জীবাণু বা মাইক্রোবস (Microbes)

Submitted by arpita pramanik on Thu, 01/03/2013 - 10:43

জীবাণু বা মাইক্রোবস (Microbes)

যে সমস্ত অতি ক্ষুদ্র এবং এককোশী বা বহুকোশী জীবদের খালি চোখে দেখা যায় না অথচ কেবলমাত্র অণুবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যে দেখা যায়, তাদেরই সাধারণভাবে জীবাণু বলে ।

জীবাণুর সংজ্ঞা (Definition of Microbes):- অতিক্ষুদ্র ও আণুবীক্ষণিক জীবদের এককথায় জীবাণু বা অণুজীব বা মাইক্রোবস বলা হয় ।

জীবাণুর প্রকারভেদ:- জীবাণু নানান রকমের হয়, যেমন : ব্যাকটিরিয়া, ছত্রাক, প্রোটোজোয়া, শৈবাল, রিকেটসি, অ্যাকটিনোমাইসিটিস, স্পাইরোকিটিস, মাইকোপ্লাজমা ইত্যাদি । 

ব্যাকটিরিয়া (Bacteria):- ব্যাকটিরিয়া (এক বচনে ব্যাকটিরিয়াম) এক রকমের সরল ও অতিক্ষুদ্র এককোশী জীব । 1676 খ্রিস্টাব্দে অ্যানটনি ভ্যান লিভেনহিক [A. Van Leeuwenhoek] নামে হল্যান্ড দেশীয় এক লেনস ও অনুবীক্ষণযন্ত্র প্রস্তুতকারক নিজের তৈরি অণুবীক্ষণ যন্ত্রে সর্বপ্রথম ব্যাকটিরিয়ার অস্তিত্ব প্রমাণ করেন । পরবর্তীকালে ফরাসি বিজ্ঞানী লুই পাস্তুর এবং জার্মান বিজ্ঞানী রবার্ট কক্ নানান পরীক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যমে প্রমাণ করেন যে, উদ্ভিদ ও প্রাণীদেহে বিভিন্ন রোগের কারণ হল ব্যাকটিরিয়া ।

ব্যাকটিরিয়ার সংজ্ঞা [Definition of Bacteria]:- সর্বত্র বিরাজমান, মাইক্রোব্স নামে পরিচিত, উদ্ভিদ-বৈশিষ্ট সম্পন্ন, আদি-নিউক্লিয়াস যুক্ত, সরল এককোশী আণুবীক্ষণিক জীবদের ব্যাকটিরিয়া বলে ।

ব্যাকটিরিয়ার গুরুত্ব (Significance of Bacteria):- ব্যাকটিরিয়া মানুষসহ উদ্ভিদ ও প্রাণীর বিভিন্ন উপকার ও অপকার করায় ব্যাকটিরিয়ার গুরুত্ব অসীম ।

[A] উপকারী ব্যাকটিরিয়া [Beneficial Bacteria]:- জমির উর্বরতা বৃদ্ধিতে এবং বিভিন্ন শিল্পজাত বস্তু উত্পাদনে ব্যাকটিরিয়ার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে । 

কয়েক রকম উপকারী ব্যাকটিরিয়ার ভুমিকা

[১] ল্যাকটিক অ্যাসিড ব্যাকটিরিয়াম ল্যাকটোব্যাসিলাস ট্রাইকোডেস [Lactobacillus trichodes] অবাত প্রক্রিয়ায় শর্করা থেকে ল্যাকটিক অ্যাসিড উত্পন্ন করে । এই ব্যাকটিরিয়ামের সাহায্যে দুধ থেকে দই, পনির, মাখন ইত্যাদি প্রস্তুত হয় ।

[২] শিম্বী গোত্রীয় উদ্ভিদের অর্বুদে বসবাসকারী ব্যাকটিরিয়াম রাইজোবিয়াম [Rhizobium] বায়ু থেকে সরাসরি নাইট্রোজেন শোষণ করে মাটিতে মিশিয়ে দেয়, ফলে মাটিতে নাইট্রোজেনের পরিমাণ বৃদ্ধি পায় ও মাটি উর্বর হয় ।

[B] অপকারী ব্যাকটিরিয়া [Pathogenic Bacteria]:-  মানবদেহে এবং বিভিন্ন প্রাণীদেহে ব্যাকটিরিয়া নানা রকম রোগ সৃষ্টি করে, যেমন :

মানবদেহে রোগ সৃষ্টিকারী ব্যাকটিরিয়া :-

[১] ভিব্রিও কলেরি [Vibrio cholerae]:- এই ব্যাকটিরিয়া কলেরা রোগ সৃষ্টি করে ।

[২] মাইকোব্যাকটেরিয়াম লেপ্রি [Mycobacterium leprae]:- এই ব্যাকটিরিয়া কুষ্ঠ বা লেপ্রোসি রোগ সৃষ্টি করে ।

[৩] মাইকোব্যাকটেরিয়াম টিউবারকিউলোসিস [Mycobacterium tuberculosis]:- এই ব্যাকটিরিয়া যক্ষ্মা বা টিউবারকিউলোসিস রোগ সৃষ্টি করে ।

[৪] সালমোনেলা টাইফোসা [Salmonella typhosa] বা সালমোনেলা টাইফি [Salmonella typhi] :- এই ব্যাকটিরিয়া টাইফয়েড রোগ সৃষ্টি করে ।

 ভাইরাস ও ব্যাকটিরিয়ার প্রধান পার্থক্য

ভাইরাস ব্যাকটিরিয়া
 ১. এদের দেহে সাইটোপ্লাজম থাকে না এবং এরা অকোশীয় ।  ১. এদের দেহে সাইটোপ্লাজম থাকে এবং এরা কোশীয় ।
২. এদের দেহে অবস্থিত নিউক্লিক অ্যাসিড যে-কোনো এক রকমের হয়, যেমন : DNA অথবা RNA । ২. এদের কোশে DNA এবং RNA উভয় ধরণের নিউক্লিক অ্যাসিড থাকে ।
৩. এদের কোশপ্রাচীর থাকে না । ৩. এদের কোশপ্রাচীর থাকে ।
৪. এরা কেবল পোষক কোশেই প্রজননক্ষম । ৪. এরা পোষক কোশের বাইরেও প্রজননক্ষম ।

 *****

Related Items

পদ্মের অভিযোজন

পদ্মের কান্ড ও মূল জলের নীচে কাদায় গাঁথা থাকে, কিন্তু পাতা, ফুল ও ফল ইত্যাদি জলের ওপর থাকে, তাই পদ্মকে আংশিক নিমজ্জিত জলজ উদ্ভিদ বলে । জলে বাস করার জন্য পদ্মের অভিযোজনগত বৈশিষ্ট্যগুলি হল - পদ্মের মূলতন্ত্র সুগঠিত নয় । পদ্মের প্রধান মূল থাকে না । পদ্মের মূল ...

অভিযোজন ও অভিব্যক্তির সম্পর্ক

প্রতি নিয়ত পরিবর্তনশীল পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে চলার জন্য নির্দিষ্ট পরিবেশে বসবাসকারী জীবদের মধ্যে একটা প্রচেষ্টা থাকে । কারণ পরিবেশের সঙ্গে অভিযোজিত হতে না পারলে তাদের অবলুপ্তির সম্ভাবনা থাকে । কিন্তু কোনও প্রজাতির অন্তর্ভুক্ত সব সদস্যের পরিবর্তিত পরিবেশের সঙ্গে...

অভিযোজনের সংজ্ঞা ও ব্যাখ্যা

পারিপার্শ্বিক পরিবর্তনশীল পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে বা মানিয়ে নিয়ে সুষ্ঠুভাবে বেঁচে থাকার জন্য জীবদেহের গঠনগত, শারীরবৃত্তীয় ও আচরণগত যে স্থায়ী পরিবর্তন ঘটে যা বংশপরম্পরায় সঞ্চারিত হয়ে জৈব অভিব্যক্তির পথকে সুগম করে, তাকেই অভিযোজন বলে । ...

প্রাকৃতিক নির্বাচনবাদের ত্রুটি

ডারউইন ছোটো এবং অস্থায়ী প্রকারণের ওপর খুব বেশি গুরুত্ব দিয়েছিলেন, কিন্তু দেখা গেছে যে, ওইগুলির বংশানুসরণ না ঘটায় অভিব্যক্তিতে ওদের কোনো ভুমিকা নেই । কোশের এবং জনন কোশের প্রকারণগুলির মধ্যে ডারউইন প্রভেদ করতে পারেননি । বহু প্রকারণই জিনের কার্যগত ফল ...

ডারউইনবাদের ব্যাখ্যা

ডারউইনের মতে, অত্যাধিক হারে বংশবৃদ্ধি করাই জীবের সহজাত বৈশিষ্ট্য । এর ফলে জ্যামিতিক ও গাণিতিক হারে জীবের সংখ্যা বৃদ্ধি পায় । একটি স্ত্রী স্যালমন মাছ প্রজনন ঋতুতে প্রায় 3 কোটি ডিম পাড়ে । একটি ঝিনুক একবারে 12 কোটি ডিম্বাণু উত্পাদন করে ...