প্রাকৃতিক বিপর্যয় ও তার প্রতিকার

Submitted by Nandarani Pramanik on Mon, 10/08/2018 - 09:39

ভূমিকা :- " মন্বন্তরে মরিনি আমরা, মারি নিয়ে ঘর করি "— বন্যা, খরা, ভূমিকম্প, মহামারী মানুষের জীবনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে । অথচ বিজ্ঞানের বলে বলিয়ান আমরা সদর্পে বলে চলেছি যে, প্রকৃতি আমাদের হাতের মুঠোয়, প্রকৃতি আমাদের কাছে বশীভূত । কিন্তু এ দর্প বা ধারণা সত্য নয় । মাঝে মধ্যেই প্রকৃতির রুদ্ররোষের কাছে মানুষ অসহায় হয়ে পড়ে । তখন বিজ্ঞান-প্রযুক্তি আর কোন কাজে আসে না । যে প্রকৃতি সৃষ্টির আনন্দে উদ্বেল, আবার সেই ধ্বংসের মারণযজ্ঞে মেতে ওঠে কখনো কখনো । এই ধ্বংসকারিণী রূপের বর্ণনা কেই বলা হয় প্রাকৃতিক বিপর্যয় ।

প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের নানান রূপ :- প্রাকৃতিক বিপর্যয় নানারূপে এই পৃথিবীর বুকে নেমে আসে । কখনো অতি বর্ষণের ফলে বন্যারূপে দেখা দেয় । কখনও প্রবল তান্ডবের সঙ্গে গগন ভেদ করে ভয়ংকর সামুদ্রিক ঝড় সবকিছু তছনছ করে দেয় । আবার অনাবৃষ্টির ফলে খরা দেখা যায় । যার ফলে মাঠ ঘাট ফেটে চৌচির হয়ে যায় । ফল, ফুল,ফসলের অকাল মৃত্যু ঘটে । এছাড়াও ভূমিকম্পও নেমে আসে পৃথিবীর বুকে । অবলীলায় বহু প্রাণ চলে যায়, ক্ষতি হয় প্রচুর ।

প্রাকৃতিক বিপর্যয় রূপে বন্যা :- বন্যার প্রধান কারণ হল অতি বর্ষণ এবং পরিকল্পনাহীন নদী বাঁধ প্রকল্প । জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য এবং কলকারখানায় ও চাষের প্রয়োজনে সারা বছর জল সরবরাহের জন্য নদীতে বাঁধ দেওয়া হয় । কিন্তু এই বাঁধ সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণ না করার ফলে বর্ষার সময় জলস্ফীতি দেখা দেয় এবং বন্যা হয় । এছাড়া নদী-নালা, খাল-বিল গুলোও সংস্কার না হওয়ায় বন্যা হয় ।

প্রাকৃতিক বিপর্যয় রূপে ঝড় :-  প্রাকৃতিক বিপর্যয় রুপে ঝড় ও অত্যন্ত ক্ষতিকর ও মারাত্মক । সমুদ্রের জল সূর্যের তাপে অত্যন্ত গরম হওয়ার ফলে বাষ্পীভূত হয়ে গভীর নিম্নচাপের সৃষ্টি হয় তখন প্রবল ঝড় সমুদ্র উপকূলের নিকটে গ্রাম শহরে আছড়ে পড়ে সুপার সাইক্লোন, আয়লা, নার্গিস এর মত প্রবল ঝড়ে বহু মানুষের প্রাণ যায় এবং সম্পদ বিনষ্ট হয় ।

ভূমিকম্প :- প্রাকৃতিক বিপর্যয় রূপে ভূমিকম্প মানুষকে অসহায় করে তোলে । নিমিষে সাধের সৌধ মানুষের আবাসভূমি ধুলিসাৎ হয়ে যায় ভূমিকম্পের কবলে পড়ে । সাম্প্রতিককালে নেপালে ঘটে যায় ভয়াবহ ভূমিকম্প ।

খরা :- যে সূর্যতেজ ছাড়া প্রাণ বিকশিত হয় না সেই তেজ প্রাণহন্তা রূপ ধারণ করে কখনো কখনো । সূর্যতেজে সুজলা সুফলা ধরণী হয়ে ওঠে রুক্ষ । আবার সূর্যতেজে কর্ষণযোগ্য ভূমি হয়ে ওঠে মরুভূমি । এক ফোঁটা জলের জন্য, একটু ঠাণ্ডা বাতাসের জন্য মানুষ হাহাকার করে । এই সমস্ত প্রাকৃতিক বিপর্যয় মানব জীবনে প্রচুর সমস্যার সৃষ্টি করে ।

প্রতিকার:-  প্রাকৃতিক বিপর্যয় কোন একদিনের ঘটনা নয় । যে বিপর্যয় মাঝে মাঝেই আসে এবং মানুষ তার সমস্ত শক্তি দিয়ে মোকাবিলার চেষ্টাও করে । প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের পিছনে যে কারণ গুলি আছে সেগুলি তলিয়ে দেখতে হবে এবং তার প্রতিকার করতে হবে । যেমন বন্যা রোধ করার জন্য নদী-নালা, খালের সংস্কার করতে হবে । নদীবাঁধ গুলো সুরক্ষিত করতে হবে । পরিকল্পিতভাবে জলাধার নির্মাণ করতে হবে । বেশি ফসলের জন্য গভীর নলকূপের বেশি ব্যবহার না করার দিকে নজর দিতে হবে । ভূমিকম্প রোধের ক্ষেত্রে ডায়নামাইট ব্লাস্ট বা বিভিন্ন এ্যাটোমিক বোমার বিস্ফোরণ যাতে না ঘটে সেদিকে নজর দিতে হবে । সর্বোপরি অরণ্য ধ্বংস না করে অরণ্য সৃজন ও সংরক্ষণের দিকে সজাগ দৃষ্টি দিলে তবেই প্রাকৃতিক বিপর্যয় এড়ানো যাবে ।

উপসংহার :- ধরণী মাতা আমাদের দিয়েছে অফুরন্ত সম্পদ । আর সেই সম্পদকে রক্ষা করার জন্য আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে । এ পৃথিবীকে বাসযোগ্য করে তোলার জন্য মানুষকেই শপথ নিতে হবে । প্রকৃতিমাতাকে গর্ভধারিনীমাতৃ রূপে জ্ঞান করে তাকে ভালবাসতে পারলে বোধহয় প্রকৃতি স্থির থাকবে ।

***

 

Comments

Related Items

মোবাইল ফোন ব্যবহারের সুফল ও কুফল/ভালোমন্দ

ভূমিকা:— আধুনিক প্রযুক্তি বিদ্যার নবতম আবিষ্কার হল ইন্টারনেট, ই-মেল ও মোবাইল ফোন । যোগাযোগ ব্যবস্থার অন্যতম হাতিয়ার হল মোবাইল ফোন । আজকের দিনে কোনো আত্মীয় পরিজন, বন্ধু-বান্ধব বা অন্য কাউকে চিঠি লিখি তার উত্তরের প্রতীক্ষায় ডাক-পিয়নের পথ চেয়ে বসে থাকতে হয় না ।

মহামানব যীশুখ্রীষ্ট

সবলদের অত্যাচারে দুর্বলদের জীবন যখন দুর্বিষহ হয়ে ওঠে, যখন সাধারণ মানুষের জীবন অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে যায় তখনই কোনো এক মহামানবের আবির্ভাব ঘটে ।

বিজ্ঞান ও কুসংস্কার

ভূমিকা :- প্রাচীনকালে গৃহবন্দী মানুষ আত্মরক্ষার জন্য এবং প্রকৃতির রোষ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য নিরন্তর প্রচেষ্টা চালিয়েছে । নিজের অভিজ্ঞতা, বুদ্ধি এবং বিচারবোধ থেকে সে ক্রমশ প্রকৃতির স্বরূপ উপলব্ধি করতে পেরেছে । জানতে পেরেছে প্রত্যেকটি ঘটনার পিছনে কিছু

সমাজ সচেতনতায় বিজ্ঞানের ভূমিকা

"বিজ্ঞান চায় সবার মাঝে প্রাণের কথা বলতে, অন্ধ আবেগ সরিয়ে দিয়ে আলোর পথে চলতে ।"

দেশ ভ্রমণের প্রয়োজনীয়তা

"হাজার বছর ধরে আমি পথ হাঁটিতেছি পৃথিবীর পথে সিংহল সমুদ্র থেকে মালয় সাগরে অনেক ঘুরেছি আমি ।" মানুষ চির যাযাবর । মানুষের রক্তে রয়েছে ভ্রমণের নেশা । অজানাকে জানার অদেখাকে দেখার কৌতুহল মানুষের চিরন্তন ।