প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার (Pritilata Waddedar)

Submitted by avimanyu pramanik on Fri, 02/12/2021 - 11:34

প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার (Pritilata Waddedar):-

বিশ শতকে ব্রিটিশ-বিরোধী বিভিন্ন গণতান্ত্রিক ও জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের ব্যর্থতার ফলে সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলন যথেষ্ট সক্রিয় হয়ে ওঠে । সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনে বাংলার নারীসমাজ প্রথমদিকে পরোক্ষভাবে অংশ নিতে শুরু করে । বিশ শতকে ১৯৩০ এর দশক থেকে নারীরা সশস্ত্র জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে অংশগ্রহণ করতে শুরু করেন । ব্রিটিশ সরকার পুলিশি অত্যাচার, গ্রেপ্তার, নির্বাসন প্রভৃতি নির্যাতন চালাতে থাকলেও নারীদের আন্দোলন থেমে থাকে নি । আদর্শবোধ ও আত্মবলিদানের মাধ্যমে যাঁরা নিজেদের জীবনকে চিরস্মরনীয় করে রেখেছেন তাঁদের মধ্যে বিপ্লবী প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার অন্যতম । 

সশস্ত্র জাতীয়তাবাদী বিপ্লবী আন্দোলনে দীপালি সংঘের সদস্যা প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার গৌরবজনক ভূমিকা পালন করেন । প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার ১৯১১ সালের ৫ই মে চট্টগ্রামের বর্তমান পটিয়া উপজেলার ধলঘাট গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। । ছাত্রাবস্থায় প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার ঢাকার দীপালি সংঘে এবং পরে কলকাতায় ছাত্রী সংঘে যোগ দিয়ে লাঠিখেলা, ছোরাখেলা প্রভৃতি শেখেন । এই আগ্রহ থেকেই তিনি মাস্টারদা সূর্য সেনের বিপ্লবী দলে যোগ দিয়ে ফুলতার ছদ্মনাম গ্রহণ করেন । মাস্টারদা সূর্য সেনের নেতৃত্বে তিনি বিপ্লবী কার্যকলাপে অংশগ্রহণ করেন । প্রথমদিকে সূর্য সেন প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারকে কলকাতায় বৈপ্লবিক কার্যকলাপ পরিচালনার দায়িত্ব অর্পণ করেন । ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দের ১৮ই এপ্রিল মাস্টারদা সূর্য সেনের নেতৃত্বে চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠনের ঘটনায় প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন । পরে মাস্টারদা সূর্য সেন চট্টগ্রামের পাহাড়তলি ইউরোপিয়ান ক্লাব আক্রমণের পরিকল্পনা গ্রহণ করেন । মাস্টারদা সূর্য সেন এই আক্রমণের নেতৃত্বভার প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারের ওপর অর্পণ করেন । ২১ বছর বয়সী তরুণী বীরাঙ্গনা প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারের নেতৃত্বে ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দের ২৪শে সেপ্টেম্বর ইউরোপীয় ক্লাব আক্রমণ করেন । প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারের নেতৃত্বে শান্তি চক্রবর্তী, কালিকিঙ্কর দে সহ ১৫ জন বিপ্লবী পাহাড়তলির ইউরোপিয়ান ক্লাব ঘিরে ফেলেন । পুলিশ পাল্টা আক্রমণ চালালে উভয়পক্ষের মধ্যে সশস্ত্র সংঘর্ষ শুরু হয় । বিপ্লবীরা বহু ইংরেজকে হতাহত করেন, কিন্তু শেষ রক্ষা হয় নি । বিপ্লবীদের অনেকেই সংঘর্ষস্থল ছেড়ে পালাতে সক্ষম হলেও গুলিতে আহত প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার পুলিশের হাতে গ্রেফতার হওয়ার আগেই পটাশিয়াম সায়ানাইড খেয়ে আত্মহত্যা করেন । এভাবে দেশমাতৃকার মুক্তিযুদ্ধে প্রাণ বিসর্জন দিয়ে প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার ইতিহাসে চিরস্মরনীয় হয়ে আছেন । প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার আত্মবলিদানের মধ্যে দিয়ে প্রমাণ করেন যে দেশমাতৃকার শৃংখল মোচনের জন্য বাঙালি নারীরা আত্মাহুতি দিতে বিন্দুমাত্র পিছপা নন ।

*****

Comments

Related Items

১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের মহাবিদ্রোহের প্রতি শিক্ষিত বাঙালি সমাজের কীরূপ মনোভাব ছিল ?

প্রশ্ন : ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের মহাবিদ্রোহের প্রতি শিক্ষিত বাঙালি সমাজের কীরূপ মনোভাব ছিল ?

উঃ- ১৮৫৭ সালের মহাবিদ্রোহকে শিক্ষিত বাঙালি সমাজ সাধারণভাবে সমর্থন করেননি ।

১৮৫৫ খ্রিস্টাব্দে সাঁওতালরা বিদ্রোহ করেছিল কেন ?

প্রশ্ন : ১৮৫৫ খ্রিস্টাব্দে সাঁওতালরা বিদ্রোহ করেছিল কেন ?

স্বামী বিবেকানন্দের ধর্মসংস্কারের আদর্শ ব্যাখ্যা কর ।

প্রশ্ন : স্বামী বিবেকানন্দের ধর্মসংস্কারের আদর্শ ব্যাখ্যা কর ।

নারী ইতিহাসের ওপর একটি টীকা লেখ ।

প্রশ্ন : নারী ইতিহাসের ওপর একটি টীকা লেখ ।

সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনে নারীদের ভূমিকা বিশ্লেষণ কর ।

প্রশ্ন : সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনে নারীদের ভূমিকা বিশ্লেষণ কর ।