শিল্পচর্চার ইতিহাস (History of Arts & Culture)

Submitted by avimanyu pramanik on Tue, 09/22/2020 - 09:10

শিল্পচর্চার ইতিহাস :  কোনো মানবগোষ্ঠির শিল্পচর্চার ইতিহাস থেকে তার সাংস্কৃতিক অগ্রগতির আভাস পাওয়া যায় । এই শিল্পচর্চার প্রধান ধারাগুলি হল সঙ্গীত, নৃত্য, নাটক, চলচ্চিত্র প্রভৃতি । ১৯৮০ -র দশক থেকে সাংস্কৃতিক বিদ্যাচর্চার প্রবণতা ইতিহাসচর্চাকে বিশেষভাবে প্রভাবিত করতে শুরু করে । নৃতত্ত্ব, লিঙ্গবিষয়ক চর্চা, উত্তর-ঔপনিবেশিক সমাজ-সংস্কৃতির বৈশিষ্ট্য ও বিশ্লেষণ, এসবের প্রভাবে শিল্প-সংস্কৃতির ইতিহাসচর্চায় একধরনের বিশিষ্টতা লক্ষ করা যেতে থাকে । জাতীয়তাবাদ, ঔপনিবেশবাদ, আন্তর্জাতিকতা, বিশ্বায়ন, উত্তর-আধুনিকতা বিভিন্ন তত্ত্বের বিশ্লেষণের মাধ্যামে শিল্প-সংস্কৃতির ইতিহাসচর্চার প্রসার ঘটে । এর প্রভাবে সাহিত্য, নাটক, চলচ্চিত্র প্রভৃতি বিষয়গুলি স্পষ্টতর হয়ে উঠে । অতীতের শিল্পের স্বরূপ উন্মোচনের লক্ষ্যে শুরু হয় শিল্পের ইতিহাসচর্চা । সাহিত্য, নাটক, সংগীত, নৃত্য, চলচ্চিত্র ইত্যাদি সৃজনশীল কলাবিদ্যার ওপর আলাদা আলাদাভাবে চর্চা শুরু হয় । শিল্পচর্চার ইতিহাস শিল্পকীর্তির গুণগত বিবর্তনের ধারণা দেয় । শিল্পচর্চা শিল্পীর শিল্পপ্রতিভার বা পারদর্শিতার পরিচয়ও দান করে । শিল্পচর্চার ইতিহাসে একটি সভ্যতা বা জাতির উন্নত সংস্কৃতির পরিচয় লুকিয়ে থাকে । লক্ষ্মী সুব্রহ্মনিয়াম তাঁর  কাজে মাধ্যমে সঙ্গীতের সঙ্গে সামাজিক বিবর্তনকে স্পষ্ট করে দেখিয়েছেন । রজতকান্ত রায় রচিত 'এক্সপ্লোরিং ইমোশানাল হিস্ট্রি', মীনাক্ষী মুখার্জির লেখা 'রিয়্যালিজম অ্যান্ড রিয়ালিটি : দ্য নভেল অ্যান্ড সোসাইটি ইন ইন্ডিয়া', কপিলা বাৎসায়ন রচিত 'ভারতের নাট্য ঐতিহ্য', ব্রজেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় -এর 'বঙ্গীয় নাট্যশালার ইতিহাস', শঙ্কর ভট্টাচার্যের 'বাংলা রঙ্গালয়ের ইতিহাসের উপাদান', সত্যজিৎ রায় রচিত 'আওয়ার ফিল্ম, দেয়ার ফিল্ম' ইত্যাদি গ্রন্থগুলি সামগ্রিকভাবে ইতিহাসের প্রেক্ষাপটে শিল্পচর্চার ক্ষেত্রে বিশেষ উল্লেখ্য । শিল্পের ইতিহাসচর্চার গুরুত্ব হল তৎকালীন সমাজভাবনা ও অতীত ইতিহাস এতে প্রতিফলিত হয় ।  দেখা যায় ব্রিটিশ সরকার নাটকের মধ্য দিয়ে জাতীয়তাবাদের প্রসারের প্রভাবে ভীত হয়ে ১৮৭৬ খ্রিস্টাব্দের ১৪ই মার্চ নাট্যাভিনয় নিয়ন্ত্রণ আইন জারি করে । লালনের গানের প্রভাব পড়ে রবীন্দ্রনাথের গানে, আবার লোকসঙ্গীতের প্রভাব দেখা যায় আধুনিক বাংলা ব্যান্ডের গানে । চলচ্চিত্রের মতো দৃশ্যশ্রাব্য মাধ্যম ধরে রাখে সমাজের চালচিত্র । উপাদানরূপে চলচ্চিত্রের গুরুত্ব আগেই স্বীকৃতি পেয়েছে । এভাবে সংস্কৃতির যে চলাচল তার গবেষণা শিল্পচর্চার ইতিহাসে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ।

****

Comments

Related Items

শ্রীরামপুর মিশন প্রেস কিভাবে একটি অগ্রনী মুদ্রণ প্রতিষ্ঠানে পরিণত হল ?

প্রশ্ন : শ্রীরামপুর মিশন প্রেস কিভাবে একটি অগ্রনী মুদ্রণ প্রতিষ্ঠানে পরিণত হল ?

উঃ- ১৮০০ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৮৩৭ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ৩৮ বছর বাংলা মুদ্রণ ও প্রকাশনায় শ্রীরামপুর মিশনের অবদান খুবই গুরুত্বপূর্ণ ।

বাংলায় মুদ্রণ শিল্পের বিকাশে গঙ্গাকিশোর ভট্টাচার্যের কীরূপ অবদান ছিল ?

প্রশ্ন : বাংলায় মুদ্রণ শিল্পের বিকাশে গঙ্গাকিশোর ভট্টাচার্যের কীরূপ অবদান ছিল ?

১৮৫৭ -এর মহাবিদ্রোহকে কি সামন্ত-শ্রেণির বিদ্রোহ বলা যায় ?

প্রশ্ন : ১৮৫৭ -এর মহাবিদ্রোহকে কি সামন্ত-শ্রেণির বিদ্রোহ বলা যায় ?

উঃ- ১৮৫৭ সালের মহাবিদ্রোহের সময় থেকেই এই বিদ্রোহের চরিত্র বা প্রকৃতি নিয়ে বিভিন্ন ধারার ইতিহাসচর্চার নানা ধরনের গবেষণালব্দ মতামত পাওয়া যায় ।

কী উদ্দেশ্যে ঔপনিবেশিক সরকার অরণ্য আইন প্রণয়ন করেন ?

প্রশ্ন : কী উদ্দেশ্যে ঔপনিবেশিক সরকার অরণ্য আইন প্রণয়ন করেন ?

এদেশের চিকিৎসাবিদ্যার ক্ষেত্রে কলিকাতা মেডিকেল কলেজের কীরূপ ভূমিকা ছিল ?

প্রশ্ন : এদেশের চিকিৎসাবিদ্যার ক্ষেত্রে কলিকাতা মেডিকেল কলেজের কীরূপ ভূমিকা ছিল ?