স্নায়ুতন্ত্রের শ্রেণিবিভাগ ও গঠনগত উপাদান

Submitted by arpita pramanik on Tue, 11/27/2012 - 07:30

স্নায়ুতন্ত্রের শ্রেণিবিভাগ (Classification of Nervous System)

মানুষের স্নায়ুতন্ত্র প্রধানত তিন ভাগে বিভক্ত, যথা:-

[i] কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র [Central Nervous System]:- এটি মস্তিষ্ক এবং সুষুম্নাকান্ড নিয়ে গঠিত ।

[ii] প্রান্তীয় স্নায়ুতন্ত্র [Perpheral Nervous System]:- কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র থেকে নির্গত সমস্ত রকম স্নায়ুসমূহ নিয়ে এই স্নায়ুতন্ত্র গঠিত হয়েছে । এই স্নায়ুতন্ত্র মস্তিষ্ক থেকে নির্গত 12 জোড়া ক্রেনিয়াল নার্ভ বা করোটিক স্নায়ু এবং সুষুম্নাকান্ড থেকে নির্গত 31 জোড়া স্পাইনাল নার্ভ বা সুষুম্না স্নায়ু নিয়ে গঠিত ।

[iii]  স্বয়ংক্রিয় স্নায়ুতন্ত্র [Automatic Nervous System]:- যেসব স্নায়ু প্রাণীদেহের আন্তর যন্ত্র তথা অনৈচ্ছিক পেশিগুলিতে বিস্তৃত থেকে তাদের কার্যকারিতা নিয়ন্ত্রণ করে, তাদের স্বয়ংক্রিয় বা অটোনোমিক স্নায়ুতন্ত্র বলে । স্বয়ংক্রিয় স্নায়ুতন্ত্র দু'ভাগে বিভক্ত, যথা: (ক) সিমপ্যাথেটিক স্নায়ুতন্ত্র   (খ) প্যারাসিমপ্যাথেটিক স্নায়ুতন্ত্র । 

স্নায়ুতন্ত্রের গঠনগত উপাদান [Structural Components of Nervous System]:-  স্নায়ু প্রধানত নিউরোন বা স্নায়ুকোষ এবং নিউরেগ্লিয়া বা ধারককোষ নিয়ে গড়ে উঠেছে । নিউরোন তাই স্নায়ু তন্ত্রের মুখ্য উপাদান । উন্নত প্রাণীদেহে স্নায়ুতন্ত্র নিউরোন ছাড়াও আরও চারটি প্রধান অংশ নিয়ে গড়ে ওঠে, যেমন : [i] স্নায়ু    [ii] স্নায়ুসন্ধি      [iii] স্নায়ুগ্রন্থি      [iv] মস্তিষ্ক ও সুষুম্নাকান্ড  ।

নিউরোন [Neurone]

নিউরোন হল স্নায়ুতন্ত্রের গঠনমূলক ও কার্যমূলক একক । 

[A] নিউরোনের সংজ্ঞা [Definition of Neurone]:- কোষদেহসহ সমস্ত রকম প্রবর্ধক নিয়ে গঠিত স্নায়ুতন্ত্রের গঠনমূলক ও কার্যমূলক একককে নিউরোন বলে ।

[B] নিউরোনের গঠন [Sructure of Neurone ]:- স্নায়ুকোষ বা নিউরোন প্রধানত দুটি অংশ নিয়ে গঠিত, যথা : [i] কোষদেহ বা নিউরোসাইটন    [ii] প্রবর্ধক বা প্রসেস

[i] কোষদেহ বা নিউরোসাইটন:- এটি দেখতে তারকাকার, গোলাকার, ত্রিকোণাকার অথবা শাঙ্কবাকার । কোষদেহ নীচের অংশগুলি নিয়ে গঠিত, যেমন :

(১) কোষপর্দা :- কোষ দেহটি লাইপো-প্রোটিন দিয়ে গঠিত একক পর্দা দিয়ে ঢাকা থাকে ।

(২) সাইটোপ্লাজম :-  কোষ দেহের সাইটোপ্লাজম দানাযুক্ত ও তন্তুময়, একে নিউরোপ্লাজম বলে ।

(৩) নিজল দানা :- নিউরোপ্লাজমে অসংখ্য নিউক্লিওপ্রোটিন নির্মিত দানা থাকে, এদের নিজল দানা বলে ।    (৪) নিউরোফাইব্রিল:-  নিজল দানা ছাড়াও নিউরোপ্লাজমে অসংখ্য সুক্ষ্ম-সুক্ষ্ম তন্তু দেখা যায়, এগুলিকে নিউরোফাইব্রিল বলে ।

(৫) নিউক্লিয়াস:- কোষদেহে একটি বড় গোলাকার বা ডিম্বাকার নিউক্লিয়াস থাকে ।

(৬) অন্যান্য কোষ-অঙ্গানু:- কোষদেহের নিউরোপ্লাজমে অসংখ্য মাইটোকন্ড্রিয়াকে ছড়িয়ে থাকতে দেখা যায় । এছাড়া রয়েছে গলগি বস্তু । সেন্ট্রোজোম থাকলেও তা নিষ্ক্রিয় ।

কোষদেহের কাজ:-  অ্যাক্সন ও ডেনড্রনের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করা এবং ডেনড্রন কর্তৃক গৃহীত উদ্দীপনাকে অ্যাক্সনে প্রেরণ করা হল কোষ দেহের প্রধান কাজ ।

[ii] প্রবর্ধক বা প্রসেস:- নিউরোনের প্রলম্বিত অংশই হল প্রবর্ধক । প্রবর্ধক দু'রকমের, যথা:   (ক) ডেনড্রন  এবং  (খ) অ্যাক্সন

(ক) ডেনড্রন :- নার্ভ কোষদেহের প্লাজমা মেমরেনের প্রলম্বিত অংশের সরুসরু শাখাগুলিকে ডেনড্রন বলে । প্রতিটি ডেনড্রন আবার আরও সুক্ষ্ম সুক্ষ্ম প্রশাখায় বিভক্ত । এইগুলিকে ডেনড্রাইটস বলে । ডেনড্রনের মধ্যে নিজল দানা ও নিউরোফাইব্রিল সমৃদ্ধ নিউরোপ্লাজম থাকে । 

ডেনড্রনের কাজ:- পেশি বা অন্য কোনও নিউরোন থেকে স্নায়ু উদ্দীপনা গ্রহন করে, তা কোষ দেহে প্রেরণ করে ।

(খ) অ্যাক্সন:-  প্রতিটি নার্ভকোষদেহের অপেক্ষাকৃত দীর্ঘ, শাখা বিহীন বা অল্প শাখাযুক্ত প্রবর্ধকের নাম অ্যাক্সন ।

অ্যাক্সনের গঠনগত বৈশিষ্ট্যগুলি:-

(১)  অ্যাক্সন হিলক:- কোষদেহের যে অংশ থেকে অ্যাক্সন সৃষ্টি হয়, তাকে অ্যাক্সন হিলক্ বলে ।

(২)  অ্যাক্সোপ্লাজম:- প্রতিটি অ্যাক্সনের ভিতরে  অ্যাক্সোপ্লাজম থাকে ।

(৩)  অ্যাক্সোলেমা:-  অ্যাক্সোপ্লাজমকে ঘিরে যে আবরণী থাকে, তাকে অ্যাক্সোলেমা বলে ।

(৪)  মায়োলিন সিদ বা মেডুলারি সিদ:- কোনও কোনও ক্ষেত্রে অ্যাক্সোপ্লাজমের ওপর চর্বির একটি স্তর থাকে, একে মায়োলিন সিদ বা মেডুলারি সিদ  ।

(৫)  নিউরিলেমা:- মায়োলিন সিদের ওপরের আবরণকে নিউরিলেমা বলে ।

(৬)  স্বোয়ান কোষ:- নিউরিলেমার মধ্যে বিশেষ ধরনের নিউক্লিয়াসযুক্ত ডিম্বাকার কোষ দেখা যায়, এদেরকে স্বোয়ান কোষ বলে । 

(৭)  রানভিয়ের -এর পর্ব:- মায়োলিন সিদ স্থানে স্থানে বিচ্ছিন্ন হয়ে এক একটি পর্বের সৃষ্টি করে ; একে রানভিয়ের -এর পর্ব বলে ।

(৮)  প্রান্তবুরুশ বা এন্ডব্রাশ:- অ্যাক্সনের শেষপ্রান্তে সুক্ষ্ম শাখান্বিত প্রান্তবুরুশ বা এন্ডব্রাশ থাকে ।

অ্যাক্সনের কাজ:- উদ্দীপনা পরিবহন করে এবং স্নায়ুসন্নিধির মাধ্যমে স্নায়ু-উদ্দীপনাকে পেশি বা অন্য কোনও নিউরোনে প্রেরণ করতে সাহায্য করে ।

*****

Related Items

জননের সংজ্ঞা ও জননের প্রকারভেদ

জনন অর্থাৎ বংশবিস্তার হল জীবের অন্যতম বৈশিষ্ট্য । পরিণত জীব অপত্য জীব সৃষ্টি করার মাধ্যমে নিজের প্রজাতির অস্তিত্ব বজায় রাখে । যে জীব থেকে অপত্য জীব সৃষ্টি হয় তাকে জনিতৃ জীব এবং জনিতৃ জীব থেকে সৃষ্টি হওয়া জীবকে অপত্য জীব বলে । জনিতৃ জীব থেকে অপত্য জীব ...

মাইটোসিসের দশা (Stages of Mitosis)

মাইটোসিস বিভাজন দুটি পর্যায়ে সম্পন্ন হয়, যথা:- নিউক্লিয়াসের বিভাজন বা ক্যারিওকাইনেসিস এবং সাইটোপ্লাজমের বিভাজন বা সাইটোকাইনেসিস । মাইটোসিসের নিউক্লিয়াসের বিভাজন বা ক্যারিওকাইনেসিস, চারটি দশায় সম্পন্ন হয় । মাইটোসিসের এই দশাগুলি হল ...

কোশ চক্র ও কোশ চক্রের পর্যায়

এক কথায় কোশের বৃদ্ধি ও জননের বিভিন্ন দশার চক্র বা চাকার মতো আবর্তনকে কোশ চক্র বলে । প্রতিটি জীবের মতো প্রতিটি কোশেরও একটি জীবন-চক্র আছে। কোশের এই জীবন-চক্র বিভাজন ও অবিভাজন এই দু'টি ঘটনার মধ্যে আবর্তিত হ'তে থাকে। জনিতৃ কোশের বিভাজনের ...

কোশ বিভাজনের প্রকারভেদ

জীবদেহে তিন রকমের কোশ বিভাজন দেখা যায়, যথা - অ্যামাইটোসিস, মাইটোসিস এবং মিয়োসিস । অ্যামাইটোসিস হল এক ধরনের প্রত্যক্ষ বা সরাসরি নিউক্লিয়াস বিভাজন । এই প্রক্রিয়ায় মাতৃ নিউক্লিয়াসটির মাঝ বরাবর খাঁজ সৃষ্টির মাধ্যমে অপত্য নিউক্লিয়াসের সৃষ্টি হয়। আবার এই অপত্য ...

কোশ বিভাজন ও কোশ বিভাজনের তাৎপর্য

আজ থেকে প্রায় ২৬০ কোটি বছর আগের ঘটনা । পৃথিবীতে জন্ম নিল প্রথম জীব । পৃথিবীর বুকে জাগল প্রাণের স্পন্দন । প্রথম সৃষ্টি হওয়া সেই জীব না ছিল উদ্ভিদ না কোন প্রাণী । জেলির মতো থকথকে খানিকটা প্রোটোপ্লাজম নিয়ে নির্দিষ্ট আকার ও আকৃতিবিহীন সেই জীবের দেহ গড়ে ...