Submitted by avimanyu pramanik on Sun, 04/22/2012 - 18:25

রংপুর বিদ্রোহ

রংপুর বিদ্রোহ : ভূমিরাজস্ব ব্যবস্থার ত্রুটি, সুদখোর মহাজনদের নির্লজ্জ শোষণ, ঔপনিবেশিক শোষণ এবং কৃষক ও উপজাতিদের ওপর দমন নীতি ইত্যাদির কারণে ও এর প্রতিবাদে বিভিন্ন সময়ে কৃষক, শ্রমিক, তাঁতি, কারিগর, জেলে, মুচি, মেথর, ব্যবসায়ী, শিল্পী, ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ বিচ্ছিন্ন ভাবে হলেও সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে ব্রিটিশ বিরোধী সংগ্রামে সামিল হয়েছিল । এইসব বিদ্রোহগুলির মধ্যে রংপুর বিদ্রোহ ছিল অন্যতম । ১৭৮৩ খ্রিস্টাব্দে কোম্পানির ইজারাদার দেবী সিংহের অত্যাচারের বিরুদ্ধে রংপুরের কৃষকদের বীরত্বপূর্ণ সংগ্রাম রংপুর বিদ্রোহ নামে পরিচিত ।

পশ্চিম ভারতের পানিপথের কাছে এক গ্রামের বৈশ্য সম্প্রদায়ের অন্তর্গত ব্যবসায়ী ছিলেন দেবী সিংহ । সেই সময়ে বাংলার গভর্নর লর্ড ওয়ারেন হেস্টিংস তাকে দিনাজপুরের নাবালক রাজা রাধানাথ সিংহের দেওয়ান পদে নিযুক্ত করেন । ১৭৮১ খ্রিস্টাব্দে দেবী সিংহ বাৎসরিক ১৬ লক্ষ টাকা রাজস্ব প্রদানের শর্তে দিনাজপুর, রংপুর ও এদ্রাকপুর পরগনার ইজারার দায়িত্ব নেন । কিন্তু ছয় লক্ষ টাকার বেশি রাজস্ব আদায় না হওয়ায় তিনি তার সহকারি হরেরামের সাহায্যে কৃষকদের ওপর অমানবিক নির্যাতন শুরু করেন । এই সব অত্যাচারের কথা লর্ড হেস্টিংস জানতে পেরে তাকে বরখাস্ত করেন । কিন্তু হেস্টিংসকে প্রচুর অর্থের টোপ দিয়ে দেবী সিংহ প্রাদেশিক রেভিনিউ বোর্ডের সভাপতি হন । তারপর তিনি স্বনামে ও বেনামে বহু ইজারা নিলামের দ্বারা করায়ত্ত করেন । নিষ্ঠুর অত্যাচার চালিয়ে তিনি গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দিয়ে, মাঠের ধান কেটে নিয়ে কৃষকদের সর্বস্বান্ত করেন । খাজনা দিতে অক্ষম হওয়ায় মন্থনার জমিদার জয়দুর্গা চৌধুরানি, বামন ডাঙ্গার জমিদার জগদীশ্বরী চৌধুরানি, টেপাগ্রামের জমিদারসহ বেশকিছু জমিদারের জমিদারি বাজেয়াপ্ত করেন । দেবী সিংহের অপশাসন থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য দিরাজি নারায়ন ও নুরুল উদ্দিনের নেতৃত্বে রংপুরের কৃষকরা বিদ্রোহ ঘোষণা করে । তারা দেবী সিংহের প্রাসাদে আক্রমণ চালায় এবং ডিমলার জমিদার গৌরমোহন চক্রবর্তীকে হত্যা করে । ১৭৮৩ খ্রিস্টাব্দের ১৮ই জানুয়ারী রংপুরের শকিনা, ফতেপুর, কাজিরহাট ও ডিমলা অঞ্চলের কৃষকরা সমবেত হয়ে নুরুলউদ্দিনের নেতৃত্বে তেপাগ্রামে একটি 'স্বাধীন স্থানীয় সরকার' গঠন করেন । প্রায় পাঁচ সপ্তাহ স্বাধীনভাবে এই সরকার কাজ চালিয়েছিল । দয়ারাম শীল নুরুলুদ্দিনের সহকারী নেতা ছিলেন ।

শেষপর্যন্ত রংপুরের কালেক্টর গুডল্যান্ড বিদ্রোহ দমন করার জন্য বিশাল ব্রিটিশ সেনাবাহিনী পাঠায় । মোগলহাট ও পাটগ্রামের যুদ্ধে বিদ্রোহীরা লেফটেন্যান্ট ম্যাকডোনাল্ডের নেতৃত্বাধীন ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর কাছে পরাজিত হলে বিদ্রোহের সমাপ্তি ঘটে । ব্রিটিশ সেনাবাহিনী গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দিয়ে অসংখ্য বিদ্রোহীকে হত্যা করে ।

এই বিদ্রোহের প্রধান কারণগুলি হল —

(১) জমিদার বা প্রজাদের ওপর উচ্চহারে ভুমিরাজস্ব আরোপ ।

(২) সময় মতো রাজস্ব প্রদানে ব্যর্থ জমিদার বা প্রজাদের ওপর অনেক সময় নানা প্রকার অত্যাচার চালানো হত ।

(৩) খাজনা অনাদায়ে অনেক জমিদার ও ওই অঞ্চলের কিছু মহিলা জমিদারের জমিদারি স্বত্ব অতি সামান্য মূল্যে কিনে নেওয়া হত  ।   

(৪) রাজস্ব অনাদায়ে বিদ্রোহী কৃষকদের কারাগারে ধরে এনে অমানুষিক বেত্রাঘাত করা হত ।

(৫) অজন্মা খরা বা যে-কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগের জন্য শস্যহানি হলেও অসহায় কৃষকদের বা জমিদারদের খাজনা থেকে রেহাই দেওয়া হত না ।

*****

Related Items

আজাদ হিন্দ ফৌজের ভারত অভিযান সম্পর্কে সংক্ষেপে লেখ । কী কারণে শেষ পর্যন্ত আজাদ হিন্দ ফৌজ আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়ে ছিল ?

প্রশ্ন:-  আজাদ হিন্দ ফৌজের ভারত অভিযান সম্পর্কে সংক্ষেপে লেখ । কী কারণে শেষ পর্যন্ত আজাদ হিন্দ ফৌজ আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়ে ছিল ?

আজাদ হিন্দ ফৌজের ভারত অভিযান—

’করেঙ্গা ইয়া মরেঙ্গে’ -কোন আন্দোলনের রণধ্বনি ছিল ? এই আন্দোলনে কৃষক ও শ্রমিকরা কীরূপ ভূমিকা নিয়েছিল ?

প্রশ্ন:-  ’করেঙ্গা ইয়া মরেঙ্গে’ -কোন আন্দোলনের রণধ্বনি ছিল ? এই আন্দোলনে কৃষক ও শ্রমিকরা কীরূপ ভূমিকা নিয়েছিল ?

১৯৪২ খ্রিস্টাব্দের ভারত ছাড়ো আন্দোলনের রণধ্বনি ছিল 'করেঙ্গা ইয়া মরেঙ্গে' ।

ভারত ছাড়ো আন্দোলনের প্রসার আলোচনা কর ।

প্রশ্ন:- ভারত ছাড়ো আন্দোলনের প্রসার আলোচনা কর ।

১৯৪২ সালের ৮ই আগষ্ট ‘ভারত-ছাড়ো প্রস্তাব’ গৃহীত হলে পরদিন অর্থাৎ ৯ই আগষ্ট, ১৯৪২ এর ভোর থেকেই আন্দোলন শুরু হয়, যেমন—

১৯৪২ খ্রিস্টাব্দে কোন ঘটনাবলীর পরিপ্রেক্ষিতে স্যার স্ট্যাস্ট্যাস্ট্যাফোর্ড ক্রিপ্‌স ভারতে এসেছিলেন ?

প্রশ্ন:-  ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দে কোন ঘটনাবলীর পরিপ্রেক্ষিতে স্যার স্ট্যাফোর্ড ক্রিপ্‌স ভারতে এসেছিলেন ?

ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে মাতঙ্গিনী হাজরার অবদান আলোচনা কর ।

প্রশ্ন:- ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে মাতঙ্গিনী হাজরার অবদান আলোচনা কর ।

ভারতবর্ষের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে মাতঙ্গিনী হাজরার অবদান বিশেষভাবে স্মরনীয় ।