ক্ষয়ীভবন ও নগ্নীভবন বলতে কী বোঝায় ?

Submitted by avimanyu pramanik on Mon, 12/27/2021 - 15:06

প্রশ্ন:-  ক্ষয়ীভবন নগ্নীভবন বলতে কী বোঝায় ?

ক্ষয়ীভবন :- ক্ষয়ীভবন একটি প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে আবহবিকারের ফলে সৃষ্টি হওয়া শিলাচূর্ণগুলি স্থানান্তরিত হয়, অর্থাৎ ক্ষয়ীভবনের সঙ্গে অপসারণ যুক্ত । ক্ষয়ীভবনের সময় আবহাওয়ার বিভিন্ন উপাদান ছাড়াও বিভিন্ন প্রাকৃতিক শক্তি যথা-  বৃষ্টিপাত, হিমবাহ প্রবাহ বা বায়ুপ্রবাহ প্রভৃতির প্রভাবে শিলার ক্ষয়প্রাপ্তি ঘটে, যার ফলে মূল শিলাস্তরের অভ্যন্তর ভাগ উন্মুক্ত হয়ে পড়ে । ক্ষয়ীভবনের ফলে ভূমিরূপের ব্যাপক পরিবর্তন ঘটলেও শিলার মূল বৈশিষ্ট্য যেমন- গঠন, খনিজের বিন্যাস প্রকৃতি প্রভৃতির পরিবর্তন ঘটে না ।

নগ্নীভবন :- আবহবিকার হল শুধুমাত্র শিলার ওপরের অংশের বিচ্ছিন্নকরণ বা বিয়োজন । আবহবিকারের ফলে ভূত্বকের শিলাসমূহের উপরিভাগ চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে মূল শিলা থেকে বিচ্ছিন্ন অবস্থায় সেখানেই পড়ে থাকে, কিন্তু এই প্রক্রিয়ায় শিলার বিচূর্ণীকৃত অংশগুলি অপসারিত হয় না । অপরদিকে, আবহবিকারের ফলে সৃষ্ট শিলাচূর্ণগুলি- যা মূল শিলা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে সেখানেই পড়ে থাকে তা নদী, হিমবাহ, বায়ুপ্রবাহ বা বৃষ্টিপাতের দ্বারা মূল শিলা থেকে অন্যত্র অপসারিত হলে তাকে ক্ষয়ীভবন বলে । অর্থাৎ ক্ষয়ীভবন হল ভূপৃষ্ঠের শিলাস্তরের বিচূর্ণীকরণ, বিচ্ছিন্নকরণ এবং স্থানচ্যুতিকরণের সন্মিলিত ফল । সংক্ষেপে বলতে গেলে, আবহবিকারের ফলে ভুত্বকের উপরিভাগের শিলাসমূহ চূর্নবিচূর্ণ হয়, কিন্তু অপসারিত হয় না । ক্ষয়ীভবনের সাহায্যেই ভূত্বকের শিলাসমূহ অপসারিত হয় । সুতরাং আবহবিকার ও ক্ষয়ীভবনের মধ্যে প্রধান পার্থক্য এই যে, আবহবিকারের সঙ্গে অপসারণ যুক্ত নয়, কিন্তু ক্ষয়ীভবনের সঙ্গে অপসারণ যুক্ত । আবহবিকার প্রক্রিয়াটি যেখানে শেষ হয়, ক্ষয়ীভবন প্রক্রিয়াটি সেখানে শুরু হয় । আবহবিকার ও ক্ষয়ীভবন হল সম্পূর্ণ পৃথক দুটো প্রক্রিয়া, আর এই প্রক্রিয়া দুটিকে একসঙ্গে নগ্নীভবন বলা হয় ।

*****

Comments

Related Items

সমুদ্রস্রোত (Ocean Currents)

সমুদ্রস্রোত (Ocean Currents) : সমুদ্রের জলরাশি নিয়মিতভাবে, নির্দিষ্ট দিকে একস্থান থেকে অন্যস্থানে প্রবাহিত হয় । সমুদ্রজলের এই প্রবাহকে সমুদ্রস্রোত বলে । সমুদ্রস্রোত সাধারণত একমুখী হয় । বায়ুপ্রবাহ দ্বারা তাড়িত হয়ে সমুদ্রস্রোতের সৃষ্টি হয় বলে এর গতিব

বারিমন্ডল (Hydrosphere)

বারিমন্ডল (Hydrosphere) : সৃষ্টির প্রথম অবস্থায় পৃথিবী ছিল এক উত্তপ্ত জ্বলন্ত মণ্ডল । ধীরে ধীরে শীতল ও ঘনীভূত হয়ে তরল অবস্থায় আসে এবং অবিরাম তাপ বিকিরণ করে পৃথিবী ক্রমশ শীতল ও সংকুচিত হয় । আর সংকোচনের ফলে ভূপৃষ্ঠের গায়ে উঁচুনীচু আবরণের সৃষ্টি হয় । এই সম

পৃথিবীর জলবায়ু অঞ্চল (Major climatic regions of the world)

পৃথিবীর জলবায়ু অঞ্চল (Major climatic regions of the world) : পৃথিবীর যে সকল অঞ্চলে বছরের নির্দিষ্ট সময়ে মোটামুটি একই ধরনের বা সমধর্মী জলবায়ুগত বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত হয়, সেই সকল অঞ্চলকে এক-একটি জলবায়ু অঞ্চল বলা হয় । পৃথিবীর মুখ্য জলবায়ু অঞ্চলগুলি হল —

বিভিন্ন প্রকারের বৃষ্টিপাত (Types of Rainfall)

বিভিন্ন প্রকারের বৃষ্টিপাত (Types of Rainfall) : উৎপত্তির কারণ ও বৈশিষ্ট্যের পার্থক্য অনুসারে বৃষ্টিপাতকে সাধারণত তিন শ্রেণিতে ভাগ করা যায়, যথা:- (১) পরিচলন বৃষ্টিপাত, (২) শৈলোৎক্ষেপ বৃষ্টিপাত এবং (৩) ঘূর্ণবাত বৃষ্টিপাত ।

অধঃক্ষেপণ (Precipitation)

অধঃক্ষেপণ (Precipitation) : সূর্যের উত্তাপে ভূপৃষ্ঠের সমুদ্র, হ্রদ, নদী, পুকুর, খাল, বিল প্রভৃতি জলরাশি থেকে জল জলীয়বাষ্পে পরিণত হয় । জলীয়বাষ্পপূর্ণ বাতাস হাল্কা হওয়ার দরুন ঊর্ধগামী হয় । উপরের বায়ুমণ্ডলের প্রবল শৈত্যের সংস্পর্শে এলে ঘনিভবনের ফলে জলীয়বাষ