Submitted by avimanyu pramanik on Mon, 09/21/2020 - 18:28

খেলার ইতিহাস (History of Sports) খেলাধুলার ইতিহাস খুবই প্রাচীন । মানুষের জীবনে খেলাধুলার গুরুত্ব বোঝাতে গিয়ে রোমান কবি জুভেনাল বলেছেন, "মানুষ দুটো জিনিসের জন্য আকুল হতে পারে— রুটি ও খেলাধুলো ।" ১৯৭০ -এর দশক নাগাদ ইউরোপে খেলার ইতিহাসচর্চার সূচনা ঘটে । ঐতিহাসিক হবসম উল্লেখ করেছেন যে, বিংশ শতকে ইউরোপীয় জীবনধারার অন্যতম প্রধান সামাজিক অভ্যাস হল খেলাধুলা । কোনো সমাজের খেলাধুলা, সেই সমাজের স্বরূপ প্রকাশ করে থাকে । খেলাধুলায় কোনো সমাজের মেয়েদের অংশগ্রহণ সেই সমাজে নারী স্বাধীনতার প্রমাণ দেয় । ১৯১১ খ্রিস্টাব্দে সাম্রাজ্যবাদী ব্রিটিশ খেলোয়াড়দের হারিয়ে বাংলার মোহনবাগান দল আই এফ এ শিল্ড জিতে যে আনন্দে মেতে ওঠে তা ছিল প্রকৃতপক্ষে ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশদের বাংলা ভাগের জবাব । খেলাধুলা জাতীয়তাবাদ, সাম্প্রদায়িকতা, সমাজ-বিবর্তন, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক প্রভৃতিকে যথেষ্ট প্রভাবিত করে চলেছে । ৮০ -এর দশকে টনি ম্যাসন, রিচার্ড হোল্ট প্রমুখের গবেষণায় খেলার ইতিহাসচর্চা সমৃদ্ধ হয় । ১৯৮২ খ্রিস্টাব্দে 'ব্রিটিশ সোসাইটি অব স্পোর্টস হিস্ট্রি' প্রতিষ্ঠিত হলে খেলার ইতিহাসচর্চা সাংগঠনিক রূপ পায় । ব্রিটেনের খেলার ওপর গবেষণা পত্রিকা 'দ্য ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অব দ্য হিস্ট্রি অব স্পোর্ট' ইউরোপে খুবই জনপ্রিয় হয়ে ওঠে । জহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের ছাত্র সৌমেন মিত্র ১৯৮৮ খ্রিস্টাব্দে ভারতে খেলার ইতিহাস নিয়ে প্রথম গবেষণা করেন । তাঁর গবেষণার বিষয় ছিল, 'ঔপনিবেশিক বাংলায় ফুটবল, জাতীয়তাবাদ, সাম্প্রদায়িকতা ও উপপ্রাদেশিকতা' ।

খেলাধুলার ইতিহাসচর্চায় উল্লেখযোগ্য কাজ করেছেন আশিস নন্দী, রামচন্দ্র গুহ, মিহির বোস, অর্জুন আপ্পাদুরাই এবং সাম্প্রতিককালে বাংলা তথা ভারতে খেলাধুলার ইতিহাসচর্চায় যাঁরা বিশেষ খ্যাতিলাভ করেছেন তাঁদের মধ্যে অন্যতম হলেন বোরিয়া মজুমদার, কৌশিক বন্দ্যোপাধ্যায়, রূপক সাহা, গৌতম ভট্টাচার্য, মারিও রডরিগেজ, প্রমুখ । এক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ হল বোরিয়া মজুমদারের লেখা 'টুয়েন্টি-টু ইয়ার্ডস টু ফ্রিডম: এ সোশ্যাল হিস্ট্রি অব ইন্ডিয়ান ক্রিকেট', আশিষ নন্দীর লেখা 'দ্য ডেস্টিনি অব গেমস' প্রভৃতি । মানুষের বিনোদন বা অবসরযাপনে খেলার ভূমিকা অতি প্রাচীন । আর স্বভাবতই সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবনে এর প্রভাব বিশ্লেষণ ঐতিহাসিকের আগ্রহের বিষয় । শিল্পবিপ্লবের পর দেখা যায় খেলাধুলায় 'ভদ্রলোকের খেলা' ও 'সাধারণের খেলা'র বিভাজন হয় । তার মধ্যে লুকিয়ে থাকে শ্রেণীবিভাজিত সমাজের 'আইডেন্টিটি' । আবার নানা ক্ষেত্রেই খেলা হয়ে ওঠে জাতীয়তাবোধের প্রতীক ।

*****

Comments

Related Items

১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের মহাবিদ্রোহের প্রতি শিক্ষিত বাঙালি সমাজের কীরূপ মনোভাব ছিল ?

প্রশ্ন : ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের মহাবিদ্রোহের প্রতি শিক্ষিত বাঙালি সমাজের কীরূপ মনোভাব ছিল ?

উঃ- ১৮৫৭ সালের মহাবিদ্রোহকে শিক্ষিত বাঙালি সমাজ সাধারণভাবে সমর্থন করেননি ।

১৮৫৫ খ্রিস্টাব্দে সাঁওতালরা বিদ্রোহ করেছিল কেন ?

প্রশ্ন : ১৮৫৫ খ্রিস্টাব্দে সাঁওতালরা বিদ্রোহ করেছিল কেন ?

স্বামী বিবেকানন্দের ধর্মসংস্কারের আদর্শ ব্যাখ্যা কর ।

প্রশ্ন : স্বামী বিবেকানন্দের ধর্মসংস্কারের আদর্শ ব্যাখ্যা কর ।

নারী ইতিহাসের ওপর একটি টীকা লেখ ।

প্রশ্ন : নারী ইতিহাসের ওপর একটি টীকা লেখ ।

সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনে নারীদের ভূমিকা বিশ্লেষণ কর ।

প্রশ্ন : সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনে নারীদের ভূমিকা বিশ্লেষণ কর ।