প্রশ্ন:- "ওই ভাঙ্গা গড়া খেলা যে তার কিসের তবে ডর ?" — কবির মন্তব্যটি কোন ইঙ্গিতবাহী ?
উত্তর:- উদ্ধৃতাংশটি কবি নজরুল ইসলামের "প্রলয়োল্লাস" কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে । 'প্রলয়োল্লাস' আসলে কবির জীবন উল্লাসের কবিতা । এই কবিতায় কবি চির বিদ্রোহী নবযৌবনের বন্দনা করেছেন । ভারতবর্ষকে পরাধীনতার নাগপাশ থেকে মুক্ত করে আনতে পারে একমাত্র নবযৌবনের অগ্রদূতেরা, অর্থাৎ নবীনেরা ।
ব্রিটিশ শাসিত ভারতবর্ষে নিপীড়িত, নির্যাতিত, শোষিত মানুষদের ব্যথা-বদনা দেখে কবি খুবই মর্মাহত হয়েছিলেন । এই সাম্রাজ্যবাদী শাসকের হাত থেকে ভারতবর্ষকে মুক্ত করতে হলে প্রয়োজন গণ আন্দোলনের, প্রয়োজন নির্ভীক মৃত্যুভয়হীন তরুণ বিপ্লবীদের । জীবনে যা কিছু মন্দ, অন্যায়, অসুন্দর, মঙ্গলহীন, অহিতকর তা একমাত্র তরুণ প্রাণের অধিকারী তেজোদীপ্ত নবীনরাই দূর করতে পারে । কারণ তারা যে স্বার্থহীন সত্যশিব মঙ্গলের পূজারী । শিব যেমন একদিকে রুদ্ররূপী ধ্বংসের দেবতা, তেমনি সৃষ্টির দেবতা । তিনি একহতে ভাঙেন আর এক হাতে গড়েন । ধ্বংসের মধ্য দিয়েই সৃষ্টির সূচনা হয় । তাই কবি তরুণদের হাতে সমাজ গড়ার ভার তুলে দিতে চেয়েছেন । নবীনদের উজ্জীবিত করতে বলেছেন—
"প্রলয় বয়েও আসছে হেসে
মধুর হেসে ।
ভেঙে আবার গড়তে জানে সে চিরসুন্দর ।"
কবি নবীনদের চিরসুন্দর বলেছেন । এদের হাত ধরেই নবসৃষ্টি অর্থাৎ নতুন ভারতবর্ষের সূচনা হবে । তাই কবি দেশের মানুষকে এদেরকে জয়ধ্বনি দিতে বলেছেন ।
****