সম্পদ নির্গমন বলতে কী বোঝ ? বাংলার চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত ব্যবস্থার সুফলগুলি কী ছিল ?

Submitted by avimanyu pramanik on Fri, 01/07/2022 - 08:08

প্রশ্ন:-  সম্পদ নির্গমন বলতে কী বোঝ ? বাংলার চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত ব্যবস্থার সুফলগুলি কী ছিল ?

পলাশির যুদ্ধে ইংরেজদের জয়লাভের পর গোটা অষ্টাদশ শতক ধরে বাংলা থেকে বিপুল পরিমাণে অর্থ ও সম্পদ ইংল্যান্ডে চলে যায়, যার বিনিময়ে বাংলা তথা ভারতেকে কোনো সুবিধা দেওয়া হয়নি । এই ঘটনাকে অনেক ঐতিহাসিক ও অর্থনীতিবিদ সম্পদ নির্গমন বা আর্থিক নিষ্ক্রমণ বলে অভিহিত করেছেন । এই ঘটনা পলাশি লুন্ঠন (Plassey plunder) নামেও পরিচিত । দুভাবে ভারত থেকে সম্পদ নির্গমন হয়েছিল, যেমন—

(i) নিজস্ব বাণিজ্য ও রাজস্ব নীতির মাধ্যমে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বাংলার অর্থ ও সম্পদ ইংল্যান্ডে নিয়ে যেত ।

(২) এই সময় ব্যাক্তিগত ব্যাবসাবাণিজ্য, নানাবিধ উপঢৌকন ও পুরস্কার লাভের মধ্য দিয়ে কোম্পানির কর্মচারীরা প্রচুর অর্থ উপার্জন করে পরে তা ইংল্যান্ডে পাঠিয়ে দিত । লর্ড ক্লাইভ ছিলেন এই কাজের পথপ্রদর্শক । এইভাবে ভারত থেকে সম্পদের নির্গমন হয়েছিল ।

চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের সুফল : বাংলার চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত চালু করেন লর্ড কর্নওয়ালিস । চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের সুফলগুলির মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল এই যে, এই ব্যবস্থার ফলে এতদিন পর্যন্ত কোম্পানির রাজস্ব সম্পর্কে যে অনিশ্চয়তা ছিল তার অবসান হয় । কোম্পানি তার স্থায়ী আয় সম্পর্কে সুনিশ্চিত হয় । এছাড়া চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের ফলে সংগৃহীত অর্থ থেকে কোম্পানি তার বাণিজ্যিক বিনিয়োগের মূলধন সংগ্রহ করতে সক্ষম হয় । চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের এইসব সুফল লক্ষ করেই ঐতিহাসিক মার্শম্যান বলেছেন ‘It was a bold, brave and wise measure’ ।

(১) সামগ্রিকভাবে চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের ফলে ভারতে রাজকীয় অনুগ্রহপুষ্ট একটি নতুন অভিজাত শ্রেণি গড়ে ওঠে যারা সরকারের প্রধান সমর্থক ছিলেন । এদের সহযোগিতায় ভারতে ব্রিটিশ শাসনের স্থায়িত্ব ও বিস্তার ঘটতে থাকে ।

(২) কৃষির উন্নতি ঘটে, ফলে জমি থেকে সরকারের রাজস্ব আদায় বাবদ আয় ক্রমশ বাড়তে থাকে ।

(৩) স্থায়ীভাবে জমিদারি লাভ করার ফল হিসাবে জমিদাররা নানান সংস্কারমূলক কাজে মনোযোগী হয়ে ওঠেন ।

(৪) দেশের কৃষিযোগ্য আবাদি জমির পরিমাণ বৃদ্ধি পায় এবং জনসংখ্যা বৃদ্ধি পায় ।

*****

Comments

Related Items

কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ এবং চিকিৎসাবিদ্যা চর্চার বিকাশ

কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ এবং চিকিৎসাবিদ্যা চর্চার বিকাশ:-

ঊনিশ শতকের সূচনালগ্নে ভারতে প্রাচীন দেশীয় চিকিৎসা-ব্যবস্থা প্রচলিত ছিল । পরবর্তীকালে ভারতের গভর্নর জেনারেল লর্ড উইলিয়াম বেন্টিঙ্ক দেশীয় চিকিৎসা-শাস্ত্রে শিক্ষাদানের পরিবর্তে আধু

পাশ্চাত্য শিক্ষাবিস্তারে ডেভিড হেয়ার ও জন এলিয়ট ড্রিঙ্কওয়াটার বিটন -এর ভূমিকা

উনিশ শতকে যে সব মানুষ বাংলায় পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিলেন তাঁদের মধ্যে অন্যতম হলেন ডেভিড হেয়ার । ১৭৭৫ খ্রিস্টাব্দে তিনি স্কটল্যান্ডে জন্মগ্রহণ করেন । ১৮০০ খ্রিস্টাব্দে কলকাতায় এসে ঘড়ির ব্যবসা করে প্রচুর অর্থ উপার্জন করেন । ঔ

পাশ্চাত্য শিক্ষাবিস্তারে রাজা রামমোহন রায় ও রাজা রাধাকান্ত দেব -এর ভূমিকা

ঊনিশ শতকে বাংলায় আধুনিক পাশ্চাত্যশিক্ষার প্রসারে রাজা রামমোহন রায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেন । রাজা রামমোহন রায় মনে করতেন আধুনিক পাশ্চাত্য শিক্ষার ওপর ভিত্তি করেই নতুন ভারত গড়ে উঠবে । তিনি নিজের খরচে ১৮১৫ খ্রিস্টাব্দে কলকাতায় 'ইন্ডিয়ান অ্যাকাডেমি' নামে

নারীশিক্ষা ও ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর

ঊনিশ শতকের সূচনালগ্ন পর্যন্ত নানা রকম সামাজিক বিধিনিষেধের ফলে বাংলায় নারীশিক্ষার বিশেষ প্রসার ঘটেনি । এরপর থেকে উনিশ শতকে ভারতে নারীশিক্ষা প্রসারের উদ্দেশ্যে কিছু সমষ্টিগত ও ব্যক্তিগত উদ্যোগ শুরু হয় । সমষ্টিগত উদ্যোগে নব্যবঙ্গীয় গোষ্ঠী, খ্রিস্টান মিশনারি এবং ব্রাহ্মসমা

ভারতে ইংরেজি শিক্ষার প্রসার

অষ্টাদশ শতকের শেষভাগে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ভারতে ব্রিটিশ শাসন প্রতিষ্ঠা করলেও প্রথমদিকে তারা এদেশে ইংরেজি ও পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারের কোনো উদ্যোগ নেয়নি । ভারতে ব্রিটিশ শাসন প্রতিষ্ঠিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ইংরেজদের আইন-আদালত গড়ে উঠতে শুরু করে । ইংরেজ বণিকরা নানা জায়গায