অ্যালকাইন (Alkyne)

Submitted by arpita pramanik on Mon, 04/22/2013 - 12:06

অ্যালকাইন (Alkyne) :

যে হাইড্রোকার্বনে এক বা একাধিক কার্বন-কার্বন ত্রি-বন্ধন ( — C ≡ C — ) থাকে, তাদের অ্যালকাইন বলে । এরা অসম্পৃক্ত জৈব যৌগ । এরা এক অণু হাইড্রোজেনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে প্রথমে অ্যালকিন এবং পরে আরও এক অণু হাইড্রোজেনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে অ্যালকেন অণু গঠন করে । এই শ্রেণির যৌগগুলির সাধারণ সংকেত CnH2n-2 , যেখানে n হল ধনাত্বক পূর্ণসংখ্যা । অ্যাসিটিলিন (C2H2) এদের প্রতিনিধিমূলক যৌগ । অ্যাসিটিলিনের আণবিক গুরুত্ব 26 । গঠন মূলক সংকেত হল H — C ≡ C —H । 1865 খ্রিস্টাব্দে বিজ্ঞানী এডমন্ড ডেভী অ্যাসিটিলিন (Acetylene) গ্যাস আবিষ্কার করেন । 

অ্যাসিটিলিন (Acetylene) :

রাসায়নিক সংকেত : C2H2

অ্যাসিটিলিনের উৎস (Source of Acetylene)

[i] সাধারণ উষ্ণতায় ক্যালশিয়াম কার্বাইডের (CaC2) সঙ্গে জলের বিক্রিয়ায় পরীক্ষাগারে অ্যাসিটিলিন (Acetylene) গ্যাস প্রস্তুত করা হয় । বিক্রিয়াটি হল : CaC2 + 2H2O = Ca(OH)2 + C2H2↑ ।

[ii] এই গ্যাসের অপর উৎস হল মিথেন । উচ্চ উষ্ণতায় মিথেন গ্যাসের আংশিক জারণ ঘটিয়ে ( তাপ বিভাজন বা Thermal cracking পদ্ধতিতে ) অ্যাসিটিলিন গ্যাস প্রস্তুত করা হয় । যথা- 2CH4 = C2H2 + 3H2

[iii] প্রকৃতিতে মুক্ত অবস্থায় অ্যাসিটিলিন পাওয়া যায় না । কোল গ্যাসে সামান্য পরিমাণ (প্রায় 0.01% ) অ্যাসিটিলিন থাকে ।

[iv] স্বাভাবিক বায়ুচাপে পেট্রোলিয়াম খনির প্রাকৃতিক গ্যাসকে (পেট্রোলিয়াম খনির প্রাকৃতিক গ্যাসের মধ্যে 85% মিথেন থাকে ) প্রায় 1500°C উষ্ণতায় উত্তপ্ত করে ঠান্ডা করলে মিথেন অ্যাসিটিলিনে পরিণত হয় । এভাবে বর্তমানে অ্যাসিটিলিনের পণ্য উৎপাদন করা হয় ।

অ্যাসিটিলিনের ব্যবহার (Uses of Acetylene) :

[i] অ্যাসিটিলিন, অক্সি-অ্যাসিটিলিন শিখা (তাপমাত্রা 3000°C -এর উর্ধে) সৃষ্টিতে যা ইস্পাত গলিয়ে জোড়া লাগাতে কিংবা অন্য ধাতু জোড়া লাগাতে ও কাটতে (ইলেকট্রিক ঝালাই বা ওয়েল্ডিং -এর কাজে) ব্যবহৃত হয় ।

[ii] কার্বাইড বাতিতে উজ্জ্বল আলোক সৃষ্টিতেও অ্যাসিটিলিন ব্যবহৃত হয় ।

[iii] অ্যাসিটিলিনকে ব্যবহার করে অ্যাসিট্যালডিহাইড, অ্যাসিটিক অ্যাসিড, ইথাইল অ্যালকোহল প্রভৃতি যৌগ তৈরি করা হয় ।

[iv] ওয়েসট্রন ও ওয়েসট্রসল প্রভৃতি অদাহ্য দ্রাবক (যারা তেল, চর্বি এবং রেজিনের দ্রাবক হিসাবে ব্যবহৃত হয়) অ্যাসিটিলিন থেকে উৎপন্ন করা হয় ।

[v] কৃত্রিম রবার, প্লাস্টিক, কৃত্রিম তন্তুর পণ্য উৎপাদনে প্রারম্ভিক পদার্থ অ্যাসিটিলিন ব্যবহৃত হয় ।

যুত বিক্রিয়া (Addition reaction) :- যুত বিক্রিয়া অ্যালকাইনসের একটি বৈশিষ্ট্যপূর্ণ বিক্রিয়া । অ্যাসিটিলিন এবং ইথিলিনের যুত বিক্রিয়া মূলত একই, শুধু প্রতি মোল অ্যাসিটিলিনের সঙ্গে তার দ্বিগুণ পরিমাণ বিকারক যুক্ত হতে পারে ।

[i] হাইড্রোজেনের (H2) সংযুক্তি (হাইড্রোজেনেশন) :- উত্তপ্ত নিকেল, প্লাটিনাম এবং প্যালডিয়াম প্রভৃতি অনুঘটকের উপস্থিতিতে অ্যাসিটিলিন হাইড্রোজেন গ্রহণ করে প্রথম ধাপে ইথিলিনে এবং পরবর্তী ধাপে ইথেনে পরিণত হয় ।

অ্যাসিটিলিনের আংশিক হাইড্রোজেনেশন করে ইথিলিনে রূপান্তরিত করা হয় । লেড অ্যাসিটেট দ্বারা অংশত নিষ্ক্রিয় করা CaCO3 -এর ওপর বিধৃত প্যালডিয়ামের সূক্ষ্ম চূর্ণ অনুঘটককে লিন্ডলার অনুঘটক বলে । লিন্ডলার অনুঘটকের উপস্থিতিতে অ্যাসিটিলিনের হাইড্রোজেনেশন বিক্রিয়া ইথিলিন পর্যায়ে সীমাবদ্ধ রাখা যায় ।

[ii] ব্রোমিনের (Br2) সঙ্গে যুত বিক্রিয়া (Addition reaction with bromine) :- অ্যাসিটিলিনের সঙ্গে গ্যাসীয় ব্রোমিন বা দ্রাবকের অনুপস্থিতিতে তরল ব্রোমিনের বিক্রিয়ায় অ্যাসিটিলিন 2-অণু ব্রোমিন গ্রহণ করে অ্যাসিটিলিন টেট্রাব্রোমাইড উৎপন্ন করে । এই বিক্রিয়ায় ব্রোমিনের লাল রং বর্ণহীন হয়ে যায় ।

HC ≡ CH + 2Br2  → Br2CHCHBr2

*****

Related Items

অ্যাভোগাড্রোর সূত্রের অনুসিদ্ধান্ত

অ্যাভোগাড্রোর সূত্র থেকে নিম্নলিখিত অনুসিদ্ধান্তগুলি পাওয়া যায়— নিষ্ক্রিয় গ্যাসগুলি ছাড়া অন্যান্য মৌলিক গ্যাসগুলি (যেমন— হাইড্রোজেন, অক্সিজেন, নাইট্রোজেন ইত্যাদি) দ্বি-পরমাণুক । কোনো গ্যাসের আণবিক ভর [M] গ্যাসটির বাষ্প ঘনত্বের [D] দ্বিগুণ অর্থাৎ, M = 2D ।

আণবিক ভর ও গ্রাম-পারমাণবিক ভর

আণবিক ভর ও গ্রাম-পারমাণবিক ভর :

আণবিক ভর (Molecular mass) :

কোনো মৌল বা যৌগের একটি অণু একটি কার্বন -12 (C12) পরমাণুর ভরের 1/12 অংশের তুলনায় যতগুণ ভারী, সেই তুলনামূলক সংখ্যাটিকে ওই মৌল বা যৌগের আণবিক ভর বলে

অ্যাভোগাড্রোর প্রকল্প

একই চাপ ও উষ্ণতায় সম-আয়তন সকল গ্যাসের মধ্যে সমান সংখ্যক অণু থাকে । বার্জিলিয়াসের প্রকল্প সংশোধন করে অ্যাভোগাড্রো এই প্রকল্পটি প্রকাশ করেন । এটি অ্যাভোগাড্রোর প্রকল্প নামে খ্যাত । অ্যাভোগাড্রোর সূত্রের সাহায্যে গ্যাস-আয়তন সূত্র এবং পরমাণুবাদের মধ্যে সমন্বয় ...

অণুর ধারণা ও প্রকারভেদ

বিজ্ঞানী ডালটনের পরমাণুবাদের মূল কথা হল— প্রত্যেক মৌলিক পদার্থ বহু সংখ্যক অতি ক্ষুদ্র অবিভাজ্য কণা দিয়ে গঠিত । এই ক্ষুদ্রতম কণাগুলির নাম হল পরমাণু । রাসায়নিক বিক্রিয়ায় বিভিন্ন মৌলিক পদার্থের পরমাণুগুলি পূর্ণ সংখ্যার সরল অনুপাতে যুক্ত হয়ে যৌগ গঠন করে । ...

গাণিতিক প্রশ্নোত্তর : গ্যাসের ধর্ম

গ্যাসের ধর্ম সম্পর্কিত গাণিতিক উদাহরণ । বিভিন্ন বোর্ডের পরীক্ষায় আগত প্রশ্নপত্র এবং বিভিন্ন কম্পিটিটিভ এক্সাম এ আগত গাণিতিক প্রশ্নের সমাধান আলোচনা করা হলো । ...