Submitted by Nandarani Pramanik on Wed, 12/13/2017 - 01:47

শিশু দিবস

সূচনা :- প্রতি বছরই ১৪ই নভেম্বর দেশের সর্বত্র শিশু দিবস পালিত হয় । বছরের শুরু থেকে বিভিন্ন বিষয়কে কেন্দ্র করে নানা রকম দিবস পালিত হয় —যেমন ১২ই জানুয়ারী যুব দিবস, প্রজাতন্ত্র দিবস, শ্রমদিবস, স্বাধীনতা দিবস, শিক্ষক দিবস ইত্যাদি । তবে ১৪ই নভেম্বর শিশুদিবস শিশুদের ও কিশোর-কিশোরীদের কাছে একটু অন্যরকম মাত্রা পায় । এদিন বড়োরা একটু বেশি করে শিশুদের প্রতি নজর দেয়, নানা উপহার দেয়, নানান রকম মজার মজার অনুষ্ঠান করে শিশুমনকে ভরিয়ে দেওয়ার চেষ্ঠা করে থাকে ।

শিশুদিবস যাকে কেন্দ্র করে পালিত হয় তিনি হলেন স্বাধীন ভারতের প্রথম প্রধান মন্ত্রী পণ্ডিত জওহরলাল নেহেরু । জওহরলাল নেহেরু ব্যক্তিগত জীবনে বাচ্চাদের বড় ভালোবাসতেন, বাচ্চাদের সঙ্গে অনেকটা সময় কাটাতেন । তিনি বাচ্চাদের কাছে চাচা নেহেরু রূপে পরিচিতি পান । তাই পরবর্তীকালে ভারত সরকার পণ্ডিত নেহেরুর জন্মদিনটিকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য ঐ দিনটিকে শিশুদিবস বলে ঘোষণা করেন । সেদিন থেকেই ১৪ই নভেম্বর শিশুদিবস পালিত হয়ে আসছে ।

শিশুদিবসের তাৎপর্য:- “শিশুর পিতা লুকিয়ে আছে সব শিশুরই অন্তরে” । প্রত্যেক শিশুর মধ্যেই থাকে বিরাট সম্ভাবনা । আজকের শিশুরাই আগামীদিনে দেশের কর্ণধার হবে । দেশকে, জাতিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে । বিশ্বের দরজায় পরিচয় করিয়ে দেবে যে আমরা ভারতবাসী । শিশুদিবস পালনের মধ্যে দিয়ে প্রতিটি নাগরিককে মনে করিয়ে দেওয়া হয় যে ছোটরা কোনো হেলাফেলা বা অবহেলার পাত্র নয় । এদের স্বাস্থ, শিক্ষার দিকে আমাদের বেশি করে দৃষ্টি দিতে হবে । শিশুদের সুস্থভাবে বেড়ে ওঠার জন্য অনুকুল পরিবেশ দিতে হবে । এ প্রসঙ্গে কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য বলেছেন –“চলে যাব —তবু আজ যতক্ষণ দেহে আছে প্রাণ / প্রাণপনে পৃথিবীর সরাব জঞ্জাল, / এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাবো আমি -/ নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার “

শিশুশ্রম ও শিশুদিবস :-  শিশুর বিচরণ ক্ষেত্র মাতৃক্রোড়, উন্মুক্ত প্রান্তর, শিক্ষাঙ্গন । কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় এই একবিংশ শতাব্দীতেও বহু শিশুর শৈশব হারিয়ে যাচ্ছে । প্রতিনিয়ত জীবনযুদ্ধে তারা ক্ষতবিক্ষত হচ্ছে । কঠোর পরিশ্রম করে ( পাথর ভাঙ্গা, মালবহন প্রভৃতি ) দুমুটো অন্ন জোগাড় করতে হয় । আবার দুষ্ট চক্রের হাতে পড়ে অনেক শিশু পাচার হয়েও যায় । এইভাবে আমাদের দেশে অকালে কত শিশুকে পৃথিবীর বুক থেকে ঝরে যেতে হচ্ছে ।

উপসংহার :- অশুভ শক্তি থাকবে, চিরদিন ছিল, কিন্তু শেষ পর্যন্ত শুভ শক্তিরই জয় হয় । তাই শিশুকে শিশুর বাসযোগ্য করে তোলার জন্য ব্যক্তিগত ও সরকারী উভয়েরই যৌথভাবে প্রচেষ্টা করে যেতে হবে । প্রতিটি শিশুকে সুস্থভাবে বাঁচার আশ্বাস দিতে হবে । আমাদের মনে রাখতে হবে ফুল আর শিশু সমার্থক । সুন্দর সুন্দর ফুল পেতে গেলে যেমন ফুল গাছের সঠিক পরিচর্যা দরকার তেমনি শিশুরও সঠিক পরিচর্যা প্রয়োজন । শিশুদিবস মানে শুধু উপহার দেওয়া নয় বা বিনোদনের ব্যবস্থা করা নয়, শিশুর অধিকারকে মর্যাদা দেওয়া এবং প্রতিটি শিশু যাতে কোনদিক থেকে বঞ্চিত না হয় সেদিকে নজর রাখা ।

***

 

Comments

Related Items

মোবাইল ফোন ব্যবহারের সুফল ও কুফল/ভালোমন্দ

ভূমিকা:— আধুনিক প্রযুক্তি বিদ্যার নবতম আবিষ্কার হল ইন্টারনেট, ই-মেল ও মোবাইল ফোন । যোগাযোগ ব্যবস্থার অন্যতম হাতিয়ার হল মোবাইল ফোন । আজকের দিনে কোনো আত্মীয় পরিজন, বন্ধু-বান্ধব বা অন্য কাউকে চিঠি লিখি তার উত্তরের প্রতীক্ষায় ডাক-পিয়নের পথ চেয়ে বসে থাকতে হয় না ।

সমাজ সচেতনতায় বিজ্ঞানের ভূমিকা

"বিজ্ঞান চায় সবার মাঝে প্রাণের কথা বলতে, অন্ধ আবেগ সরিয়ে দিয়ে আলোর পথে চলতে ।"

প্রাকৃতিক বিপর্যয় ও তার প্রতিকার

"মন্বন্তরে মরিনি আমরা, মারি নিয়ে ঘর করি"— বন্যা, খরা, ভূমিকম্প, মহামারী মানুষের জীবনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে । অথচ বিজ্ঞানের বলে বলিয়ান আমরা সদর্পে বলে চলেছি যে, প্রকৃতি আমাদের হাতের মুঠোয়, প্রকৃতি আমাদের কাছে বশীভূত । কিন্তু এ দর্প বা ধারণা সত্য নয় । মাঝে মধ্যেই প্রকৃতির রুদ্ররোষের কাছে মানুষ অসহায় হয়ে পড়ে । প্রাকৃতিক বিপর্যয় ।

দেশ ভ্রমণের প্রয়োজনীয়তা

"হাজার বছর ধরে আমি পথ হাঁটিতেছি পৃথিবীর পথে সিংহল সমুদ্র থেকে মালয় সাগরে অনেক ঘুরেছি আমি ।" মানুষ চির যাযাবর । মানুষের রক্তে রয়েছে ভ্রমণের নেশা । অজানাকে জানার অদেখাকে দেখার কৌতুহল মানুষের চিরন্তন ।

অরণ্য ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা

Ofমানুষের জন্ম থেকেই অরণ্য তার পরম আত্মীয়, অকৃত্রিম বন্ধু । অরণ্যের ডাকেই ধরিত্রীর প্রথম ঘুম ভেঙ্গে ছিল । দিকে দিকে প্রচারিত হয়েছিল জীবনের মহিমা । ভারতীয় সভ্যতা অরণ্য কেন্দ্রিক সভ্যতা, অরণ্যের কোলেই মানুষ গড়ে তুলেছিল তার প্রথম বাসস্থান । অরণ্য দিয়েছে বেঁচে থাকার রসদ, প্রাণের নিঃশ্বাস, আশ্বাস ।