গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুরের ব্যঙ্গচিত্রে ঔপনিবেশিক সমাজের সমালোচনা

Submitted by avimanyu pramanik on Wed, 01/06/2021 - 22:59

ব্যঙ্গচিত্র-জাতাসুরগগনেন্দ্রনাথ ঠাকুরের ব্যঙ্গচিত্রে ঔপনিবেশিক সমাজের সমালোচনা (Critique of Colonial Society in Gaganendranath Tagore's Caricature  1867-1938) :-

উনিশ শতকের দ্বিতীয় দশক থেকে গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুর ব্যঙ্গচিত্রশিল্পী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন । সমাজের বিভিন্ন অসঙ্গতিকে মূল বিষয় করে তীব্র ব্যঙ্গাত্মক ভঙ্গিতে তিনি তাঁর চিত্রগুলি এঁকেছেন । সমকালীন বাংলার ও ঔপনিবেশিক সমাজের চিত্র তিনি তাঁর ব্যঙ্গচিত্রগুলিতে তুলে ধরেছেন । তাঁর ব্যঙ্গচিত্রগুলি রামানন্দ চট্টোপাধ্যায় 'প্রবাসী' ও 'মডার্ন রিভিউ' পত্রিকাতে প্রকাশ করেন । এ ছাড়াও তাঁর ব্যঙ্গচিত্রগুলি ভারতী, নারায়ণ, আগমনী ও বার্ষিক বসুমতীতে প্রকাশিত হয় । তাঁর আঁকা ব্যঙ্গচিত্রগুলিকে তিনটি ভাগে ভাগ করা যায়, যেমন— (i) সামাজিক সমস্যমূলক ব্যঙ্গচিত্র, (ii) ব্যক্তিবিশেষে ক্রিয়াকর্মমুলক ব্যঙ্গচিত্র (iii) রাজনৈতিক অনুষঙ্গমূলক ব্যঙ্গচিত্র । তাঁর জীবদ্দশায় ব্যঙ্গচিত্রগুলির তিনটি সংকলন প্রকাশিত হয় । সঙ্কলন তিনটি হল— (i) বিরুপ বজ্র, (ii) অদ্ভুত লোক, (iii) নব হুল্লোড় । আর একটি ব্যঙ্গচিত্র সংকলন তাঁর মৃত্যুর পরে প্রকাশিত হয় । জাতাসুর (Millstone of Caste), পরভূতের কাকলি (Courtesy to countrymen), বিদ্যার কারখানা (Cramming Machine), বাকযন্ত্র (The Auto Speechola) প্রভৃতি হল তাঁর আঁকা উল্লেখযোগ্য কয়েকটি ব্যঙ্গচিত্র । জাতাসুর ব্যঙ্গচিত্রে ভারতীয় সমাজে প্রচলিত জাতপাত ও বর্ণবৈষম্য ব্যবস্থার তীব্র সমালোচনা ফুটে উঠেছে । চিত্রটিতে দেখা যায়, বিশালাকার এক জাঁতার ওপর বসে হোম ও পূজা আহ্নিক করছেন মুণ্ডিত মস্তকবিশিষ্ট এক ব্রাহ্মন, যার হাতে রয়েছে পুঁথি । জাঁতটিকে ঘোরাচ্ছে এক হাস্যরত কঙ্কাল যা ধ্বংস বা মৃত্যুর প্রতীক । আর এই জাঁতার নীচে অসংখ্য নিম্নবর্ণের মানুষ নিষ্পেষিত হচ্ছে । এভাবে গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর ব্যঙ্গচিত্রের মধ্যে দিয়ে সমাজব্যবস্থার সমালোচনা করেছেন ।

****

Comments

Related Items

কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ এবং চিকিৎসাবিদ্যা চর্চার বিকাশ

কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ এবং চিকিৎসাবিদ্যা চর্চার বিকাশ:-

ঊনিশ শতকের সূচনালগ্নে ভারতে প্রাচীন দেশীয় চিকিৎসা-ব্যবস্থা প্রচলিত ছিল । পরবর্তীকালে ভারতের গভর্নর জেনারেল লর্ড উইলিয়াম বেন্টিঙ্ক দেশীয় চিকিৎসা-শাস্ত্রে শিক্ষাদানের পরিবর্তে আধু

পাশ্চাত্য শিক্ষাবিস্তারে ডেভিড হেয়ার ও জন এলিয়ট ড্রিঙ্কওয়াটার বিটন -এর ভূমিকা

উনিশ শতকে যে সব মানুষ বাংলায় পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিলেন তাঁদের মধ্যে অন্যতম হলেন ডেভিড হেয়ার । ১৭৭৫ খ্রিস্টাব্দে তিনি স্কটল্যান্ডে জন্মগ্রহণ করেন । ১৮০০ খ্রিস্টাব্দে কলকাতায় এসে ঘড়ির ব্যবসা করে প্রচুর অর্থ উপার্জন করেন । ঔ

পাশ্চাত্য শিক্ষাবিস্তারে রাজা রামমোহন রায় ও রাজা রাধাকান্ত দেব -এর ভূমিকা

ঊনিশ শতকে বাংলায় আধুনিক পাশ্চাত্যশিক্ষার প্রসারে রাজা রামমোহন রায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেন । রাজা রামমোহন রায় মনে করতেন আধুনিক পাশ্চাত্য শিক্ষার ওপর ভিত্তি করেই নতুন ভারত গড়ে উঠবে । তিনি নিজের খরচে ১৮১৫ খ্রিস্টাব্দে কলকাতায় 'ইন্ডিয়ান অ্যাকাডেমি' নামে

নারীশিক্ষা ও ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর

ঊনিশ শতকের সূচনালগ্ন পর্যন্ত নানা রকম সামাজিক বিধিনিষেধের ফলে বাংলায় নারীশিক্ষার বিশেষ প্রসার ঘটেনি । এরপর থেকে উনিশ শতকে ভারতে নারীশিক্ষা প্রসারের উদ্দেশ্যে কিছু সমষ্টিগত ও ব্যক্তিগত উদ্যোগ শুরু হয় । সমষ্টিগত উদ্যোগে নব্যবঙ্গীয় গোষ্ঠী, খ্রিস্টান মিশনারি এবং ব্রাহ্মসমা

ভারতে ইংরেজি শিক্ষার প্রসার

অষ্টাদশ শতকের শেষভাগে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ভারতে ব্রিটিশ শাসন প্রতিষ্ঠা করলেও প্রথমদিকে তারা এদেশে ইংরেজি ও পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারের কোনো উদ্যোগ নেয়নি । ভারতে ব্রিটিশ শাসন প্রতিষ্ঠিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ইংরেজদের আইন-আদালত গড়ে উঠতে শুরু করে । ইংরেজ বণিকরা নানা জায়গায