আফ্রিকা

Submitted by avimanyu pramanik on Sat, 05/09/2020 - 10:10

আফ্রিকা —রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

 

    উদভ্রান্ত সেই আদিম যুগে

    স্রষ্ঠা যখন নিজের প্রতি অসন্তোষে

নতুন সৃষ্টিকে বারবার করছিলেন বিধ্বস্ত,

    তাঁর সেই অধৈর্যে ঘন-ঘন মাথা নাড়ার দিনে

    রুদ্র সমুদ্রের বাহু

    প্রাচী ধরিত্রীর বুকের থেকে

    ছিনিয়ে নিয়ে গেল তোমাকে, আফ্রিকা—

বাঁধলে তোমাকে বনস্পতির নিবিড় পাহারায়

    কৃপণ আলোর অন্তঃপুরে ।

সেখানে নিভৃত অবকাশে তুমি

    সংগ্রহ করছিলে দুর্গমের রহস্য,

চিনছিলে জলস্থল-আকাশের দুর্বোধ সংকেত,

   প্রকৃতির দৃষ্টি-অতীত জাদু

মন্ত্র জাগাচ্ছিল, তোমার চেতনাতীত মনে ।

  বিদ্রূপ করছিলে ভীষণকে

   বিরূপের ছদ্মবেশে,

   শঙ্কাকে চাচ্ছিলে হার মানাতে

আপনাকে উগ্র ক'রে বিভীষিকার প্রচণ্ড মহিমায়

   তাণ্ডবের দুন্দুভিনিনাদে ।।

হায় ছায়াবৃতা,

কালো ঘোমটার নীচে

অপরিচিত ছিল তোমার মানবরূপ 

উপেক্ষার আবিল দৃষ্টিতে ।

   এল ওরা লোহার হাতকড়ি নিয়ে,

নখ যাদের তীক্ষ্ণ তোমার নেকড়ের চেয়ে,

    এল মানুষ-ধরার দল

গর্বে যারা অন্ধ তোমার সূর্যহারা অরণ্যের চেয়ে ।

     সভ্যের বর্বর লোভ

নগ্ন করল আপন নির্লজ্জ অমানুষতা ।

তোমার ভাষাহীন ক্রন্দনে বাষ্পাকুল অরণ্যপথে

পঙ্কিল হলো ধুলি তোমার রক্তে অশ্রুতে মিশে,

দস্যু-পায়ের কাঁটা-মারা জুতোর তলায়

    বীভৎস কাদার পিন্ড

চিরচিহ্ন দিয়ে গেল তোমার অপমানিত ইতিহাসে ।।

সমুদ্রপারে সেই মুহূর্তেই তাদের পাড়ায় পাড়ায়

মন্দিরে বাজছিল পূজার ঘন্টা

সকালে সন্ধ্যায় দয়াময় দেবতার নামে;

    শিশুরা খেলছিল মায়ের কোলে;

    কবির সংগীতে বেজে উঠেছিল

       সুন্দরের আরাধনা ।।

 আজ যখন পশ্চিম দিগন্তে

প্রদোষকাল ঝঞ্ঝাবাতাসে রুদ্ধশ্বাস,

যখন গুপ্ত গহ্বর থেকে পশুরা বেরিয়ে এল—

    অশুভ ধ্বনিতে ঘোষণা করল দিনের অন্তিমকাল,

     এসো যুগান্তের কবি,

আসন্ন সন্ধ্যার শেষ রশ্মিপাতে 

দাঁড়াও ওই মানহারা মানবীর দ্বারে;

বলো 'ক্ষমা করো' —

    হিংস্র প্রলাপের মধ্যে

সেই হোক তোমার সভ্যতার শেষ পুণ্যবাণী ।।

****

Comments

Related Items

"বাংলা শুধু হিন্দুর নয়, বাংলা শুধু মুসলমানের নয়, মিলিত হিন্দু-মুসলমানের মাতৃভূমি গুলবাগ এই বাংলা ।" — কাদের উদ্দেশ্য করে একথা বলা হয়েছে ? এই বক্তব্যের মধ্যে দিয়ে বক্তার কী চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য প্রতিফলিত হয়েছে ?

"বাংলা শুধু হিন্দুর নয়, বাংলা শুধু মুসলমানের নয়, মিলিত হিন্দু-মুসলমানের মাতৃভূমি গুলবাগ এই বাংলা ।" — কাদের উদ্দেশ্য করে একথা বলা হয়েছে ?  এই বক্তব্যের মধ্যে দিয়ে বক্তার কী চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য প্রতিফলিত হয়েছে ?

"আমরা নবাবের নিমক বৃথাই খাই না, একথা তাদের মনে রাখা উচিৎ ।" — আমরা বলতে কাদের কথা বলা হয়েছে ? একথা বলার কারণ কী ?

"আমরা নবাবের নিমক বৃথাই খাই না, একথা তাদের মনে রাখা উচিৎ ।" — আমরা বলতে কাদের কথা বলা হয়েছে ? একথা বলার কারণ কী ?

"ওখানে কী দেখচ মুর্খ, বিবেকের দিকে চেয়ে দ্যাখো !" — বক্তা কে ? উদ্দিষ্ট ব্যক্তির প্রতি বক্তার কী মনোভাব লক্ষ করা যায় ?

"ওখানে কী দেখচ মুর্খ, বিবেকের দিকে চেয়ে দ্যাখো !" — বক্তা কে ?  উদ্দিষ্ট ব্যক্তির প্রতি বক্তার কী মনোভাব লক্ষ করা যায় ?

"বাংলার এই দুর্দিনে আমাকে ত্যাগ করবেন না ।" — কাদের উদ্দেশ্যে এ কথা বলা হয়েছে ? কোন দুর্দিনের জন্য তাঁর এই আবেদন ?

"বাংলার এই দুর্দিনে আমাকে ত্যাগ করবেন না ।" — কাদের উদ্দেশ্যে এ কথা বলা হয়েছে ? কোন দুর্দিনের জন্য তাঁর এই আবেদন ?

"মুন্সিজি, এই পত্রের মর্ম সভাসদদের বুঝিয়ে দিন ।" — কে, কাকে পত্র লিখেছিলেন ? এই পত্রে কী লেখা ছিল ?

"মুন্সিজি, এই পত্রের মর্ম সভাসদদের বুঝিয়ে দিন ।" — কে, কাকে পত্র লিখেছিলেন ? এই পত্রে কী লেখা ছিল ?

উঃ- শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত রচিত সিরাজউদ্দৌলা নাটকে এই প্রশ্নে উদ্ধৃত অংশটি রয়েছে ।