পরিবেশ দূষণ ও তার প্রতিকার

Submitted by Nandarani Pramanik on Wed, 12/13/2017 - 01:19

পরিবেশ দূষণ ও তার প্রতিকার

ভূমিকা:- আকাশ, বাতাস, জল, উদ্ভিদজগত, প্রাণীজগত সবকিছু নিয়ে আমাদের পরিবেশ । এগুলির কোনোটিকে বাদ দিয়ে আমরা বাঁচতে পারি না । মানুষ তার বিদ্যা, বুদ্ধি দিয়ে এবং অনলস পরিশ্রমে তার চারপাশের পরিবেশকে আরও সুন্দর করে সাজিয়েছে । প্রাকৃতিক পরিবেশ থেকে বেশি মণিমানিক্য সংগ্রহ করে মানুষ উষর মরুভূমির বুকেও ফুটিয়েছে সোনালী ফসল । কিন্তু সভ্যতার অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে আর স্বার্থান্বেষী কিছু মানুষের লোভে প্রাকৃতিক পরিবেশ আজ নানান ভাবে দূষিত হচ্ছে । যেমন বায়ু, জল, মাটি, শব্দ প্রভৃতি দুষণের ফলে মানুষের জীবনেও এসেছে নানা রকম দুরারোগ্য ব্যাধি ।

বায়ুদুষণ ও মানবজীবনে তার প্রভাব:- আমাদের প্রাকৃতিক পরিবেশের অন্যতম ও প্রধান হলো বায়ু বা বাতাস যা ছাড়া প্রাণীজগত এক মুহূর্ত ও বাঁচতে পারে না । বায়ুদুষণের অন্যতম কারণ হল নিউক্লীয় আবর্জনা, কয়লা পুড়িয়ে কার্বন-ডাই অক্সাইড বাতাসে ছড়িয়ে দেওয়া, কলকারখানার দূষিত গ্যাস, যানবাহনের জ্বালানি পোড়া গন্ধ বাতাসে মিশে বাতাস দূষিত হচ্ছে । দুষণের ফলে মানুষের শ্বাসকষ্ট, ক্যান্সারের মতো দুরারোগ্য ব্যাধির শিকার হতে হচ্ছে ।

জলদুষণ ও তার প্রতিক্রিয়া :- জলের আর এক নাম জীবন । জল ছাড়া কোনো জীব বাঁচে না । অথচ সভ্যতার অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে কলকারখানার সংখ্যা বেড়ে চলেছে প্রতিনিয়ত । সেই কলকারখানা থেকে নির্গত রাসায়নিক পদার্থমিশ্রিত জল নদীর জলে মিশে নদীর জলকে দূষিত করছে । এছাড়া শহরের সমস্ত নর্দমার জল ও নদীতে পড়ে নদীর জলকে দূষিত করছে । ফলে  জলবাহিত রোগের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে । জলবাহিত রোগে আজ মানুষ বড় বিপন্ন ।

শব্দদুষণ ও তার প্রতিক্রিয়া :- কলকারখানার উচ্চশব্দ, যন্ত্রচালিত গাড়ির হর্ন, বাজি-পটকার শব্দ মাইক্রোফোনের আওয়াজে মানুষের শ্রবণক্ষমতা হ্রাস পাচ্ছে । মানসিক বিপর্যয়, রক্তচাপ বৃদ্ধি, স্নায়বিক অস্থিরতা প্রভৃতি নানা রকমের সমস্যা সৃষ্টি করছে ।

মাটিদূষণ :- বর্তমানে কৃষিক্ষেত্রে সবুজবিপ্লব এসেছে । কিন্তু উৎপাদন বৃদ্ধি করতে গিয়ে জমিতে নানা প্রকারের রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহার করা হচ্ছে, এর ফলে মাটি দূষিত হচ্ছে । সারা বছর জমিতে সেচব্যবস্থা নিশ্চিত করার জন্য বহু নদীতে বাঁধ দিয়ে নদীর গতিকে থামিয়ে দেওয়া হয়েছে, এতে একদিকে যেমন নদীর জল দূষিত হচ্ছে অপরদিকে মৃত্তিকা দূষণ ও হচ্ছে । রাসায়নিক সার দ্বারা প্রস্তুত কৃষিজাত সামগ্রী থেকে নানা ধরণের রোগ সৃষ্টি হচ্ছে ।

পরিবেশ দুষণের প্রতিকার :- পরিবেশ দূষণ আজ সারা পৃথিবীর একটি বিরাট সমস্যা । এই সমস্যা সমাধানের জন্য আমাদের কিছু ব্যবস্থা নিতে হবে । সব রকম দূষণ থেকে আমাদের মুক্তি দিতে পারে একমাত্র উদ্ভিদ । সবুজ উদ্ভিদ বা গাছ সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নিজের খাদ্য নিজে প্রস্তুত করতে পারে । এই প্রক্রিয়ায় গাছ বাতাস থেকে কার্বন-ডাই অক্সাইড গ্রহণ করে আর বাতাসে অক্সিজেন ছেড়ে দেয় । যে অক্সিজেন প্রাণীজগতের বাঁচার জন্য অপরিহার্য্য । তাই বেশি করে গাছ লাগাতে হবে এবং সংরক্ষণ করতে হবে । তাহলে বাতাসে কার্বন-ডাই অক্সাইডের ভারসাম্য বজায় থাকবে । কলকারখানা থেকে দূষণ নিয়ন্ত্রণ করার জন্য নিয়ন্ত্রক যন্ত্রের ব্যবস্থা গ্রহণ, যথা কলকারখানার বা নর্দমার তরল যাতে নদীর জলে না মেশে সে ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে । শব্দদূষণ কমানোর জন্য শব্দ নিরোধক যন্ত্রের ব্যবহারের উপর জোর দিতে হবে । রাসায়নিক সারের পরিবর্তে জৈব সারের প্রয়োগ বেশি করে এবং কীটনাশকের পরিমাণ কমিয়ে মৃত্তিকা দূষণ রোধ সম্ভব । সর্বোপরি যানবাহনে পেট্রল বা ডিজেল পোড়ানোর পরিবর্তে ব্যাটারি চালিত গাড়ির ব্যবহার করতে পারলে দূষণ থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে ।

উপসংহার :- পরিবেশ দূষণ একটা গুরুতর সমস্যা । আজ মানব সভ্যতার অস্তিত্ব বিঘ্নিত । এই গভীর সংকটের মোকাবিলা করার জন্য আমাদের প্রত্যেকেই সচেতন হতে হবে এবং নজর দিতে হবে যাতে পরিবেশের দুষণের মাত্রা না বাড়ে । কারণ বিজ্ঞান যতই উন্নত হোক বা প্রযুক্তিবিজ্ঞান যতই আমাদের উন্নতির শীর্ষে নিয়ে যাক না কেন মানুষের জন্যে সভ্যতা মানুষের হাতেই যদি বিনাশ হয় তাহলে কি লাভ - কারণ বনে আগুন লাগলে দেবালয় কি এড়ায় ? এই সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্যে আমাদের সবাইকেই হাত মিলিয়ে কোমর বেঁধে নেমে পড়তে হবে ।  

****

 

Comments

Related Items

দেশ ভ্রমণের প্রয়োজনীয়তা

"হাজার বছর ধরে আমি পথ হাঁটিতেছি পৃথিবীর পথে সিংহল সমুদ্র থেকে মালয় সাগরে অনেক ঘুরেছি আমি ।" মানুষ চির যাযাবর । মানুষের রক্তে রয়েছে ভ্রমণের নেশা । অজানাকে জানার অদেখাকে দেখার কৌতুহল মানুষের চিরন্তন ।

অরণ্য ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা

Ofমানুষের জন্ম থেকেই অরণ্য তার পরম আত্মীয়, অকৃত্রিম বন্ধু । অরণ্যের ডাকেই ধরিত্রীর প্রথম ঘুম ভেঙ্গে ছিল । দিকে দিকে প্রচারিত হয়েছিল জীবনের মহিমা । ভারতীয় সভ্যতা অরণ্য কেন্দ্রিক সভ্যতা, অরণ্যের কোলেই মানুষ গড়ে তুলেছিল তার প্রথম বাসস্থান । অরণ্য দিয়েছে বেঁচে থাকার রসদ, প্রাণের নিঃশ্বাস, আশ্বাস ।

দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান / বিজ্ঞান ও মানব সভ্যতা

ভূমিকা:- বর্তমান যুগ বিজ্ঞানের যুগ । বিজ্ঞানের নব নব আবিষ্কার মানুষের জীবনধারাকে আমূল পাল্টে দিয়েছে । মানুষের ব্যবহারিক জীবনে এসেছে যুগান্তকারী পরিবর্তন । প্রাকৃতিক দুর্যোগের হাত থেকে বাঁচার জন্য মানুষ আর মন্দিরে গিয়ে মাথা ঠোকে না

প্রতিবন্ধীদের প্রতি দায়িত্ব ও কর্তব্য

সূচনা :- মানসিক বা শারীরিক প্রতিবন্ধকতা যাদের মধ্যে রয়েছে তাদেরকে আমরা প্রতিবন্ধী বলি । প্রকৃতির শ্রেষ্ঠ সম্পদ মানুষ । যে মানুষের মধ্যে অস্বাভাবিকতা কিছু বেশি থাকে অর্থাৎ চলাফেরায় বা কথাবার্তায় যে বেশ কিছু সমস্যার সম্মুখীন হয় সেই প্রতিবন্ধী

জাতীয় শিশু দিবস

সূচনা :- প্রতি বছরই ১৪ই নভেম্বর দেশের সর্বত্র শিশু দিবস পালিত হয় । বছরের শুরু থেকে বিভিন্ন বিষয়কে কেন্দ্র করে নানা রকম দিবস পালিত হয় —যেমন ১২ই জানুয়ারী যুব দিবস, প্রজাতন্ত্র দিবস, শ্রমদিবস, স্বাধীনতা দিবস...