ইলেক্ট্রনীয় যোজ্যতা বা তড়িৎ-যোজ্যতা

Submitted by arpita pramanik on Thu, 02/14/2013 - 12:43

ইলেক্ট্রনীয় যোজ্যতা বা তড়িৎ-যোজ্যতা মতবাদ (Electro-valency) :

সাধারণ অবস্থায় পরমাণুর মধ্যে ইলেকট্রন এবং প্রোটন সংখ্যা সমান হওয়ার জন্য পরমাণু নিস্তড়িৎ হয় । সাধারণ নিয়মে পরমাণুর সংযোগ হওয়ার সময় ধাতুর পরমাণু ইলেকট্রন বর্জন এবং অধাতুর পরমাণু ইলেকট্রন গ্রহণ করে । ফলে কোনো পরমাণু ইলেকট্রন বর্জন করে ধনাত্মক আয়নে পরিণত হয় আবার কোনো পরমাণু ইলেকট্রন গ্রহণ করে ঋণাত্মক আয়নে পরিণত হয় । এখন বিপরীতভাবে তড়িৎ-গ্রস্থ আয়নগুলি কুলম্বীয় আকর্ষণ বলের দ্বারা যৌগিক অণুর সৃষ্টি করে ।

তড়িৎ-যোজ্যতা :- নিকটতম নিষ্ক্রিয় গ্যাসের পরমাণুর মতো স্থায়ী ইলেকট্রন-বিন্যাস লাভের চেষ্টায় কোনো তড়িৎ ধনাত্মক বা ধাতব পরমাণুর সবচেয়ে বাইরের কক্ষের এক বা একাধিক ইলেকট্রন, অন্য তড়িৎ ঋণাত্মক বা অধাতব পরমাণুর সবচেয়ে বাইরের কক্ষে স্থানান্তরিত হয়ে তড়িৎ আকর্ষণের সাহায্যে পরস্পর যুক্ত হয়ে যৌগ গঠনের ক্ষমতাকে ইলেকট্রনীয় যোজ্যতা বা তড়িৎ-যোজ্যতা বলে ।

তড়িৎযোজী যৌগ :-  কোনো ধাতব পরমাণু ইলেকট্রন বর্জন করে ধনাত্মক আয়নে আবার অধাতব পরমাণু ইলেকট্রন গ্রহণ করে ঋণাত্মক আয়নে পরিণত হয়ে তড়িৎ আকর্ষণের দ্বারা পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যে যৌগ উৎপন্ন করে, তাকে তড়িৎযোজী যৌগ বলে ।

যেমন Na পরমাণু 1টি ইলেকট্রন বর্জন করে Na+ আয়নে পরিণত এবং Cl পরমাণু সেই বর্জিত ইলেকট্রন গ্রহণ করে Cl- আয়নে পরিণত হয় ।  Na+ এবং Cl- আয়ন কুলম্বীয় আকর্ষণে পরস্পর যুক্ত হয়ে NaCl অণু গঠন করে । সুতরাং, NaCl তড়িৎযোজী বা আয়নীয় যৌগ ।  

[১] সোডিয়াম ক্লোরাইড অণুর গঠন :- সোডিয়াম পরমাণুর নিউক্লিয়াসে 11টি প্রোটন ও 12টি নিউট্রন আছে । পরমাণুর ইলেকট্রন-বিন্যাসে (2, 8, 1), সবচেয়ে বাইরের কক্ষে অর্থাৎ M কক্ষে 1টি ইলেকট্রন আছে । ক্লোরিন পরমাণুর নিউক্লিয়াসে 17টি প্রোটন ও 18টি নিউট্রন আছে । সুতরাং, পরমাণুটির ইলেকট্রন-বিন্যাস হল (2, 8, 7) । এখন উভয় পরমাণুই নিকটতম নিষ্ক্রিয় গ্যাসের মতো ইলেকট্রন-বিন্যাস লাভের জন্য বাইরের কক্ষে 8টি ইলেকট্রন রাখতে চায় । এই দুটি পরমাণুর রাসায়নিক সংযোগ ঘটার সময় সোডিয়াম পরমাণু নিজের সবচেয়ে বাইরের কক্ষের 1টি ইলেকট্রন ত্যাগ করে, ফলে পরমাণুটি নিষ্ক্রিয় নিয়নের ইলেকট্রন-বিন্যাস (2, 8) লাভ করে এবংNa+ আয়নে পরিণত হয় । ক্লোরিন পরমাণু ওই ইলেকট্রনটি নিজের সবচেয়ে বাইরের কক্ষে গ্রহণ করে নিষ্ক্রিয় আর্গনের ইলেকট্রন-বিন্যাস (2, 8, 8) লাভ করে Cl- আয়নে পরিণত হয় । এইভাবে উত্পন্ন Na+ এবং Cl- আয়নগুলি কুলম্বীয় তড়িৎ আকর্ষণে পরস্পর যুক্তহয়ে তড়িৎযোজী NaCl অণু গঠন করে ।

[২] ক্যালশিয়াম ও অক্সিজেনের সংযোগে ক্যালশিয়াম অক্সাইড তৈরি হয় :-  ক্যালসিয়াম ও অক্সিজেন পরমাণু দুটির বহিঃস্থ কক্ষের ইলেকট্রন পৃথক পৃথক চিহ্ন দ্বারা দেখানো হল, তাহলে বোঝা যাবে ক্যালসিয়াম ইলেকট্রন  প্রদান করে ধনাত্মক আয়নে পরিণত হয় এবং অক্সিজেন পরমাণু ইলেকট্রন গ্রহণ করে ঋণাত্মক আয়নে পরিণত হয় এবং উভয়ক্ষেত্রে নিষ্ক্রিয় গ্যাসের গঠন লাভ করে ।

তড়িৎ-যোজী যৌগগুলির বৈশিষ্ট্য :-

[i] ভৌত অবস্থা :- তড়িৎযোজী যৌগে অংশগ্রহণকারী উপাদান মৌলগুলির বিপরীত চার্জযুক্ত আয়নগুলি কুলম্বীয় তড়িৎ আকর্ষণ দ্বারা পরস্পরের সঙ্গে দৃঢ়ভাবে আবদ্ধ থাকে বলে নির্দিষ্ট জ্যামিতিক গঠন পায় । এর ফলে বেশির ভাগ যৌগগুলি কেলাসাকার হয় ।

[ii] তড়িৎ পরিবাহিতা :- জলে দ্রবীভূত অবস্থায় বা গলিত অবস্থায় আয়নে বিয়োজিত হয়, তাই এই অবস্থায় তড়িৎ পরিবহন করে । এই জাতীয় যৌগ হল তড়িৎ-বিশ্লেষ্য পদার্থ ।

[iii] গলনাঙ্ক ও স্ফুটনাঙ্ক বেশি :- অণুগুলির পরস্পরের মধ্যে আকর্ষণ বেশি হওয়ায় এই যৌগগুলির গলনাঙ্ক এবং স্ফুটনাঙ্ক সাধারণত বেশি হয়, এই জন্য এরা অনুদ্বায়ী ।

[iv] দ্রাব্যতা :- তড়িৎযোজী যৌগগুলি সাধারণত জৈব দ্রাবক, যেমন— অ্যালকোহল, বেঞ্জিন, ক্লোরোফর্ম ইত্যাদিতে দ্রবীভূত হয় না । এরা সাধারণত ধ্রুবীয় দ্রাবক জলে দ্রবীভূত হয় ।

[v] বন্ধনের অভিমুখ :- তড়িৎযোজী যৌগের একটি আয়ন তার বিপরীত তড়িৎগ্রস্থ আয়নগুলির দ্বারা চতুর্দিকে সুষমভাবে কুলম্বীয় বলের প্রভাবে আকর্ষিত হয়ে থাকে, তাই তড়িৎযোজী বন্ধনের কোনো নির্দিষ্ট অভিমুখ নেই । তড়িৎযোজী যৌগের কোনো সমাবয়বতা (isomerism) দেখা যায় না ।

[vi] রাসায়নিক বিক্রিয়ার প্রকৃতি :- তড়িৎ-যোজী যৌগগুলির বিক্রিয়া আয়নের মাধ্যমে ঘটে, তাই তড়িৎ-যোজী যৌগগুলির মধ্যে রাসায়নিক বিক্রিয়া দ্রুত গতিতে ঘটে ।

*****

Related Items

জৈব যৌগের গঠনগত সমাবয়বতা

একই আণবিক সংকেত বিশিষ্ট একাধিক যৌগে বিভিন্ন কার্যকরী মূলকের উপস্থিতির জন্য যে সমাবয়বতার সৃষ্টি হয়, তাকে কার্যকরী মূলক ঘটিত সমাবয়বতা বলে । এই দুটি যৌগে উপাদান হিসাবে C, H এবং O -এর ওজনের অনুপাত একই কিন্তু এরা ভিন্ন প্রকৃতির যৌগ । একটি হল অ্যালকোহল ...

জৈব যৌগগুলির প্রাথমিক শ্রেণিবিভাগ

কার্যকরী মূলকের ওপর ভিত্তি করে জৈব যৌগগুলিকে বিভিন্ন শ্রেণিতে ভাগ করা যায় । যথা - হাইড্রোকার্বন, অ্যালকোহল, অ্যালডিহাইড, কিটোন, কার্বক্সিলিক অ্যাসিড যৌগ । নীচে জৈব যৌগের কয়েকটি শ্রেণি এবং প্রতিটি শ্রেণির প্রথম তিনটি সদস্যের নাম ও গঠন দেওয়া হল ...

জৈব যৌগের কার্যকরী মূলক বা পরিচায়ক শ্রেণি

অসংখ্য জৈব যৌগকে, ওদের রাসায়নিক ধর্মের ওপর ভিত্তি করে কতকগুলি শ্রেণিতে ভাগ করা হয়েছে । দেখা যায় যে, এই রকম প্রতিটি শ্রেণিতে যৌগগুলির মধ্যে একটি বিশেষ মূলক বর্তমান থাকে । এই মুলকের উপস্থিতির জন্য ওই শ্রেণির সমস্ত যৌগের রাসায়নিক ধর্ম প্রায় একই রকম হয় ...

জৈব যৌগের বন্ধন প্রকৃতি

কর্বনের পারমাণবিক সংখ্যা 6, কার্বনের ইলেকট্রন বিন্যাস থেকে জানা যায় কার্বনের প্রথম কক্ষে 2টি এবং বাইরের কক্ষে 4টি ইলেকট্রন আছে । কার্বন পরমাণু বাইরের কক্ষের 4টি ইলেকট্রন, অন্য পরমাণুর বাইরের কক্ষের ইলেকট্রনের সঙ্গে চারটি ইলেকট্রন জোড় গঠন করে সমযোজ্যতা দ্বারা জৈব ...

জীবজ অণু (Biomolecules)

সজীব কোশে সংশ্লেষিত ক্ষুদ্র অণু ও বৃহদ অণুকে একত্রে জীবজ অণু বলা হয় । প্রায় সমস্ত জীবজ অণুই কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, নিউক্লীয়িক অ্যাসিড, লিপিড এই চারটি শ্রেণির কোনো একটির অন্তর্ভুক্ত । এগুলি কোশের জীবজ পলিমার । কার্বোহাইড্রেট সরল সুগারের ...