খাদ্যাভ্যাসের ইতিহাস (History of Human Food Habit)

Submitted by avimanyu pramanik on Mon, 09/21/2020 - 21:29

খাদ্যাভ্যাসের ইতিহাসচর্চা :- মানুষের জীবনে সব থেকে গুরুত্বের সঙ্গে যে বিষয়টি সম্পর্কিত তা হল খাদ্যাভ্যাস । সুদুর প্রাচীনকাল থেকে মানুষের খাদ্যাভ্যাসের ধারাবাহিক বিবর্তন ও পরিবর্তন ঘটে চলেছে । এই বিবর্তন ও পরিবর্তনে কোনো বিশেষ সভ্যতা বা সংস্কৃতির বিশেষ প্রভাব থাকে । কোনো মানবসমাজ ও সভ্যতার খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন সেই সমাজ ও সভ্যতার পরিবর্তনের পরিচায়ক । খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন থেকে সেই সমাজ সম্পর্কে নানা তথ্য জানা যায় । সেই কারণে খাদ্যাভ্যাসের ইতিহাস আধুনিক ইতিহাসচর্চার আলোচনায় বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে । এক-একটি আবিষ্কার খাদ্যাভ্যাসেরও পরিবর্তন ঘটায় ও সভ্যতার দিক নির্দেশের সহায়ক হয়, যেমন— আগুনের আবিষ্কার । জলবায়ুর তারতম্যের কারণে বিশ্বের বিভিন্ন অংশের মানুষের খাদ্যাভ্যাস আলাদা আলাদা হয় । খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তনের সাথে ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট খুবই গুরুত্বপূর্ণ । খাদ্যের নিম্নমান একদিকে ঔপনিবেশিক সাম্রাজ্যবাদী শক্তির বিরুদ্ধে বিদ্রোহের কারণ হয়েছে, আবার খাদ্যের রুচি ও তালিকা দিয়ে শ্রেণি সম্পর্ক বিশ্লেষিত হয়েছে । প্রাচীনকালে বিভিন্ন সময়ে বাংলায় আমি আহার বিশেষ জনপ্রিয় হলেও পালযুগে বৌদ্ধধর্ম এবং সেনযুগে ব্রাহ্মণ্য ধর্মের প্রভাবে বাংলায় ভাত ও নিরামিষ খাবারের প্রচলন বাড়ে । খাদ্যাভ্যাসের এই পরিবর্তন থেকে সেযুগে ধর্মীয় প্রাধান্যের আভাস পাওয়া যায় । সুলতানি আমলে বাংলায় ইসলামি সংস্কৃতির প্রসার এখানকার খাদ্যাভ্যাসে প্রভাব ফেলে । অধ্যাপক শরিফউদ্দিন আহমেদ দেখিয়েছেন যে, একসময় ঢাকা প্রাদেশিক মুসলিম শাসকদের রাজধানী হলে এখানকার খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আসে । তখন থেকে ঢাকার রন্ধনপ্রণালীতে পারসিক খাদ্যরীতির প্রবেশ ঘটে এবং 'ঢাকাই খাবার' -এর উদ্ভব হয় । ঔপনিবেশিক শাসনও এদেশের খাদ্যাভ্যাসে বিশেষ প্রভাব ফেলে । পর্তুগীজদের প্রভাবে হুগলি জেলায় মিষ্টি তৈরিতে ছানার ব্যবহার শুরু হয় । এভাবে খাদ্যাভ্যাস কোনো জনগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক জীবনকেও প্রভাবিত করে । সম্প্রতি খাদ্যাভ্যাসের ইতিহাসচর্চা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে । এ বিষয়ে উল্লেখযোগ্য গবেষকরা হলেন ড. কে টি আচয়, হারভে লেভেনস্টেইন, জোনাথন রাইট, রিয়াই টান্নাহিল, বিজয়া চৌধুরী, হরিপদ ভৌমিক প্রমূখ । কে টি আচয় তাঁর 'ইন্ডিয়ান ফুড : এ হিস্টোরিক্যাল কমপ্যানিয়ান' গ্রন্থে প্রাচীন যুগ থেকে আধুনিক যুগ পর্যন্ত খাদ্যাভ্যাসের ইতিহাসের ধারাবাহিক বিবরণ দিয়েছেন ।

******

 

Comments

Related Items

ভারত ছাড়ো আন্দোলন পর্বে শ্রমিক আন্দোলন

ভারত ছাড়ো আন্দোলন পর্বে শ্রমিক আন্দোলন (Quit India Movement and the Working Class):-

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দের ৯ই আগস্ট মহাত্মা গান্ধির নেতৃত্বে ভারতের জাতীয় কংগ্রেস ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে ভারত ছাড়ো আন্দোলনের ডাক দেয় । এই আন্দো

আইন অমান্য আন্দোলন পর্বে শ্রমিক আন্দোলন

আইন অমান্য আন্দোলন পর্বে শ্রমিক আন্দোলন (The Civil Disobedience Movement and the Working Class) :-

১৯৩০ খ্রিস্টাব্দে আইন অমান্য আন্দোলন শুরু হলে ভারতের বিভিন্ন প্রদেশের শ্রমিকরা এই আন্দোলনে অংশ গ্রহণ করে । এই সময় বাংলায় শ্রমিক আন্দোলন যথেষ্ট শ

ওয়ার্কার্স অ্যান্ড পেজেন্টস পার্টি

ওয়ার্কার্স অ্যান্ড পেজেন্টস পার্টি (Workers and Peasants Party) :-

কুতুবুদ্দিন আহমদ, কাজী নজরুল ইসলাম, অধ্যাপক হেমন্ত সরকার, সামসুদ্দিন হোসেন প্রমুখ ব্যক্তির উদ্যোগে ১৯২৫ খ্রিস্টাব্দের ১লা নভেম্বর বাংলায় 'লেবার স্বরাজ পার্টি অব দা ইন্ডিয়ান

অহিংস অসহযোগ আন্দোলন পর্বে শ্রমিক আন্দোলন

অহিংস অসহযোগ আন্দোলন পর্বে শ্রমিক আন্দোলন (Non Co-operation Movement and the Working Class):- 

অহিংস অসহযোগ আন্দোলনের সময় সারা ভারতে শ্রমিকরা আন্দোলনে শামিল হয় । এই সময় বাংলায় শ্রমিক আন্দোলন অত্যন্ত শক্তিশালী ওঠে । শ্রমিকদের কাজের সময় কমানো, ব

বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলন পর্বে শ্রমিক আন্দোলন

বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলন পর্বে শ্রমিক আন্দোলন (Anti-Partition Movement and the Working Class):-

ব্রিটিশ শাসনের প্রথমদিকে পাশ্চাত্য শিক্ষায় শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ ব্রিটিশ শাসনের বিরোধিতা না করলেও ভারতের নিম্নবর্গের মানুষ বিশেষত শ্রমিক