ারী মাসে ব্যারন দ্বীপের আগ্নেয়গিরি থেকে অগ্নুৎপাত হয়েছে । 

পৃথিবীর প্রধান আগ্নেয়গিরি বলয়টি প্রশান্ত মহাসাগরকে ঘিরে একটি মালার মত দক্ষিণ আমেরিকার হর্ন অন্তরীপ থেকে শুরু করে আন্দিজ ও রকি পর্বত মালা হয়ে আলাস্কা পার হয়ে কামচাটকা, সাখালিন, জাপান ও ফিলিপাইনস দ্বীপপুঞ্জ হয়ে ইন্দোনেশিয়ায় গিয়ে শেষ হয়েছে । এর নাম 'প্রশান্ত মহাসাগরীয় আগ্নেয় মেখলা' ।   

(ঘ) ক্ষয়জাত পর্বত (Relict or Erosional or Residual Mountain)

ক্ষয়জাত পর্বতের সংজ্ঞা:- প্রাকৃতিক শক্তির প্রভাবে ও ক্ষয়কাজের ফলে বিস্তির্ণ উচ্চভূমি ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে যে পর্বতের সৃষ্টি হয় তাকে ক্ষয়জাত পর্বত (Erosional or Residual Mountain) বলে ।

ক্ষয়জাত পর্বতের উৎপত্তি:- ভঙ্গিল পর্বত, স্তূপ পর্বত ও আগ্নেয় পর্বত ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে যে পর্বতের সৃষ্টি হয় তাকে ক্ষয়জাত পর্বত (Relict Mountain) বলে । ভূপৃষ্ঠের উপরিভাগ বৃষ্টি, নদী, বায়ু, হিমবাহ প্রভৃতি কাজের ফলে প্রতিনিয়ত ক্ষয়প্রাপ্ত হচ্ছে । এইভাবে, অনেক সময় শক্ত শিলায় গড়া জায়গা কম ক্ষয় পেয়ে আশেপাশে বেশি ক্ষয়ে যাওয়া নরম শিলায় গঠিত জায়গা থেকে আলাদা হয়ে উঁচুতে থেকে যায়, এইভাবে ক্ষয়জাত পর্বত (Relict Mountain) সৃষ্টি হয়। ভূপৃষ্ঠের কোনো স্থানের কম ক্ষয় প্রাপ্ত হওয়া অবশিষ্ট অংশ পর্বতে পরিণত হয় বলে ক্ষয়জাত পর্বতকে অবশিষ্ট পর্বতও (Residual Mountain) বলা হয়।

উদাহরণ:- (1) ভারতের আরাবল্লী, (2) পূর্বঘাট পর্বত  (3) স্পেনের সিয়েরা নেভাদা (4) নরওয়ের ও সুইডেনের পর্বতশ্রেণি, (5) নীলগিরি, রাজমহল প্রভৃতি পর্বতগুলি ক্ষয়জাত পর্বতের উদাহরণ । আরাবল্লী পৃথিবীর এক অতি প্রাচীন পর্বতমালা ।

*****

Related Items

বহু বিকল্পীয় প্রশ্নোত্তর (M.C.Q) - বহির্জাত প্রক্রিয়া (Exogenetic forces)

বহু বিকল্পীয় প্রশ্নোত্তর (M.C.Q) - বহির্জাত প্রক্রিয়া (Exogenetic forces)

মাধ্যমিকের নমুনা বিকল্পীয় প্রশ্নোত্তর :-

Answer for Madhyamik Examination (WBBSE) - Geography 2017 (Bengali version)

Answer for Madhyamik Examination (WBBSE) - Geography 2018 (Bengali version)

Answer for Madhyamik Examination (WBBSE) - Geography 2018 (Bengali version)

বিভাগ —ক

১. বিকল্পগুলি থেকে সঠিক উত্তরটি নির্বাচন করে লেখো :     ১x১৪ = ১৪

  ১.১  শুষ্ক অঞ্চলে গিরিখাতকে বলা হয়—

Answer for Madhyamik Examination (WBBSE) - Geography 2019 (Bengali version)

Answer for Madhyamik Examination (WBBSE) - Geography 2019 (Bengali version)

বিভাগ — 'ক'

১।  বিকল্পগুলির থেকে সঠিক উত্তরটি নির্বাচন করে লেখো :     ১ x ১৪ = ১৪ 

Previous Year Question Paper of Madhyamik Geography (New Syllabus)

1. Madhyamik Examination (WBBSE) - 2020 Geography (Bengali version)

2. Madhyamik Examination (WBBSE) - 2019 Geography (Bengali version)

3. Madhyamik Examination (WBBSE) - 2018 Geography (Eng ver)

4. Madhyamik Examination (WBBSE) - 2018 Geography (Bengali version)