প্রলয়োল্লাস

Submitted by avimanyu pramanik on Wed, 05/13/2020 - 15:33

প্রলয়োল্লাস   — কাজী নজরুল ইসলাম

 

তোরা সব     জয়ধ্বনি কর !

তোরা সব     জয়ধ্বনি কর !

                  ওই নূতনের কেতন ওড়ে কালবোশেখির ঝড় ।

তোরা সব     জয়ধ্বনি কর !

তোরা সব     জয়ধ্বনি কর !

                  আসছে এবার অনাগত প্রলয়-নেশার নৃত্য পাগল,

                  সিন্ধুপারের সিংহদ্বারে ধমক হেনে ভাঙল আগল !

                  মৃত্যু-গহন অন্ধকূপে

                  মহাকালের চণ্ড-রূপে —

                                ধূম্র-ধূপে

                  বজ্রশিখার মশাল জ্বেলে আসছে ভয়ংকর !

ওরে ওই        হাসছে ভয়ংকর !

তোরা সব      জয়ধ্বনি কর !

তোরা সব      জয়ধ্বনি কর !

                   ঝামর তাহার কেশের দোলায় ঝাপটা মেরে গগন দুলায়,

                   সর্বনাশী জ্বালামূখী ধুমকেতু তার চামর ঢুলায় !

                   বিশ্বপাতার বক্ষ-কোলে 

                   রক্ত তাহার কৃপাণ ঝোলে

                                 দোদুল দোলে !

                   অট্টরোলের হট্টগোলে স্তব্ধ চরাচর —

ওরে ওই      স্তব্ধ চরাচর !

তোরা সব    জয়ধ্বনি কর !

তোরা সব    জয়ধ্বনি কর !!

                 দ্বাদশ রবির বহ্নিজ্বালা ভয়াল তাহার নয়নকটায়,

                 দিগন্তরের কাঁদন লুটায় পিঙ্গল তার ত্রস্ত জটায় !

                 বিন্দু তাহার নয়নজলে

                 সপ্ত মহাসিন্ধু দোলে

                         কপোলতলে !

                  বিশ্বমায়ের আসন তারই বিপুল বাহুর পর —

হাঁকে ওই       'জয় প্রলয়ঙ্কর !'

তোরা সব     জয়ধ্বনি কর !

তোরা সব     জয়ধ্বনি কর !!

                   মাভৈঃ মাভৈঃ ! জগৎ জুড়ে প্রলয় এবার ঘনিয়ে আসে

                   জরায়-মরা মুমূর্ষুদের প্রাণ-লুকানো ওই বিনাশে !

                  এবার মহানিশার শেষে

                  আসবে ঊষা অরুণ হেসে

                        করুণ বেশে !

                  দিগম্বরের জটায় হাসে শিশু-চাঁদের কর —

আলো তার    ভরবে এবার ঘর !

তোরা সব     জয়ধ্বনি কর !

তোরা সব    জয়ধ্বনি কর !!

                 ওই সে মহাকাল-সারথি রক্ত-তড়িৎ চাবুক হানে,

                 রণিয়ে ওঠে হ্রেষার কাঁদন বজ্রগানে ঝড়-তুফানে !

                 ক্ষুরের দাপট তারায় লেগে উল্কা ছুটায় নীল খিলানে !

                 গগনতলের নীল খিলানে !

                 অন্ধ কারার বন্ধ কূপে

                 দেবতা বাধা যজ্ঞ-যুপে

                           পাষাণ-স্তুপে !

                 এই তো রে তার আসার সময় ওই রথঘর্ঘর —

শোনা যায়   ওই রথঘর্ঘর !

তোরা সব    জয়ধ্বনি কর !

তোরা সব    জয়ধ্বনি কর !

                 ধ্বংস দেখে ভয় কেন তোর ? — প্রলয় নূতন সৃজন-বেদন !

                 আসছে নবীন — জীবনহারা অ-সুন্দরে করতে ছেদন !

                 তাই সে এমন কেশে বেশে

                 প্রলয় বয়েও আসছে হেসে —

                              মধুর হেসে ।

ভেঙে আবার   গড়তে জানে সে চিরসুন্দর !

তোরা সব       জয়ধ্বনি কর !

তোরা সব       জয়ধ্বনি কর !!

         ওই       ভাঙা-গড়া খেলা যে তার কিসের তবে ডরা ?

                    তোরা সব জয়ধ্বনি কর !

                    বধূরা প্রদীপ তুলে ধর ।

                   কাল-ভয়ংকরের বেশে এবার ওই আসে সুন্দর !—

তোরা সব      জয়ধ্বনি কর !

তোরা সব      জয়ধ্বনি কর !!

***

Comments

Related Items

'আমরা ভিখারি বারোমাস' —এই উপলব্ধির মর্মার্থ লেখ ।

প্রশ্ন:- 'আমরা ভিখারি বারোমাস' — এই উপলব্ধির মর্মার্থ লেখ

'সব চূর্ণ হয়ে গেল, জ্বলে গেল আগুনে'— কবিতাটি অনুসরণে পরিস্থিতিটির বিবরণ দাও ।

প্রশ্ন:- 'সব চূর্ণ হয়ে গেল, জ্বলে গেল আগুনে'— কবিতাটি অনুসরণে পরিস্থিতিটির বিবরণ দাও ।

উত্তর:-  প্রখ্যাত চিলিয়ান কবি পাবলো নেরুদা রচিত 'অসুখী একজন' কবিতা থেকে উদ্ধৃত লাইনটি নেওয়া হয়েছে ।

"যেখানে ছিল শহর / সেখানে ছড়িয়ে রইল কাঠকয়লা ।" — 'অসুখী একজন' কবিতা অবলম্বনে শহরের এই পরিণতি কীভাবে হল লেখো

প্রশ্ন:- "যেখানে ছিল শহর / সেখানে ছড়িয়ে রইল কাঠকয়লা ।" — 'অসুখী একজন' কবিতা অবলম্বনে শহরের এই পরিণতি কীভাবে হল লেখো ।       

'নদীর বিদ্রোহ' গল্প অবলম্বনে নদীর প্রতি নদেরচাঁদের অকৃত্রিম ভালবাসার পরিচয় দাও ।

প্রশ্ন:- 'নদীর বিদ্রোহ' গল্প অবলম্বনে নদীর প্রতি নদেরচাঁদের অকৃত্রিম ভালবাসার পরিচয় দাও

"বাবুটির স্বাস্থ্য গেছে, কিন্তু শখ ষোল আনাই বজায় আছে ।" — বাবুটি কে ? তার সাজসজ্জার পরিচয় দাও

প্রশ্ন :- "বাবুটির স্বাস্থ্য গেছে, কিন্তু শখ ষোল আনাই বজায় আছে ।" — বাবুটি কে ? তার সাজসজ্জার পরিচয় দাও