উদ্ভিদ হরমোন : সাইটোকাইনিন

Submitted by arpita pramanik on Mon, 10/08/2012 - 11:53

সাইটোকাইনিন (Cytokinin)

কাইনিন পিউরিন জাতীয় নাইট্রোজেনঘটিত ক্ষারীয় জৈব পদার্থ । বিভিন্ন বিজ্ঞানী প্রদত্ত এই রকম হরমোনের নামগুলো হল সাইটোকাইনিন, কাইনেটিন [kinetin], ফাইটোকাইনিন [Phytokinin], প্রভৃতি । কাইনিন প্রধানত কার্বন, হাইড্রোজেন, নাইট্রোজেন এবং অক্সিজেন নিয়ে গঠিত ।

সংজ্ঞা:- উদ্ভিদের ফল এবং শস্যে উত্পন্ন পিউরিন জাতীয় নাইট্রোজেনযুক্ত যে ক্ষারীয় জৈব পদার্থসমূহ কোষ বিভাজনকে উদ্দীপিত করে, তাদের কাইনিন বা সাইটোকাইনিন বলে । 

উৎসস্থল :- উদ্ভিদের শস্য ও ফলে বেশি পরিমাণে কাইনিন থাকে । টম্যাটো, পীচ, ন্যাসপাতি, কুল প্রভৃতি ফল ও ফুলের নির্যাসে কাইনিন দেখা যায় । ভুট্টার শস্যে ও নারকেলের দুধে বেশি পরিমাণে কাইনিন থাকে । ডাবের জলে কাইনিন পাওয়া যায় ।

সাইটোকাইনিনের কাজ :-

(১) কাইনিন উদ্ভিদের কোষ বিভাজনে সক্রিয় অংশ গ্রহণ করে ।

(২) কাইনিন কোষের বৃদ্ধি ঘটায় ।

(৩) কাইনিন উদ্ভিদের জরা অর্থাৎ বার্ধক্য অবস্থাকে বিলম্বিত করতে সাহায্য করে ।

(৪) মুকুল উত্পাদনে এবং কলমের ক্ষেত্রে মূলের বৃদ্ধি ত্বরান্বিত করতে সাহায্য করে ।

(৫) অগ্রমুকুলের অবাধ বৃদ্ধি রোধ করে এবং কাক্ষিক মুকুলের বৃদ্ধি ও পরিস্ফুটনে সাহায্য করে ।

(৬) এই হরমোন বিচ্ছিন্ন পাতায় ক্লোরোফিল বিনষ্টিকরণকে বিলম্বিত করে ।

অক্সিন, জিব্বেরেলিন ও সাইটোকাইনিন -এর পার্থক্য

বৈশিষ্ট্য অক্সিন জিব্বেরেলিন সাইটোকাইনিন
১. প্রকৃতি এটি নাইট্রোজেনঘটিত জৈব যৌগ । এটি নাইট্রোজেনবিহীন জৈব যৌগ । এটি নাইট্রোজেনঘটিত জৈব যৌগ ।
২. উৎপত্তিস্থল  এটি প্রধানত কান্ড ও মূলের অগ্রস্থ ভাজক কলায় উৎপন্ন হয় । এটি প্রধানত পরিণত বীজ, অঙ্কুরিত চারা গাছ এবং     বীজপত্রে উৎপন্ন হয়  । এটি প্রধানত শস্য কলায় এবং ফুল ও ফলের নির্যাসে পাওয়া যায় ।
৩. কাজ এটি প্রধানত উদ্ভিদের বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করে । এটি প্রধানত উদ্ভিদের ফুল সৃষ্টিতে এবং বীজের সুপ্ত অবস্থা ভঙ্গ করে অঙ্কুরোদগমে সাহায্য করে  । এটি প্রধানত উদ্ভিদের কোষ বিভাজন ঘটায় ।

৪. বিশেষ ভূমিকা

ট্রপিক চলন নিয়ন্ত্রণে এই হরমোনের বিশেষ ভূমিকা আছে

ট্রপিক চলন নিয়ন্ত্রণে এই হরমোনের কোনো ভূমিকা নেই ।

ট্রপিক চলন নিয়ন্ত্রণে এর কোনো ভূমিকা নেই ।

*****

Related Items

উদ্ভিদ হরমোন - জিব্বেরেলিন

অক্সিনের মতো জিব্বেরেলিনও উদ্ভিদের একরকম গুরুত্বপূর্ণ হরমোন । এটি একরকমের টারপিনয়েড জাতীয় নাইট্রোজেনবিহীন জৈব অম্ল । জিব্বেরেলিন প্রধানত কার্বন, হাইড্রোজেন এবং অক্সিজেন নিয়ে গঠিত । জিব্বেরেলিনের রাসায়নিক নাম জিব্বেরেলিক অ্যাসিড । এরা বর্ণহীন ও গন্ধহীন ...

উদ্ভিদ হরমোন বা ফাইটোহরমোন

উদ্ভিদের কান্ড ও মূলের অগ্রস্থ ভাজক কলা উদ্ভিদ-হরমোনের প্রধান উত্সস্থল । এছাড়া বীজপত্র, মুকুলিত পত্র, ভ্রূণ মুকুল, ভ্রূণমুকুলাবরণী অর্থাৎ কোলিওপটাইল, শস্য, ফল ইত্যাদিতে উদ্ভিদ হরমোন থাকে । উদ্ভিদ হরমোনগুলিকে দুই ভাগে ভাগ করা যেতে পারে যথা ...

হরমোনের উৎপত্তিস্থল ও কর্মস্থল এবং সাধারণ কাজ

উদ্ভিদদেহে হরমোন ভাজক কলায়, বিশেষ করে কান্ডও মূলের অগ্রভাগে অবস্থিত তরুণ কোষের মধ্যে উত্পত্তি লাভ করে । প্রাণীদেহে হরমোন অনাল গ্রন্থি বা অন্তঃক্ষরা গ্রন্থির কোষে উত্পন্ন হয় । সুতরাং উদ্ভিদদেহে ভাজক কলা এবং প্রাণীদেহে অনাল গ্রন্থি হরমোনের প্রধান উত্সস্থল ...

হরমোনের সাধারণ ধারণা - সংজ্ঞা ও বৈশিষ্ট্য

জীবদেহের যে জৈব-রাসায়নিক পদার্থ সারা দেহে রাসায়নিক সমন্বয়সাধন করে তাকেই হরমোন বলা হয় । হরমোন সাধারণত বিশেষ ধরনের কোষ, কলা এবং অন্তঃক্ষরা বা অনালগ্রন্থি থেকে ক্ষরিত হয় । ওই জৈব-রাসায়নিক পদার্থ সাধারণত প্রাণীদের ক্ষেত্রে রক্ত ও লসিকার মাধ্যমে এবং উদ্ভিদের ...

জিভ, ত্বক ও নাসিকা

জিহ্বার সাহায্যে আমরা প্রধানত স্বাদ গ্রহন করি । এইজন্য জিহ্বাকে স্বাদেন্দ্রিয় বলে। যে আচ্ছাদন আমাদের দেহের কোমল অংশকে ঢেকে রাখে এবং চাপ, তাপ, স্পর্শ, বেদনা ইত্যাদি অনুভব করতে সাহায্য করে, তাকে ত্বক বা চর্ম বলে । নাসিকা বা নাক হল আমাদের ঘ্রাণেন্দ্রিয় । নাসা-গহ্বরের ছাদে ...