ইউক্যারিওটিক কোশের সাইটোপ্লাজম

Submitted by arpita pramanik on Mon, 12/10/2012 - 08:39

ইউক্যারিওটিক কোশের সাইটোপ্লাজম (Cytoplasm)

আদর্শ কোশ  বা ইউক্যারিওটিক কোশের সাইটোপ্লাজমের অংশগুলিকে তিন ভাগে ভাগ করা যেতে পারে, যথা-

(ক) ভ্যাকুওল (Vacuole)

(খ) সজীব কোশ-অঙ্গানু (Cell organelles)

(গ) নির্জীব বস্তু বা এরগ্যাস্টিক পদার্থ (Ergastic substances)

 

(ক) ভ্যাকুওল [Vacuole]:- সাইটোপ্লাজমের স্থানে স্থানে পর্দা ঘেরা গহ্বর দেখা যায়, এই গহ্বরগুলিকে ভ্যাকুওল বলে । উদ্ভিদ কোশের ভ্যাকুওলে কোশ-রস [cell sap] থাকে । প্রাণী কোশের ভ্যাকুওলে খাদ্য বা রেচন পদার্থ জমা থাকে । প্রাণী কোশের ভ্যাকুওলগুলি আকারে ছোটো এবং উদ্ভিদ কোশের ভ্যাকুওলগুলি তুলনামূলকভাবে আকারে বড়ো হয় ।

(খ) কোশ-অঙ্গানু [Cell organelles] :- আদর্শ কোশের সাইটোপ্লাজমে বিভিন্ন রকমের কোশ-অঙ্গাণু থাকে, যেমন -

[1] সেন্ট্রোজোম

[2] এন্ডোপ্লাজমিক রেক্টিকিউলাম

[3] প্লাষ্টিড

[4] মাইটোকনড্রিয়া

[6] রাইবোজোম

[7] লাইসোজোম

[8] গল্গি বস্তু

[1] সেন্ট্রোজোম [Centrosome]:- আদর্শ কোশের সাইটোপ্লাজমে, বিশেষ করে প্রাণী কোশের নিউক্লিয়াসের কাছে অবস্থিত এক রকমের তারকাকার অঙ্গাণু হল সেন্ট্রোজম । সেন্ট্রোজমের দু'টি অংশ থাকে, যথা:  (a) সেন্ট্রিওল ও  (b) সেন্ট্রোস্ফিয়ার

(a) সেন্ট্রিওল:-  সেন্ট্রিওল হল সেন্ট্রোজোম মধ্যস্থ দু'টি উজ্জ্বল কণিকা ।

(b) সেন্ট্রোস্ফিয়ার:- সেন্ট্রিওলকে ঘিরে থাকা গাঢ় সাইটোপ্লাজমের স্তর । প্রাণীর কোশ বিভাজনের সময় বেমতন্তু গঠনে সহায়তা করা সেন্ট্রোজমের কাজ ।

[2] এন্ডোপ্লাজমিক রেক্টিকিউলাম [Endoplasmic Recticulum]:- আদর্শ কোশের সাইটোপ্লাজমের ধাত্র যে অসংখ্য সরু ও শাখান্বিত নালিকা দিয়ে অনিয়মিত প্রকোষ্ঠে বিভক্ত থাকে সেইসব নালিকাগুলিকে এন্ডোপ্লাজমিক রেক্টিকিউলাম বলে । এদের কাজ হল কোশের মধ্যে বিভিন্ন রাসায়নিক বিক্রিয়াগুলিকে আলাদা রাখা ।

[3] প্লাষ্টিড [Plastid]:- আদর্শ কোশের সাইটোপ্লাজমে, বিশেষ করে উদ্ভিদ কোশে ডিম্বাকার, উপবৃত্তাকার, তারকাকার ফিতাকৃমি ইত্যাদি আকৃতি বিশিষ্ট, রঞ্জক পদার্থপূর্ণ বা রঞ্জক পদার্থবিহীন যেসব অঙ্গাণু সালোকসংশ্লেষে, খাদ্য সঞ্চয়ে এবং ফুলের পরাগযোগে সাহায্য করে তাদের প্লাষ্টিড বলে ।

প্লাষ্টিড প্রধানত তিন রকমের হয়, যেমন : (a) সবুজ প্লাষ্টিড বা ক্লোরোপ্লাষ্টিড,  (b) রঙ্গিন প্লাষ্টিড বা ক্রোমোপ্লাষ্টিড এবং   (c) বর্ণহীন প্লাষ্টিড বা লিউকোপ্লাষ্টিড

(a) ক্লোরোপ্লাষ্টিড:- ক্লোরোপ্লাষ্টিড খাদ্য-সংশ্লেষে সহায়তা করে ।

(b) ক্রোমোপ্লাষ্টিড:- ক্রোমোপ্লাষ্টিড ফুল ও ফলের বর্ণ গঠনে সহায়তা করে ।

(c) লিউকোপ্লাষ্টিড:-  লিউকোপ্লাষ্টিড শ্বেতসার, প্রোটিন ও ফ্যাট জাতীয় খাদ্য সঞ্চয়ে সহায়তা করে ।

[4] মাইটোকনড্রিয়া [Mitochondria]:- আদর্শ কোশের সাইটোপ্লাজমে বিক্ষিপ্তাকারে ছড়িয়ে থাকা ছোটো ছোটো দন্ডাকার, সূত্রাকার, গোলাকার ইত্যাদি যে সমস্ত অঙ্গাণুর মধ্যে কোশের শক্তি উত্পন্ন হয়, তাদের মাইটোকনড্রিয়া বলে । এই জন্য মাইটোকনড্রিয়াকে কোশের "শক্তির আধার" বা "শক্তি ঘর" বলে ।

[5] রাইবোজোম [Ribosome]:- আদর্শ কোশের এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকিউলামের প্রাচীর, বা নিউক্লীয় পর্দা, নিউক্লিওলাস অথবা সাইটোপ্লাজমে অসংখ্য যেসব পদার্থবিহীন কণিকা বা দানা থাকে তাদের রাইবোজোম বলে । রাইবোজোম প্রোটিন সংশ্লেষে সহায়তা করে ।

[6] লাইসোজোম [Lysosome]:- আদর্শ কোশের সাইটোপ্লাজমে, বিশেষ করে প্রাণী কোশে যে পর্দাবেষ্টিত ছোট থলির মতো অঙ্গাণুগুলি থাকে তাদের লাইসোজোম বলে । এগুলি উৎসেচক ক্ষরণ করে কোশাভ্যন্তরীয় পরিপাকে সহায়তা করে ।

[7] গল্গি বস্তু [Golgi bodies]:- আদর্শ কোশের সাইটোপ্লাজমে নিউক্লিয়াসের কাছে চ্যাপ্টা থলির মতো যে সমস্ত অঙ্গাণু পরপর সমান্তরালভাবে সাজানো থাকে তাদের একসঙ্গে গল্গি বস্তু বলে । উদ্ভিদ কোশের গল্গি বস্তুকে ডিকটিওজোম বলে । গল্গি বস্তু কোশের ক্ষরিত পদার্থ সংগ্রহ ও পরিবহনে সহায়তা করে ।

(গ) এরগ্যাস্টিক পদার্থ [Ergastic substances]:- আদর্শ কোশের সাইটোপ্লাজমে, বিশেষ করে উদ্ভিদ কোশে সজীব কোশ অঙ্গাণু ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের নির্জীব বস্তু বা এরগ্যাস্টিক পদার্থ থাকে ।

*****

Related Items

চক্ষু বা চোখ (Eye)

যে বিশেষ অঙ্গের দ্বারা প্রাণীরা পরিবেশ থেকে আলোকজাত উদ্দীপনা গ্রহণ করে এবং বহির্জগতের দৃশ্য দেখতে পায়, তাকে চোখ বলে । চক্ষু বা চোখ হল আমাদের দর্শনেন্দ্রিয় । আমাদের চোখ দুটি মস্তিষ্কের সম্মুখভাগে অক্ষিকোটরে অবস্থিত । প্রতিটি চোখ একটি অক্ষিগোলক, একজোড়া অক্ষিপল্লব ...

প্রতিবর্ত চাপ বা রিফ্লেক্স আর্ক

যে স্নায়ুপথে প্রতিবর্ত ক্রিয়ার স্নায়ুস্পন্দন আবর্তিত হয়, তাকে প্রতিবর্ত চাপ বা রিফ্লেক্স আর্ক বলে । প্রতিবর্ত চাপ সাধারণত তিনটি স্নায়ুকোষ দ্বারা গঠিত । তবে দুই অথবা বহু স্নায়ুকোষের সমন্বয়েও প্রতিবর্ত চাপ গঠিত হাতে পারে । প্রতিবর্ত চাপে সাইন্যাপস অর্থাৎ স্নায়ু-সন্নিধির অবস্থান অনুযায়ী ...

প্রতিবর্ত ক্রিয়া (Reflex action)

প্রাণীদেহে নির্দিষ্ট উত্তেজনার প্রভাবে যে তাত্ক্ষনিক, স্বতঃস্ফুর্ত ও অনৈচ্ছিক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়, তাকে প্রতিবর্ত ক্রিয়া বলে । প্রতিবর্ত ক্রিয়ার দুটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হল- এই ক্রিয়া অনৈচ্ছিক এবং এটি সুষুম্নাকান্ড দ্বারা নিয়ন্ত্রিত । সুতরাং সুষুম্নাকান্ড দিয়ে নিয়ন্ত্রিত প্রাণীদের অনৈচ্ছিক ...

স্নায়ু সন্নিধি ও স্নায়ুগ্রন্থি

সাইন্যাপস্ বা প্রান্তসন্নিকর্ষ হল দুটি নিউরোনের সংযোগস্থল, যেখানে একটি নিউরোনের অ্যাক্সনের প্রান্ত এবং অন্য একটি নিউরোনের ডেনড্রাইটের প্রান্ত খুব কাছাকাছি থাকে কিন্তু কখনই স্পর্শ করে না, মাঝে একটি আনুবীক্ষণিক ফাঁক থেকেই যায়, আর এর মধ্য দিয়েই নিউরোহিউমর নামে তরলের ...

স্নায়ু ও স্নায়ুর কাজ

যোগ কলার আবরণবেষ্টিত স্নায়ুতন্তুকে সাধারণ ভাবে স্নায়ু বা নার্ভ বলে । স্নায়ুতন্তুর চারদিকে যে যোগ কলার আবরণ থাকে তাকে এন্ডোনিউরিয়াম বলে । এন্ডোনিউরিয়াম-আবরণযুক্ত কয়েকটি স্নায়ুতন্তু আবার পেরিনিউরিয়াম নামক আবরণ দ্বারা আবৃত থাকে । মোটা ও বড় স্নায়ুর ক্ষেত্রে কয়েকটি ...