ছোট প্রশ্ন ও উত্তর : ধাতুর উৎস, ধর্ম ও ব্যবহার :
প্রশ্ন:- আকরিক [Ores] কাকে বলে ?
উত্তর:- যে খনিজ [Mineral] থেকে সহজে এবং সুলভে ধাতু নিষ্কাশন করা যায় তাকে আকরিক বলে ।
প্রশ্ন:- অ্যালুমিনিয়ামের [Aluminium] প্রধান আকরিকের নাম ও সংকেত লেখো ।
উত্তর:- অ্যালুমিনিয়ামের প্রধান আকরিকের নাম হল বক্সাইট [Bauxite] এবং এর সংকেত হল Al2O3, 2H2O ।
প্রশ্ন:- ম্যাগনেসিয়ামের [Magnesium] প্রধান আকরিকের নাম ও সংকেত লেখো ।
উত্তর:- ম্যাগনেসিয়ামের প্রধান আকরিকের নাম হল ম্যাগনেসাইট [Magnesite] এবং এর সংকেত হল MgCO3 ।
প্রশ্ন:- দস্তা বা জিঙ্ক [Zinc] -এর প্রধান আকরিকের নাম ও সংকেত লেখো ।
উত্তর:- দস্তা বা জিঙ্ক -এর প্রধান আকরিকের নাম হল জিঙ্ক ব্লেন্ড [Zincblend] এবং এর সংকেত হল ZnS ।
প্রশ্ন:- তামার [Copper] প্রধান আকরিকের নাম ও সংকেত লেখো ।
উত্তর:- তামার প্রধান আকরিকের নাম হল কপার পাইরাইটিস [Copper Pyrites] বা চালকোপাইরাইটিস এবং এর সংকেত হল CuFeS2 ।
প্রশ্ন:- লোহার একটি প্রধান আকরিকের নাম ও সংকেত লেখো ।
উত্তর:- লোহার একটি প্রধান আকরিকের নাম হল রেড হেমাটাইট [Red Haematite] এবং এর সংকেত হল Fe2O3 ।
প্রশ্ন:- কোন ধরনের ধাতু প্রকৃতিতে মুক্ত অবস্থায় পাওয়া যায় ?
উত্তর:- সোনা, রুপা, প্লাটিনাম প্রভৃতি ধাতুগুলি কম সক্রিয় । এজন্য এদের প্রকৃতিতে মুক্ত অবস্থায় পাওয়া যায় ।
প্রশ্ন:- অ্যালুমিনিয়াম একটি হালকা ধাতু । কিন্তু বিমানের কাঠামো নির্মাণে বিশুদ্ধ অ্যালুমিনিয়াম ব্যবহার করা হয় না কেন ?
উত্তর:- আর্দ্র বায়ুতে অ্যালুমিনিয়াম ধাতু বায়ুর অক্সিজেনের সঙ্গে বিক্রিয়া করে Al2O3 -এর একটি আস্তরণ ফেলে । এই কারণে বিমানের কাঠামো নির্মাণে বিশুদ্ধ অ্যালুমিনিয়াম ব্যবহার করা হয় না ।
প্রশ্ন:- এমন দুটি ধাতুর নাম ও সংকেত লেখো যারা অ্যাসিড ও ক্ষার উভয়ের সঙ্গে বিক্রিয়া করে হাইড্রোজেন উৎপন্ন করে ।
উত্তর:- অ্যাসিড ও ক্ষার উভয়ের সঙ্গে বিক্রিয়া করে হাইড্রোজেন উৎপন্ন করে এমন দুটি ধাতু হল অ্যালুমিনিয়াম (Al) ও জিঙ্ক (Zn) ।
প্রশ্ন:- ধাতু সংকর [Alloys] বলতে কি বোঝায় ?
উত্তর:- দুই বা ততোধিক ধাতু পরস্পর মিশে যে সমসত্ত্ব বা অসমসত্ত্ব মিশ্রণ উত্পন্ন করে, সেই কঠিন ধাতব পদার্থকে ধাতু সংকর বা সংকর ধাতু বলে ।
প্রশ্ন:- পারদ সংকর বলতে কি বোঝায় ?
উত্তর:- সংকর ধাতুর একটি উপাদান পারদ হলে তাকে পারদ সংকর বা অ্যামালগাম বলে । যেমন দস্তার পারদ সংকর (Zn/Hg) তড়িৎকোষ তৈরিতে বাবহৃত হয় ।
প্রশ্ন:- ধাতু সংকর তৈরি হয় কেন ?
উত্তর:- (i) জল বায়ুর প্রকোপ থেকে রক্ষা করতে ,
(ii) ধাতুর কাঠিন্য বাড়ানোর জন্য,
(iii) দাতুর জারণ ক্রিয়া কমাতে এবং
(iv) ধাতুর তাপ ও তড়িৎপরিবহন ক্ষমতা বাড়ানো বা কমানোর জন্য ধাতু সংকর (Alloys) তৈরি করা হয় ।
প্রশ্ন:- অ্যালুমিনিয়ামের একটি ধাতু সংকর নাম কি ?
উত্তর:- অ্যালুমিনিয়ামের একটি ধাতু সংকর হল ডুরালুমিন ।
প্রশ্ন:- রান্নার বাসনপত্র নির্মাণে অ্যালুমিনিয়াম ব্যবহার করা হয় না কেন ?
উত্তর:- অ্যালুমিনিয়াম তাপের সুপরিবাহী এবং হালকা ধাতু এজন্য রান্নার বাসনপত্র নির্মাণে অ্যালুমিনিয়াম ব্যবহার করা হয় না ।
প্রশ্ন:- অ্যালুমিনিয়াম ও লোহার আকরিকের মধ্যে কোন ধাতুটির আকরিকে ভারত সমৃদ্ধ ?
উত্তর:- অ্যালুমিনিয়াম ও লোহার আকরিকের মধ্যে লোহার আকরিকে ভারত সমৃদ্ধ ।
প্রশ্ন:- ভূপৃষ্ঠে কোন ধাতুর পরিমাণ সবচেয়ে বেশি ?
উত্তর:- ভূপৃষ্ঠে অ্যালুমিনিয়ামের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি ।
প্রশ্ন:- এমন দুটি ধাতুর নাম লেখো যারা অতিলঘু নাইট্রিক অ্যাসিডের সঙ্গে বিক্রিয়ায় হাইড্রোজেন উৎপন্ন করে ।
উত্তর:- ম্যাঙ্গানিজ ও ম্যাগনেসিয়াম অতিলঘু নাইট্রিক অ্যাসিডের সঙ্গে বিক্রিয়ায় হাইড্রোজেন উৎপন্ন করে ।
প্রশ্ন:- দার্শনিকের উল কি ?
উত্তর:- দস্তাকে বায়ু বা অক্সিজেনে তীব্র উত্তপ্ত করলে সাদা ধোঁয়ার আকারে উত্পন্ন জিঙ্ক অক্সাইড (ZnO) ক্রমশ শীতল হয়ে সাদা উলের মতো জমা হয় । একে দার্শনিকের উল (বা জিঙ্ক হোয়াইট) বলে ।
প্রশ্ন:- দস্তার পাত্রে কপার সালফেট রাখা যায় না কেন ?
উত্তর:- দস্তার সঙ্গে কপার সালফেটের দ্রবণের বিক্রিয়ায় লাল বর্ণের ধাতব কপার অধঃক্ষিপ্ত হয় এবং জিঙ্ক সালফেট উৎপন্ন হয় ।
যথা :- Zn + CuSO4 = ZnSO4 + Cu ↓ । ফলে পাত্রটি ক্ষয়ে যায় । এই কারণে দস্তার পাত্রে কপার সালফেট দ্রবণ রাখা যায় না ।
প্রশ্ন:- আর্দ্র বায়ুতে দীর্ঘদিন ধরে ফেলে রাখলে দস্তার ধাতব উজ্জ্বলতা নষ্ট হয় কেন ?
উত্তর:- আর্দ্র বায়ুতে দীর্ঘদিন ধরে ফেলে রাখলে দস্তার ওপর ক্ষারীয় জিঙ্ক কার্বনেটের [ZnCO3, 3Zn(OH)2] সাদা আস্তরণ পড়ে । ফলে দস্তার ধাতব উজ্জ্বলতা নষ্ট হয় ।
প্রশ্ন:- এমন দুটি ধাতুর নাম লেখো যা ক্ষারের সঙ্গে বিক্রিয়া করে না ।
উত্তর:- ক্ষারের সঙ্গে বিক্রিয়া করে না এমন দুটি ধাতুর নাম হল লোহা এবং তামা ।
প্রশ্ন:- ইস্পাত ও পেটা লোহার মধ্যে কোনটিতে কার্বনের পরিমাণ বেশি থাকে ?
উত্তর:- ইস্পাত ও পেটা লোহার মধ্যে ইস্পাতে কার্বনের পরিমাণ বেশি থাকে ।
প্রশ্ন:- লোহায় মরচে পড়া কী ?
উত্তর:- সাধারণ উষ্ণতায় আর্দ্র বায়ুতে লোহাকে রেখে দিলে লোহার ওপর লালচে বাদামি রঙের একটি আস্তরণ পড়ে । এই আস্তরণকে লোহায় মরচে পড়া বলে । মরচে হল জল যুক্ত ফেরিক অক্সাইড যার সংকেত হল Fe2O3, xH2O ।
প্রশ্ন:- স্টেইনলেস স্টিল কী ? এর ব্যবহার উল্লেখ করো ।
উত্তর:- স্টেইনলেস স্টিল বা কলঙ্কহীন ইস্পাত হল লোহার একটি ধাতু সংকর । এর উপাদান দুটি হল লোহা এবং ক্রোমিয়াম । এটি বাসনপত্র, ছুরি, কাঁচি ইত্যাদি তৈরি করতে ব্যবহৃত হয় ।
প্রশ্ন:- লোহায় মিশ্রিত কোন পদার্থের ওপর লোহার ধর্ম ও প্রকৃতি নির্ভর করে ?
উত্তর:- লোহায় মিশ্রিত কার্বনের পরিমাণের ওপর লোহার ধর্ম ও প্রকৃতি নির্ভর করে ।
প্রশ্ন:- আর্দ্র বায়ুতে লোহাকে রেখে দিলে লোহায় মরচে পড়ে কিন্তু স্টেইনলেস স্টিল বা কলঙ্কহীন ইস্পাতে মরচে পড়ে না কেন ?
উত্তর:- স্টেইনলেস স্টিল বা কলঙ্কহীন ইস্পাত হল লোহা এবং ক্রোমিয়ামের ধাতু সংকর । ধাতু সংকর জলবায়ুর প্রকোপ থেকে পদার্থের ক্ষয় নিবারণ করে । তাই আর্দ্র বায়ুতে লোহায় মরচে পড়ে , কিন্তু লোহার সংকর ধাতু স্টেইনলেস স্টিলে মরচে পড়ে না ।
প্রশ্ন:- গ্যালভানাইজেশন কী ?
উত্তর:- লোহার তৈরি বস্তুকে মরচের হাত থেকে রক্ষা করতে ঐ বস্তুগুলির উপর জিঙ্কের পাতলা প্রলেপ দেওয়া হয় । একে জিঙ্কলেপন বা গ্যালভানাইজেশন বলে ।
প্রশ্ন:- লৌহ পাত্রে দস্তার প্রলেপ দেওয়ার উদ্দেশ্য কী ?
উত্তর:- মরচের হাত থেকে রক্ষা করতে লৌহ পাত্রে দস্তার প্রলেপ দেওয়া হয় ।
প্রশ্ন:- নিষ্ক্রিয় লোহা কী ?
উত্তর:- অতি গাঢ় বা ধুমায়মান নাইট্রিক অ্যাসিডের বিক্রিয়ায় লোহার উপর ফেরোসো ফেরিক অক্সাইড (Fe3O4) -এর আস্তরণ পড়ে । ফলে লোহা আর দ্রবীভূত হয় না । একে নিষ্ক্রিয় লোহা বলে ।
প্রশ্ন:- জল এবং ক্ষারের সঙ্গে বিক্রিয়া করে না এমন একটি ধাতুর নাম কী ?
উত্তর:- জল এবং ক্ষারের সঙ্গে বিক্রিয়া করে না এমন একটি ধাতুর নাম হল তামা বা কপার ।
প্রশ্ন:- পিতল তৈরি করতে কোন কোন ধাতুর প্রয়োজন হয় ?
উত্তর:- পিতল তৈরি করতে তামা ও দস্তার প্রয়োজন হয় । পিতলে তামার শতকরা পরিমাণ বেশি থাকে ।
প্রশ্ন:- বৈদ্যুতিক তার হিসাবে তামা ব্যবহার করা হয় কেন ?
উত্তর:- তামা তড়িতের সুপরিবাহী । তাই বৈদ্যুতিক তার হিসাবে তামা ব্যবহার করা হয় ।
প্রশ্ন:- তামার একটি ধাতু সংকরের নাম কী ?
উত্তর:- তামা (90%) এবং টিন (10%) -এর ধাতু সংকর হল ব্রোঞ্জ । এটি বাসনপত্র ও মূর্তি তৈরি করতে ব্যবহৃত হয় ।
প্রশ্ন:- তামার পাত্রে লঘু হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড রাখা যায় কী ?
উত্তর:- ধাতুর সক্রিয়তা শ্রেণিতে তামার স্থান হাইড্রোজেনের নীচে । তাই লঘু হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড (HCl) তামার সঙ্গে বিক্রিয়া করে না । ফলে তামার পাত্রে লঘু হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড রাখা যায় ।
প্রশ্ন:- জার্মান সিলভার কি ? এর একটি ব্যবহার উল্লেখ করো ।
উত্তর:- জার্মান সিলভার হল তামা (50%), দস্তা (30%) এবং নিকেল (20%) -এর সমন্বয়ে গঠিত একটি ধাতু সংকর । এটি বাসনপত্র তৈরিতে ব্যবহৃত হয় ।
প্রশ্ন:- তামাকে গাঢ় H2SO4 -এর সঙ্গে ফোটালে যে বায়ুদূষক গ্যাস উত্পন্ন হয় তার নাম কী ?
উত্তর:- তামাকে গাঢ় H2SO4 -এর সঙ্গে ফোটালে যে বায়ুদূষক গ্যাস উত্পন্ন হয় তার নাম হল সালফার ডাই-অক্সাইড (SO2) ।
বিক্রিয়া : Cu + 2H2SO4 = CuSO4 + SO2↑+ 2H2O
প্রশ্ন:- তামার মুদ্রাকে দীর্ঘদিন ধরে আর্দ্র বায়ুতে ফেলে রাখলে ওটি সবুজ বর্ণ ধারণ করে কেন ?
উত্তর:- তামার মুদ্রাকে দীর্ঘদিন ধরে আর্দ্র বায়ুতে ফেলে রাখলে তামার উপর প্রথমে অক্সাইড ও সালফাইডের বাদামি রঙের আস্তরণ পড়ে এবং ঐ আস্তরণ ক্রমে সবুজ রঙের ক্ষারীয় কপার সালফেট [CuSO4, 3Cu(OH)2] -এ পরিণত হয় ফলে তামার মুদ্রাটি সবুজ বর্ণ ধারণ করে ।
প্রশ্ন:- চারটি ধাতুর মিশ্রণে একটি সংকর ধাতুর নাম কী ? এর ব্যবহার উল্লেখ করো ।
উত্তর:- চারটি ধাতুর মিশ্রণে একটি সংকর ধাতুর নাম হল ডুরালুমিন । এর মূল উপাদান হল—
[i] অ্যালুমিনিয়াম (Al) (95%)
[ii] কপার (Cu) (4%)
[iii] ম্যাগনেসিয়াম (Mg) (0.5%)
[iv] ম্যাঙ্গানিজ (Mn) (0.5%) ।
এটি বিমান ও মোটর গাড়ির বিভিন্ন অংশ তৈরি করতে ব্যবহৃত হয় ।
প্রশ্ন:- সংকর ধাতুর গলনাঙ্ক ওর উপাদান মৌলগুলির গলনাঙ্কের চেয়ে বেশি না কম ?
উত্তর:- সংকর ধাতুর গলনাঙ্ক ওর উপাদান মৌলগুলির গলনাঙ্কের চেয়ে কম হয় । যেমন রাংঝালের (Pb/Sn)গলনাঙ্ক সীসা ও টিনের গলনাঙ্কের থেকে কম ।
প্রশ্ন:- সংকর ধাতুর কাঠিন্য ওর উপাদান মৌলগুলির তুলনায় বেশি না কম ?
উত্তর:- সংকর ধাতুর কাঠিন্য ওর উপাদান মৌলগুলির প্রত্যেকটির থেকে বেশি । যেমন তামা নরম ধাতু কিন্তু তামা ও টিনের ধাতু সংকর কাঁসা তামা ও টিনের তুলনায় অনেক বেশি শক্ত ।
প্রশ্ন:- ধাতু ও অধাতুর সংমিশ্রণে উত্পন্ন একটি সংকর ধাতুর নাম কি ?
উত্তর:- লোহা (ধাতু) এবং কার্বন (অধাতু) -এর সংমিশ্রণে উৎপন্ন সংকর ধাতুটির নাম হল ইস্পাত ।
*****
- 48373 views