ভারতের বিশাল মালভূমি অঞ্চল

Submitted by avimanyu pramanik on Wed, 11/12/2014 - 23:50

ভারতের বিশাল মালভূমি অঞ্চল :

অবস্থান ও উৎপত্তি :- উত্তরের সমভূমি অঞ্চলের দক্ষিণে তিন দিকে সমুদ্রে ঘেরা এক বিশাল মালভূমি অঞ্চল অবস্থান করেছে । পৃথিবীর প্রাচীনতম ভূখণ্ড গান্ডোয়ানাল্যান্ডের অংশ বিশেষ, এই মালভূমিটি অতিপ্রাচীন আগ্নেয় ( গ্রানাইট ) এবং রূপান্তরিত ( নাইস ) শিলা দিয়ে গঠিত ।

শ্রেণিবিভাগ : নর্মদা নদী এই মালভূমি অঞ্চলকে মোটামুটি দুই অংশে ভাগ করেছে যথা— (ক) (মধ্য ও পূর্ব ভারতের মালভূমি ও উচ্চভুমি এবং (খ) দাক্ষিণাত্যের মালভূমি ।

(ক) মধ্য ও পূর্ব ভারতের মালভূমি ও উচ্চভুমি : দক্ষিণে বিন্ধ্য পর্বত, পশ্চিমে আরাবল্লী পর্বত এবং পূর্বে ছোটোনাগপুর মালভূমি দিয়ে ঘেরা এই মালভূমি ও উচ্চভূমি অঞ্চলটি উত্তর দিকে ক্রমশ ঢ়ালু হয়ে উত্তর ভারতের সমভূমি অঞ্চলের সঙ্গে মিশে গিয়েছে ।

(i) মধ্য ভারতের উচ্চভূমি ও মালভূমি : এই অঞ্চল উত্তর থেকে দক্ষিণে কয়েকটি প্রধান ভুপ্রাকৃতিক অংশে বিভক্ত, যেমন— (১) আরবল্লি পর্বত শ্রেণি, (২) বুন্দেলখন্ড মালভূমি, (৩) বিন্ধ্য পর্বত, (৪) মালব মানভুমি, (৫) রেওয়া মালভূমি,

(১) আরাবল্লী পর্বত শ্রেণি : আরাবল্লী ভারতের প্রাচীনতম পর্বত এবং পৃথিবীর প্রাচীনতম ভঙ্গিল পর্বত সমুহের অন্যতম । এই পর্বতটি দিল্লি থেকে আমেদাবাদ পর্যন্ত ৮০০ কিলোমিটার অঞ্চল জুড়ে অবস্থিত । এর গড় উচ্চতা কম-বেশি ৭৫০ মিটার । আবু পাহাড়ের কাছাকাছি অবস্থিত গুরু শিখর আরবল্লীর সর্বোচ্চ শৃঙ্গ । এর উচ্চতা ১৭৭২ মিটার ।

(২) বুন্দেলখন্ড মালভূমি : এই মালভুমি অঞ্চলটি ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে উচ্চভূমিতে পরিণত হয়েছে ।

(৩) বিন্ধ্য পর্বত : বিন্ধ্য পর্বত মধ্যভারতের উচ্চভূমির প্রায় দক্ষিণ প্রান্তে অবস্থিত এবং পশ্চিম থেকে পূর্বে প্রসারিত । বিন্ধ্য পর্বতের ওপরটা সমতল এবং ধার গুলো ক্ষয় পেয়ে সিঁড়ির মতো হয়ে গেছে ।

(৪) মালব মানভুমি : বিন্ধ্য পর্বতের উত্তরে লাভা দিয়ে গঠিত এই মালভূমি অঞ্চলের ভূপ্রকৃতি উঁচুনীচু ও তরঙ্গায়িত ।

(৫) রেওয়া মালভূমি : এই মালভূমিটি বিন্ধ্য পর্বতের পূর্ব দিকে অবস্থিত ।

(ii) পূর্বভারতের উচ্চভূমি ও মালভূমি : মধ্যভারতের মালভূমি অঞ্চলটি পূর্বদিকে প্রসারিত হয়ে পূর্বভারতের উচ্চভুমি ও মালভূমি অঞ্চল গঠন করেছে । (১) ছোটনাগপুরের মালভূমি, (২) বাঘেলখন্ড মালভূমি, (৩) গড়জাত পাহাড় ও দণ্ডকারণ্য মালভূমি ।

(১) ছোটনাগপুরের মালভূমি : (ক) রাঁচি মালভূমি, (খ) হাজারীবাগ মালভূমি এবং (গ) কোডারমা মালভূমি নিয়ে গঠিত ছোটনাগপুরের মালভূমি । এদের গড় উচ্চতা ৭০০ মিটার ।

(২) বাঘেলখন্ড মালভূমি : বাঘেলখন্ড মালভূমিটি শোন নদীর দক্ষিণে অবস্থিত এবং এটি গ্রানাইট ও প্রাচীন পাললিক শিলায় গঠিত ভঙ্গিল পার্বত্য অঞ্চল ।

(৩) গড়জাত পাহাড় ও দণ্ডকারণ্য মালভূমি : এই অঞ্চলের বোনাই, কেওনঝাড় ও সিমলিপাল পাহাড়গুলি উল্লেখযোগ্য ।

(খ) দাক্ষিণাত্যের মালভূমি : নর্মদা নদীর দক্ষিণে অবস্থিত ত্রিভুজ আকৃতির দাক্ষিণাত্য মালভূমিটি পূর্বে পূর্বঘাট পর্বত, পশ্চিমে পশ্চিমঘাট পর্বত এবং উত্তরে সাতপুরা পর্বত দিয়ে ঘেরা । এছাড়া এই মালভূমি অঞ্চলটি পশ্চিম দিকে উঁচু এবং পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে ক্রমশ ঢ়ালু হয়ে গেছে । পশ্চিম ঘাট ও পূর্বঘাট পর্বত দুটি ভারতের দক্ষিণে অবস্থিত নীলগিরি পর্বতে পরস্পর মিলিত হয়েছে । মহারাষ্ট্র, কর্ণাটক, অন্ধ্রপ্রদেশ ও তামিলনাড়ু ভারতের এই চারটি রাজ্য দাক্ষিণাত্য মালভুমি অঞ্চলের অন্তর্গত ।

(i) পশ্চিমঘাট পর্বত : পশ্চিমঘাট পর্বত মহারাষ্ট্রে সহ্যাদ্রি নামে পরিচিত । এই পর্বতটি ভারতের পশ্চিমে আরব সাগরের উপকূল বরাবর খাড়াভাবে উঠে গিয়ে উত্তর থেকে দক্ষিণে প্রায় ১৬০০ কিমি দীর্ঘ অঞ্চল জুড়ে অবস্থান করছে । তামিলনাড়ুতে এই পর্বতের পূর্বদিকে প্রসারিত অংশ নীলগিরি পর্বত নামে পরিচিত । নীলগিরি পর্বতের সর্বোচ্চ শৃঙ্গের নাম ডোডাবেট্টা । এর উচ্চতা ২৬৩৭ মিটার । দক্ষিণ ভারতের বিখ্যাত শৈলশহর উটি নীলগিরি পর্বতে অবস্থিত । পশ্চিমঘাট পর্বতটি আরও দক্ষিণে অগ্রসর হয়ে কেরালা রাজ্যে আনাইমালাই এবং কার্ডামম পর্বত নামে পরিচিত লাভ করেছে । আনাইমালাই পর্বতের সর্বোচ্চ পর্বত শৃঙ্গ হল আনাইমুদি । এর উচ্চতা ২৬৯৫ মিটার । এটি দাক্ষিণাত্য মালভূমির সর্বোচ্চ পর্বত শৃঙ্গ । 

(ii) পূর্বঘাট পর্বত : সেভরয়, জাভাদি, নান্নামালাই প্রভৃতি কয়েকটি বিচ্ছিন্ন পর্বতের সমষ্টি হল পূর্বঘাট পর্বতমালা । এটি দাক্ষিণাত্য মালভূমির পূর্ব সীমানা রচনা করেছে । পূর্ব দিকে এই পর্বতমালা ক্রমশ ঢ়ালু হয়ে পূর্ব উপকূলের সমভূমিতে এসে মিশে গেছে । এর উচ্চতা তুলনামুলক ভাবে কম । গোদাবরী, কৃষ্ণা, পেন্নার প্রভৃতি নদী উপত্যকা এই পর্বতমালাকে মাঝে মাঝেই বিছিন্ন করেছে । মহেন্দ্রগিরি হল পূর্বঘাট পর্বতমালার সর্বোচ্চ শৃঙ্গ । এর উচ্চতা ১৫০০ মিটার ।

ডেকান ট্রাপ (Deccan Trap) : দাক্ষিণাত্যের লাভা মালভূমি অঞ্চলটি ডেকান ট্রাপ নামে পরিচিত । এই অঞ্চলটি পৃথিবীর সুপ্রাচীন ভূখণ্ড গান্ডোয়ানাল্যান্ডের অন্তর্গত একটি মালভূমি । আজ থেকে প্রায় ৬-৭ কোটি বছর আগে ভূত্বকের প্রশস্ত ফাটল পথে ভু-গর্ভস্থ লাভা নিঃসৃত হয়ে এই অঞ্চলটিকে চাদরের মতো ঢেকে দেয়, এই ভাবে ডেকান ট্রাপ অঞ্চলটি সৃষ্টি হয়েছে । লাভা নিঃসরণের ঘটনা থেমে থেমে ঘটায় এখানকার লাভা স্তরে স্তরে সজ্জিত এবং স্থান বিশেষে ১৫০ মিটার থেকে প্রায় ২০০০ মিটার গভীর । পরবর্তীকালের বৃষ্টি, বায়ু প্রভৃতি প্রাকৃতিক শক্তির দ্বারা ক্ষয়িত লাভা স্তরের পার্শ্বদেশ সিঁড়ির মতো ধাপে ধাপে ওপর থেকে নিচে নেমে গেছে, এইজন্য এই লাভায় ঢাকা মালভূমি অঞ্চলটিকে ডেকান ট্রাপ বলে । দাক্ষিণাত্যের লাভাজাত মৃত্তিকা কালোরঙের, তাই এই অঞ্চলের অন্য নাম দাক্ষিণাত্যের কৃষ্ণমৃত্তিকা অঞ্চল

কৃষ্ণমৃত্তিকা অঞ্চলের প্রধানত ৪টি ভুপ্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য দেখা যায়,  যথা:—

(১) পুরো কৃষ্ণমৃত্তিকা অঞ্চলটি পশ্চিম ও উত্তর পশ্চিম দিক থেকে পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব দিকে ধাপে ধাপে নেমে গেছে,

(২) এই ধাপগুলির মাথা সমতল কিন্তু পার্শ্বদেশ একেবারে খাঁড়া,

(৩) এই অঞ্চলের পাহাড়গুলির মাথা সমতল বা চ্যাপ্টা ;

(৪) সামগ্রিক অঞ্চলটিকে দেখতে ট্রাপ বা সিঁড়ির মতো, তাই একে ডেকান ট্রাপ বলা হয় ।

*****

Related Items

ভাগীরথী-হুগলী নদীর ওপর বর্জ্যের প্রভাব (Effects of waste disposal on Bhagirathi-Hooghly river)

ভাগীরথী-হুগলী নদীর ওপর বর্জ্যের প্রভাব (Effects of waste disposal on Bhagirathi-Hooghly river) : প্রায় 2500 কিমি দীর্ঘ গঙ্গা নদী ভারতের জীবন রেখা । গঙ্গা নদীর পার্শ্ববর্তী কলকারখানার বর্জ্য, পৌরসভার বর্জ্য, কৃষি ক্ষেত্রের কীটনাশক বাহিত জল ইত্যাদি এই নদ

বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় শিক্ষার্থীর ভূমিকা (Role of Students in Waste Management)

বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় শিক্ষার্থীর ভূমিকা (Role of students in waste management) : সুন্দর ও স্বচ্ছ মন এবং সুস্থশিক্ষা পারিপার্শ্বিক পরিবেশের ওপর নির্ভরশীল । পারিপার্শ্বিক পরিবেশ সুন্দর না থাকলে, সুন্দর স্বচ্ছ মন ও সুস্থশিক্ষা সম্ভব নয় । তাই বর্জ্য ব্যবস্

বর্জ্য ব্যবস্থাপনার প্রয়োজনীয়তা (Need for Waste Management)

বর্জ্য ব্যবস্থাপনার প্রয়োজনীয়তা (Need for waste management) : ভূপৃষ্ঠস্থ জলের কলুষিতকরণ, মৃত্তিকা সংক্রমণ, দূষণ, লিশেট ইত্যাদির মাধ্যমে বর্জ্য পরিবেশকে প্রভাবিত করে থাকে । বর্জ্যপদার্থ কঠিন বা তরলরূপে জলাশয়ে এসে পড়লে তা জলের রাসায়নিক গঠনের পরিবর্তন

বর্জ্য ব্যবস্থাপনার পদ্ধতি (Method of Waste Management)

বর্জ্য ব্যবস্থাপনার পদ্ধতি (Method of waste management) : বর্জ্যপদার্থ সংগ্রহ, বর্জ্যের পরিবহন, আবর্জনার বিলিব্যবস্থা, নর্দমার জল ও অন্যান্য বর্জ্যের নিকাশ প্রভৃতি হল বর্জ্য ব্যবস্থাপনার অন্যতম দিক । বর্জ্য ব্যবস্থাপনার প্রধান পদ্ধতিগুলি হল— (১) বর্জ্য

বর্জ্য ব্যবস্থাপনা (Waste Management)

বর্জ্য ব্যবস্থাপনা (Waste Management) : যে কার্যকরী পরিচালন পদ্ধতির মাধ্যমে বর্জ্য পদার্থের সংগ্রহ, অপসারণ, পরিবহণ, শোধন, ক্ষতিকর প্রভাব হ্রাস ও পুনরায় বর্জ্য পদার্থকে ব্যবহারের উপযোগী করে তোলা হয়, তাকে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বলা হয় । অন্যভাবে বলা যায়, বর্জ