হেস্টিংসের ভূমিরাজস্ব ব্যবস্থা

Submitted by avimanyu pramanik on Sun, 04/22/2012 - 10:27

হেস্টিংসের ভূমিরাজস্ব ব্যবস্থা (Land-Revenue Reforms of Warren Hastings)

ভারতে রাজনৈতিক আধিপত্য বিস্তারের জন্য ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিকে প্রায়ই যুদ্ধ বিগ্রহে লিপ্ত থাকতে হত । আর এই যুদ্ধবিগ্রহের ব্যয়ভার বহন করার জন্য তারা রাজত্বের সূচনা থেকেই বাড়তি রাজস্ব সংগ্রহের দিকে মনোনিবেশ করে । কোম্পানি তার দুর্নীতিগ্রস্থ কর্মচারীদের ছেঁটে ফেলার জন্য ১৭৭০ খ্রিস্টাব্দে জুলাই মাসে পাটনা এবং মুর্শিদাবাদে নিয়ন্ত্রণ পরিষদ নাম একটি কমিটি গড়ে তোলেন । এই সময় ওয়ারেন হেস্টিংসকে বাংলার গভর্নর করে পাঠানো হয় । তিনি গভর্নর হয়ে এদেশে এসে সর্বপ্রথম কোম্পানি নিযুক্ত দুই রাজস্ব আদায়কারী অত্যাচারী রেজা খাঁ ও সিতাব রায়কে পদচ্যুত করেন ও  রাজস্ব আদায়ের ভার কালেক্টর নামক এক শ্রেণীর কর্মচারীর হাতে অর্পণ করেন । রাজস্ব আদায় সংক্রান্ত ব্যবস্থা দেখাশুনা করার জন্য বোর্ড অফ রেভিনিউ বা রাজস্ব সমিতি গঠন করা হয় । ওয়ারেন হেস্টিংস রাজস্বের পরিমাণ নির্ধারণ ও সর্বাধিক রাজস্ব আদায়ের জন্য বোর্ডের অধীনে একটি ভ্রাম্যমাণ কমিটি গঠন করেন । এই কমিটি জেলায় জেলায় ঘুরে জমি নিলামে ডেকে সর্বোচ্চ মূল্যদাতাকে পাঁচ বছরের জন্য জমি ইজারা দিতেন । একে পাঁচশালা বন্দোবস্ত বলা হত । জমিদারি নিলামে ডাকার ফলে প্রজাদের উপর জমিদারদের অত্যাচার ছিল অপরিসীম । অনেক সময় প্রকৃত জমিদারদের পরিবর্তে দালালরা অধিক দর দিয়ে জমিদারি নিলামে ডেকে নিতেন ও পরে দেয় রাজস্ব পরিশোধ করতেন না । ফলে সরকারি কোষাগারে তেমন আয় হত না । অগত্যা হেস্টিংস পাঁচশালা বন্দোবস্তের পরিবর্তে একশালা বন্দোবস্ত চালু করেন । এতেও সরকারের আশানুরূপ রাজস্ব আদায় হত না । কারণ বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এক বছরের ইজারার শেষে জমিদাররা সরকারি রাজস্ব শোধ না করে জমিজমা ছেড়ে পালাতেন । এই অবস্থার অবসানকল্পে কাউন্সিলের জনৈক সদস্য স্যার ফিলিপ ফ্রান্সিস হেস্টিংসকে সর্বপ্রথম জমিতে জমিদারদের স্থায়ী ভোগদখলের স্বীকৃতি দিয়ে চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের প্রস্তাব দেন । হেস্টিংস এই ব্যবস্থার পক্ষপাতী থাকলেও তাঁর আমলে এই ব্যবস্থা বাস্তবায়িত হয় নি । তাঁর পরবর্তী বড়লাট লর্ড কর্ণওয়ালিশ ভারতে এসে জমিদারদের জমির মালিকানা দিয়ে জমির চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত ঠিক করেন ও এই প্রস্তাব ইংল্যান্ডে কোম্পানির পরিচালক সমিতি এবং প্রধানমন্ত্রী পিট-র অনুমোদন লাভ করে । কর্ণওয়ালিশ প্রথম দশ বছরের জন্য জমিদারদের জমির মালিকানা দিয়েছিলেন । তিনি এর নাম দেন দশশালা বন্দোবস্ত । ১৭৯৩ খ্রিস্টাব্দে এই ব্যবস্থাকেই তিনি চিরস্থায়ী বন্দোবস্তে রূপান্তরিত করেন । এই ব্যবস্থা অনুযায়ী জমিদার বাংশানুক্রমে জমির স্বত্ব ভোগ করবেন এবং তাঁকে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নির্দিষ্ট পরিমাণ রাজস্ব কোম্পানির কোষাগারে জমা দিতে হবে । নির্দিষ্ট দিনে সূর্যাস্তকালের মধ্যে খাজনা জমা দিতে না পারলে জমিদার জমির অধিকার থেকে বঞ্চিত হবেন । বছরের নির্দিষ্ট দিনে সূর্যাস্তের পূর্বে রাজস্ব পরিশোধ করতে হত বলে একে সূর্যাস্ত আইন ও বলা হয় ।

*****

Related Items

বহু বিকল্পীয় প্রশ্নোত্তর (M.C.Q) - প্রতিরোধ ও বিদ্রোহ

বহু বিকল্পীয় প্রশ্নোত্তর (M.C.Q) - প্রতিরোধ ও বিদ্রোহ:-

মাধ্যমিকের নমুনা প্রশ্ন:-

১. সুই মুন্ডা নেতৃত্ব দিয়েছিলেন—                [মাধ্যমিক-২০১৭]       

বহু বিকল্পীয় প্রশ্নোত্তর (M.C.Q) - সংস্কার : বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা

বহু বিকল্পীয় প্রশ্নোত্তর (M.C.Q) - সংস্কার : বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা:-

মাধ্যমিকের নমুনা প্রশ্ন :-

১.  'বামাবোধিনী' পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন—          [মাধ্যমিক- ২০১৭]

ভাষার ভিত্তিতে ভারতে রাজ্য পুনর্গঠনের উদ্যোগ ও বিতর্ক

ভাষার ভিত্তিতে ভারতে রাজ্য পুনর্গঠনের উদ্যোগ ও বিতর্ক (Initiatives Undertaken and Controversies Related to Linguistic Reorganization of States):-

১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ১৫ই আগস্ট অবিভক্ত ভারত দ্বিখণ্ডিত হয়ে স্বাধীনতা লাভ করে । স্বাধীনতা লাভের পর ন

আত্মজীবনী ও স্মৃতিকথায় দেশভাগ

আত্মজীবনী ও স্মৃতিকথায় দেশভাগ :-

১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের 'ভারতের স্বাধীনতা আইন' অনুযায়ী ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ১৫ই আগস্ট অবিভক্ত ভারত দ্বিখণ্ডিত হয়ে স্বাধীনতা লাভ করে এবং ভারত ও পাকিস্তান নাম দুটি পৃথক স্বাধীন রাষ্ট্রের সৃষ্টি হয় । মুসলিম অধ্যুষিত অঞ্চ

১৯৪৭-পরবর্তী উদ্বাস্তু সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ ও বিতর্ক

১৯৪৭-পরবর্তী উদ্বাস্তু সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ ও বিতর্ক (Initiative Undertaken and Controversies Related to the Refugee Problem in Post-1947 India) :-

১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে পাস হওয়া 'ভারতের স্বাধীনতা আইন' অনুসারে ১৯৪৭ খ্রিস্টাব