মুঘল যুগে ওলন্দাজ বণিকদের কার্যকলাপ

Submitted by avimanyu pramanik on Thu, 10/30/2014 - 21:42

মুঘল যুগে ওলন্দাজ বণিকদের কার্যকলাপ :

ওলন্দাজ বণিকদের কার্যকলাপ : সপ্তদশ শতকের গোড়া থেকেই ওলন্দাজ ও ইংরেজ বণিকেরা এশীয় বাণিজ্যে অংশগ্রহণ করতে থাকে । গোড়ার দিকে এরা পর্তুগিজদের সঙ্গে সংঘর্ষ এড়াতে ইন্দোনেশিয়া ও পূর্ব ভারতীয় দ্বীপপুঞ্জের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক স্থাপনে আগ্রহী ছিল । কিন্তু এরা অচিরেই বুঝতে পারে যে, মশলা ও গোলমরিচের ব্যবসা করতে হলে ভারতের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক স্থাপন না করে উপায় নেই । কারণ মশলা কিনতে হলে তার বিনিময়ে ভারতীয় বস্ত্রের জোগান দিতে হত পূর্ব ভারতীয় দ্বীপপুঞ্জের বাজারে । ভারতীয় বস্ত্রের চাহিদা ইউরোপের বাজারেও ছিল । এই ব্যাপারে ওলন্দাজরা পর্তুগিজদের এশীয় বাজার থেকে হটাতে তৎপর হয় । ওলন্দাজরা কাপড়ের ব্যবসার জন্য করমণ্ডল উপকূলে বাণিজ্যিক প্রাধান্য স্থাপনে উদ্যোগী হয় । ১৬০৬ খ্রীষ্টাব্দে তারা গোলকুণ্ডার শাসকের কাছ থেকে একটি ফরমান আদায় করে মসুলিপত্তমে কুঠি নির্মাণ করেন । স্বল্প শুল্কে ব্যবসা করার জন্য তারা অধিকারও আদায় করে । কৃষ্ণা-গোদাবরী অঞ্চলে তারা অসংখ্য কুঠি নির্মাণ করে । বিজয়নগর রাজের কাছ থেকেও তারা বাণিজ্যিক সুযোগ সুবিধা লাভ করে । ১৬৯০ খ্রীষ্টাব্দ পর্যন্ত তেজেনাপত্তম ও পুলিকট ছিল তাদের প্রধান বাণিজ্যিক কেন্দ্র । ওই বছর তারা নেগাপত্তমে তাদের ঘাঁটি সরিয়ে নেয় । গুজরাটে তারা পর্তুগিজদের প্রবল প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হয় । ১৬১৭ খ্রিষ্টাব্দে তারা সুরাটে বাণিজ্যকুঠি স্থাপনে সক্ষম হয় । পর্তুগিজদের সঙ্গে সংঘর্ষে তারা শেষ পর্যন্ত জয়ী হয় । ১৬৪১ খ্রীষ্টাব্দে মালাক্কার পতন হয় । এরপর ১৬৫৫-৫৬ খ্রীষ্টাব্দে কলম্বো এবং ১৬৫৯ থেকে ১৬৬৩ খ্রীষ্টাব্দের মধ্যে কোচিনের পতন হয় । করমণ্ডল ও গুজরাট ছাড়া বাংলার চুঁচুড়া, কাশিমবাজার, বরাহনগর, ওড়িশার বালেশ্বর ও বিহারের পাটনাতেও তাদের কুঠি ছিল ।

*****

Related Items

মুঘল যুগে পর্তুগিজ বণিকদের কার্যকলাপ

১৪৯৭-৯৮ খ্রীষ্টাব্দে যখন পর্তুগিজ নাবিক ভাস্কো-দা-গামা মালাবার উপকূলে কালিকট বন্দরে অবতরণ করেন, তখন সেই ঘটনার গুরুত্ব ও তাৎপর্য অনুধাবন করার ক্ষমতা ভারতবাসীর ছিল না । ভাস্কো-দা-গামা মালাবার উপকূলে কালিকট বন্দরে অবতরণ করার পর থেকেই ইউরোপের সঙ্গে ...

মুঘল যুগে ভারতের বহির্বাণিজ্য

বহির্বিশ্বে ভারতের সঙ্গে বিভিন্ন দেশের বাণিজ্যিক লেনদেন ছিল । বিদেশী বণিকরা যেমন ব্যবসার জন্য ভারতে আসত, তেমনই ভারতীয় বণিকেরা, বিশেষত গুজরাটিরা বহির্বাণিজ্যে অংশগ্রহণ করত । ভারত থেকে বস্ত্র, গোল মরিচ, নীল ও অন্যান্য দ্রব্যসামগ্রী রপ্তানি হত । ভারতে আমদানি হত ...

মুঘল যুগে ভারতের আভ্যন্তরীণ বাণিজ্য

মুঘল আমলে দেশে শান্তি ও শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠিত হওয়ায়, রাস্তাঘাট ও সরাইখানা নির্মাণ এবং পরিবহণ ব্যবস্থার উন্নতির ফলে আভ্যন্তরীণ ব্যবসাবাণিজ্যের প্রসার ঘটেছিল । তা ছাড়া উন্নত মুদ্রানীতি এবং নগদে বেতন প্রদানের ফলে একদিকে যেমন এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় টাকা ...

মুঘল যুগে ভারতের অকৃষি নির্ভর শিল্প

অকৃষি শিল্প উৎপাদনের একটা বড় অংশ ছিল বিলাসদ্রব্য । সাধারণ মানুষের চাহিদা কম ছিল । বিলাসদ্রব্য নির্মাণের জন্য সরকারি কারখানা বা কর্মশালা ছিল । তবু তার বেশির ভাগ তৈরি হত স্বাধীন কারিগর ও শিল্পীর বাড়িতে । রান্নাবান্না ও ঘর গেরস্থালীর কাজে লোহা ও তামার তৈরি জিনিসপত্র ...

মুঘল যুগে ভারতের কৃষি নির্ভর শিল্প

মুঘল আমলে গ্রামীন অর্থনীতির মূল ভিত্তি ছিল কৃষি ও হস্তশিল্প বা কুঠির শিল্প । কুঠির শিল্পকে দুই ভাগে ভাগ করে আলোচনা করা যেতে পারে । প্রথমত, কৃষিনির্ভর শিল্প এবং দ্বিতীয়ত অকৃষি শিল্প । কৃষিনির্ভর শিল্পের মধ্যে পড়বে শর্করা শিল্প, তৈল, তামাক, নীল, মদ প্রভৃতি শিল্প । ...