মহামানব যীশুখ্রীষ্ট

Submitted by Nandarani Pramanik on Fri, 12/07/2018 - 12:06

Jesus Christভূমিকা:- সবলদের অত্যাচারে দুর্বলদের জীবন যখন দুর্বিষহ হয়ে ওঠে, যখন সাধারণ মানুষের জীবন অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে যায় তখনই কোনো এক মহামানবের আবির্ভাব ঘটে । মানবসমাজে মুক্তির আলো দেখাতে যাঁরা আবির্ভূত হয়েছেন তাঁদের মধ্যে যীশুখ্রীষ্ট অন্যতম । তিনি দিশেহারা মানুষকে সঠিক পথ দেখাতে আলোর দিশারী হয়ে জন্ম নিয়েছিলেন ।

যিশুখ্রিস্টের জন্ম এবং তাঁর ধর্ম মত:- দু-হাজার বছর আগে 25 শে ডিসেম্বরের এক শীতের রাতে মহাপ্রাণ যীশুখ্রীষ্ট জেরুজালেমের কাছে বেথলেহেমে জন্মগ্রহণ করেন । যীশুর পিতা এতই দরিদ্র ছিলেন যে সন্তানসম্ভবা মা মেরিকে নিয়ে এক আস্তাবলে আশ্রয় নিয়েছিলেন । এই আস্তাবলে যীশুর জন্ম হয় । এই রাতে এক দৈববাণী শুনে তিন প্রাজ্ঞপুরুষ একটি উজ্জ্বল তারার অনুসরণ করে এখানে যীশুকে দেখতে আসেন । তাঁদের কাছ থেকে যীশুর অলৌকিক কথাবার্তা চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে ।

দারিদ্রতার জন্য যীশু বিশেষ লেখাপড়ার সুযোগ পাননি । বাবার জীবিকা পশুপালন বৃত্তিই গ্রহণ করেন । কিন্তু যিনি আলোর পথের দিশারী তাঁর দ্যুতি কি নিভে থাকতে পারে ? অল্প দিনের মধ্যেই তিনি বহু মানুষের মন জয় করে নিয়েছিলেন । তাঁর সহজাত নিজ চেষ্টায় সমকালীন নানা ধর্ম ও ধর্মগ্রন্থ থেকে জ্ঞান আহরণ করে তিনি এক নতুন ধর্ম মতের প্রবর্তন করেন যার নাম খ্রিস্টধর্ম । তিনি সবাইকে শোনালেন যে করুণাময় ঈশ্বরই মানুষের পিতা, মানবজীবন নানা পাপের মধ্যে জড়িয়ে আছে । ঈশ্বর ক্ষমার আধার । ঈশ্বরে বিশ্বাস রাখলে তিনি সবার ভালো করবেন ।

যীশুখ্রিস্টের জন্ম উৎসব:-  25 শে ডিসেম্বর যীশুর জন্মদিন । এদিন খ্রীস্ট ধর্মাবলম্বীরা বড়দিন হিসাবে পালন করে । শুধু ইউরোপে নয়, পৃথিবীর প্রায় বেশির ভাগ দেশে এই উৎসব পালিত হয় । এই সময় পথঘাট আলোর মালায় সাজানো হয়, রঙিন কাগজ দিয়ে ঘর সাজানো হয় । বাড়ির সামনে ক্রীসমাস ট্রি বসানো হয় । ক্রীসমাস বুড়ো অর্থাৎ স্যান্টাক্লজ, যে আনন্দের দূত গোপনে প্রত্যেক বাড়িতে বাড়িতে এসে উপহার দিয়ে যায় । গির্জায় গির্জায় প্রার্থনা হয় । প্রত্যেক বাড়িতে বাড়িতে আত্মীয় পরিজন আসে । চারদিক আনন্দে মুখরিত হয় ।

কুশবিদ্ধ যীশু:-  যীশুর জনপ্রিয়তা যত বাড়তে লাগলো সেই সঙ্গে স্বার্থন্বেষীদের ষড়যন্ত্রও দানা বাঁধতে লাগল । যীশুর বিরুদ্ধে নানান অপপ্রচার শুরু হতে লাগল ।  রোমান শাসক ও যাজক শ্রেণির মনে সন্দেহ হয় যে যীশুই দেশের রাজা হয়ে সিংহাসনে বসবেন । যদি যীশুকে রাজা করা হয় তাহলে রাজার স্বার্থ ক্ষুণ্ন হবে । তাই শাসক হেরড যীশুর প্রতি অত্যন্ত ক্ষিপ্ত হয়ে উঠলেন । শেষ পর্যন্ত জুডাস নামে যীশুর এক শিশু সামান্য অর্থের বিনিময়ে যীশুকে শত্রুদের হাতে ধরিয়ে দেয় । শুরু হয় বিচারের প্রহসন । শেষে ক্রুশবিদ্ধ করে যীশুকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয় । জেরুজালেমের কালতারিতে যীশুকে ক্রুশবিদ্ধ করে হত্যা করা হল । চরম মৃত্যু যন্ত্রণার মধ্যেও যীশু এই হত্যাকারীদের ক্ষমা করে গেলেন । তিনি ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করলেন, "হে পিতা ! এদের তুমি ক্ষমা কর ।

উপসংহার :- ক্ষণজন্মা মহামানব যীশুর জন্মের পর দু হাজারেরও বেশি বছর অতিক্রান্ত হয়ে গেল । এখনও পৃথিবী হাজার হাজার, কোটি কোটি মানুষের মনের মণিকোঠায় তিনি অম্লান হয়ে রয়েছেন । তাঁর প্রচারিত বাণী ও বিশ্বাসকে আশ্রয় করে বেঁচে আছে মানুষ শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে । এই মহামানবের মৃত্যু নেই, তিনি অজর অমর ।

****

Comments

Related Items

বিজ্ঞান ও কুসংস্কার

ভূমিকা :- প্রাচীনকালে গৃহবন্দী মানুষ আত্মরক্ষার জন্য এবং প্রকৃতির রোষ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য নিরন্তর প্রচেষ্টা চালিয়েছে । নিজের অভিজ্ঞতা, বুদ্ধি এবং বিচারবোধ থেকে সে ক্রমশ প্রকৃতির স্বরূপ উপলব্ধি করতে পেরেছে । জানতে পেরেছে প্রত্যেকটি ঘটনার পিছনে কিছু

সমাজ সচেতনতায় বিজ্ঞানের ভূমিকা

"বিজ্ঞান চায় সবার মাঝে প্রাণের কথা বলতে, অন্ধ আবেগ সরিয়ে দিয়ে আলোর পথে চলতে ।"

প্রাকৃতিক বিপর্যয় ও তার প্রতিকার

"মন্বন্তরে মরিনি আমরা, মারি নিয়ে ঘর করি"— বন্যা, খরা, ভূমিকম্প, মহামারী মানুষের জীবনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে । অথচ বিজ্ঞানের বলে বলিয়ান আমরা সদর্পে বলে চলেছি যে, প্রকৃতি আমাদের হাতের মুঠোয়, প্রকৃতি আমাদের কাছে বশীভূত । কিন্তু এ দর্প বা ধারণা সত্য নয় । মাঝে মধ্যেই প্রকৃতির রুদ্ররোষের কাছে মানুষ অসহায় হয়ে পড়ে । প্রাকৃতিক বিপর্যয় ।

দেশ ভ্রমণের প্রয়োজনীয়তা

"হাজার বছর ধরে আমি পথ হাঁটিতেছি পৃথিবীর পথে সিংহল সমুদ্র থেকে মালয় সাগরে অনেক ঘুরেছি আমি ।" মানুষ চির যাযাবর । মানুষের রক্তে রয়েছে ভ্রমণের নেশা । অজানাকে জানার অদেখাকে দেখার কৌতুহল মানুষের চিরন্তন ।

অরণ্য ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা

Ofমানুষের জন্ম থেকেই অরণ্য তার পরম আত্মীয়, অকৃত্রিম বন্ধু । অরণ্যের ডাকেই ধরিত্রীর প্রথম ঘুম ভেঙ্গে ছিল । দিকে দিকে প্রচারিত হয়েছিল জীবনের মহিমা । ভারতীয় সভ্যতা অরণ্য কেন্দ্রিক সভ্যতা, অরণ্যের কোলেই মানুষ গড়ে তুলেছিল তার প্রথম বাসস্থান । অরণ্য দিয়েছে বেঁচে থাকার রসদ, প্রাণের নিঃশ্বাস, আশ্বাস ।