Submitted by avimanyu pramanik on Mon, 09/28/2020 - 10:15

বামাবোধিনী পত্রিকা  : উনিশ শতকে বাংলা ভাষায় প্রকাশিত যেসব সাময়িকপত্রে সমকালীন বঙ্গীয় সমাজের প্রতিফলন ঘটেছিল সেগুলির মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য হল উমেশচন্দ্র দত্ত সম্পাদিত মাসিক পত্রিকা 'বামাবোধিনী পত্রিকা' । ১৮৬৩ খ্রিস্টাব্দের আগস্টে বাহির সিমলার ১৬, রঘুনাথ চ্যাটার্জী স্ট্রিটে অবস্থিত বামাবোধিনী সভার কার্যালয় থেকে প্রকাশিত হয় 'বামাবোধিনী পত্রিকা' । নারীদের সামাজিক উন্নতি, নারীশিক্ষার প্রসার, নারীদের মনের কথা প্রকাশের সুযোগ দান প্রভৃতি উদ্দেশ্যে এই পত্রিকা প্রকাশিত হয় । উমেশচন্দ্র দত্তের পর এই পত্রিকার সম্পাদনার দায়িত্বভার গ্রহণ করেন যথাক্রমে কুমার দত্ত, তারাকুমার কবিরত্ন, সূর্যকুমার চট্টোপাধ্যায়, ঊষাপ্রভা দত্ত, সন্তোষকুমার দত্ত, দেবকুমার দত্ত প্রমুখ গুণীজন । বামাবোধিনী পত্রিকা ছিল সবচেয়ে দীর্ঘদিন ধরে চলা মেয়েদের জন্য প্রকাশিত পত্রিকা । পত্রিকাটি ৬০ বছর চলেছিল । এই পত্রিকার প্রথম সংখ্যায় লেখা বিষয়গুলির মধ্যে ছিল — ভাষাজ্ঞান, ভূগোল, ইতিহাস, বিজ্ঞান, নীতি ও ধর্ম, শিশুপালন, গৃহচিকিৎসা, শিল্পকর্ম প্রভৃতি । পত্রিকার প্রথম সংখ্যায় উপক্রমণিকা অংশে পত্রিকার উদ্দেশ্যে বর্ণিত হয়েছে— "আমরা দেখিতে পাই এই উদ্দেশ্যে দেশহিতৈষি মহোদয়গণ স্থানে স্থানে বালিকা বিদ্যালয় সকল স্থাপন করিতেছেন, দয়াশীল গভর্নমেন্টও তদ্বিষয়ে সহায়তা করিতেছেন । কিন্তু এ উপায় অতি অল্প সংখ্যক বালিকারই কিছুদিনের উপকার হয় । অন্তঃপুর মধ্যে বিদ্যালোক প্রবেশের পথ করিতে না পারিলে সর্বসাধারণের হিতসাধন হইতে পারে না ।"

বামাবোধিনী পত্রিকায় নারীজাতিকে কী ধরনের আচরণ করতে হবে তার জন্য 'পতিসেবা',  'আদর্শ সতী স্ত্রী' এই জাতীয় রচনা পরিবেশিত হত । এই ধরনের রচনা পুরুষদের পাশাপাশি নারীরাও লিখতেন । এই পত্রিকায় প্রকাশিত চিঠি ও মতামত থেকে তৎকালীন সমাজে মেয়েদের প্রতি অধিকাংশ মানুষের ধারণা কেমন ছিল তা জানা যায় । এই পত্রিকা স্ত্রীশিক্ষাকে সমর্থন জানায় এবং কুসংস্কার ও সামাজিক কুপ্রথার বিরুদ্ধে সরব হয় । বাংলার তৎকালীন সামাজিক সমস্যাগুলি দূর করার উদ্দেশ্যে 'বামাবোধিনী পত্রিকা' নিয়মিত প্রচার চালায় । পত্রিকাটি নারীশিক্ষার প্রসার, নারীর সচেতনতা বৃদ্ধি এবং বাংলায় নারী আন্দোলনের পটভুমি তৈরি করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে ।

****

 

Comments

Related Items

ভারতে ইংরেজি শিক্ষার প্রসার

অষ্টাদশ শতকের শেষভাগে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ভারতে ব্রিটিশ শাসন প্রতিষ্ঠা করলেও প্রথমদিকে তারা এদেশে ইংরেজি ও পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারের কোনো উদ্যোগ নেয়নি । ভারতে ব্রিটিশ শাসন প্রতিষ্ঠিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ইংরেজদের আইন-আদালত গড়ে উঠতে শুরু করে । ইংরেজ বণিকরা নানা জায়গায

প্রাচ্য শিক্ষা ও পাশ্চাত্য শিক্ষা বিষয়ক দ্বন্দ্ব

ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি অষ্টাদশ শতকের শেষভাগে ভারতের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে নিজেদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করলে এদেশের শিক্ষাব্যবস্থার নীতি নির্ধারণের বিষয়টি তাদের কাছে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে । গভর্নর জেনারেল লর্ড মিন্টো তাঁর এক প্রতিবেদনে প্রাচ্যশিক্ষা ব্যবস্থার শোচনীয় অবস্থা তুলে ধরে প্রাচ্য জ্ঞান-বিজ্ঞান ...

উনিশ শতকের বাংলা — শিক্ষা সংস্কার : বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা

উনিশ শতকের বাংলা — শিক্ষা সংস্কার : বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা:-

ভারতে ব্রিটিশ শাসনের সূচনাপর্বে বাংলা তথা ভারতের শিক্ষার্থীরা পাঠশালা, টোল, মক্তব ও মাদ্রাসা থেকে সংস্কৃত, আরবি ও ফারসি -র মাধ্যমে শিক্ষা গ্রহণ করত । এসব প্রতিষ্ঠানে মূলত ধর্মীয় কাহিনি, সংস্কৃত, আরবি

গ্রামবার্তাপ্রকাশিকা

উনবিংশ শতকের বাংলায় গ্রামীণ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে কুমারখালীর পাঠশালার পন্ডিত হরিনাথ মজুমদারের সম্পাদিত 'গ্রামবার্তাপ্রকাশিকা' নামক পত্রিকাটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে ।

বহু বিকল্পীয় প্রশ্নোত্তর (M.C.Q) - ইতিহাসের ধারণা ও আধুনিক ইতিহাসচর্চা

ইতিহাসের ধারণা ও আধুনিক ইতিহাসচর্চা অধ্যায় থেকে যে সমস্ত প্রশ্ন বিগত মাধ্যমিক পরীক্ষায় এসেছে এবং আগামী পরীক্ষায় আসতে পারে ।