Submitted by avimanyu pramanik on Tue, 08/21/2012 - 11:49

অধঃক্ষেপণ (Precipitation)

শিশিরাঙ্ক :- যে উষ্ণতায় বায়ু জলীয়বাষ্পের দ্বারা সম্পূর্ণ সম্পৃক্ত বা পরিপৃক্ত [Saturated] হয় তাকে শিশিরাঙ্ক বলে । শিশিরাঙ্কে বাতাসের আপেক্ষিক আদ্রতা থাকে ১০০% । উষ্ণতা আরও কমলে বায়ু তার জলীয়বাষ্প ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত জলীয়বাষ্প ত্যাগ করে, তখন ওই জলীয়বাষ্প ঘনীভূত হয়ে শিশিরে পরিণত হয় ।

শিশিরবিন্দু তাপমাত্রা :-  যে তাপমাত্রায় বাতাসের আপেক্ষিক আর্দ্রতা ১০০% হয়, সেই তাপমাত্রাকে শিশিরবিন্দু তাপমাত্রা বলে । এই তাপমাত্রায় বায়ু সম্পূর্ণভাবে সম্পৃক্ত থাকে ।

ঘনীভবন (Condensation):- জলীয়বাষ্পপূর্ণ আর্দ্র বায়ু যখন শীতল হয়ে শিশিরাঙ্কে পৌঁছায় তখন বাযুস্থিত জলীয়বাষ্প ঘনীভূত হয়ে জলকণায় পরিণত হয় । এই প্রক্রিয়াকে ঘনীভবন বলে ।

অধঃক্ষেপণ (Precipitation):- সূর্যের উত্তাপে ভূপৃষ্ঠের সমুদ্র, হ্রদ, নদী, পুকুর, খাল, বিল প্রভৃতি জলরাশি থেকে জল জলীয়বাষ্পে পরিণত হয় । জলীয়বাষ্পপূর্ণ বাতাস হাল্কা হওয়ার দরুন ঊর্ধগামী হয় । উপরের বায়ুমণ্ডলের প্রবল শৈত্যের সংস্পর্শে এলে ঘনিভবনের ফলে জলীয়বাষ্প ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জলকণায় পরিণত হয় ও  বাতাসের ধূলিকণাকে আশ্রয় করে ভেসে বেড়ায় । জলকণাগুলি যখন পরস্পরের সঙ্গে মিলিত হয়ে বড় বড় জলকণায় পরিণত হয় তখন সেগুলি নিজেদের ভারে ও পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ শক্তির প্রভাবে বাতাসে আর ভেসে বেড়াতে পারে না । তখন বৃষ্টিপাত, তুষারপাত, শিলাবৃষ্টি, স্লিট, শিশির, তুহিন প্রভৃতি রূপে ভূপৃষ্ঠে পতিত হয় । এই প্রক্রিয়াকে অধঃক্ষেপণ বলে ।

অধঃক্ষেপণের প্রকারভেদ:- অধঃক্ষেপণ তরল এবং কঠিন এই দু’ভাবেই হয় । তরল অধঃক্ষেপণ হল বৃষ্টিপাত আর কঠিন অধঃক্ষেপণ হল তুষারপাত, স্লিট বা শিলাবৃষ্টি । বেশিরভাগ অধঃক্ষেপণ বৃষ্টিপাত হিসাবে পরিচিত হলেও সব রকমের অধঃক্ষেপণই বৃষ্টিপাত নয় । জলীয়বাষ্প ঘনীভূত হয়ে ভূপৃষ্ঠে এসে না পৌঁছালে তাকে অধঃক্ষেপণ বলা হয় না । সে জন্য কুয়াশাকে [Fog] অধঃক্ষেপণ বলা যায় না ।  

(১) বৃষ্টিপাত,  (২) তুষারপাত,  (৩) শিলাবৃষ্টি,  (৪) স্লিট,  (৫) শিশির, (৬) তুহিন প্রভৃতি অধঃক্ষেপণের উদাহরণ ।

(১) বৃষ্টিপাত (Rainfall) :- সূর্যের উত্তাপে ভূপৃষ্ঠের সমুদ্র, হ্রদ, নদী, পুকুর, খাল, বিল প্রভৃতি জলরাশি থেকে জল জলীয়বাষ্পে পরিণত হয় । জলীয়বাষ্পপূর্ণ বাতাস হাল্কা হওয়ার দরুন ঊর্ধগামী হয় । উপরের বায়ুমণ্ডলের প্রবল শৈত্যের সংস্পর্শে এলে ঘনিভবনের ফলে জলীয়বাষ্প ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জলকণায় পরিণত হয় ও  বাতাসের ধূলিকণাকে আশ্রয় করে মেঘের আকারে আকাশে ভেসে বেড়ায় । জলকণাগুলি যখন পরস্পরের সঙ্গে মিলিত হয়ে বড় বড় জলকণায় পরিণত হয় তখন সেগুলি নিজেদের ভারে ও পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ শক্তির প্রভাবে বাতাসে আর ভেসে বেড়াতে পারে না । তখন সেই মেঘ থেকে জলকণাগুলি প্রধানত জলের ফোঁটার আকারে ঝরঝর করে ভূপৃষ্ঠে পতিত হয় । মেঘ থেকে ভূপৃষ্ঠে পতিত এই জলধারাকে বৃষ্টিপাত বলে ।

বৃষ্টিপাতের কারণ :- সব মেঘ থেকেই বৃষ্টি হয় না । বৃষ্টিপাতের জন্য প্রয়োজন হয়

(ক) জলীয়বাষ্পপূর্ণ সম্পৃক্ত বায়ু,

(খ) বায়ুর ওপরে ওঠার প্রবণতা

(গ) সেই বায়ুকে শীতল করার জন্য প্রয়োজনীয় উপাদান ।

(i) জলীয়বাষ্প বিশুদ্ধ বায়ুর তুলনায় হালকা হওয়ায় প্রচুর জলীয় বাষ্পপূর্ণ সম্পৃক্ত বায়ুও হালকা হয়ে ওপরের দিকে উঠে যায় এবং ওপরের বায়ুমণ্ডলের প্রবল শৈত্যের সংস্পর্শে এসে দ্রুত শিশিরাঙ্কে পৌঁছায় । এছাড়া, বায়ুমণ্ডলের ওপরের স্তরে বায়ুচাপ কম হওয়ায় সেই বায়ু সহজে প্রসারিত হয়ে আরও শীতল হয়ে পড়ে ।

(ii) যেহেতু বাতাসের জলীয়বাষ্প ধারণ করার ক্ষমতা উষ্ণতার উপর নির্ভর করে, সেই জন্য উষ্ণতার তুলনায় জলীয়বাষ্পের পরিমাণ বেশি হলে বায়ু আর জলীয়বাষ্প ধরে রাখতে পারে না । তখন জলীয়বাষ্পগুলো বায়ু থেকে আলাদা হয়ে বায়ুমণ্ডলে ভাসমান এক একটি ধুলিকণাকে আশ্রয় করে মেঘরূপে আকাশে ভাসতে থাকে । ওই মেঘ বাতাসের প্রভাবে আরও ওপরে উঠে আরও শীতল হলে অতিরিক্ত জলীয়বাষ্প ঘনীভূত হয়ে ছোটো ছোটো জলকণায় পরিণত হয় ।

(iii) বায়ুতে ভাসমান ছোটো ছোটো জলকণাগুলি পরস্পরের সঙ্গে মিলিত হয়ে আরও বড়ো জলকণায় পরিণত হয় । বড়ো জলকণাগুলো আশপাশের ছোটো জলকণাগুলিকে গ্রাস করে নিয়ে ক্রমশ এত বড়ো হয় যে তারা আর আকাশে ভেসে বেড়াতে পারে না । পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ শক্তির প্রভাবে তখন তারা বৃষ্টিপাত হিসেবে ভূপৃষ্ঠে পতিত হয় ।

(২) তুষারপাত (Snowfall):- শীতপ্রধান অঞ্চলে অত্যাধিক ঠান্ডায় বাতাসের জলীয়বাষ্প ঘনীভূত হয়ে জলকণার পরিবর্তে হালকা পেজা তুলার মত নরম তুষারে পরিণত হয় এবং উপরের বায়ুমন্ডল থেকে সেগুলি ভূপৃষ্ঠে এসে পতিত হয় । একে তুষারপাত বলে ।  

(৩) শিলাবৃষ্টি (Hail):- বায়ু প্রবাহের ঊর্ধ্বগতির জন্য অনেক সময় ঝড়ের মুখে জলীয়বাষ্পপূর্ণ বায়ু অনেক ওপরে উঠে যায় ও সেখানকার অত্যাধিক শৈত্যের সংস্পর্শে এসে জলীয়বাষ্প জমাট বেঁধে কঠিন বরফের কণায় পরিণত হয় । এইসব বরফকণা পরস্পরের সঙ্গে মিলিত হয়ে আরও বড়ো বরফ কণায় পরিণত হলে এক সময় তারা আর বাতাসে ভেসে বেড়াতে পারে না । তারপর বায়ুর বেগ কমলে এবং পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ শক্তির প্রভাবে সেই জমাট বাঁধা বরফের কণা দ্রুত ভূপৃষ্ঠে ঝরতে থাকে । এর সঙ্গে বৃষ্টিপাত ও হয় । এই বৃষ্টিপাতকে শিলাবৃষ্টি বলা হয় ।

(৪) স্লিট (Sleet) :- শীতপ্রধান অঞ্চলে বা নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে শীতকালে বৃষ্টিপাতের বদলে বায়ুস্থিত বরফের কণাগুলি ভূপৃষ্ঠে ঝরঝর করে ঝরে পড়ে । এই বরফকণাগুলি বেশ শক্ত হয় । একে স্লিট বলে ।

(৫) শিশির (Dew):- রাতে তাপ বিকিরণ করে ভূপৃষ্ঠ শীতল হলে ভূ-পৃষ্ঠের সংলগ্ন বায়ুও শীতল হয় । তখন বায়ুর জলীয়বাষ্প শিশিরাঙ্কে পৌঁছোলে তা ভূপৃষ্ঠের ঘাসে, গাছের পাতায় বা টিনের চালে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জল বিন্দুর আকারে সঞ্চিত হয় । একে শিশির বলে ।

(৬) তুহিন (Frost):- শীতপ্রধান অঞ্চলে বা নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে শীতকালে গাছের পাতা বা ঘাসের উপর শিশিরের পরিবর্তে টুকরো টুকরো সাদা তুলোর মত কোমল ও শীতল এক রকম আবরণের সৃষ্টি হয় । একে তুহিন বলে ।

*****

Related Items

নর্মদা নদী (The Narmada)

নর্মদা নদী (The Narmada) : মহাকাল পর্বতের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ অমরকন্টক থেকে উৎপন্ন হয়ে নর্মদা নদী উত্তর-পশ্চিমে বেঁকে মধ্যপ্রদেশ, উত্তরপ্রদেশ ও মহারাষ্ট্র হয়ে গুজরাটের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বিন্ধ্য ও সাতপুরার সংকীর্ণ গিরিখাত অতিক্রম করে

ব্রহ্মপুত্র নদ (The Brahmaputra)

ব্রহ্মপুত্র নদ : তিব্বতের মানস সরোবরের নিকটবর্তী চেমায়ুং-দুং হিমবাহ থেকে সাংপো নামে উৎপন্ন হয়ে নামচাবারওয়া শৃঙ্গের কাছে চুলের কাটার মত বেঁকে অরুণাচল প্রদেশের মধ্য দিয়ে ডিহং নামে ভারতে প্রবেশ করেছে । এর মোট দৈর্ঘ্য ২,৯০০ কিমি, এর মধ্

সিন্ধু নদ (The Indus)

সিন্ধু নদ : সিন্ধু নদ তিব্বতের মানস সরোবরের উত্তরে অবস্থিত সিন-কা-বাব জলধারা থেকে উৎপন্ন হয়ে উত্তর-পশ্চিমে প্রথমে তিব্বতের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে পরে লাদাখ অঞ্চল দিয়ে ভারতে প্রবেশ করেছে । সিন্ধু নদের মোট দৈর্ঘ্য ৩,১৮০ কিমি এবং এর মধ

গঙ্গা নদী (The Ganges)

গঙ্গা নদী : গঙ্গা ভারতের শ্রেষ্ঠ নদী এবং ভারতের দীর্ঘতম নদী । গঙ্গানদীর মোট দৈর্ঘ্য ২৫১০ কিমি এবং এর মধ্যে ২০১৭ কিমি ভারতে প্রবাহিত । কুমায়ুন হিমালয়ের গঙ্গোত্রী হিমবাহের গোমুখ তুষার গুহা থেকে ভাগীরথী নামে উৎপন্ন হয়ে সংকীর্ণ গিরিখাতের

ভারতের নদনদী (Rivers of India)

ভারতের নদনদী : ভারতে অসংখ্য নদনদী বিভিন্ন দিকে প্রবাহিত হয়েছে । উৎস, প্রবাহের অঞ্চল, এবং মোহানা অনুসারে ভারতের নদনদীকে প্রধানত দুটি শ্রেণিতে ভাগ করা যায় । যেমন— (১) উত্তর ভারতের নদী এবং (২) দক্ষিণ ভারতের নদী ।