অপুংজনি বা পার্থেনোজেনেসিস

Submitted by arpita pramanik on Sun, 12/16/2012 - 21:47

অপুংজনি বা পার্থেনোজেনেসিস (Parthenogensis)

যে জনন প্রক্রিয়ায় নিষেক ছাড়াই অনিষিক্ত ডিম্বাণু থেকে সরাসরি অপত্য উদ্ভিদ বা প্রাণী সৃষ্টি হয়, তাকে অপুংজনি বা পার্থেনোজেনেসিস বলে । যেমন : স্পাইরোগাইরা, মিউকর প্রভৃতি উদ্ভিদ এবং বোলতা, মৌমাছি ইত্যাদি প্রাণীদের ক্ষেত্রে অপুংজনি দেখা যায় ।

যৌন জনন ও অপুংজনির মধ্যে পার্থক্য

বৈশিষ্ট্য যৌন জনন অপুংজনি
১. গ্যামেটের ভূমিকা এই রকম জননে পুং ও স্ত্রী উভয় গ্যামেটই প্রয়োজন । এই রকম জননে পুং গ্যামেটের প্রয়োজন হয় না ।
২. নিষেক যৌন জননের ক্ষেত্রে পুং ও স্ত্রী গ্যামেট নিষিক্ত হয় । অপুংজনির ক্ষেত্রে নিষেক ঘটে না অর্থাৎ গ্যামেট নিষিক্ত হয় না ।
৩. জাইগোট গঠন এক্ষেত্রে গ্যামেটদ্বয়ের মিলন বা নিষেকের পর ডিপ্লয়েড জাইগোট উত্পন্ন হয় । এক্ষেত্রে জাইগোট গঠিত হয় না এবং স্ত্রী গ্যামেটটি হ্যাপ্লয়েড অ্যাজাইগোস্পোরে পরিণত হয় ।
৪. জনিতৃ জীবের গুণাবলি এক্ষেত্রে উত্পন্ন অপত্যকোশে পিতা ও মাতা, উভয়েরই গুণ বর্তমান থাকে । এক্ষেত্রে উত্পন্ন অপত্য কোশে কেবলমাত্র মাতার গুণই বর্তমান থাকে ।

৫. উদাহরণ 

 

যৌন জনন প্রধানত উন্নত শ্রেণির উদ্ভিদ ও প্রাণীদের ক্ষেত্রে দেখা যায় । 

নিম্ন শ্রেণির উদ্ভিদ, যেমন : স্পাইরোগাইরা, মিউকর এবং বোলতা, মৌমাছি ইত্যাদি প্রাণীদের ক্ষেত্রে অপুংজনি দেখা যায় ।  

 

জনুক্রম [Alternation of Generation]:- বেশির ভাগ জীবের, বিশেষ করে উদ্ভিদের (মস, ফার্ণ ইত্যাদি) এবং নিম্ন শ্রেণির প্রাণীদের (মনোসিস্টিস) জীবন চক্রে দুটো জনু [generation] উপস্থিত থাকে । এদের একটি হল অযৌন জনু [asexual generation] বা ডিপ্লয়েড জনু [diploid generation : 2n] এবং অপরটি হল যৌন জনু [sexual generation] বা হ্যাপ্লয়েড জনু [haploid    generation : n ] । এই জনু দুটো পর্যায়ক্রমে ঘটে । যখন একটি জীবনচক্র সম্পন্ন হয় তখন তাকে জনুক্রম [Alternation of    Generation] বলে ।

সংজ্ঞা:- জীবের জীবনচক্রে হ্যাপ্লয়েড ও ডিপ্লয়েড জনুর পর্যায়ক্রমিক আবর্তনকে জনুক্রম বলে ।  

 

পদ্ধতি:- উন্নত উদ্ভিদ ও প্রাণীদেহে জনুক্রমটি যেভাবে ঘটে তা হল; পরিণত জীবদেহে (2n) মিয়োসিস প্রক্রিয়ায় হ্যাপ্লয়েড পুং ও স্ত্রী গ্যামেট (n) উত্পন্ন হয় । এই গ্যামেটদ্বয়ের নিষেকের দ্বারা যৌন জননের ফলে উত্পন্ন হয় ডিপ্লয়েড জাইগোট (2n) । এই জাইগোট থেকে মাইটোসিস বিভাজনের দ্বারা অবশেষে ভ্রুণের মাধ্যমে আবার পূর্ণাঙ্গ জীবদেহ সৃষ্টি হয় । 

নিম্নশ্রেণির উদ্ভিদদেহে যেমন: মস জাতীয় উদ্ভিদের জনুক্রমে লিঙ্গধর দেহ (n) এবং রেণুধর দেহ (2n) দেখা যায় । লিঙ্গধর দেহে (n) হ্যাপ্লয়েড পুং গ্যামেট ও স্ত্রী গ্যামেট সৃষ্টি হয় । উভয় গ্যামেটের যৌন মিলনের ফলে জাইগোট (2n) উত্পন্ন হয় । জাইগোট থেকে ডিপ্লয়েড রেণুধর দেহ (2n) গঠিত হয় । রেণুধর দেহে মিয়োসিস প্রক্রিয়ায় হ্যাপ্লয়েড রেণু (n) সৃষ্টি হয় । রেণু অঙ্কুরিত হয়ে আবার লিঙ্গধর উদ্ভিদ দেহ (n) সৃষ্টি করে । কিন্তু ফার্ণ জাতীয় উদ্ভিদের ক্ষেত্রে রেণুধর (2n) ও লিঙ্গধর (n) উদ্ভিদ পর্যায়ান্বিত হয়ে জনন চক্র সম্পূর্ণ করে ।

*****

Related Items

উদ্ভিদ হরমোন বা ফাইটোহরমোন

উদ্ভিদের কান্ড ও মূলের অগ্রস্থ ভাজক কলা উদ্ভিদ-হরমোনের প্রধান উত্সস্থল । এছাড়া বীজপত্র, মুকুলিত পত্র, ভ্রূণ মুকুল, ভ্রূণমুকুলাবরণী অর্থাৎ কোলিওপটাইল, শস্য, ফল ইত্যাদিতে উদ্ভিদ হরমোন থাকে । উদ্ভিদ হরমোনগুলিকে দুই ভাগে ভাগ করা যেতে পারে যথা ...

হরমোনের উৎপত্তিস্থল ও কর্মস্থল এবং সাধারণ কাজ

উদ্ভিদদেহে হরমোন ভাজক কলায়, বিশেষ করে কান্ডও মূলের অগ্রভাগে অবস্থিত তরুণ কোষের মধ্যে উত্পত্তি লাভ করে । প্রাণীদেহে হরমোন অনাল গ্রন্থি বা অন্তঃক্ষরা গ্রন্থির কোষে উত্পন্ন হয় । সুতরাং উদ্ভিদদেহে ভাজক কলা এবং প্রাণীদেহে অনাল গ্রন্থি হরমোনের প্রধান উত্সস্থল ...

হরমোনের সাধারণ ধারণা - সংজ্ঞা ও বৈশিষ্ট্য

জীবদেহের যে জৈব-রাসায়নিক পদার্থ সারা দেহে রাসায়নিক সমন্বয়সাধন করে তাকেই হরমোন বলা হয় । হরমোন সাধারণত বিশেষ ধরনের কোষ, কলা এবং অন্তঃক্ষরা বা অনালগ্রন্থি থেকে ক্ষরিত হয় । ওই জৈব-রাসায়নিক পদার্থ সাধারণত প্রাণীদের ক্ষেত্রে রক্ত ও লসিকার মাধ্যমে এবং উদ্ভিদের ...

জিভ, ত্বক ও নাসিকা

জিহ্বার সাহায্যে আমরা প্রধানত স্বাদ গ্রহন করি । এইজন্য জিহ্বাকে স্বাদেন্দ্রিয় বলে। যে আচ্ছাদন আমাদের দেহের কোমল অংশকে ঢেকে রাখে এবং চাপ, তাপ, স্পর্শ, বেদনা ইত্যাদি অনুভব করতে সাহায্য করে, তাকে ত্বক বা চর্ম বলে । নাসিকা বা নাক হল আমাদের ঘ্রাণেন্দ্রিয় । নাসা-গহ্বরের ছাদে ...

কর্ণ বা কান (Ear)

যে জ্ঞানেন্দ্রিয়ের সাহায্যে মানুষ বহিরাগত শব্দ শোনে তাকে কর্ণ বা কান বলে । মানুষের কানের প্রধান তিনটি অংশ হল - বহিঃকর্ণ, মধ্য কর্ণ এবং অন্তঃকর্ণ । মানুষের বহিঃকর্ণটি তিনটি অংশ নিয়ে গঠিত; যথা- কর্ণছত্র, কর্ণকুহর, এবং কর্ণপটহ । কর্ণছত্র দুটি মাথার দু'পাশে অবস্থিত এবং অনৈচ্ছিক ...