উৎপত্তি ও গঠন অনুসারে তিন রকমের সঞ্চয়জাত সমভূমির বর্ণনা দাও

Submitted by avimanyu pramanik on Sun, 12/26/2021 - 18:47

প্রশ্ন:- উৎপত্তি ও গঠন অনুসারে তিন রকমের সঞ্চয়জাত সমভূমির বর্ণনা দাও ।

উত্তর:  উৎপত্তি ও গঠন অনুসারে, সঞ্চয়জাত সমভূমিগুলিকে প্রধান তিন ভাগে ভাগ করা যায়, যথা—

(১) পলিগঠিত সমভূমি, (২) ব-দ্বীপ সমভূমি এবং (৩) উপকূলিয় সমভূমি

(১) পলিগঠিত সমভূমি (Alluvial Plain) এবং প্লাবন ভূমি বা বন্যাগঠিত সমভূমি (Alluvial Flood Plain) : নিম্নগতিতে নদী সমুদ্রের কাছাকাছি চলে এলে নদীপথের ঢাল হ্রাস পায় এবং নদীবাহিত শিলাখন্ড, নুড়ি, বালি প্রভৃতি নদী গর্ভে সঞ্চিত হতে থাকে, এর ফলে নদীর গভীরতা ক্রমশ কমে যায় । বর্ষাকালে হঠাৎ জল বেড়ে গেলে এই অগভীর নদী অতিরিক্ত জল বহন করতে পারে না এবং এর ফলে নদীতে বন্যা দেখা দেয় । তখন বন্যার জলে দু’কূল প্লাবিত হয় এবং প্লাবিত অঞ্চলে পলি, বালি ও কাদা প্রভৃতি সঞ্চিত হয়ে এক নতুন ভূমিরূপ বা প্লাবনভূমির সৃষ্টি হয় তাকে পলিগঠিত সমভূমি বলা হয় । নদীতীরের দুপাশে বন্যার জলে সঞ্চিত পলির দ্বারা গড়ে ওঠা সমতলভূমিকে প্লাবনভূমি বলে ।

(২) বদ্বীপ সমভূমি [Deltaic Plain] : নদী যেখানে সমুদ্রে এসে পড়ে তাকে নদীর মোহনা বলে । এই মোহানাতে নদীর জলের সঙ্গে বাহিত পলি, নুড়ি, কাঁকর, কাদা, বালি ইত্যাদি জমে যে নতুন ভূভাগের সৃষ্টি হয় তাকে দ্বীপ বলে । দ্বীপের চারিদিকেই জল থাকে । এই দ্বীপকে দেখতে যখন অনেকটা বাংলা ‘ব’ বা গ্রিক অক্ষর ডেল্টা -র মতো হয়, তখন তাকে বদ্বীপ বা ডেল্টা (Delta) বলে । বদ্বীপ সৃষ্টির পর নদীর জল বদ্বীপে বাধাপ্রাপ্ত হলে নদী বহু সাখায় বিভক্ত হয়ে পড়ে এবং বদ্বীপগুলির চার ধারে আরও বেশি মাত্রায় পলি জমতে থাকে, যার ফলে বদ্বীপগুলো ক্রমশ আয়তনে বড় হয়ে মূল ভূভাগের সঙ্গে মিশে যায় । এইভাবে যে সমভূমি সৃষ্টি হয় তাকে ব-দ্বীপ সমভূমি বলে ।

উদাহরণ:  গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র-মেঘনার মধ্যবর্তী সমভূমিটি হল পৃথিবীর বৃহত্তম ব-দ্বীপ সমভূমি । আফ্রিকার নীলনদের বদ্বীপ সমভূমিটি উর্বরতা ও কৃষি উৎপাদনের জন্য পৃথিবী বিখ্যাত ।

(৩) উপকূলীয় সমভূমি (Coastal Plain) : নানাভাবে উপকূল সমভূমি সৃষ্টি হয়, যেমন—

(i) সমুদ্রস্রোতের মাধ্যমে আসা পলি, বালি, কাঁকর, কাদা প্রভৃতি পদার্থ উপকূলের অগভীর সমুদ্রে ক্রমাগত সঞ্চিত হয়ে উপকূলে সমভূমির সৃষ্টি করে; আবার

(ii) সমুদ্রের ঢেউ এবং জোয়ার-ভাটার প্রভাবে উপকূলের ভূমির ক্ষয়প্রাপ্ত অংশ অগভীর সমুদ্রে সঞ্চিত হয়ে সমভূমির সৃষ্টি করে । এছাড়া

(iii) উপকূলের কাছাকাছি সমুদ্রের অগভীর অংশ নদীবাহিত পলি দ্বারা ভরাট হয়ে বা ভূমিকম্পের ঊর্ধ্বচাপের প্রভাবে উঁচু হয়েও উপকূলীয় সমভূমি সৃষ্টি হতে পারে ।

উদাহরণ : ভারতের পূর্ব ও পশ্চিম উপকূলের কোনও কোনও অংশে উপকূলীয় সমভূমি দেখা যায় । দিঘার নিকটবর্তী জুনপুটে পলি জমে এরকম সমভূমি সৃষ্টি হচ্ছে ।

*****

Comments

Related Items

সমুদ্রস্রোত (Ocean Currents)

সমুদ্রস্রোত (Ocean Currents) : সমুদ্রের জলরাশি নিয়মিতভাবে, নির্দিষ্ট দিকে একস্থান থেকে অন্যস্থানে প্রবাহিত হয় । সমুদ্রজলের এই প্রবাহকে সমুদ্রস্রোত বলে । সমুদ্রস্রোত সাধারণত একমুখী হয় । বায়ুপ্রবাহ দ্বারা তাড়িত হয়ে সমুদ্রস্রোতের সৃষ্টি হয় বলে এর গতিব

বারিমন্ডল (Hydrosphere)

বারিমন্ডল (Hydrosphere) : সৃষ্টির প্রথম অবস্থায় পৃথিবী ছিল এক উত্তপ্ত জ্বলন্ত মণ্ডল । ধীরে ধীরে শীতল ও ঘনীভূত হয়ে তরল অবস্থায় আসে এবং অবিরাম তাপ বিকিরণ করে পৃথিবী ক্রমশ শীতল ও সংকুচিত হয় । আর সংকোচনের ফলে ভূপৃষ্ঠের গায়ে উঁচুনীচু আবরণের সৃষ্টি হয় । এই সম

পৃথিবীর জলবায়ু অঞ্চল (Major climatic regions of the world)

পৃথিবীর জলবায়ু অঞ্চল (Major climatic regions of the world) : পৃথিবীর যে সকল অঞ্চলে বছরের নির্দিষ্ট সময়ে মোটামুটি একই ধরনের বা সমধর্মী জলবায়ুগত বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত হয়, সেই সকল অঞ্চলকে এক-একটি জলবায়ু অঞ্চল বলা হয় । পৃথিবীর মুখ্য জলবায়ু অঞ্চলগুলি হল —

বিভিন্ন প্রকারের বৃষ্টিপাত (Types of Rainfall)

বিভিন্ন প্রকারের বৃষ্টিপাত (Types of Rainfall) : উৎপত্তির কারণ ও বৈশিষ্ট্যের পার্থক্য অনুসারে বৃষ্টিপাতকে সাধারণত তিন শ্রেণিতে ভাগ করা যায়, যথা:- (১) পরিচলন বৃষ্টিপাত, (২) শৈলোৎক্ষেপ বৃষ্টিপাত এবং (৩) ঘূর্ণবাত বৃষ্টিপাত ।

অধঃক্ষেপণ (Precipitation)

অধঃক্ষেপণ (Precipitation) : সূর্যের উত্তাপে ভূপৃষ্ঠের সমুদ্র, হ্রদ, নদী, পুকুর, খাল, বিল প্রভৃতি জলরাশি থেকে জল জলীয়বাষ্পে পরিণত হয় । জলীয়বাষ্পপূর্ণ বাতাস হাল্কা হওয়ার দরুন ঊর্ধগামী হয় । উপরের বায়ুমণ্ডলের প্রবল শৈত্যের সংস্পর্শে এলে ঘনিভবনের ফলে জলীয়বাষ