অ্যাভোগাড্রোর প্রকল্প

Submitted by arpita pramanik on Fri, 01/11/2013 - 23:36

অ্যাভোগাড্রোর প্রকল্প (Avogadro's Hypothesis) :

একই চাপ ও উষ্ণতায় সম-আয়তন সকল গ্যাসের মধ্যে সমান সংখ্যক অণু থাকে ।

ব্যাখ্যা : অ্যাভোগাড্রোর প্রকল্প অনুযায়ী একই চাপ ও উষ্ণতায় 1 cc অক্সিজেনের (O2) মধ্যে যদি n -সংখ্যক অণু থাকে, তবে 1 cc কার্বন ডাই-অক্সাইডের (CO2) মধ্যে বা 1 cc অ্যামোনিয়ার (NH3) মধ্যেও সেই একই n -সংখ্যক অণু থাকবে ।

বার্জিলিয়াসের প্রকল্প (একই চাপ ও উষ্ণতায় সম-আয়তন সকল গ্যাসের মধ্যে সমান সংখ্যক পরমাণু থাকে) সংশোধন করে অ্যাভোগাড্রো এই প্রকল্পটি প্রকাশ করেন । এটি অ্যাভোগাড্রোর প্রকল্প নামে খ্যাত ।

অ্যাভোগাড্রোর প্রকল্পকে সূত্র না বলে প্রকল্প বলে কেন ?

অ্যাভোগাড্রোর  প্রকল্পকে সূত্র না বলে প্রকল্প  বলা হয় । পরীক্ষার সাহায্যে প্রত্যক্ষভাবে কোনো বৈজ্ঞানিক মতবাদ প্রমাণিত হলে তাকে সূত্র বলে । না হলে তাকে প্রকল্প বলে । অ্যাভোগাড্রোর মতবাদটি পরীক্ষার সাহায্যে প্রমাণিত হয় নি তাই মতবাদকে সূত্র না বলে প্রকল্প বলে ।

অ্যাভোগাড্রোর সূত্রের সাহায্যে গ্যাস-আয়তন সূত্র এবং পরমাণুবাদের মধ্যে সমন্বয় ( Reconciliation of law gaseous volume and Dalton's atomic theory by Avogadro's law) :

পরীক্ষায় দেখা যায় যে, একই চাপ ও উষ্ণতায় 1 আয়তন হাইড্রোজেন এবং 1 আয়তন ক্লোরিনের রাসায়নিক সংযোগে 2 আয়তন হাইড্রোজেন ক্লোরাইড গ্যাস উৎপন্ন হয় ।

মনে করা যাক, পরীক্ষার সময় একই চাপ ও উষ্ণতায়, 1 আয়তন হাইড্রোজেন গ্যাসের মধ্যে n -সংখ্যক হাইড্রোজেন অণু থাকে । তাহলে অ্যাভোগাড্রোর সূত্র অনুযায়ী একই চাপ ও উষ্ণতায় 1 আয়তন ক্লোরিনের মধ্যে n -সংখ্যক ক্লোরিন অণু এবং 2 আয়তন হাইড্রোজেন ক্লোরাইডের মধ্যে 2n -সংখ্যক হাইড্রোজেন ক্লোরাইড অণু থাকবে । কাজেই অণুর সংখ্যা দিয়ে বিক্রিয়াটি প্রকাশ করলে বলা যায়,

n সংখ্যক হাইড্রোজেন অণু + n সংখ্যক ক্লোরিন অণু = 2n সংখ্যক হাইড্রোজেন ক্লোরাইড অণু

বা 1টি হাইড্রোজেন অণু + 1টি ক্লোরিন অণু = 2টি হাইড্রোজেন ক্লোরাইড অণু

বা ½ অণু হাইড্রোজেন + ½ অণু ক্লোরিন = 1 অণু হাইড্রোজেন ক্লোরাইড ।

যেহেতু অ্যাভোগাড্রোর সূত্র অনুসারে 1 অণু হাইড্রোজেন = 2 পরামাণু হাইড্রোজেন এবং 1 অণু ক্লোরিন = 2 পরামাণু ক্লোরিন । তাই লেখা যায়—

1 পরমাণু হাইড্রোজেন + 1 পরামাণু ক্লোরিন = 1 অণু হাইড্রোজেন ক্লোরাইড অর্থাৎ 1 অণু হাইড্রোজেন ক্লোরাইড তৈরি হয় 1টি হাইড্রোজেন পরমাণু এবং 1টি ক্লোরিন পরমাণুর সংযোগে । এটি পরমাণুবাদের বিরুদ্ধে নয়, কারণ পরমাণু অবিভাজ্য কিন্তু অণু বিভাজ্য । এই বিক্রিয়ায় গে-লুকাসের গ্যাস আয়তন সূত্র (একই উষ্ণতা ও চাপে বিভিন্ন গ্যাসগুলি আয়তনের পূর্ণ সংখ্যার সরল অনুপাতে রাসায়নিকভাবে মিলিত হয়) অনুযায়ী, একই উষ্ণতা ও চাপে বিক্রিয়ক এবং বিক্রিয়াজাত গ্যাসগুলির আয়তনের অনুপাত H2 : Cl2 : HCl = 1 : 1 : 2, এটি হল পূর্ণ সংখ্যার সরল অনুপাত ।

*****

Related Items

মেথিলেটেড স্পিরিট

95% ইথাইল অ্যালকোহলের জলীয় দ্রবণকে রেকটিফায়েড স্পিরিট বলে । রেকটিফায়েড স্পিরিটকে পানের অযোগ্য করার জন্য রেকটিফায়েড স্পিরিটের সঙ্গে মিথাইল অ্যালকোহল (10%), সামান্য পিরিডিন (0.5%), ন্যাপথা এবং রবার নির্যাস কাওকোসিন মিশিয়ে বিষাক্ত করে দেওয়া হয় । ...

সাবান (Soap)

সাবান হল উচ্চ আণবিক ওজন বিশিষ্ট জৈব ফ্যাটি অ্যাসিড -এর সোডিয়াম বা পটাশিয়াম লবণ । একাধিক জৈব অ্যাসিডের লবণ হওয়ায় সাবানের নির্দিষ্ট কোনো সংকেত নেই । সাবান একটি মিশ্র লবণ । সাধারণ উষ্ণতায় সাবান অনুদ্বায়ী কঠিন পদার্থ ও জলে দ্রাব্য । ...

ইউরিয়া বা কার্বাইড (Urea)

ইউরিয়া নাইট্রোজেন ঘটিত একটি সার । 1828 খ্রিস্টাব্দে জার্মান বিজ্ঞানী ফ্রেডরিক ভোলার অজৈব যৌগ অ্যামোনিয়াম সায়ানেট -কে উত্তপ্ত করে ইউরিয়া প্রস্তুত করেন । ইউরিয়া সাদা, গন্ধহীন, অনুদ্বায়ী, কেলাসাকার কঠিন জৈব পদার্থ।এটি জলে দ্রাব্য । মানবদেহের এবং প্রাণীদেহের ...

অ্যামোনিয়াম সালফেট

অ্যামোনিয়াম সালফেট হল একটি নাইট্রোজেন ঘটিত অজৈব রাসায়নিক সার। অ্যামোনিয়াম সালফেট সাদা রঙের, গন্ধহীন, অনুদ্বায়ী একটি অজৈব কেলাসিত লবণ । অ্যামোনিয়াম সালফেট জলে দ্রাব্য ও এর জলীয় দ্রবণ অম্লধর্মী । অ্যামোনিয়াম সালফেট তাপে ঊর্ধ্ব পাতিত হয় ...

কপার সালফেট বা ব্লু-ভিট্রিয়ল

কেলাস-জলযুক্ত কিউপ্রিক সালফেটকে ব্লু-ভিট্রিয়ল বলে। ব্লু-ভিট্রিয়ল সাধারণভাবে তুঁতে নাম পরিচিত । কপার সালফেট বা ব্লু-ভিট্রিয়ল গন্ধহীন, অনুদ্বায়ী ও গাঢ় নীলবর্ণের কেলাসিত অজৈব কঠিন পদার্থ। এটি একটি শমিত লবণ । জলে দ্রাব্য এবং জলীয় দ্রবণ তড়িৎ পরিবহন করে। ...