ক্যাকটাসের অভিযোজন

Submitted by arpita pramanik on Sun, 12/23/2012 - 08:56

ক্যাকটাস -এর অভিযোজন (Adaptation of Cactus)

ফণীমনসা, তেসিরা মনসা ইত্যাদি ক্যাকটাস জাতীয় উদ্ভিদ । ক্যাকটাস অল্প বৃষ্টিপাতযুক্ত শুষ্কবালুকাময় স্থানে জন্মায় । এইরকম পরিবেশে বাস করার জন্য এদের জাঙ্গল উদ্ভিদ [Xerophyte] বলে ।  ক্যাকটাসের উল্লেখযোগ্য অভিযোজনগত বৈশিষ্ট্যগুলি হল :

[1] মূল:-

[a] ক্যাকটাসের মূলতন্ত্র সুগঠিত । মূলের বৃদ্ধির হার অন্যান্য উদ্ভিদের তুলনায় খুব বেশি । মূল মাটির নীচে অনেক দূর পর্যন্ত বিস্তৃত । জল সংগ্রহের জন্য মূলগুলি সুদীর্ঘ হয় ।

[b] মূলে মূলরোম এবং মূলত্রান থাকে ।

 

[2] কান্ড:-

[a] কান্ড সাধারণত খর্বাকার, কাষ্ঠল এবং পুরু বাকল বা মোমজাতীয় পদার্থ দ্বারা আবৃত থাকে ।

[b] ফণী মনসার কান্ড রসাল, সবুজ এবং চ্যাপ্টা পাতার মতো । এরকম কান্ডকে পর্ণকান্ড বলে । পর্ণকান্ডে অনেক পর্ব এবং পর্বমধ্য  থাকে ।

[c]  কান্ডের ত্বকে পুরু কিউটিকল থাকে । অনেকক্ষেত্রে রোম বা মোমের আবরণ থাকে । বাষ্পমোচন রোধের জন্য এই রকম অভিযোজন ।

[d] কান্ডের সংবহন কলা এবং যান্ত্রিক কলা সুগঠিত ।

[e] পর্ণকান্ডের কোশগুলি খুবই ঘনসন্নিবিষ্ট । বায়ু গহ্বর (বাতাবকাশ) সাধারণত থাকে না ।

[f] কোশে মিউসিলেজ (এক রকম পিচ্ছিল পদার্থ) থাকায় এইসব গাছের জল ধরে রাখার ক্ষমতা বেশি হয় ।

 

[3] পাতা:-

[a] ক্যাকটাসের পাতা আকারে ছোটো এবং সংখ্যায় কম থাকে ।

[b] ফণীমনসা গাছের পাতা কাঁটায় রূপান্তরিত হয়েছে । বাষ্পমোচন রোধ করার জন্য পাতাগুলি কাঁটায় রূপান্তরিত হয় ।

[c] অন্যান্য ক্যাকটাসের পাতার ত্বক খুব পুরু এবং কিউটিকলযুক্ত । বাষ্পমোচন রোধ করার জন্য পাতাগুলি অনেক সময় মোম জাতীয় পদার্থ দ্বারা আবৃত থাকে ।

[d] পাতার পত্ররন্ধ্র খুব কম সংখ্যায় থাকে । পত্ররন্ধ্রগুলি পাতার নিম্নত্বকের ভিতরের দিকে উত্পন্ন হয় । পত্ররন্ধ্রের রক্ষীকোশ দুটো আকারে খুব ছোটো হয় ।

 

 ক্যাকটাসের অভিযোজনের বৈশিষ্ট্য ও অভিযোজনগত গুরুত্ব :

অভিযোজিতঅংশ  বৈশিষ্ট্য অভিযোজনগত গুরুত্ব
১. পাতা ফণীমনসা গাছের পাতা কাঁটায় রূপান্তরিত হয়েছে । বৃষ্টি বিরল শুষ্ক মরুভূমি প্রধান অঞ্চলে প্রধানত বাষ্পমোচন রোধ করার জন্যই ফণীমনসা গাছের পাতাগুলো কাঁটায় রুপান্তরিত হয়েছে । এছাড়া রুপান্তরিত এই কাঁটা ফণীমনসা গাছের আত্মরক্ষার কাজেও ব্যবহৃত হয় ।
২. কান্ড (ক) ফণীমনসা গাছের কান্ড রসালো, সবুজ ও চ্যাপ্টা পাতার মতো ।এই রকম কান্ডকে পর্ণকান্ড বলে । সালোকসংশ্লেষে সক্ষম । পর্ণকান্ডে জল সঞ্চিত  থাকে । (ক) বৃষ্টি বিরল শুষ্ক মরুভূমি প্রধান অঞ্চলে পর্ণকান্ডে সঞ্চিত জল সালোকসংশ্লেষের কাজে লাগে । ফণী মনসার কান্ড চ্যাপ্টা, স্থুল ও রসালো হওয়ায় প্রচুর পরিমাণে জল সংরক্ষণ করতে পারে ।
(খ) কান্ডের কোশে মিউসিলেজ নামে একরকম পিচ্ছিল পদার্থ থাকে । (খ) ফণীমনসার কান্ডের কোশে মিউসিলেজ থাকায় এইসব গাছের জল ধরে রাখার ক্ষমতা বেশি হয় ।
(গ) কান্ডের ত্বক পুরু কিউটিকল যুক্ত । (গ) শুষ্ক ও বৃষ্টি বিরল অঞ্চলে বাষ্পমোচনের হার হ্রাস করার জন্য ফণীমনসার কান্ডের ত্বক পুরু কিউটিকলযুক্ত হয়েছে ।
৩. মূল (ক) ফণীমনসার মূল সুগঠিত এবং মূলের বৃদ্ধির হারও খুব দ্রুত ।  (ক) মরুভূমি প্রধান শুষ্ক অঞ্চলে মাটির অনেক গভীর থেকে জল শোষণের জন্যই ফণীমনসার মূলগুলি সুগঠিত হয়েছে এবং মূলের বৃদ্ধির হারও খুব বেশি  ।
(খ) ফণীমনসার মূল মাটির গভীরে বহুদূর পর্যন্ত বিস্তৃত থাকে । (খ) বৃষ্টি বিরল শুষ্ক অঞ্চলে মাটির গভীর থেকে জল শোষণের জন্যেই ফণীমনসার মূলগুলি সুদীর্ঘ হয় ।
(গ) এছাড়া মাটির ওপরের স্তরে প্রধান মূলের সঙ্গে অনেক শাখামূল যুক্ত থাকে । (গ) মরুভূমি প্রধান শুষ্ক অঞ্চলে মাটি বা বালির ওপরের স্তরে জমা বৃষ্টির জল শোষণের জন্য ভূমির ওপরের স্তরে ফণীমনসার প্রধান মূলটি বহু শাখাপ্রশাখা যুক্ত হয় ।

*****

Related Items

জনন ও বংশগতি

জনন অর্থাৎ বংশবিস্তার হল জীবের অন্যতম বৈশিষ্ট্য । পরিণত জীব অপত্য জীব সৃষ্টি করার মাধ্যমে নিজের প্রজাতির অস্তিত্ব বজায় রাখে । যে জীব থেকে অপত্য জীব সৃষ্টি হয় তাকে জনিতৃ জীব এবং জনিতৃ জীব থেকে সৃষ্টি হওয়া জীবকে অপত্য জীব বলে । ...

কোশ ও কোশ বিভাজন

কোশের প্রকারভেদ, প্রোক্যারিওটিক কোশ বা আদি কোশ, ইউক্যারিওটিক কোশ বা আদর্শ কোশ, প্রোক্যারিওটিক কোশবা আদি কোশ, প্রোক্যারিওটিক কোশের সংজ্ঞা, প্রোক্যারিওটিক কোশের গঠন, প্রোক্যারিওটিক কোশের প্রধান বৈশিষ্ট্য, ইউক্যারিওটিক কোশ বা আদর্শ কোশ ...

হরমোন (Hormones)

জীবদেহের যে জৈব-রাসায়নিক পদার্থ সারা দেহে রাসায়নিক সমন্বয়সাধন করে তাকেই হরমোন বলা হয় । হরমোন সাধারণত বিশেষ ধরনের কোষ, কলা এবং অন্তঃক্ষরা বা অনালগ্রন্থি থেকে ক্ষরিত হয় । ওই জৈব-রাসায়নিক পদার্থ সাধারণত প্রাণীদের ক্ষেত্রে রক্ত ও লসিকার মাধ্যমে ...

মানুষের স্নায়ুতন্ত্র ও জ্ঞানেন্দ্রীয়

উত্তেজনায় সাড়া দেওয়া জীবের একটি বিশেষ ধর্ম । পরিবেশ থেকে আসা নানান রকম উদ্দীপনা যেমন; চাপ, তাপ, ব্যথা, স্পর্শ, আলো, শব্দ, স্বাদ, গন্ধ ইত্যাদি গ্রহণের জন্য প্রাণীদেহে রিসেপ্টর নামে এক রকমের গ্রাহক যন্ত্র থাকে । নিউরোন, নিউরোনের শ্রেণিবিভাগ, মস্তিষ্ক ...

রেচন (Excretion)

রেচনের সংজ্ঞা এবং তার ব্যাখ্যা, রেচন অঙ্গ ও তন্ত্র, রেচন পদার্থ, রেচনের গুরুত্ব, উদ্ভিদের রেচন, উদ্ভিদের রেচনের বৈশিষ্ট্য, উদ্ভিদের রেচন পদার্থ ত্যাগের পদ্ধতি, উদ্ভিদের বিভিন্ন রেচন পদার্থ এবং তাদের অর্থকরী গুরুত্ব, নাইট্রোজেনবিহীন রেচন পদার্থ, নাইট্রোজেনযুক্ত রেচন পদার্থ ...