মধ্যভাগের বিশাল পার্বত্য অঞ্চল

Submitted by avimanyu pramanik on Tue, 12/16/2014 - 11:41

মধ্যভাগের বিশাল পার্বত্য অঞ্চল : এশিয়া মহাদেশের মধ্যভাগে আছে পৃথিবীর দীর্ঘতম, বৃহত্তম ও উচ্চ পার্বত্যভূমি । পশ্চিমদিকে ভূমধ্যসাগরের তীর থেকে পূর্বদিকে প্রশান্ত মহাসাগরের উপকূল ভাগ পর্যন্ত বিস্তৃত এই পার্বত্য অঞ্চলে অনেক সুউচ্চ পর্বতশ্রেণি বিভিন্ন দিকে প্রসারিত হয়েছে । এইসব পর্বতশ্রেণি প্রধানত  (১) পামীর গ্রন্থি ও (২) আর্মেনীয় গ্রন্থি নামে দুটি পর্বত গ্রন্থি থেকে বেরিয়েছে ।

(১) পামীর গ্রন্থি থেকে বিস্তৃত বিভিন্ন পর্বত : ভারতের জম্মু–কাশ্মীর রাজ্যের উত্তর-পশ্চিম দিকে তাজাকিস্তান রাষ্ট্রে পৃথিবীর সর্বোচ্চ মালভূমি “পামীর” অবস্থিত, এর গড় উচ্চতা ৪,৮৭৩ মিটার । এত ঊঁচুতে অবস্থিত হওয়ায় পামীর মালভূমিকে পৃথিবীর ছাদ বলা হয় । পামীর মালভূমির সর্বোচ্চ শৃঙ্গের নাম মাউন্ট কমিউনিজম । মাউন্ট কমিউনিজমের উচ্চতা ৭,৪৯৫ মিটার । পামীর মালভূমি থেকে বহু নবীন ও ভঙ্গিল পর্বতশ্রেণি বিভিন্ন দিকে বিস্তৃত হয়েছে । পামীর মালভূমি অঞ্চলে এশিয়ার প্রধান প্রধান পর্বতগুলি মিলিত হওয়ায় এই অঞ্চলকে “পামীর গ্রন্থি” বলা হয় । 

পামীর গ্রন্থি থেকে বিভিন্ন পর্বত বিভিন্ন দিকে প্রসারিত হয়েছে । এগুলিকে মূলত তিন ভাগে ভাগ করা যায়, যথা— (ক) পামীর গ্রন্থি থেকে পশ্চিম দিকে প্রসারিত পর্বতশ্রেণি, (খ) পামীর গ্রন্থি থেকে পূর্ব দিকে প্রসারিত পর্বতশ্রেণি এবং (গ) পামীর গ্রন্থি থেকে উত্তর-পূর্বদিকে প্রসারিত পর্বতশ্রেণি ।

(ক) পামীর গ্রন্থি থেকে পশ্চিম দিকে বিস্তৃত পর্বত শ্রেণি :

(i) সুলেমান পর্বত শ্রেণি : পামীর গ্রন্থি থেকে বেরিয়ে এসে সুলেমান পর্বতশ্রেণি ইরাণের সমুদ্রোপকূল ধরে দক্ষিণ-পশ্চিমে অগ্রসর হয়ে জাগ্রোস পর্বত নামে আর্মেনীয় গ্রন্থিতে মিশে যাওয়ার পর আরোও পশ্চিম দিকে বিস্তৃত হয়ে তুরস্কে টরাস পর্বত নামে পরিচিত হয়েছে ।

(ii) হিন্দুকুশ পর্বত : পামীর গ্রন্থি থেকে নির্গত হয়ে পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে তাজাকিস্তান, কাজাকিস্তান, আফগানিস্তান ও ইরাণের ওপর দিয়ে গিয়ে এলবুর্জ পর্বত নামে কাস্পিয়ান সাগরের উপকূল বরাবর আরোও পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে আর্মেনীয় গ্রন্থিতে মিশেছে এবং এর পর আবার পশ্চিম দিকে বিস্তৃত হয়ে তুরস্কে পন্টিক পর্বত নামে পরিচিত হয়েছে ।

পর্বত বেষ্টিত উঁচু মালভূমি : সুলেমা ও হিন্দুকুশ পার্বত্য অঞ্চলে দুটি পর্বত বেষ্টিত মালভূমি আছে, এরা হল— (i) ইরাণ মালভূমি ও (ii) আনাতোলিয়া মালভূমি ।

(i) ইরাণ মালভূমি : এই মালভূমি অঞ্চলটি উত্তরে এলবুর্জ পর্বত এবং দক্ষিণে জাগ্রোস পর্বতের মধ্যবর্তী অঞ্চলে অবস্থিত ।

(ii) আনাতোলিয়া মালভূমি : উত্তরে পন্টিক এবং দক্ষিণে টরাস পর্বত বেষ্টিত এই মালভূমি অঞ্চলটি এশিয়া মাইনর নামেও পরিচিত ।

(খ) পামীর গ্রন্থি থেকে পূর্ব দিকে বিস্তৃত বিভিন্ন পর্বত : পামীর গ্রন্থির পূর্ব দিকে চারটি প্রধান পর্বতশ্রেণি আছে, যথা—(i) হিমালয় পর্বত শ্রেণি,  (ii) কারাকোরাম পর্বত শ্রেণি,  (iii) কুনলুন পর্বত ও (iv) আলতিনতাগ পর্বত ।

(i) হিমালয় পর্বত শ্রেণি : পামীর গ্রন্থি থেকে বেরিয়ে এসে এই পর্বতটি পূর্বদিকে উত্তর ভারত ও নেপাল পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে । এই পর্বতের উচ্চতম পর্বত শৃঙ্গ হল মাউন্ট এভারেস্ট । এটি পৃথিবীর মধ্যে উচ্চতম পর্বত শৃঙ্গ । এর উচ্চতা ৮৮৪৮ মিটার । ভারতের অরুণাচল প্রদেশের কাছে হিমালয় পর্বতের একটি শাখা দক্ষিণ দিকে অগ্রসর হয়ে মায়ানমারে আরাকান ইয়োমা পর্বত নামে পরিচিত হয়েছে এবং বঙ্গোপসাগরের তলদেশ দিয়ে গিয়ে দক্ষিণ–পূর্ব দিকে আন্দামান-নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ ও ইন্দোনেশিয়া পর্যন্ত প্রসারিত হয়েছে ।

(ii) কারাকোরাম পর্বত শ্রেণি : হিমালয়ের উত্তরে আছে কারাকোরাম পর্বতশ্রেণি । এটিও পামীর গ্রন্থি থেকে দক্ষিণ–পূর্ব দিকে বিস্তৃত হয়েছে । এই পর্বতের গডইউন অস্টিন বা K2 ভারতের সর্বোচ্চ পর্বত শৃঙ্গ ও পৃথিবীর দ্বিতীয় উচ্চতম শৃঙ্গ এবং এর উচ্চতা ৮৬১১ মিটার । বর্তমানে এটি পাক অধিকৃত কাশ্মীরের অন্তর্গত ।

(iii) কুনলুন পর্বত : পামীর গ্রন্থি থেকে কুনলুন পর্বত পূর্বদিকে অগ্রসর হয়ে তিব্বত মালভূমির উত্তর সীমানা রচনা করেছে ।

(iv) আলতিনতাগ পর্বত : এই পর্বতটি কুনলুন পর্বত থেকে উত্তর-পূর্বদিকে প্রসারিত হয়েছে ।

(গ) পামীর গ্রন্থি থেকে উত্তর-পূর্বদিকে প্রসারিত বিভিন্ন পর্বত শ্রেণি : পামীর গ্রন্থির পূর্বদিকে দুটি প্রধান পর্বত শ্রেণি আছে, যথা— (i) তিয়েনসান পর্বতশ্রেণি, ও (ii) আলতাই পর্বতশ্রেণি ।

(i) তিয়েনসান পর্বত শ্রেণি : এই পর্বতটি পামীর গ্রন্থি থেকে উত্তর-পূর্বদিকে চিনে প্রসারিত হয়েছে ।

(ii) আলতাই পর্বতশ্রেণি : এই পর্বতশ্রেণিটি উত্তর-পূর্ব দিকে বিস্তৃত এবং তিয়েনসান পর্বতের আরোও উত্তর দিকে অবস্থিত ।

পর্বত বেষ্টিত উঁচু মালভূমি : তিয়েনসান ও আলতাই পার্বত্য অঞ্চলে একটি পর্বত বেষ্টিত মালভূমি আছে । এর নাম মঙ্গোলিয়া মালভূমি ।

মঙ্গোলিয়া মালভূমি : পশ্চিমে তিয়েনসান এবং উত্তরে আলতাই পর্বতবেষ্টিত এই মালভূমিটি ভূপ্রকৃতিগতভাবে একটি বিস্তীর্ণ মরুভূমি, যাকে চিনে গোবি মরুভূমি বলা হয় ।

উত্তরে কুনলুন এবং দক্ষিণে হিমালয় পর্বতবেষ্টিত তিব্বত মালভূমি হল পৃথিবীর বৃহত্তম মালভূমি ।

(২) আর্মেনীয় গ্রন্থি থেকে বিস্তৃত বিভিন্ন পর্বত : কৃষ্ণ সাগরের দক্ষিণ দিকে অবস্থিত আর্মেনীয় মালভূমিতেও “আর্মেনীয় গ্রন্থি” নামে একটি ছোট পর্বত গ্রন্থি আছে, যা পামীর গ্রন্থির তুলনায় অপেক্ষাকৃত নীচু এবং ছোটো । এই পর্বতগ্রন্থিটি থেকে কয়েকটি পর্বতশ্রেণি বিভিন্ন দিকে বিস্তৃত হয়েছে, যেমন— (i) আর্মেনীয় গ্রন্থি থেকে উত্তর-পশ্চিমে পন্টিক ও টরস পর্বতশ্রেণি এবং (ii) পূর্বদিকে জাগ্রোস ও এলবুর্জ পর্বতশ্রেণি বিস্তৃত হয়েছে ।

*****

Related Items

ফিয়র্ড (Fiord)

ফিয়র্ড (Fiord) : উচ্চ অক্ষাংশীয় অঞ্চলে সমুদ্র উপকূল সংলগ্ন পার্বত্যভূমিতে হিমবাহের ক্ষয়কার্যের ফলে যে সমস্ত ভূমিরূপের সৃষ্টি হয়, ফিয়র্ড হল এরকম একটি ভূমিরূপ । সমুদ্রোপকূলে হিমবাহ তার উপত্যকাকে এমন গভীরভাবে ক্ষয় করে যে সেই উপত্যকা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকেও নীচ

ক্র্যাগ ও টেল (Crag & Tail)

ক্র্যাগ টেল (Crag & Tail) : হিমবাহের ক্ষয়কাজের ফলে নানা রকম ভূমিরূপের সৃষ্টি হয়, ক্র্যাগ টেল হল তাদের মধ্যে অন্যতম একটি ভূমিরূপ । হিমবাহের গতিপথে কঠিন শিলাস্তরের পিছনে নরম শিলাস্তর থাকলে, অনেক স

রসে মতানে (Roche Moutonnee)

রসে মতানে (Roche Moutonnee) : হিমবাহের ক্ষয়কাজের ফলে যে সমস্ত নানা রকম ভূমিরূপের সৃষ্টি হয়, রসে মতানে হল তাদের মধ্যে অন্যতম একটি ভূমিরূপ । অনেক সময় উপত্যকার মধ্যে উঁচু ঢিবির মতো কঠিন শিলাখন্ডের ওপর দিয়ে হিমবাহ প্রবাহিত হয় । অবঘর্ষ প্রক

ঝুলন্ত উপত্যকা (Hanging Valley)

ঝুলন্ত উপত্যকা (Hanging Valley) : উপত্যকা হিমবাহের ক্ষয়কাজের ফলে যে সমস্ত রকম ভূমিরূপের সৃষ্টি হয়, ঝুলন্ত উপত্যকা (Hanging Valley) হল তাদের মধ্যে অন্যতম একটি ভূমিরূপ । নদী অববাহিকায় উপনদীগুলি যেমন মূল নদীতে এসে মিলিত হয় তেমনি পার্বত্য অঞ্চলে ছোটো ছোটো

U -আকৃতির উপত্যকা বা হিমদ্রোণি (U -Shaped Valley or Glacial Trough)

U - আকৃতির উপত্যকা বা হিমদ্রোণি (U -Shaped Valley or Glacial Trough) : হিমবাহের ক্ষয়কাজের ফলে নানা রকম ভূমিরূপের সৃষ্টি হয়, U -আকৃতির উপত্যকা বা হিমদ্রোণী হল তাদের মধ্যে অন্যতম একটি ভূমিরূপ । উঁচু পার্বত্য অঞ্চলে হিমবাহ