দুটি উল্লেখযোগ্য মালভূমির বিবর্তন আলোচনা কর ।

Submitted by avimanyu pramanik on Sun, 12/26/2021 - 11:01

প্রশ্ন:- দুটি উল্লেখযোগ্য মালভূমির বিবর্তন আলোচনা কর ।

ছোটনাগপুর মালভূমির বিবর্তন (ব্যবচ্ছিন্ন মালভূমি)

১) আজ যেখানে হিমালয় পর্বত দাঁড়িয়ে আছে, বহু কোটি বছর আগে সেখানে টেথিস সাগর নামে একটি অগভীর সমুদ্রের দক্ষিণে আগ্নেয় শিলায় গড়া গন্ডোয়ানাল্যান্ড নামে বহু প্রাচীন একটি বিস্তীর্ণ স্থলভাগ ছিল ।

২) ভূত্বকে পাতসঞ্চালনের প্রভাবে প্রবল ভূমিকম্পের ফলে সুবিস্তীর্ণ গন্ডোয়ানা ভূখন্ডটি বিভিন্ন ভাগে বিভক্ত ও পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ে দক্ষিন ভারত, আরব প্রভৃতি স্থানে মহাদেশীয় মালভূমিতে পরিণত হয় । ছোটনাগপুরের মালভূমিটি হল পৃথিবীর প্রাচীনতম ভূখন্ড গন্ডোয়ানা ল্যান্ডের অংশবিশেষ- যা অতি প্রাচীন প্রায় ১০০ কোটি বছর আগের প্রিক্যামব্রিয়ান যুগের আগ্নেয় (গ্রানাইট) এবং রূপান্তরিত (নাইস) শিলায় গড়া ।

৩) পরবর্তীকালে সূর্যকিরণ, বৃষ্টিপাত, বায়ুপ্রবাহ প্রভৃতি প্রাকৃতিক শক্তির দ্বারা ক্রমাগত ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে গেলে বিভিন্ন নদনদী ও তাদের শাখা-প্রশাখা সুপ্রাচীন এই মালভূমি অঞ্চলটিকে বিচ্ছিন্ন করে ব্যবচ্ছিন্ন মালভূমিতে পরিণত করে ।

৪) যুগ যুগ ধরে ক্ষয়প্রাপ্ত হতে হতে বর্তমানে ছোটনাগপুর মালভূমি পূর্ব দিকের অংশটি সমপ্রায় ভূমিতে পরিণত হয়েছে যার মাঝে মধ্যে অপেক্ষাকৃত কঠিন শিলায় গঠিত নাতিউচ্চ ছোটো ছোটো পাহাড় বা মোনাডনক দেখা যায় (যেমন, পরেশনাথ ও পাঞ্চেত পাহাড়) ।

লাভাগঠিত ডেকান্ট্রাপ মালভূমির বিবর্তনছয় সাত কোটি বছর আগে ভূপৃষ্ঠের অসংখ্য ফাটলের মধ্য দিয়ে ভূগর্ভের অতি উত্তপ্ত তরল শিলা বা ম্যাগমা কোনো বিস্ফোরণ না ঘটিয়ে অতি ধীর গতিতে লাভা রূপে বেরিয়ে এসে দাক্ষিণাত্য মালভূমির উত্তর-পশ্চিম অংশের প্রায় পাঁচ লক্ষ বর্গমিটার বিস্তীর্ণ অঞ্চলকে প্রধানত ব্যাসল্ট জাতীয় নিঃসারী আগ্নেয় শিলায় ঢেকে ফেলে ছিল । পরবর্তীকালে বিভিন্ন প্রাকৃতিক শক্তি, যেমন- রোদ, বৃষ্টি, বায়ুপ্রবাহ, নদী প্রভৃতির ক্ষয়কাজের প্রভাবে এই মালভূমি অঞ্চলের ওপরের অংশ ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে বিবর্তনের মাধ্যমে বর্তমানের আকার ধারণ করেছে । ব্যাসল্ট জাতীয় আগ্নেয় শিলায় গঠিত হওয়ায় এই অঞ্চলের পাহাড়গুলির শীর্ষদেশ চ্যাপ্টা এবং পার্শ্বদেশ পশ্চিম থেকে পূর্বে সিঁড়ির মতো ধাপে ধাপে ঢালু হয়ে নীচের দিকে নেমে যাওয়ায় দাক্ষিণাত্যর মালভূমির উত্তর-পশ্চিমের এই অঞ্চলটিকে ডেকানট্রাপ বলা হয় । সুইডিস ভাষায় ট্রাপ কথাটির অর্থ হল সিঁড়ি ।

******

Comments

Related Items

ভারতের বর্তমান রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল সমূহ

ভারতের বর্তমান রাজ্য সমূহ (২০২১ সাল পর্যন্ত ) :

১. অন্ধ্রপ্রদেশ : এই রাজ্যের আয়তন হল ১,৬০,২০৫ বর্গ কিমি. ও রাজধানী হল অমরাবতী ।

২. অরুণাচল প্রদেশ : এই রাজ্যের আয়তন হল ৮৩,৭৪৩ বর্গ কিমি. ও রাজধানী হল ইটানগর ।

স্বাধীনতা-উত্তর ভারতের রাজ্যগুলির বিন্যাস

স্বাধীনতা-উত্তর ভারতের রাজ্যগুলির বিন্যাস : প্রায় ১০০ বছর প্রত্যক্ষভাবে ইংরেজ শাসনাধীন থাকার পর ব্রিটিশ পার্লামেন্টে পাস হওয়া ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের 'ভারতের স্বাধীনতা আইন' অনুসারে ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ১৫ই আগস্ট অবিভক্ত ভারত দ্বিখণ্ডিত হয়ে স্বাধীনতা লাভ করে এব

ভারতের ভৌগলিক অবস্থান

অবস্থান (Location) : ভারত পৃথিবীর উত্তর গোলার্ধে এশিয়া মহাদেশের দক্ষিণে অবস্থিত একটি দেশ । নিরক্ষরেখার উত্তরে অর্থাৎ উত্তর গোলার্ধে এবং মূলমধ্যরেখার পূর্বে অর্থাৎ পূর্ব গোলার্ধে অবস্থিত অর্থাৎ ভারত উত্তর-পূর্ব গোলার্ধে অবস্থিত । ভারতের মূল ভূখণ্ড দক্ষি

ভারত (India)

ভারত :- প্রাচীন পারসিক লিপিতে 'সপ্ত সিন্ধু' কে বলা হয়েছে হপ্ত হিন্দু । সিন্ধু তীরবর্তী বসবাসকারী মানুষকে বিদেশীরা হিন্দু বলত এবং তার থেকেই হিন্দুস্থান কথাটি এসেছে । প্রাচীন পারসি শব্দ হিন্দুস (Hindus) থেকে উৎপন্ন ইণ্ডাস (Indus) থেকে ইণ্ডিয়া (INDIA) নামট

ভাগীরথী-হুগলী নদীর ওপর বর্জ্যের প্রভাব (Effects of waste disposal on Bhagirathi-Hooghly river)

ভাগীরথী-হুগলী নদীর ওপর বর্জ্যের প্রভাব (Effects of waste disposal on Bhagirathi-Hooghly river) : প্রায় 2500 কিমি দীর্ঘ গঙ্গা নদী ভারতের জীবন রেখা । গঙ্গা নদীর পার্শ্ববর্তী কলকারখানার বর্জ্য, পৌরসভার বর্জ্য, কৃষি ক্ষেত্রের কীটনাশক বাহিত জল ইত্যাদি এই নদ