বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলন পর্বে কৃষক আন্দোলন

Submitted by avimanyu pramanik on Sat, 01/30/2021 - 23:20

বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলন পর্বে কৃষক আন্দোলন (The anti-Partition Movement and the Peasant):-

ভারতবর্ষের গ্রামাঞ্চলে বসবাসকারী বেশিরভাগ মানুষদের জীবিকা ছিল কৃষির ওপর নির্ভরশীল । ঔপনিবেশিক শাসনকালে ব্রিটিশদের কৃষিনীতি ভীষণভাবে কৃষক স্বার্থবিরোধী ছিল । সেই সঙ্গে ব্রিটিশ সরকার ও তাদের অনুগ্রহপুষ্ট স্বার্থান্বেষী জমিদার মহাজনশ্রেণি কৃষকদের অন্যায়ভাবে শোষণ ও অত্যাচার করত । এই অবস্থায় নির্যাতিত ও শোষিত ভারতের কৃষকসম্প্রদায় তাদের প্রতি হওয়া শোষণ ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সরব হয় ও বিভিন্ন প্রতিবাদী আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে । যে সমস্ত জমিদার ও মহাজনশ্রেণি কৃষকদের নানা ভাবে অত্যাচার ও শোষন করতো তাদের প্রতি ব্রিটিশ সরকারের পৃষ্ঠপোষকতার কারণে ব্রিটিশ শাসনের প্রতি কৃষকশ্রেণির ক্ষোভের সঞ্চার হয় । আর এই ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ হিসাবে ভারতের কৃষকশ্রেণি ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে সক্রিয় প্রতিবাদী আন্দোলনে শামিল হয় । গুজরাটের খেড়া, সুরাট ও ব্রোচ জেলায় এলাকার কৃষকদের নেতৃত্বে সর্বজনীনভাবে কৃষকেরা ভূমিরাজস্ব দিতে অস্বীকার করে । গান্ধিজির হস্তক্ষেপের আগে থেকেই ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৯০৮ খ্রিস্টাব্দের সময়কালে বিহারের চম্পারণ জেলায় মতিহারি বেতিয়া অঞ্চলের নীলচাষীরা সরকার-বিরোধী আন্দোলন গড়ে তুলেছিল । মূলত তিন কাঠিয়া ব্যবস্থা অনুযায়ী ব্রিটিশ সরকার এখানকার কৃষকদের নীলচাষে বাধ্য করায় তারা সরকারের বিরুদ্ধে তীব্র আন্দোলনে নামে । ১৯০৭ খ্রিস্টাব্দে পাঞ্জাবে চিনাব নদীসংলগ্ন খালপারের বসতি এলাকায় ক্যানাল কলোনিতে ব্রিটিশ সরকার নতুন আইন প্রচলন করে ঐ এলাকার জমির উত্তরাধিকার নিয়ন্ত্রণ করার প্রস্তাব করে এবং এই নিয়মবিধি লঙ্ঘনকারীদের জরিমানা ও বাড়তি জলকর দেওয়ার প্রস্তাব করা হয় । এর প্রতিবাদে শিক্ষিত কৃষকদের নেতৃত্বে এখানকার কৃষকশ্রেণি সংঘবদ্ধ হয় । লাহোর ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশনের দুই নেতা লাজপত রায় ও অজিত সিংহ প্রমুখ এই আন্দোলনে যোগ দেন । আন্দোলনকারীরা কর দেওয়া বন্ধ করলে লর্ড মিন্টো ১৯০৭ খ্রিস্টাব্দের ২৬শে মে ক্যানাল কলোনিতে প্রযোজ্য নতুন আইনটি বাতিল করেন ।

বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী আন্দোলন বড়ো আকার ধারণ করলেও ভারতের কৃষকসমাজ এই আন্দোলনে ব্যাপকভাবে অংশ গ্রহণ করেনি । এর পিছনে নানা কারণ ছিল । যেমন —

(১) বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনের প্রধান স্বদেশি নেতৃবর্গ সচেতনভাবে কৃষকদের স্বার্থরক্ষার ব্যাপারে উপযুক্ত কর্মসূচি করেন নি । ইতিহাসবিদ ড. সুমিত সরকারের মতে, 'সুনির্দিষ্ট কৃষিভিত্তিক কর্মসূচি' -র অভাবে কৃষকশ্রেণিকে এই আন্দোলনের শরিক হিসেবে যুক্ত করা যায় নি ।

(২) ড. সুমিত সরকার কৃষকশ্রেণিকে বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনের শরিক করে নেওয়ার ক্ষেত্রে নেতৃবৃন্দের উদাসীনতাকে দায়ী করেছেন ।  

(৩) বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনের নেতৃবর্গ দেশপ্রেমিক জমিদারদের সহযোগিতা লাভের আশায় ভূমিস্বত্ব সংরক্ষণ, খাজনা হ্রাস প্রভৃতি কৃষকসমাজের দাবিগুলিকে গ্রহণ করে জমিদার ও উচ্চবর্গীয়দের বিরাগভাজন হতে চাননি ।

(৪) সংখ্যাগরিষ্ঠ কৃষকশ্রেণির অংশগ্রহণ হল কৃষিপ্রধান ভারতের যেকোনো গণআন্দোলনের মূল ভিত্তি । এই চরম সত্যটি বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনের নেতৃবর্গ উপলব্ধি করতে ব্যর্থ হন এবং কৃষকদের বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনে আকৃষ্ট করা থেকে বিরত থাকেন ।

*****

Comments

Related Items

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর ভারতে কী কী পরিবর্তন ঘটেছিল ?

প্রশ্ন:- প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর ভারতে কী কী পরিবর্তন ঘটেছিল ?

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর ভারতে নানা পরিবর্তন ঘটে—

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপে কী কী পরিবর্তন ঘটেছিল ?

প্রশ্ন:- প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপে কী কী পরিবর্তন ঘটেছিল ?

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরে ইউরোপীয় দেশগুলির অর্থনৈতিক অবস্থা কীরূপ ছিল ? ইতালিতে ও জার্মানিতে গণতন্ত্রের পতন হয় কেন ?

প্রশ্ন:- প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরে ইউরোপীয় দেশগুলির অর্থনৈতিক অবস্থা কীরূপ ছিল ?  ইতালি ও জার্মানিতে গণতন্ত্রের পতন হয় কেন ?

মহারাষ্ট্রের বিপ্লবী আন্দোলনে আর্যবান্ধব সমাজ ও অভিনব ভারতের ভূমিকা আলোচনা কর ।

প্রশ্ন:-  মহারাষ্ট্রের বিপ্লবী আন্দোলনে আর্যবান্ধব সমাজ ও অভিনব ভারতের ভূমিকা আলোচনা কর ।

ক্ষুদিরাম বসু ও লালা হরদয়ালকে মনে রাখা হয় কেন ?

প্রশ্ন :-  ক্ষুদিরাম বসু ও লালা হরদয়ালকে মনে রাখা হয় কেন ?

ক্ষুধিরাম বসুকে মনে রাখার কারণ :