কোশ বিভাজনের প্রকারভেদ

Submitted by arpita pramanik on Thu, 12/13/2012 - 12:42

কোশ বিভাজনের প্রকারভেদ (Types of Cell Division)

জীবদেহে তিন রকমের কোশ বিভাজন দেখা যায়, যথা : (ক) অ্যামাইটোসিস,  (খ) মাইটোসিস এবং  (গ) মিয়োসিস

(A) অ্যামাইটোসিস (Amitosis)

অ্যামাইটোসিস হল এক ধরনের প্রত্যক্ষ বা সরাসরি নিউক্লিয়াস বিভাজন । এই প্রক্রিয়ায় মাতৃ নিউক্লিয়াসটির মাঝ বরাবর খাঁজ সৃষ্টির মাধ্যমে অপত্য নিউক্লিয়াসের সৃষ্টি হয় । আবার এই অপত্য নিউক্লিয়াস দুটির মাঝ বরাবর কোশ প্রাচীর বা কোশ পর্দাতে খাঁজের সৃষ্টি হওয়া খাঁজ ক্রমশ গভীর থেকে গভীরতর হয়ে দুটি অপত্য কোশের সৃষ্টি করে । উদাহরণ : অ্যামিবা, ঈস্ট প্রভৃতি প্রাণীর দেহে অ্যামাইটোসিস প্রক্রিয়ায় জনন সম্পন্ন হয় ।

অ্যামাইটোসিসের সংজ্ঞা:- যে প্রক্রিয়ায় কোনো মাতৃকোশে তার নিউক্লিয়াসের সরাসরি বা প্রত্যক্ষ বিভাজন ঘটিয়ে দুটি অপত্য কোশ সৃষ্টি করে, তাকে অ্যামাইটোসিস বলে

অ্যামাইটোসিসের স্থান:-  ব্যাকটিরিয়া, ঈস্ট, অ্যামিবা ইত্যাদি এককোশী জীবদেহ এই অ্যামাইটোসিস প্রক্রিয়ায় বিভাজিত হয় ।

অ্যামাইটোসিসের তাত্পর্য:- অ্যামাইটোসিস কোশ বিভাজনের দ্বারা নিম্নশ্রেণির জীবদের সংখ্যা বৃদ্ধি ঘটে ।

(B) মাইটোসিস (Mitosis)

মাইটোসিস এক রকমের সদৃশ বিভাজন, এই বিভাজনে উত্পন্ন অপত্য কোশের ক্রোমোজোম সংখ্যা মাতৃকোশের ক্রোমোজোম সংখ্যার সমান থাকে ।

উদাহরণ : উন্নত উদ্ভিদ ও প্রাণীর দেহ-মাতৃকোশের বিভাজন মাইটোসিস প্রক্রিয়ায় ঘটে ।

মাইটোসিসের সংজ্ঞা:-  যে কোশ বিভাজন প্রক্রিয়ায় একটি পরিণত দেহ-মাতৃকোশের নিউক্লিয়াসটির একবারমাত্র পরোক্ষ বিভাজনের মাধ্যমে মাতৃকোশের সম-আকৃতি ও সম-গুণসম্পন্ন এবং সমসংখ্যক ক্রোমোজোম বিশিষ্ট দুটি অপত্য কোশ সৃষ্টি হয়, তাকে মাইটোসিস বলে

মাইটোসিসের স্থান:-  মাইটোসিস প্রধানত জীবদেহের দেহকোশে ঘটে, উদ্ভিদ দেহের বর্ধনশীল অঞ্চলের কোশ অর্থাৎ ভাজক কলার কোশে এবং প্রাণীদেহের সমস্ত দেহকোশ ও ভ্রূণের পরিস্ফুটনের সময় ঘটে ।

মাইটোসিসের তাৎপর্য:- মাইটোসিস কোশ বিভাজনের প্রধান তাত্পর্য হল :

[i]  সদৃশ বিভাজন:- মাইটোসিস একটি সদৃশ বিভাজন পদ্ধতি, কারণ এই পদ্ধতিতে উত্পন্ন অপত্য নিউক্লিয়াস দুটি হুবহু মাতৃ নিউক্লিয়াসের মতো সম আকৃতি ও সম গুণ সম্পন্ন হয় । এছাড়া মাইটোসিস কোশ বিভাজনে উত্পন্ন প্রতিটি অপত্য কোশে মাতৃকোশের সমসংখ্যক ক্রোমোজোম থাকে । ফলে এই ধরনের কোশ বিভাজনে অপত্য কোশগুলির মধ্যে মাতৃকোশের গুণগত মান বজায় থাকায় জীবের বৈশিষ্ট্যও বজায় থাকে ।

[ii]  জীবদেহের আকার ও আয়তনের বৃদ্ধি:-  এই ধরনের কোশ বিভাজনে নতুন অপত্য কোশ সৃষ্টির মাধ্যমে জীবদেহ দৈর্ঘ্য এবং আয়তনে বৃদ্ধি পায় ।

[iii]  ক্ষতস্থান পূরণ:- মাইটোসিস কোশ বিভাজনের ফলে দেহের জীর্ণ ও ক্ষতিগ্রস্থ কোশ নতুন কোশ দিয়ে প্রতিস্থাপিত হয়, ফলে দেহের ক্ষতিগ্রস্থ স্থানের মেরামতি ঘটে ।

[iv]  অযৌন জনন:-  নিম্নশ্রেণির কিছু এককোশী জীব মাইটোসিস কোশ বিভাজনের মাধ্যমে জনন ও বংশবিস্তার করে থাকে ।

[v]  বহুকোশী জীবদেহের সৃষ্টি:- মাইটোসিস পদ্ধতিতে এককোশী জাইগোট বিভাজিত হয়ে বহুকোশী জীবের সৃষ্টি হয় । 

C. মিয়োসিস (Meiosis)

মিয়োসিস হল এক রকমের হ্রাস বিভাজন । এই বিভাজনে মাতৃকোশের ক্রোমোজোম সংখ্যা অপত্য কোশে কমে গিয়ে অর্ধেক হয় ।

উদাহরণ : গ্যামোট বা স্পোর তৈরির সময় উদ্ভিদ ও প্রাণীর জনন মাতৃকোশে মিয়োসিস প্রক্রিয়ায় কোশ বিভাজন হয় ।

মিয়োসিসের সংজ্ঞা:- যে কোশ বিভাজন পদ্ধতিতে একটি জনন-মাতৃকোশের নিউক্লিয়াসের পরপর দু'বার বিভাজনের ফলে মাতৃকোশের অর্ধসংখ্যক ক্রোমোজোম বিশিষ্ট চারটি অপত্য কোশ সৃষ্টি হয়, তাকে মিয়োসিস কোশ বিভাজন বলে

মিয়োসিসের স্থান:- মিয়োসিস প্রধানত জীবের জননকোশ অর্থাৎ গ্যামোট গঠনের সময় জনন মাতৃ কোশে ঘটে । এই প্রক্রিয়াকালে ডিপ্লয়েড জনন মাতৃকোশটির পরাগরেণু মাতৃ কোশ (2n) বিভাজিত হয়ে হ্যাপ্লয়েড গ্যামোট (n) উত্পন্ন করে । সপুষ্পক উদ্ভিদের পরাগধানী ও ডিম্বকের ডিম্বক মাতৃ কোশের (2n) মধ্যে এবং উন্নত শ্রেণির প্রাণীদেহে জননগ্রন্থি [gonad] অর্থাৎ শুক্রাশয় ও ডিম্বাশয়ের মধ্যে মিয়োসিস ঘটে । কোনও কোনও উদ্ভিদের ক্ষেত্রে (মস ও ফার্ণ জাতীয় উদ্ভিদ) ডিপ্লয়েড রেণু মাতৃকোশ থেকে যখন হ্যাপ্লয়েড রেণু উত্পন্ন হয় তখন মিয়োসিস বিভাজন ঘটে । কয়েক রকম নিম্নশ্রেণির উদ্ভিদ দেহে (স্পাইরোগাইরা, মিউকর) নিষেকের ফলে উত্পন্ন ডিপ্লয়েড জাইগোট বা জাইগোস্পোরের অঙ্কুরোদ্গমের সময় মিয়োসিস বিভাজন ঘটে ।

মিয়োসিস কোশ বিভাজনের প্রধান তাৎপর্য হল:-

[i]   জননকোশ সৃষ্টি:- জননকোশ অর্থাৎ গ্যামোট বা স্পোর সৃষ্টিতে মিয়োসিসের ভূমিকা উল্লেখযোগ্য ।

[ii]  ক্রোমোজোম সংখ্যার হ্রাস:- মিয়োসিস পদ্ধতিতে উত্পন্ন অপত্য কোশের প্রতিটিতে ক্রোমোজোম সংখ্যা কমে গিয়ে মাতৃকোশের অর্ধেক হয়ে যায়, যা জীবের কোনও একটি প্রজাতির মধ্যে ক্রোমোজোম সংখ্যা নির্দিষ্ট বা ধ্রুবক রাখার জন্য আবশ্যিক ।

[iii]  পরবর্তী প্রজন্মের নির্দিষ্ট ক্রোমোজোম সংখ্যা:- মিয়োসিসের জন্যই যৌন-জনন প্রক্রিয়ায় বংশবিস্তারকারী কোনও জীবের পরবর্তী প্রজন্মের দেহে ক্রোমোজোম সংখ্যা নির্দিষ্ট থাকে ।

[iv]  ক্রোমোজোমের অংশের বিনিময়:- মিয়োসিস কোশ বিভাজনে 'ক্রসিংওভার' এর সময় ক্রোমোজোমের ক্রোমাটিডের অংশের বিনিময় ঘটে ।

[v]  প্রকরণ:- ক্রসিংওভারের সময় ক্রোমাটিডের অংশের বিনিময় ঘটায় জিনের সজ্জা-বিন্যাস বা সজ্জা-প্রকরণেও পুনর্বিন্যাস বা রি-কম্বিনেশন ঘটে; যার জন্য অপত্য জীবের মধ্যে নতুন নতুন বৈশিষ্ট্যের সৃষ্টি হয়, একে প্রকরণ বলে ।

[vi]  জৈব-অভিব্যক্তি:- মিয়োসিসের ফলে সৃষ্টি হওয়া এই প্রকরণ জীবের ক্রমবিবর্তনে সাহায্য করে এবং এগুলি জৈব অভিব্যক্তির কাঁচামাল হিসেবে নতুন জীবের উত্পত্তির পথকে সুগম করে ।

*****

Related Items

ছত্রাক (Fungi)

ক্লোরোফিলবিহীন পরভোজী পুষ্টিসম্পন্ন ও ইউক্যারিওটিক প্রকৃতির সমাঙ্গদেহী উদ্ভিদদের ছত্রাক বলা হয় । ছত্রাকের অর্থনৈতিক গুরুত্ব অপরিসীম । মানবজীবনে ছত্রাকের উপকারিতা ও অপকারিতা । পেনিসিলিয়াম, ঈস্ট প্রভৃতি উপকারী ছত্রাক । পেনিসিলিয়াম এক রকমের বহুকোশী মৃতজীবী ...

জীবাণু বা মাইক্রোবস (Microbes)

যে সমস্ত অতি ক্ষুদ্র এবং এককোশী বা বহুকোশী জীবদের খালি চোখে দেখা যায় না অথচ কেবলমাত্র অণুবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যে দেখা যায়, তাদেরই সাধারণভাবে জীবাণু বলে । অতিক্ষুদ্র ও আণুবীক্ষণিক জীবদের এককথায় জীবাণু বা অণুজীব বা মাইক্রোবস বলা হয় ।

রোগসৃষ্টিকারী ভাইরাসের রোগ সংক্রমণ প্রক্রিয়া

ভাইরাস বিভিন্ন রোগ সৃষ্টি করে, যেমন - ইনফ্লুয়েঞ্জা, AIDS, পোলিও, জল বসন্ত, মাম্পস, হাম, এনকেফালাইটিস, জলাতঙ্ক, পা ও মুখের ঘা, জন্ডিস, ডেঙ্গু জ্বর প্রভৃতি । ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস প্রধানত মানুষের শ্বসনতন্ত্রকে আক্রমণ করে, ফলে রোগীর হাঁচি, কাশি ও নির্গত মিউকাসের মাধ্যমে ...

ব্যাকটিরিয়া আক্রমণকারী ভাইরাস বা ব্যাকটিরিওফাজ

1917 খ্রিস্টাব্দে বিজ্ঞানী দ্য হেরেলী ব্যাকটিরিয়া আক্রমণকারী ভাইরাসদের ব্যাকটেরিয়া-ভাইরাস বা ব্যাকটিরিওফাজ বা ফাজ নামে অভিহিত করেন । এখন পর্যন্ত যেসব ব্যাকটিরিওফাজের অস্তিত্ব সম্পর্কে ভালো করে জানা গিয়েছে, তাদের মধ্যে 'T' শ্রেণির অন্তর্গত ব্যাকটিরিওফাজই প্রধান । ...

ভাইরাসে জড়ের ও প্রাণের লক্ষণ

ভাইরাসের দেহে সাইটোপ্লাজম থাকে না । ভাইরাস কোনো বহিঃস্থ উদ্দীপকে সাড়া দেয় না । ভাইরাসের চলন ক্ষমতা নেই । ভাইরাসের দেহে কোনোরকম বিপাক ক্রিয়া পরিলক্ষিত হয় না । পোষকের দেহ-কোশে ভাইরাস বংশবিস্তারে সক্ষম । ভাইরাসের দেহে প্রোটিন ও নিউক্লিক অ্যাসিডের ...