প্রতিবর্ত চাপ বা রিফ্লেক্স আর্ক

Submitted by arpita pramanik on Fri, 11/30/2012 - 09:50

প্রতিবর্ত চাপ বা রিফ্লেক্স আর্ক (Reflex arc)

সংজ্ঞা:- যে স্নায়ুপথে প্রতিবর্ত ক্রিয়ার স্নায়ুস্পন্দন আবর্তিত হয়, তাকে প্রতিবর্ত চাপ বা রিফ্লেক্স আর্ক বলে ।

প্রতিবর্ত চাপ সাধারণত তিনটি স্নায়ুকোষ দ্বারা গঠিত । তবে দুই অথবা বহু স্নায়ুকোষের সমন্বয়েও প্রতিবর্ত চাপ গঠিত হাতে পারে । প্রতিবর্ত চাপে সাইন্যাপস অর্থাৎ স্নায়ু-সন্নিধির অবস্থান অনুযায়ী প্রতিবর্ত চাপ একসন্ধি অর্থাৎ একটি স্নায়ুসন্ধিযুক্ত প্রতিবর্ত চাপ, দ্বিসন্ধি অর্থাৎ দুটি স্নায়ুসন্ধিযুক্ত প্রতিবর্ত চাপ এবং ত্রিসন্ধি অর্থাৎ তিনটি স্নায়ুসন্ধিযুক্ত প্রতিবর্ত চাপ হাতে পারে ।

প্রতিবর্ত চাপের অংশ:- প্রতিবর্ত চাপের বিভিন্ন অংশগুলি হল :

[i]  গ্রাহক বা রিসেপটর:- এর মাধ্যমে পরিবেশ থেকে আগত উদ্দীপনা গৃহিত হয় ।

[ii]  অন্তর্বাহী স্নায়ু:- এটি সেনসরি নিউরোন দিয়ে গঠিত, এর মাধ্যমে স্নায়ুসংবেদ গ্রাহক থেকে স্নায়ুকেন্দ্রে পৌঁছায় ।

[iii] স্নায়ুকেন্দ্র:- এটি সুষুম্নাকান্ডের ধুসর পদার্থে অবস্থিত, এখানে সংজ্ঞাবহ উদ্দীপনা চেষ্টিয় উদ্দীপনায় রূপান্তরিত হয় ।

[iv]  বহির্বাহী স্নায়ু:- এটি মোটর নিউরোন দিয়ে গঠিত । এর মাধ্যমে চেষ্টিয়-উদ্দীপনা ইফেক্টর বা কারকে পৌঁছায় ।

[v]  কারক বা ইফেক্টর :- পেশি, গ্রন্থি ইত্যাদি হল কারক । এগুলি উদ্দীপনায় উদ্দীপিত হয় বা সাড়া দেয় ।

প্রতিবর্ত চাপ কীভাবে কাজ করে তার একটি সহজ উদাহরণ: -

ধরা যাক, আমাদের পায়ে হটাৎ একটি কাঁটা বিঁধে গেল । আমরা তত্ক্ষণাৎ পা-টিকে মাটি থেকে সরিয়ে নিই । এখানে কিভাবে স্নায়ুস্পন্দন প্রতিবর্ত চাপের মাধ্যমে বাহিত হয় তা লক্ষ করা যাক :

(i) পায়ের পাতার চামড়ায় অসংখ্য রিসেপ্টর বা গ্রাহক থাকে । এই রিসেপ্টরগুলি কাঁটা বেঁধার ফলে 'ব্যথা' নামক যে উদ্দীপনা সৃষ্টি হয় তা গ্রহণ করে অন্তর্বাহী শাখা দিয়ে সুষুম্নাকান্ডের মধ্যে প্রেরণ করে ।

(ii) সুষুম্নাকান্ড তখন বহির্বাহী স্নায়ু দিয়ে পায়ের ইফেক্টরে অর্থাৎ সংকোচন পেশির (flexor muscles) মধ্যে সাড়া (response) প্রদান করে ।

(iii) এর জন্য পায়ের পেশিগুলি সংকুচিত হয়, ফলে পদতল আপনা থেকেই কাঁটা বেঁধা স্থান থেকে সরে আসে ।

*****

Related Items

ক্যাকটাসের অভিযোজন

ফণীমনসা, তেসিরা মনসা ইত্যাদি ক্যাকটাস জাতীয় উদ্ভিদ । ক্যাকটাস অল্প বৃষ্টিপাতযুক্ত শুষ্ক ও বালুকাময় স্থানে জন্মায় । এইরকম পরিবেশে বাস করার জন্য এদের জাঙ্গল উদ্ভিদ [Xerophyte] বলে । ক্যাকটাসের উল্লেখযোগ্য অভিযোজনগত বৈশিষ্ট্যগুলি হল ক্যাকটাসের মূলতন্ত্র সুগঠিত ...

পদ্মের অভিযোজন

পদ্মের কান্ড ও মূল জলের নীচে কাদায় গাঁথা থাকে, কিন্তু পাতা, ফুল ও ফল ইত্যাদি জলের ওপর থাকে, তাই পদ্মকে আংশিক নিমজ্জিত জলজ উদ্ভিদ বলে । জলে বাস করার জন্য পদ্মের অভিযোজনগত বৈশিষ্ট্যগুলি হল - পদ্মের মূলতন্ত্র সুগঠিত নয় । পদ্মের প্রধান মূল থাকে না । পদ্মের মূল ...

অভিযোজন ও অভিব্যক্তির সম্পর্ক

প্রতি নিয়ত পরিবর্তনশীল পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে চলার জন্য নির্দিষ্ট পরিবেশে বসবাসকারী জীবদের মধ্যে একটা প্রচেষ্টা থাকে । কারণ পরিবেশের সঙ্গে অভিযোজিত হতে না পারলে তাদের অবলুপ্তির সম্ভাবনা থাকে । কিন্তু কোনও প্রজাতির অন্তর্ভুক্ত সব সদস্যের পরিবর্তিত পরিবেশের সঙ্গে...

অভিযোজনের সংজ্ঞা ও ব্যাখ্যা

পারিপার্শ্বিক পরিবর্তনশীল পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে বা মানিয়ে নিয়ে সুষ্ঠুভাবে বেঁচে থাকার জন্য জীবদেহের গঠনগত, শারীরবৃত্তীয় ও আচরণগত যে স্থায়ী পরিবর্তন ঘটে যা বংশপরম্পরায় সঞ্চারিত হয়ে জৈব অভিব্যক্তির পথকে সুগম করে, তাকেই অভিযোজন বলে । ...

প্রাকৃতিক নির্বাচনবাদের ত্রুটি

ডারউইন ছোটো এবং অস্থায়ী প্রকারণের ওপর খুব বেশি গুরুত্ব দিয়েছিলেন, কিন্তু দেখা গেছে যে, ওইগুলির বংশানুসরণ না ঘটায় অভিব্যক্তিতে ওদের কোনো ভুমিকা নেই । কোশের এবং জনন কোশের প্রকারণগুলির মধ্যে ডারউইন প্রভেদ করতে পারেননি । বহু প্রকারণই জিনের কার্যগত ফল ...