জোয়ারভাটার গতিবিধি (Timings of Tides)

Submitted by avimanyu pramanik on Sat, 11/09/2013 - 10:06

জোয়ারভাটার গতিবিধি (Timings of Tides) :

পৃথিবীর সর্বত্র দিনে একবার মুখ্য জোয়ার ও একবার গৌণ জোয়ার আসে । একটি মুখ্য জোয়ারের পর পরবর্তী মুখ্য জোয়ার ঠিক 24 ঘন্টা পরে আসে না, প্রায় 25 ঘন্টা (24 ঘন্টা 52 মিনিট) পরে আসে ।

চন্দ্র যদি স্থির থাকত, তাহলে পৃথিবীর প্রতিটি স্থান 24 ঘন্টা অন্তর একবার চন্দ্রের সামনে আসত এবং সেখানে মুখ্য জোয়ার হত । কিন্তু চন্দ্রও নিজের কক্ষে অবস্থান করে পশ্চিম থেকে পূর্বে 27 দিনে পৃথিবীকে একবার প্রদক্ষিণ করে । পৃথিবী গোলক বলে তার পরিধির কৌণিক পরিমাণ 360° । এই 360° প্রদক্ষিণ করতে চন্দ্রের 27 দিন সময় লাগে । সুতরাং পৃথিবীর একবার আবর্তনের সময়ে অর্থাৎ 24 ঘন্টায় চন্দ্র নিজের কক্ষপথের প্রায় (360 ÷ 27 = 13.3°) 13° পথ এগিয়ে যায় । এই পথ যেতে পৃথিবীর আরও (13° x 4 = 52) 52 মিনিট সময় লাগে । সেইজন্য পৃথিবীর কোনো জায়গায় একটি মুখ্য জোয়ারের পর পরবর্তী মুখ্য জোয়ার ঠিক 24 ঘন্টা পরে না এসে 24 ঘন্টা 52 মিনিট পরে আসে । প্রত্যেক জায়গায় দিনে একবার মুখ্য জোয়ার ও একবার গৌণ জোয়ার হয়; মুখ্য জোয়ার ও গৌণ জোয়ারের মধ্যে সময়ের ব্যবধান প্রায় 12 ঘন্টা 26 মিনিট । প্রত্যেক জোয়ারের প্রায় 6 ঘন্টা 13 মিনিট পরে সেখানে ভাটার মাঝ সময় আসে ।

দিনে দু-বার জোয়ার হয় :- পৃথিবীর যে অংশে মুখ্য জোয়ার হয় তার বিপরীত বা প্রতিপাদ স্থানে তখন গৌণ জোয়ার হয় । আর মুখ্য এবং গৌণ জোয়ার যে স্থানে সংঘটিত হয় তার সমকোণে অবস্থিত স্থানে ভাটা হয় । এদিকে পৃথিবীর আবর্তন গতির ফলে যে স্থানে যখন মুখ্য জোয়ার হয়, তার ১২ ঘন্টা ২৬ মিনিট পর ওই স্থানে মুখ্য জোয়ারের স্থানের বিপরীত বা প্রতিপাদ স্থানটি চন্দ্রের ঠিক সামনে এসে পৌঁছায় এবং সে স্থানে তখন প্রধানত চন্দ্রের আকর্ষণে মুখ্য জোয়ার হয় । তখনই তার বিপরীত দিকে অর্থাৎ প্রথমে যে স্থানে মুখ্য জোয়ার হয়েছিল সেখানে গৌণ জোয়ার হয় । অতএব, পৃথিবীর একবার আবর্তন কালে (অর্থাৎ ২৪ ঘন্টায়) পৃথিবীর প্রত্যেক স্থান একবার চন্দ্রের সন্মুখীন হয় বলে, ভূপৃষ্ঠের জলভাগের প্রত্যেক স্থানে দিনে দুবার জোয়ার হয়, যথা: (১) একবার মুখ্য জোয়ার এবং (২) একবার গৌণ জোয়ার ।

ভূপৃষ্ঠের একটি স্থানে মুখ্য জোয়ারের ২৪ ঘন্টা ৫২ মিনিট পরে আবার সেখানে মুখ্য জোয়ার হয়

চন্দ্র পৃথিবীর চারিদিকে 27 দিনে একবার 360° কৌণিক পথে ঘুরে আসে অর্থাৎ 24 ঘন্টায় চন্দ্র কমপক্ষে 360 ÷ 27 = প্রায় 13° কৌণিক পথ অতিক্রম করে । পৃথিবীর এই 13° পথ অগ্রসর হতে আরও (13 x 4) = 52 মিনিট সময় লাগে । এইজন্য পৃথিবীর কোনো অংশেই প্রতিদিন একই সময় মুখ্য জোয়ার হয় না । পৃথিবীর কোনো নির্দিষ্ট স্থানে প্রত্যেক মুখ্য বা গৌণ জোয়ার আরও 52 মিনিট পরে (অর্থাৎ মোট 24 ঘন্টা 52 মিনিট পরে) অনুষ্ঠিত হয় । পৃথিবীর একই নির্দিষ্ট স্থানে কোনো দিন যে সময় মুখ্য জোয়ার হয় তার 12 ঘন্টা 26 মিনিট (24 ঘন্টা 52 মিনিট ÷ 2) পরে সেখানে গৌণ জোয়ার হয় এবং ওই মুখ্য জোয়ারের 24 ঘণ্টা 52 মিনিট পরে সেখানে পুনরায় মুখ্য জোয়ার হয় ।  অর্থাৎ দুটি মুখ্য জোয়ারের মধ্যে সময়ের পার্থক্য হল 24 ঘন্টা 52 মিনিট ।

*****

Related Items

নদীর বহন কাজ কী কী প্রক্রিয়ায় সংঘটিত হয় এবং নদীর অবঘর্ষ ক্ষয় ও ঘর্ষণ ক্ষয়ের মধ্যে পার্থক্য কী ?

প্রশ্ন : নদীর বহন কাজ কী কী প্রক্রিয়ায় সংঘটিত হয় এবং নদীর অবঘর্ষ ক্ষয় ও ঘর্ষণ ক্ষয়ের মধ্যে পার্থক্য কী ?

বায়ুর কাজ কোথায় বেশি দেখা যায় ? বায়ু কোন কোন প্রক্রিয়ায় ক্ষয়সাধন এবং বহন করে ?

প্রশ্ন:- বায়ুর কাজ কোথায় বেশি দেখা যায় ? বায়ু কোন কোন প্রক্রিয়ায় ক্ষয়সাধন এবং বহন করে ?

প্রধানত মরুভূমি অঞ্চলেই বায়ুর ক্ষয়কাজ সবচেয়ে বেশি হয় । এর কারণ হল—

রেগোলিথ (Regolith) কী ?

প্রশ্ন:-  রেগোলিথ (Regolith) কী ?

জলবায়ুর সঙ্গে আবহবিকারের সম্পর্ক কী এবং আবহবিকারের ফলাফল কী কী ?

প্রশ্ন:- জলবায়ুর সঙ্গে আবহবিকারের সম্পর্ক কী এবং আবহবিকারের ফলাফল কী কী ?

উত্তর:- আবহবিকারের বিভিন্ন প্রক্রিয়াগুলি কম বেশি প্রায় সর্বত্র কাজ করলেও কোনো বিশেষ ধরনের আবহবিকার বিশেষ কোনো জলবায়ু অঞ্চলেই বেশি কাজ করে, যেমন—

জলদ্বারা কীভাবে আবহবিকার সংঘটিত হয় ?

প্রশ্ন:- জলদ্বারা কীভাবে আবহবিকার সংঘটিত হয় ?

(১) বৃষ্টিবহুল অঞ্চলে জল বছরের পর বছর ধরে আঘাত করে করে শিলাখন্ডগুলিকে দুর্বল করে ফেলে এবং এতে শিলাখন্ডগুলি ক্রমশ চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যায়;