সমাসের শ্রেণিবিভাগ

Submitted by Nandarani Pramanik on Mon, 07/26/2021 - 13:00

সমাসের শ্রেণিবিভাগ :- বাংলা ভাষায় সমাস মূলত ছয় প্রকার— (১) তৎপুরুষ, (২) কর্মধারয়, (৩) দ্বন্দ্ব,  (৪) দ্বিগু, (৫) বহুব্রীহি, (৬) অব্যয়ীভাব । এছাড়াও (৭) নিত্য সমাস, (৮) বাক্যাশ্রয়ী সমাস ও (৯) অলোপ সমাস আছে ।

(১) তৎপুরুষ সমাস:- যে সমাসে পূর্বপদের বিভক্তি বা অনুসর্গ লোপ পায় এবং পরপদ বা উত্তরপদের অর্থ প্রাধান্য পায় তাকে তৎপুরুষ সমাস বলে । যেমন— গোলায় ভরা = গোলাভরা । বধুকে দেখা = বধু দেখা । জল থেকে আতঙ্ক = জলাতঙ্ক । এখানে 'য়' 'কে' হল দুটি বিভক্তি এবং 'থেকে' হল অনুসর্গ ।

(২) কর্মধারয় সমাস :-  যে সমাসে বিশেষ্য বা বিশেষণ জাতীয় পূর্বপদের সঙ্গে বিশেষ্য বা বিশেষণ জাতীয় পরপদের সমাস হয় এবং পরপদের অর্থ প্রাধান্য পায়, তাকে কর্মধারয় সমাস বলে । যেমন— নব যে অন্ন = নবান্ন । যিনি কর্তা তিনি মশায় = কর্তামশায় ।

(৩) দ্বন্দ্ব সমাস :- যে সমাসে পূর্বপদ ও পরপদের অর্থ সমানভাবে গুরুত্ব পায়, তাকে দ্বন্দ্ব সমাস বলে । যেমন রাত ও দিন = রাতদিন । ভাই ও বোন = ভাইবোন ইত্যাদি ।

(৪) দ্বিগু সমাস :- দ্বি = দুই,  গো < গো শব্দের অর্থ গরু । অর্থাৎ দুটি গরুর সমাহার । দ্বিগু শব্দটি বিশ্লেষণ করলে এরূপ অর্থ পাওয়া যায় । যে সমাসে পূর্বপদটি সংখ্যাবাচক বিশেষণ ও পরপদ বিশেষ্য এবং ব্যাসবাক্যে সমাহার শব্দটি থাকে তাকে বহুব্রীহি সমাস বলে । যেমন— অষ্ট ধাতুর সমাহার = অষ্টধাতু । শত অব্দের সমাহার = শতাব্দী । সপ্ত অহের (দিন) সমাহার = সপ্তাহ । তিন মাথার সমাহার = তেমাথা । পঞ্চ নদের সমাহার = পঞ্চনদ । নব রত্নের সমাহার = নবরত্ন । সাত সমুদ্রের সমাহার = সাতসমুদ্র ইত্যাদি ।

(৫) বহুব্রীহি সমাস :-  যে সমাসে সমস্যমান পদগুলির কোনোটির অর্থ প্রাধান্য না পেয়ে নতুন অর্থ প্রকাশ করে তাকে বহুব্রীহি সমাস বলে । যেমন— চন্দ্র চূড়ায় যার = চন্দ্রচূড় (শিব) । পদ্ম নাভিতে যার = পদ্মনাভ (বিষ্ণু) । বীনা পাণিতে যার = বীনাপাণি (সরস্বতী) ।

বি: দ্র: :- এই সমসের ব্যাসবাক্যে একটি যদ্ শব্দের অর্থ যিনি, যার বা যে থাকবে ।

(৬) অব্যয়ীভাব সমাস :-  যে সমাসে পূর্বপদ অব্যয় ও পরপদ বিশেষ্য এবং সমস্ত পদে অব্যয়ের অর্থ প্রাধান্য পায় সেই সমাসকে অব্যয়ীভাব সমাস বলে । যেমন— ভাতের অভাব = হাভাত । ফুলের সমীপে = উপকূল । কূলের বিপরীত = প্রতিকূল । দানের সদৃশ = অনুদান । দানের বিপরীত = প্রতিদান । ক্ষুদ্র বন = উপবন । গ্রহণের যোগ্য = অনুগ্রহ ইত্যাদি ।

(৭) নিত্য সমাস :- যে সমাসে ব্যাসবাক্য হয় না, ব্যাসবাক্যের জন্য অন্য কোনো পদের সাহায্য নিতে হয় তাকে নিত্য সমাস বলে । যেমন— অন্য দেশ = দেশান্তর । অন্য দ্বীপ = দ্বীপান্তর । অন্য যুগ = যুগান্তর । কেবল দর্শন = দর্শনমাত্র । অন্য মনু = মন্বন্তর । কেবল জ্ঞান = জ্ঞানমাত্র ইত্যাদি ।

(৮) অলোপ সমাস :- যে সমাসে পূর্বপদের বিভক্তি বা অনুসর্গ কিছুই লোপ পায় না তাকে অলোপ সমাস বলে । যেমন— তেলেভাজা = তেলেভাজা । মেঘে ঢাকা = মেঘেঢাকা । মামার বাড়ি = মামার বাড়ি । দুধে আলতা = দুধেআলতা ইত্যাদি ।

(৯) বাক্যাশ্রয়ী সমাস :-  হাইফেন (-) চিহ্ন ব্যবহার করে কোনো বাক্য বা বাক্যাংশ সমাসবদ্ধ একটি পদ রূপে প্রযুক্ত হয়, তখন তাকে বাক্যাশ্রয়ী সমাস বলে । যেমন— 'সবুজ-বাঁচাও কমিটি', 'সব-পেয়েছির দেশ', 'বসে-আঁকো প্রতিযোগিতা', 'পণপ্রথা-বিরোধী আন্দোলন', 'ভারত-ছাড়ো ডাক', 'ফেলে-আসা দিনগুলি', ইত্যাদি ।

*****

Comments

Related Items

ব্যাকরণ ও নির্মিতি (Bengali Grammer and Composition)

ব্যাকরণ :- কারক ও অকারক সম্পর্ক, সমাস, বাক্য ও তার শ্রেণিবিভাগ, বাচ্য, সন্ধি, নির্মিতি:- প্রবন্ধ রচনা, বঙ্গানুবাদ, সংলাপ রচনা, প্রতিবেদন রচনা

সহায়ক পাঠ

সহায়ক পাঠ  —  ১০ নং

১. কোনি  — মতি নন্দী

 

****

প্রবন্ধ

প্রবন্ধ    —  ১১ নং

১. হারিয়ে যাওয়া কালি কলম — শ্রীপান্থ

২. বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান — রাজশেখর বসু

*****

কবিতা

কবিতা     —    ১৫ নং

১. অসুখী একজন  — পাবলো নেরুদা

২. আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি — শঙ্খ ঘোষ

৩. আফ্রিকা — রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

৪. অভিষেক — মাইকেল মধুসূদন দত্ত

৫. প্রলয়োল্লাস — কাজী নজরুল ইসলাম

৬. সিন্ধুতীরে — সৈয়দ আলাওল

গল্প

গল্প    — ১৫ নং

১. জ্ঞানচক্ষু    — আশাপূর্ণা দেবী

২. বহুরুপী    — সুবোধ ঘোষ

৩. পথের দাবী — শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়

৪. অদল বদল — পান্নালাল প্যাটেল

৫. নদীর বিদ্রোহ — মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়

***