তড়িৎ-বিশ্লেষণের প্রয়োগ

Submitted by arpita pramanik on Wed, 02/20/2013 - 12:28

তড়িৎ-বিশ্লেষণের প্রয়োগ (Application of Electrolysis) :

তড়িৎ-বিশ্লেষণের নীতি প্রয়োগ করে—

(i) ধাতু নিষ্কাশন : তীব্র তড়িৎ-ধনাত্মক ধাতুগুলি যেমন— সোডিয়াম, পটাশিয়াম, ক্যালশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, অ্যালুমিনিয়াম প্রভৃতি ধাতুগুলিকে তাদের আকরিক থেকে নিষ্কাশিত করা হয় । আবার কতকগুলি ধাতু যেমন— কপার, জিঙ্ক, অ্যালুমিনিয়াম প্রভৃতির তড়িৎ-বিশ্লেষণ পদ্ধতি প্রয়োগ করে বিশোধন করা হয় ।

(ii) ইলেকট্রো-টাইপ তৈরিতে বা তড়িৎ লেপনে তড়িৎ-বিশ্লেষণের নীতিকে ব্যবহার করা হয় ।

তড়িৎ-লেপন (Electroplating) :- তামা, পিতল, লোহা, প্রভৃতি ধাতু বা ধাতু-সংকরের তৈরি বস্তুর ওপর তড়িৎবিশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় সোনা, রুপো, নিকেল, ক্রোমিয়াম ইত্যাদি অপেক্ষাকৃত কম সক্রিয় ধাতুর প্রলেপ দেওয়া হয় । এই পদ্ধতিকে তড়িৎ লেপন বলে ।

তড়িৎ-লেপনের উদ্দেশ্য :- তামা, লোহা, পিতল প্রভৃতি ধাতু বা ধাতু সংকরের তৈরি বস্তুগুলিকে জলবায়ুর প্রকোপ থেকে রক্ষা করার জন্য, বিশেষত বাতাসের মধ্যস্থ জলীয় বাষ্প এবং অক্সিজেনের আক্রমণ থেকে রক্ষা করার জন্য এবং পদার্থগুলির সৌন্দর্য ও স্থায়িত্ব বাড়ানোর জন্য ওই বস্তুগুলির ওপর তড়িৎ লেপন করা হয় । যেমন— লোহার তৈরি বস্তুর উপর আর্দ্র বায়ুতে মরচে পড়ে, ফলে বস্তুটির সৌন্দর্য নষ্ট হয় এবং ক্রমশ ভঙ্গুর হয়ে বস্তুর স্থায়িত্ব কমে যায় । বস্তুটিকে পরিষ্কার করে তার ওপর নিকেল, ক্রোমিয়াম প্রভৃতির আস্তরণ দিলে মরচে পড়ে না । বস্তুটি দেখতে সুন্দর হয় ও স্থায়িত্ব বেড়ে যায় । এছাড়া পিতল বা ব্রোঞ্জের গহনার ওপর সোনার প্রলেপ দিয়ে ও ওর সৌন্দর্য, স্থায়িত্ব এবং ক্রেতার আকর্ষণ করার ক্ষমতা বাড়ানো হয় । 

পদ্ধতি:

(i) যে বস্তুর ওপর তড়িৎ-লেপন করা হয়, প্রথমে তাকে পর পর লঘু ক্ষার দ্রবণ, অ্যাসিড দ্রবণ এবং সবশেষে জল দিয়ে ভাল করে ধুয়ে পরিষ্কার করা হয় ।

(ii) এই পরিষ্কার করা বস্তুকে ভোল্টামিটারে ক্যাথোড রূপে ব্যবহার করা হয় ।

(iii) যে ধাতুর প্রলেপ দিতে হবে, সেই ধাতুর টুকরোকে অ্যানোডরূপে ব্যবহার করা হয় ।

(iv) ভোল্টামিটারে তড়িৎ বিশ্লেষ্য পদার্থরূপে ব্যবহার করা হয়, যে পদার্থের প্রলেপ দেওয়া হবে সেই পদার্থের জলে দ্রাব্য লবণের দ্রবণ ।

(v) দ্রবণের মধ্য দিয়ে তড়িৎপ্রবাহ চালনা করলে অ্যানোডের ধাতু ক্রমশ ক্ষয় পায় এবং ক্যাথোডে ঝোলানো বস্তুগুলির ওপর ওই ধাতুর প্রলেপ পড়তে থাকে । যত বেশি সময় ধরে তড়িৎপ্রবাহ করা হয় তত বেশি পরিমাণ প্রলেপ পড়ে ।

নিকেলের প্রলেপ (Electroplating with nickel) :- নিকেলের প্রলেপ দিতে হলে বিশুদ্ধ নিকেল ধাতুকে অ্যানোডরূপে এবং নিকেল সালফেট এবং অ্যামোনিয়াম সালফেট দ্রবণের সঙ্গে সামান্য বোরিক অ্যাসিড মিশিয়ে সেই দ্রবণকে তড়িৎ-বিশ্লেষ্য পদার্থরূপে ব্যবহার করা হয় ।

তামার প্রলেপ (Electroplating with copper) :- লোহার দ্রব্যে তামার প্রলেপ দিতে হলে, তামার পাতকে অ্যানোড এবং লোহার দ্রব্যকে ক্যাথোডরূপে ব্যবহার করা হয় । তড়িৎ বিশ্লেষ্য পদার্থরূপে কপারের জলে দ্রাব্য লবণ কপার সালফেট ব্যবহার করা হয় । এর সঙ্গে কয়েক ফোঁটা H2SO4 যোগ করা হয় ।

[tex] CuS{O_4} \rightleftharpoons C{u^{ +  + }} + SO_4^ = [/tex] 

ক্যাথোডে : Cu++ + 2e → Cu ।

অ্যালুমিনিয়াম নিষ্কাশন (Extraction of Aluminium) :- গলিত ক্রায়োলাইট ও ফ্লুওস্পার (CaF2) মিশ্রণে অ্যালুমিনা (Al2O3) যোগ করে তড়িৎ বিশ্লেষণ ঘটালে ক্যাথোডে অ্যালুমিনিয়াম উৎপন্ন হয় । তড়িৎ বিশ্লেষণ ক্রিয়া ঘটানো হয় একটি আয়তাকার লোহার তৈরি ট্যাঙ্কে । ওই ট্যাঙ্কে ভিতরের দিকে গ্যাস কার্বনের পুরু আস্তরণ দেওয়া থাকে । ওই কার্বন স্তর ক্যাথোডরূপে কাজ করে এবং অ্যানোড হিসাবে ব্যবহৃত হয় একটি অনুভূমিক কপার দন্ড থেকে লম্বভাবে ঝুলিয়ে দেওয়া কয়েকটি গ্রাফাইট দন্ড, ট্যাঙ্কের নীচের দিকে গলিত ধাতু বের করে নেওয়ার জন্য একটি নির্গম নল থাকে । প্রথমে ট্যাঙ্কের মধ্যে কৃত্রিম ক্রায়োলাইট চূর্ণ নিয়ে তড়িৎপ্রবাহ দ্বারা গলানো হয় । এই গলিত ক্রায়োলাইট বিশুদ্ধ অ্যালুমিনা ও কিছুটা ফ্লুওস্পার যোগ করা হয় । তারপর 876°C - 950°C তাপাঙ্কে ও ভোল্টেজ 5 - 6 ভোল্ট এবং প্রবাহমাত্রা 100 অ্যাম্পিয়র প্রতি বর্গ ডেসিমিটারে তড়িৎবিশ্লেষণ করলে ক্যাথোডে ধাতব অ্যালুমিনিয়াম এবং অ্যানোডে অক্সিজেন গ্যাস উৎপন্ন হয় ।

তামার বিশোধন (Purification of copper) :- নিষ্কাশন পদ্ধতিতে প্রাপ্ত খাদ মিশ্রিত অশুদ্ধ তামাকে তড়িৎবিশ্লেষণ পদ্ধতিতে বিশোধন করা হয় । ভোল্টামিটারে সামান্য H2SO4 (10 - 15%) মেশানো ঘন CuSO4 দ্রবণ নিয়ে তাতে অ্যানোড হিসাবে অশুদ্ধ মোটা তামার পাত এবং ক্যাথোড হিসাবে বিশুদ্ধ তামার পাত আংশিক ডুবানো থাকে । দ্রবণের মধ্য দিয়ে তড়িৎপ্রবাহ চালনা করলে অ্যানোড থেকে Cu2+ আয়ন দ্রবণে ক্রমগত চলে আসে এবং দ্রবণ থেকে Cu2+ আয়ন ক্যাথোড থেকে ইলেকট্রন নিয়ে বিশুদ্ধ তামা হিসাবে ক্যাথোডে সঞ্চিত হয়; খাদ দ্রবণের তলায় থিতিয়ে যায় । এভাবেই বিশুদ্ধ তামা পাওয়া যায় ।    

*****

Related Items

কৃত্রিম পলিমার ব্যবহারের সমস্যা ও নিয়ন্ত্রণ

কৃত্রিম পলিমার থেকে প্রস্তুত বস্তুসামগ্রীর ব্যবহার যথেচ্ছভাবে দ্রুতগতিতে বেড়ে চলেছে । পলিথিন ও টেফলন থেকে তৈরি ব্যাগ ও প্লাস্টিকের থলি এবং অন্যান্য সামগ্রী আমাদের দৈনন্দিন জীবনে নিত্য প্রয়োজনীয় বস্তু হয়ে উঠেছে । প্লাস্টিক এমন একটি দূষক যা প্রকৃতিতে দীর্ঘদিন অবিকৃত থাকে ...

পলিমেরাইজেশন ও কয়েকটি সাধারণ পলিমার

যে বিক্রিয়ায় বহুসংখ্যক ক্ষুদ্র ও সরল অণুর পারস্পরিক সংযোগের ফলে ভিন্ন ধর্ম ও উচ্চ আণবিক ভরবিশিষ্ট (20000 - 250000) অতিবৃহৎ-অণু গঠিত হয় সেই বিক্রিয়াকে বহুলীভবন বা পলিমেরাইজেশন বিক্রিয়া বলে । ওই বিক্রিয়ায় উত্পন্ন বৃহৎ-অণুকে পলিমার বলে । আবার যে সরল...

অ্যালকাইন (Alkyne)

যে হাইড্রোকার্বনে এক বা একাধিক কার্বন-কার্বন ত্রি-বন্ধন থাকে, তাদের অ্যালকাইন বলে। এরা অসম্পৃক্ত জৈব যৌগ । এরা এক অণু হাইড্রোজেনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে প্রথমে অ্যালকিন এবং পরে আরও এক অণু হাইড্রোজেনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে অ্যালকেন অণু গঠন করে । এই শ্রেণির যৌগগুলির ...

অ্যালকিন (Alkene)

যে সব হাইড্রোকার্বনে কম পক্ষে একটি কার্বন-কার্বন দ্বি-বন্ধন থাকে, তাদের অ্যালকিন বলে । এই যৌগগুলি হাইড্রোজেনের সঙ্গে সংযুক্ত হয়ে অ্যালকেন উত্পন্ন করে । কার্বন ও হাইড্রোজেন দিয়ে গঠিত মুক্ত শৃঙ্খল যৌগে সর্বোচ্চ যতগুলি হাইড্রোজেন পরমাণু থাকতে পারে তার থেকে ...

অ্যালকেন (Alkane)

যে সব হাইড্রোকার্বনে কার্বন পরমাণুগুলি পরস্পর কেবলমাত্র সমযোজী এক বন্ধন দ্বারা যুক্ত থাকে, তাদের অ্যালকেন বলে । এদের গঠনে শুধু কার্বন-কার্বন একবন্ধন এবং কার্বন-হাইড্রোজেন একবন্ধন থাকে । অ্যালকেনগুলি কার্বন ও হাইড্রোজেন দিয়ে গঠিত মুক্ত শৃঙ্খল যৌগ ও এর অ্যালকেন ...