ভারতের বিভিন্ন জনগোষ্ঠী

Submitted by avimanyu pramanik on Tue, 04/17/2012 - 14:37

ভারতের বিভিন্ন জনগোষ্ঠী (Different ethnic groups in India) :

আর্য, অনার্য, দ্রাবিড়, শক, হুন, পাঠান, মোঘল প্রভৃতি বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠী ও ভাষাগোষ্ঠীর মানুষ এই ভারতবর্ষে বিভিন্ন সময়ে জমায়েত হয়েছিল । মানবগোষ্ঠীর এই বিচিত্র সমাবেশ দেখে ড: ভিনসেন্ট স্মিথ ভারতবর্ষকে 'নৃ-তত্বের এক জাদুঘর' (Anthropological Museum) আখ্যা দিয়েছেন । ভারতবর্ষ এক মিশ্রজাতির দেশ । কোথাও সংমিশ্রণ বেশি হয়েছে, আবার কোথাও বা কম । বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর মধ্যে বিচিত্র সংমিশ্রনের ফলে কেউ নিজেকে কোনো বিশেষ গোষ্ঠীর শুদ্ধ রক্তের অধিকারী বলে দাবি করতে পারে না ।

মানুষের দৈহিক গঠন, মাথার খুলি, চোয়াল ইত্যাদি ও ভাষার ভিত্তিতে প্রাচীন ভারতের অধিবাসীদের কয়েকটি প্রধান ভাগে ভাগ করা হয়েছে ।

(ক) নর্ডিক বা আর্য জাতি (Nordic or Aryans) : গৌরবর্ণ, দীর্ঘকায় উন্নত নাসিকা সম্পন্ন লোক নর্ডিক জাতিগোষ্ঠীর বৈশিষ্ট্য । পাঞ্জাব, রাজপুতানা, উত্তর গাঙ্গেয় উপত্যকায় উচ্চ বর্ণের মধ্যে এদের পাওয়া যায় । এদের ভাষা থেকে সংস্কৃত ভাষার সৃষ্টি হয়েছে । এই জাতিই ভারতে হিন্দু সভ্যতার জনক ।

(খ) নেগ্রিটো (Negrito) : প্রস্তরযুগে ভারতে নেগ্রিটো জাতির বসবাসের নিদর্শন পাওয়া যায় । এরা বেঁটে, কালো, চুল কোঁকড়া, নাক চ্যাপটা । আফ্রিকার নিগ্রোজাতি থেকে উদ্ভুত নেগ্রিটো মানুষের অস্তিত্ব ভারতে আজ প্রায় বিরল । আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ, কোচিন, ত্রিবাঙ্কুর ও বিহারের রাজমহল পার্বত্য অঞ্চলে এবং আসামের কোনো কোনো অঞ্চলে এই গোষ্ঠীর কিছু মানুষ দেখা যায় ।

(গ) প্রোটো-অস্ট্রোলয়েড (Proto-Austroloid) : ভারতের বিভিন্ন স্থানে আদিম অধিবাসীদের মধ্যে এই জনগোষ্ঠী দেখা যায় । বিশেষ ভাবে মধ্য ভারতের কোল, ভিল, মুন্ডাদের মধ্যে এই জনগোষ্ঠী বেঁচে আছে ।

(ঘ) মোঙ্গলয়েড বা মঙ্গোলীয় জাতি (Mongoloid) : প্রাচীন ভারতীয় জনগোষ্ঠীর আর এক অংশ ছিল মঙ্গোলীয় জাতি । এদের গায়ের রং হলদে, নাক চ্যাপটা, গোঁফ-দাড়ি প্রায় শূন্য, চোখ ছোট । সিকিম, ভুটান, নেপাল, আসাম ও ভারত-মায়নামার সীমান্তে, পার্বত্য চট্টগ্রাম, ত্রিপুরা প্রভৃতি স্থানে এই জাতির মানুষদের বসবাস করতে দেখা যায় । 

(ঙ) মেডিটেরানিয়ান বা ভুমধ্যসাগরীয় (Mediterranean) : এই জনগোষ্ঠীর মানুষদের মধ্যে অনেক উপবিভাগ আছে । তামিল, কন্নড়, মালয়ালিদের মধ্যে এক শ্রেণির মানুষ বেঁচে আছে, এদের গায়ের রং কালো ও উচ্চতায় মাঝারি । অন্য এক শ্রেণির গায়ের রং গৌর, চুল দীর্ঘ, চোখ কালো, দেহ সুঠাম । পাঞ্জাব ও উচ্চ গাঙ্গেয় উপত্যকায় এরা বাস করে । অন্য আর এক শ্রেণি পাঞ্জাব, রাজপুতানা ও পশ্চিম উত্তরপ্রদেশে বাস করে, এদের নাসিকা লম্বা ও গায়ের রং ফর্সা ।

(চ) আলপিনয়েড-দিনারিক-আর্মেনয়েড : আলপিনয়েড, দিনারিক ও আর্মেনয়েড এই তিন গোষ্ঠীর মানুষেরা প্রায় সারা ভারতে ছাড়িয়ে আছে । বাংলা, ওড়িশা, গুজরাটের কিছু অংশে, তামিল ও কানাড়া ভাষা-ভাষীদের মধ্যে দিনারিক জনগোষ্ঠীর ও গুজরাটে আলপিনয়েড জনগোষ্ঠীর উপস্থিতি পরিলক্ষিত হয় । সামান্য সংখ্যক আর্মেনয়েড জাতিগোষ্ঠীর লোক হচ্ছে বোম্বাই -এর পারসিরা ।

*****

Related Items

মুঘল যুগে ওলন্দাজ বণিকদের কার্যকলাপ

সপ্তদশ শতকের গোড়া থেকেই ওলন্দাজ ও ইংরেজ বণিকেরা এশীয় বাণিজ্যে অংশগ্রহণ করতে থাকে । গোড়ার দিকে এরা পর্তুগিজদের সঙ্গে সংঘর্ষ এড়াতে ইন্দোনেশিয়া ও পূর্ব ভারতীয় দ্বীপপুঞ্জের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক স্থাপনে আগ্রহী ছিল । কিন্তু এরা অচিরেই বুঝতে পারে যে, মশলা ...

মুঘল যুগে পর্তুগিজ বণিকদের কার্যকলাপ

১৪৯৭-৯৮ খ্রীষ্টাব্দে যখন পর্তুগিজ নাবিক ভাস্কো-দা-গামা মালাবার উপকূলে কালিকট বন্দরে অবতরণ করেন, তখন সেই ঘটনার গুরুত্ব ও তাৎপর্য অনুধাবন করার ক্ষমতা ভারতবাসীর ছিল না । ভাস্কো-দা-গামা মালাবার উপকূলে কালিকট বন্দরে অবতরণ করার পর থেকেই ইউরোপের সঙ্গে ...

মুঘল যুগে ভারতের বহির্বাণিজ্য

বহির্বিশ্বে ভারতের সঙ্গে বিভিন্ন দেশের বাণিজ্যিক লেনদেন ছিল । বিদেশী বণিকরা যেমন ব্যবসার জন্য ভারতে আসত, তেমনই ভারতীয় বণিকেরা, বিশেষত গুজরাটিরা বহির্বাণিজ্যে অংশগ্রহণ করত । ভারত থেকে বস্ত্র, গোল মরিচ, নীল ও অন্যান্য দ্রব্যসামগ্রী রপ্তানি হত । ভারতে আমদানি হত ...

মুঘল যুগে ভারতের আভ্যন্তরীণ বাণিজ্য

মুঘল আমলে দেশে শান্তি ও শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠিত হওয়ায়, রাস্তাঘাট ও সরাইখানা নির্মাণ এবং পরিবহণ ব্যবস্থার উন্নতির ফলে আভ্যন্তরীণ ব্যবসাবাণিজ্যের প্রসার ঘটেছিল । তা ছাড়া উন্নত মুদ্রানীতি এবং নগদে বেতন প্রদানের ফলে একদিকে যেমন এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় টাকা ...

মুঘল যুগে ভারতের অকৃষি নির্ভর শিল্প

অকৃষি শিল্প উৎপাদনের একটা বড় অংশ ছিল বিলাসদ্রব্য । সাধারণ মানুষের চাহিদা কম ছিল । বিলাসদ্রব্য নির্মাণের জন্য সরকারি কারখানা বা কর্মশালা ছিল । তবু তার বেশির ভাগ তৈরি হত স্বাধীন কারিগর ও শিল্পীর বাড়িতে । রান্নাবান্না ও ঘর গেরস্থালীর কাজে লোহা ও তামার তৈরি জিনিসপত্র ...