Submitted by avimanyu pramanik on Wed, 12/09/2020 - 17:44

বিজয়কৃষ্ণ গোস্বামী উনিশ শতকের বাংলার এক অন্যরকম সাধক ও ধর্মসংস্কারক ছিলেন । তিনি ১৮৪১ খ্রিষ্টাব্দের ২রা আগস্ট নদিয়া জেলার দহকুল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন । শান্তিপুরে গোবিন্দ গোস্বামীর টোলে প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করে তিনি ১৮৫৯ খ্রিস্টাব্দে কলকাতায় সংস্কৃত কলেজে ভর্তি হন । সংস্কৃত কলেজে পড়াশুনার সময় বিজয়কৃষ্ণ গোস্বামী ব্রাহ্মধর্মের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে ব্রাহ্মসমাজে যোগ দেন । এরপর ব্রাহ্মধর্ম প্রচারের উদ্দেশ্যে ১৮৬১ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৮৮৭ খ্রিস্টাব্দ এক টানা ২৬ বছর ব্রাহ্মসমাজের সঙ্গে জড়িত ছিলেন । ১৮৬৩ খ্রিস্টাব্দে বিজয়কৃষ্ণ গোস্বামী ব্রাহ্মসমাজের আচার্য হয়ে পূর্ববঙ্গে আসেন এবং কেশবচন্দ্র সেনের সঙ্গে তিনি ব্রাহ্মসমাজের হয়ে নানা সংস্কার কর্মসূচি পরিচালনা করেন । মতপার্থক্যের কারণে তিনি প্রথমে দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং পরে কেশবচন্দ্র সেনের সঙ্গ ত্যাগ করেন এবং শিবনাথ শাস্ত্রী ও আনন্দমোহন বসু প্রমুখের আগ্রহে তিনি সাধারণ ব্রাহ্মসমাজের প্রথম আচার্য পদাভিষিক্ত হন । এইসময় তিনি গয়ার আকাশগঙ্গা পাহাড়ে সন্ন্যাসী ব্রহ্মানন্দ পরমহংসের কাছ থেকে প্রাপ্ত সাধনা প্রণালী বহু শিষ্যের মধ্যে বিতরণ করেন । কিছুদিন পর সাধারণ ব্রাহ্মসমাজের সঙ্গে তাঁর মতভেদ দেখা দিলে ১৮৮৬ খ্রিস্টাব্দে আচার্যের পদ থেকে অপসারিত হন । শেষপর্যন্ত ১৮৮৮ খ্রিস্টাব্দে তিনি ব্রাহ্মসমাজ ছেড়ে বেরিয়ে আসেন এবং বৈষ্ণবধর্ম প্রচারে লিপ্ত থেকে তিনি বাংলায় নব্যবৈষ্ণব আন্দোলনের সূচনা করেন । বিপিনচন্দ্র পাল, অশ্বিনীকুমার দত্ত, সতীশচন্দ্র মুখার্জী ও মনোরঞ্জন গুহঠাকুরতা প্রমুখ ব্যক্তি এই আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন । বিজয়কৃষ্ণ গোস্বামী স্ত্রীশিক্ষা ও নারীজাতির উন্নতির জন্য চেষ্টা চালান । তিনি পরবর্তীকালে শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণ দেব ও ত্রৈলঙ্গস্বামীর সর্বধর্মসমন্বয় এবং সাকার ব্রহ্মের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে মুর্তিপুজাকে সমর্থন করেন । সন্ন্যাস গ্রহণের পর তিনি অচ্যুতানন্দ সরস্বতী নামে পরিচিত হন । স্বামী বিবেকানন্দের সঙ্গে তাঁর সুসম্পর্ক ছিল । স্বামী বিবেকানন্দ যেমন বেদান্ত ধর্মকে নতুন রূপে তুলে ধরেন, বিজয়কৃষ্ণ গোস্বামী তেমন নব্যবৈষ্ণব ধর্মের প্রসার ঘটান । ১৮৯৯ খ্রিস্টাব্দে তিনি পুরিতে দেহত্যাগ করেন ।

*****

Comments

Related Items

অহিংস অসহযোগ আন্দোলন পর্বে কৃষক আন্দোলন

অহিংস অসহযোগ আন্দোলন পর্বে কৃষক আন্দোলন (The Non Co-operation Movement and the Peasants) :-

মূল্যবৃদ্ধি, বেকারত্ব, দমনমূলক রাওলাট আইন, জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকান্ড প্রভৃতির প্রতিবাদে গান্ধিজির নেতৃত্বে জাতীয় কংগ্রেস ১৯২০ খ্রিস্টাব্দে অহিংস অসহ

বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলন পর্বে কৃষক আন্দোলন

বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলন পর্বে কৃষক আন্দোলন (The anti-Partition Movement and the Peasant):-

ভারতবর্ষের গ্রামাঞ্চলে বসবাসকারী বেশিরভাগ মানুষদের জীবিকা ছিল কৃষির ওপর নির্ভরশীল । ঔপনিবেশিক শাসনকালে ব্রিটিশদের কৃষিনীতি ভীষণভাবে কৃষক স্বার্থবিরোধী ছ

বিশ শতকের ভারতে কৃষক আন্দোলনের বৈশিষ্ট্য

কৃষক আন্দোলনের বৈশিষ্ট্য (The Peasants Movements in the Twentieth Century):- বিশ শতকের ভারতে সংঘটিত কৃষক আন্দোলনগুলি পর্যালোচনা করলে আন্দোলনগুলির কয়েকটি বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত হয় । যেমন —

বিশ শতকের ভারতে কৃষক, শ্রমিক ও বামপন্থী আন্দোলন : বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা

বিশ শতকের ভারতে কৃষক শ্রমিক ও বামপন্থী আন্দোলন : বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা (Peasant, Working Class and Left Movements in Twentieth Century):-

ভারতবর্ষ কৃষিনির্ভর দেশ । ভারতবর্ষের গ্রামাঞ্চলে বসবাসকারী বেশিরভাগ মানুষদের জীবিকা ছিল কৃষির ওপর নির্ভর

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও শান্তিনিকেতন ভাবনা এবং বিশ্বভারতীর উদ্যোগ

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও শান্তিনিকেতন ভাবনা এবং বিশ্বভারতীর উদ্যোগ — প্রকৃতি মানুষ ও শিক্ষার সমন্বয় (Education in Harmony with Nature) :-

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ঔপনিবেশিক শিক্ষানীতির কঠোর সমালোচনা করলেও তিনি ইংরেজি বা পাশ্চাত্য শিক্ষার বিরোধী ছিলেন না