মেন্ডেলের দ্বিসংকর পরীক্ষা

Submitted by arpita pramanik on Mon, 12/17/2012 - 22:21

মেন্ডেলের দ্বিসংকর পরীক্ষা (Mendel's experiment of Dihybrid cross)

দ্বিসংকর জননের সংজ্ঞা:- একই প্রজাতিভুক্ত দু'জোড়া বিকল্প চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন দু'টি জীবের সংকরায়ণ কে দ্বিসংকর জনন বা ডাই-হাইব্রিড ক্রস বলে ।

অর্থাৎ যে যৌন জননে জনিতৃ জনুর পিতা-মাতা দু'জোড়া বিকল্প চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যে আলাদা, সেইরকম যৌন জনন অর্থাৎ ক্রসকে দ্বিসংকর জনন বলে ।

মটর গাছের দ্বিসংকর জনন [Dihybrid cross in Pea plant]:- দ্বিসংকর পরীক্ষায় মেন্ডেল জনিতৃ জনুতে (P) বিশুদ্ধ প্রলক্ষণের হলুদ (বীজের রং) ও গোল (বীজের আকার) বীজযুক্ত মটর গাছ এবং সবুজ (বীজের রং) ও কুঞ্চিত (বীজের আকার) বীজযুক্ত মটর গাছের মধ্যে পরনিষেক ঘটানোর জন্য ইতর পরাগযোগ ঘটান । এর ফলে প্রথম অপত্য জনুতে (F1) যে সব গাছ সৃষ্টি হল তারা সবই হলুদ ও গোল বীজযুক্ত ছিল (এখানে হলুদ ও গোল প্রকট গুণ) । প্রথম জনুতে (F1) উত্পন্ন দ্বিসংকর মটরগাছের স্বপরাগযোগ ঘটিয়ে মেন্ডেল F2 জনুতে অর্থাৎ দ্বিতীয় অপত্য জনুতে চার রকমের গাছ হতে দেখলেন । F2 জনুর ওই চার রকম গাছের ফিনোটাইপগত অনুপাত ছিল 9 (হলুদ, গোল) : 3 (হলুদ, কুঞ্চিত) : 3 (সবুজ, গোল) : 1 (সবুজ, কুঞ্চিত) ।

যদি বীজের হলুদ রং -এর জন্য দায়ী ফ্যাক্টরকে Y,  সবুজ রং -এর জন্য দায়ী ফ্যাক্টরকে y, গোল গঠনের জন্য দায়ী ফ্যাক্টরকে R এবং কুঞ্চিত গঠনের জন্য দায়ী ফ্যাক্টরকে r ধরা হয়,  তাহলে P1 জনুর বিশুদ্ধ হলুদগোল বীজযুক্ত গাছের জিনোটাইপ ছিল YYRR এবং সবুজকুঞ্চিত বীজযুক্ত গাছের জিনোটাইপ ছিল yyrr । অতএব F1 জনুতে উত্পন্ন গাছগুলির জিনোটাইপ ছিল YyRr (সংকর হলুদ ও গোল) —কারণ এই জনু P1 জনুর একটি গ্যামেট থেকে প্রাপ্ত YR এবং অন্য একটি গ্যামেট থেকে প্রাপ্ত Yr -এর সমন্বয়ে গঠিত হয়েছিল ।  F1 জনুর মটর গাছগুলি হেটেরো-জাইগাস এবং এদের অ্যালিস জোড়া (Yy অথবা Rr) আলাদা আলাদা সমসংস্থ ক্রোমোজোমে বর্তমান থাকায় প্রতিটি মটর গাছ থেকে চার রকমের গ্যামেট সৃষ্টি হয়, যেমন : YR, Yr, yR এবং yr  ।  F1 জনু থেকে উদ্ভুত চার রকম পুং-গ্যামেট ও চার রকম স্ত্রী-গ্যামেটের সম্ভাব্য সংযুক্তি (possible combination) 4 X 4 = 16 রকমের হয় । এই 16 রকমের সংযুক্তির মধ্যে ফিনোটাইপ অনুপাত হল 9 : 3 : 3 :1 (হলুদ গোল : হলুদ কুঞ্চিত : সবুজ গোল : সবুজ কুঞ্চিত), অর্থাৎ চার রকমের । কিন্তু প্রকৃতপক্ষে জেনেটিক সংযুক্তির ফলে 9 রকমের গাছের সৃষ্টি হয়, যেমন :

[1]  YYRR (বিশুদ্ধ হলুদ ও গোল)— 1টি

[2]  YYRr  (সংকর হলুদ ও গোল)— 2টি

[3]  YyRR  (সংকর হলুদ ও গোল)— 2টি

[4]  YyRr   (সংকর হলুদ ও গোল)— 4টি

9

[5]  YYrr  (সংকর হলুদ ও কুঞ্চিত)— 1টি

[6]  Yyrr   (সংকর হলুদ ও কুঞ্চিত)— 2টি

3

[7]  yyRR  (সংকর সবুজ ও গোল)— 1টি

[8]  yyRr   (সংকর সবুজ ও গোল)—  2টি  

3
[9]  yyrr    (বিশুদ্ধ সবুজ ও কুঞ্চিত)— 1টি 1

 

উপরোক্ত 9 রকমের অর্থাৎ 1 : 2 : 2 : 4 : 1 : 2 : 1 : 2 : 1 অনুপাতই হল জিনোটাইপগত অনুপাত । এই প্রসঙ্গে উল্লেখ করা যায় যে, একসংকর ক্রস অনুসারে একজোড়া বিকল্প বৈশিষ্ট্য F2 জনুতে 3 : 1 অনুপাতে প্রকাশ পায় । অতএব দ্বি-সংকর ক্রসে দু'জোড়া বিকল্প বৈশিষ্ট্যের মধ্যে যদি প্রতি জোড়ার বংশানুসরণ [inheritance] অপর জোড়া হতে স্বাধীন হয়, তাহলে গাণিতিক নিয়মে F2 জনুতে দ্বি-সংকর ক্রসের অনুপাত হবে 3 : 1 x 3 : 1 = 9 : 3 : 3 : 1 ।  প্রকৃতপক্ষে মেন্ডেল তাঁর দ্বি-সংকর ক্রসের F2 জনুতে এই অনুপাতই পেয়েছিলেন ।

 

নীচে ছকের সাহায্যে মেন্ডেলের দ্বি-সংকর ক্রসের F2 -এর ফিনোটাইপগত ও জিনোটাইপগত অনুপাত দেখানো হল :  

ক্রমিক সংখ্যা ফিনোটাইপ জিনোটাইপ  জিনোটাইপগত অনুপাত ফিনোটাইপগত অনুপাত
1 হলুদ ও গোল

YYRR

YYRr

YyRR

YyRr

1

2

2

4

9
2 হলুদ ও কুঞ্চিত

YYrr

Yyrr

1

2

3
3 সবুজ ও গোল

yyRR

yyRr

1

2

3
4 সবুজ ও কুঞ্চিত yyrr 1 1

 

মেন্ডেলের সিদ্ধান্ত [Mendel 's inference]:- দ্বি-সংকর জননের পরীক্ষা থেকে মেন্ডেলের ধারণা হয়েছিল, জনিতৃ জনুর বৈশিষ্ট্যগুলি যে শুধুমাত্র অপত্য জনুতে আলাদাভাবে সঞ্চারিত হয় তাই নয়, উপরন্তু এই বৈশিষ্ট্যগুলি স্বাধীনভাবে সঞ্চারিত হয় । দ্বি-সংকর জননের পরীক্ষার ফলাফল বিশ্লেষণ করে মেন্ডেল স্বাধীন বন্টনের সূত্র প্রবর্তন করেন ।

স্বাধীন বন্টনের সূত্র [Law of independent Assortment]:- দুই বা তারও বেশি বিপরীতধর্মী যুগ্মবৈশিষ্ট্য সম্পন্ন দুটি জীবের মধ্যে সংকরায়ণ ঘটানো হলে প্রতি জুটি বৈশিষ্ট্য অন্য জুটির সঙ্গে কোনও রকম সম্পর্ক না রেখেই সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে এক জনু থেকে পরের জনুতে সঞ্চারিত হয় এবং গ্যামেট তৈরিতে সময় পরস্পরের থেকে পৃথক হয়ে গিয়ে পরবর্তী জনুতে সম্ভাব্য সব রকমের সমন্বয়ে স্বতন্ত্রভাবেই প্রকাশ পায় । —এটি মেন্ডেলের দ্বিতীয় সূত্র ।

*****

Related Items

ইনসুলিন (Insulin)

অগ্ন্যাশয়ে অবস্থিত আইলেটস অব ল্যাঙ্গারহ্যানস নামক অন্তঃক্ষরা গ্রন্থির বিটা কোষ থেকে ইনসুলিন নিঃসৃত হয় । অগ্ন্যাশয় অন্তঃক্ষরা ও বহিঃক্ষরা উভয় গ্রন্থির সংমিশ্রণে গঠিত হওয়ায় অগ্ন্যাশয়কে মিশ্রগ্রন্থি বলে । অগ্ন্যাশয়ের আলফা কোষ থেকে গ্লুকাগন হরমোন নিঃসৃত হয় । ...

মানবদেহে বিভিন্ন অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি : পিটুইটারি গ্রন্থি

পিটুইটারি মানবদেহের সবচেয়ে ছোটো কিন্তু সবচেয়ে শক্তিশালী অনাল গ্রন্থি । ওজন মাত্র 500 mg. । এই গ্রন্থি নিঃসৃত হরমোনগুলি, অন্যান্য অন্তঃক্ষরা গ্রন্থির নিঃসরণকে নিয়ন্ত্রণ করে বলে একে মুখ্য গ্রন্থি বা প্রভু গ্রন্থি বলে । পিটুইটারি গ্রন্থি মস্তিষ্কের মূলদেশে স্ফেনয়েড অস্থির সেলা-টারসিকা প্রকোষ্ঠে ...

প্রাণী-হরমোন ও উৎস

প্রাণীদেহে অবস্থিত অন্তঃক্ষরা বা অনালগ্রন্থি থেকে হরমোন ক্ষরিত হয় । অমেরুদণ্ডী প্রাণীদের স্নায়ুগ্রন্থিতে অবস্থিত নিউরোসিক্রেটরি কোষগুলো থেকে হরমোন নিঃসৃত হয় । প্রাণীদের নিউরোসিক্রেটরি কোষ থেকে নিঃসৃত হরমোনকে নিউরো হরমোন বলে । যেসব গ্রন্থির ক্ষরিত রস নালির মাধ্যমে ...

কৃষিকার্যে কৃত্রিম উদ্ভিদ-হরমোনের ব্যবহারিক প্রয়োগ

উদ্ভিদদেহে স্বাভাবিক হরমোন উত্পন্ন হলেও বর্তমানে কৃত্রিম হরমোন ও তৈরি হচ্ছে । এই সব কৃত্রিম হরমোনের মধ্যে ইন্ডোল বিউটারিক অ্যাসিড, ন্যাপথালিন অ্যাসিটিক অ্যাসিড, ডাই-ক্লোরোফেনক্সি অ্যাসিটিক অ্যাসিড প্রভৃতি প্রধান । কৃত্রিম হরমোনগুলি কম পরিমাণে বেশি কার্যকরী ...

উদ্ভিদ হরমোন - জিব্বেরেলিন

অক্সিনের মতো জিব্বেরেলিনও উদ্ভিদের একরকম গুরুত্বপূর্ণ হরমোন । এটি একরকমের টারপিনয়েড জাতীয় নাইট্রোজেনবিহীন জৈব অম্ল । জিব্বেরেলিন প্রধানত কার্বন, হাইড্রোজেন এবং অক্সিজেন নিয়ে গঠিত । জিব্বেরেলিনের রাসায়নিক নাম জিব্বেরেলিক অ্যাসিড । এরা বর্ণহীন ও গন্ধহীন ...