ইউক্যারিওটিক কোশের ক্রোমোজোম, DNA, RNA ও জিন

Submitted by arpita pramanik on Tue, 12/11/2012 - 12:02

ইউক্যারিওটিক কোশের ক্রোমোজোম, D.N.A. , R.N.A. ও জিন (Genaral idea about Cromosome, D.N.A., R.N.A. and Gene of Eukaryotic Cells)

বংশগতির মৌলিক সূত্রগুলির আবিষ্কারক বিজ্ঞানী গ্রেগর জোহান মেন্ডেলের (1866) সময় ক্রোমোজোম ও জিনের চরিত্র সম্পর্কে বিশেষ কিছুই জানা ছিল না ।  বিজ্ঞানী ওয়ালডেয়ার (Waldeyer, 1888) প্রথম ক্রোমোজোম আবিষ্কার করেন । 1902 খ্রিস্টাব্দে বিজ্ঞানী টি.বোভেরিডব্লু. এস. সাটনের পরীক্ষা প্রমাণ করে যে, জিন হল ক্রোমোজোমের একটি অংশ । পরবর্তীকালে বিভিন্ন বিজ্ঞানীর গবেষণা থেকে প্রমাণিত হয় যে, জিন হল ক্রোমোজোমের মধ্যে থাকা D.N.A. [Deoxyribonucleic acid] -র একটি অংশ

এরপর বিজ্ঞানী গ্রিফিথ (1928), অ্যাভারি, ম্যাকলয়েড এবং ম্যাককার্টি (1944) -র গবেষণা থেকে জানা যায়, প্রাণীদের জিনগত বা বংশগত বৈশিষ্ট্য এক প্রজন্ম থেকে অন্য প্রজন্মে বহন করে নিয়ে যায় D.N.A. । তাই DNA কে কোশের জিনগত বা জেনেটিক উপাদান বলা হয় ।

অবশ্য কোনও কোনও ভাইরাসের ক্ষেত্রে RNA [Ribo nucleic acid] কোশের জিনগত উপাদান হিসেবে কাজ করে, এইসব ভাইরাসকে রেট্রোভাইরাস বলা হয় (যেমন : AIDS ভাইরাস, HIV [Human Immunodeficiency Virus] প্রভৃতি ।

ইউক্যারিওটিক ক্রোমোজোমের অঙ্গসংস্থানিক গঠন (Morphological structure of Eukaryotic Cromosome)

ক্রোমোজোমের সংজ্ঞা:-  ইউক্যারিওটিক কোশের নিউক্লিয়াসের নিউক্লিয় জালিকা থেকে সৃষ্ট এবং প্রোটিন ও নিউক্লিক অ্যাসিড দ্বারা গঠিত, স্ব-প্রজননশীল যে সুতোর মতো অংশ জীবের বংশগত বৈশিষ্ট্যাবলি বহন করে এবং প্রজাতির পরিব্যক্তি, প্রকরণ ও বিবর্তনে মুখ্য ভূমিকা গ্রহন করে, তাকে ক্রোমোজোম বলে ।

ক্রোমোজোমই হল জিনের বাহক —এই তত্ত্ব প্রমাণিত হওয়ার পর থেকেই ক্রোমোজোমের গঠন সম্পর্কে পুঙ্খানুপুঙ্খ গবেষণা শুরু হয়ে যায় । এইসব গবেষণায় দেখা যায় যে, প্রোক্যারিওটিক কোশ বা সরল কোশ (যেমন : ব্যাকটেরিয়ার কোশ ) এবং ইউক্যারিওটিক কোশ বা জটিল কোশের (বহুকোশি জীবের কোশ) ক্রোমোজোমের গঠন বিন্যাস ও চরিত্র কিছুটা আলাদা । আদি কোশ বা প্রোক্যারিওটিক কোশে একটি মাত্র ক্রোমোজোম থাকে । 

অন্য দিকে ইউক্যারিওটিক কোশে একাধিক ক্রোমোজোম থাকে, যারা সব সময় জোড়ায় জোড়ায় (In pairs) অবস্থান করে । এক একটি জোড়ার ক্রোমোজোম দুটির প্রত্যেকটির আকৃতি (Shape) ও আকার (Size) একেবারে এক ও অভিন্ন হয় । এই রকম জোড়া বাঁধা দুটি ক্রোমোজোম সংখ্যাকে একসঙ্গে ডিপ্লয়েড (2n) ক্রোমোজোম বলা হয় ।  কোনও প্রজাতির অন্তর্ভুক্ত প্রত্যেকটি জীবের দেহকোশের ডিপ্লয়েড ক্রোমোজোম সব সময় নির্দিষ্ট অর্থাৎ ধ্রুবক থাকে ।

উদাহরণ হিসেবে বলা যায় যে, মানুষের দেহকোশের ডিপ্লয়েড ক্রোমোজোম সংখ্যা সব সময় 23 জোড়া, আবার ড্রসোফিলা নামে মাছির দেহকোশের ডিপ্লয়েড ক্রোমোজোম সংখ্যা 4 জোড়া, প্রভৃতি ।

অনেক সময়ে দেহকোশের কোনও কোনও ক্রোমোজোম জোড়া বেঁধে না থেকে এককভাবে (In Single Set) অবস্থান করে —এই ধরনের ক্রোমোজোম সংখ্যাকে হ্যাপ্লয়েড (n) বা একক সংখ্যক বলে । জননকোশ বা গ্যামোটে (Gamete) হ্যাপ্লয়েড সংখ্যক ক্রোমোজোম থাকে ।  

ক্রোমোজোমের আকৃতি:- যে-কোনও ইউক্যারিওটিক কোশের ক্রোমোজোমগুলোকে শুধুমাত্র মাইটোসিস কোশ বিভাজনের সময়ই দেখা যায় । কোশ বিভাজনের মেটাফেজ দশায় ক্রোমোজোমগুলোকে দেখতে অনেকটা লাঠির মতো বা সুতোর মতো হয় ।

ক্রোমোজোমের গঠন ও আকৃতি কোশ বিভাজনের বিভিন্ন দশায় বিভিন্ন রকম থাকে । ইন্টারফেজ দশায় ক্রোমোজোমের নির্দিষ্ট কোনো আকৃতি থাকে না । প্রোফেজ দশায় ক্রোমোজোম কুণ্ডলী পাকাতে শুরু করে, মেটাফেজঅ্যানাফেজ দশায় সবচেয়ে কুণ্ডলী পাকানো অবস্থায় থাকে এবং তখন এর প্রকৃতি গঠন বোঝা যায় । টেলোফেজ দশায় ক্রোমোজোম আবার অকুণ্ডলীকৃত অবস্থা প্রাপ্ত হতে থাকে ।  

*****

Related Items

উদ্ভিদ হরমোন বা ফাইটোহরমোন

উদ্ভিদের কান্ড ও মূলের অগ্রস্থ ভাজক কলা উদ্ভিদ-হরমোনের প্রধান উত্সস্থল । এছাড়া বীজপত্র, মুকুলিত পত্র, ভ্রূণ মুকুল, ভ্রূণমুকুলাবরণী অর্থাৎ কোলিওপটাইল, শস্য, ফল ইত্যাদিতে উদ্ভিদ হরমোন থাকে । উদ্ভিদ হরমোনগুলিকে দুই ভাগে ভাগ করা যেতে পারে যথা ...

হরমোনের উৎপত্তিস্থল ও কর্মস্থল এবং সাধারণ কাজ

উদ্ভিদদেহে হরমোন ভাজক কলায়, বিশেষ করে কান্ডও মূলের অগ্রভাগে অবস্থিত তরুণ কোষের মধ্যে উত্পত্তি লাভ করে । প্রাণীদেহে হরমোন অনাল গ্রন্থি বা অন্তঃক্ষরা গ্রন্থির কোষে উত্পন্ন হয় । সুতরাং উদ্ভিদদেহে ভাজক কলা এবং প্রাণীদেহে অনাল গ্রন্থি হরমোনের প্রধান উত্সস্থল ...

হরমোনের সাধারণ ধারণা - সংজ্ঞা ও বৈশিষ্ট্য

জীবদেহের যে জৈব-রাসায়নিক পদার্থ সারা দেহে রাসায়নিক সমন্বয়সাধন করে তাকেই হরমোন বলা হয় । হরমোন সাধারণত বিশেষ ধরনের কোষ, কলা এবং অন্তঃক্ষরা বা অনালগ্রন্থি থেকে ক্ষরিত হয় । ওই জৈব-রাসায়নিক পদার্থ সাধারণত প্রাণীদের ক্ষেত্রে রক্ত ও লসিকার মাধ্যমে এবং উদ্ভিদের ...

জিভ, ত্বক ও নাসিকা

জিহ্বার সাহায্যে আমরা প্রধানত স্বাদ গ্রহন করি । এইজন্য জিহ্বাকে স্বাদেন্দ্রিয় বলে। যে আচ্ছাদন আমাদের দেহের কোমল অংশকে ঢেকে রাখে এবং চাপ, তাপ, স্পর্শ, বেদনা ইত্যাদি অনুভব করতে সাহায্য করে, তাকে ত্বক বা চর্ম বলে । নাসিকা বা নাক হল আমাদের ঘ্রাণেন্দ্রিয় । নাসা-গহ্বরের ছাদে ...

কর্ণ বা কান (Ear)

যে জ্ঞানেন্দ্রিয়ের সাহায্যে মানুষ বহিরাগত শব্দ শোনে তাকে কর্ণ বা কান বলে । মানুষের কানের প্রধান তিনটি অংশ হল - বহিঃকর্ণ, মধ্য কর্ণ এবং অন্তঃকর্ণ । মানুষের বহিঃকর্ণটি তিনটি অংশ নিয়ে গঠিত; যথা- কর্ণছত্র, কর্ণকুহর, এবং কর্ণপটহ । কর্ণছত্র দুটি মাথার দু'পাশে অবস্থিত এবং অনৈচ্ছিক ...