কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ এবং চিকিৎসাবিদ্যা চর্চার বিকাশ

Submitted by avimanyu pramanik on Thu, 12/03/2020 - 16:03

কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ এবং চিকিৎসাবিদ্যা চর্চার বিকাশ:-

ঊনিশ শতকের সূচনালগ্নে ভারতে প্রাচীন দেশীয় চিকিৎসা-ব্যবস্থা প্রচলিত ছিল । পরবর্তীকালে ভারতের গভর্নর জেনারেল লর্ড উইলিয়াম বেন্টিঙ্ক দেশীয় চিকিৎসা-শাস্ত্রে শিক্ষাদানের পরিবর্তে আধুনিিক পাশ্চাত্য চিকিৎসাবিদ্যার শিক্ষাদানের উদ্দেশ্যে ১৮৩৫ খ্রিস্টাব্দে ২৮শে জানুয়ারি 'কলকাতা মেডিকেল কলেজ' প্রতিষ্ঠা করেন । পণ্ডিচেরীর পর কলকাতা মেডিকেল কলেজ এশিয়া মহাদেশের দ্বিতীয় মেডিকেল কলেজ হয়, যেখানে আধুনিক ও উন্নত ইউরোপীয় চিকিৎসাবিদ্যা শেখানো হত । এই কলেজ থেকে সাব-অ্যাসিস্ট্যান্ট সার্জেন্ট হিসেবে যোগ্যতা অর্জনকারী ছাত্রদের সামরিক ও অসামরিক কেন্দ্রে নিয়োগ করার উদ্দেশ্যে ব্রিটিশ সরকার এই কলেজ প্রতিষ্ঠা করে । মাউন্টফোর্ড জোসেফ ব্রামলিকে কলকাতা মেডিকেল কলেজের সুপারিন্টেনডেন্ট পদে নিয়োগ করা হয় । তাঁর সময়কালেই মেডিকেল কলেজের এই পদটিকে অধ্যক্ষের পদে রূপান্তরিত করা হয় । দ্বারকানাথ ঠাকুরসহ দেশীয় অভিজাতদের অনেকেই এই প্রতিষ্ঠানে অর্থদান করেন । প্রথমদিকে এই কলেজে ইংরেজি মাধ্যমে পাঠদান করা হলেও পরে দেশীয় ভাষার ব্যবহার শুরু হয় ।

মেডিকেল কলেজের শিক্ষক ড. হেনরি হ্যারি গুডিব -এর তত্ত্বাবধানে প্রথম মধুসূদন গুপ্ত এবং পরে মধুসূদন গুপ্তসহ মেডিকেলের ছাত্র রাজকৃষ্ণ দে, উমাচরণ শেঠ, দ্বারকানাথ গুপ্ত এবং নবীনচন্দ্র মিত্র শব ব্যবচ্ছেদ করেন । তাদের এই উদ্যোগের মধ্যে দিয়ে পাশ্চাত্য চিকিৎসা বিদ্যাচর্চার বিকাশ শুরু হয় । ১৮৫৮ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে কলকাতার মেডিক্যাল কলেজ থেকে প্রায় পাঁচ শতাধিক ছাত্র পাশ্চাত্য চিকিৎসাবিদ্যা চর্চায় পারদর্শী হয়ে উঠে । মেডিক্যাল কলেজ প্রতিষ্ঠার পর ১৮৩৮ খ্রিস্টাব্দে একটি বহির্বিভাগ সহ ২০টি শয্যাবিশিষ্ট একটি হাসপাতালের উদ্বোধন করা হয় । তারপর আরও দু'বছর পরে মেডিক্যাল কলেজের প্রাঙ্গনে ১০০টি শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল তৈরি করা হয় । সুপারিন্টেন্ডেন্ট মাউন্টফোর্ড জোসেফ ব্রামলি মেডিক্যাল কলেজের ছাত্রদের মধ্যে মেধাবীদের ছাত্রদের ইংল্যান্ডে পাঠিয়ে আরও উচ্চমানের শিক্ষাদানের ব্যবস্থা করার পরিকল্পনা করেছিলেন । ব্রামলির অকাল মৃত্যুতে সেই পরিকল্পনা রূপায়িত হয়নি । পরবর্তীকালে মেডিক্যাল কলেজের কর্মসচিব ফ্রেডরিক জন মৌয়েট -কে শিক্ষক ড. হেনরি হ্যারি গুডিব ব্রামলির এই পরিকল্পনার কথা জানান । ফ্রেডরিক জন মৌয়েট এই পরিকল্পনা রূপায়ণের জন্য ১৮৪৫ খ্রিস্টাব্দর ৮ মার্চ এস এস বেন্টিঙ্ক নামক জাহাজে মেডিকেল কলেজের চার জন ছাত্রের একটি দলকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের উচ্চশিক্ষার লক্ষ্যে ইংল্যন্ডে পাঠান । এই দলে ছিলেন ভোলানাথ বসু, গোপালচন্দ্র শীল, দ্বারকানাথ বসু এবং সুর্যকুমার চক্রবর্তী । এরা ছিলেন প্রাথম বিলাত ফেরত বাঙালি ডাক্তার । ইংল্যান্ডের রয়্যাল কলেজ অব সার্জেনের পাঠক্রম অনুসরণে ১৮৪৫ খ্রিস্টাব্দে মেডিকেল কলেজের পাঠক্রমের পুনর্বিন্যাস ও সংস্কার করা হয় । কলকাতা মেডিকেল কলেজ 'রয়্যাল কলেজ অব সার্জেন' এবং 'ইউনিভার্সিটি অব লন্ডন' -এর স্বীকৃতি লাভ করে । কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ থেকে প্রথম ব্যাচে পাস করে উমাচরণ শেঠ, রাজকৃষ্ণ দে, দ্বারকানাথ গুপ্ত, প্রমুখ ঢাকা, চট্টগ্রাম, মুর্শিদাবাদ, পাটনা প্রভৃতি স্থানের হাসপাতালের ডাক্তার হিসেবে নিযুক্ত হন এবং আধুনিক পাশ্চাত্য চিকিৎসার প্রসার ঘটান ।

*****

Related Items

বাংলার দ্বৈতশাসনের অবসান কোন্‌ সালে ঘটে ? কী কী কারণে ব্রিটিশরা ভারতের শাসনব্যবস্থার দায়িত্ব নিতে আগ্রহী ছিলেন ?

প্রশ্ন:- বাংলার দ্বৈতশাসনের অবসান কোন্‌ সালে ঘটে ? কী কী কারণে ব্রিটিশরা ভারতের শাসনব্যবস্থার দায়িত্ব নিতে আগ্রহী ছিলেন ?

১৭৭২ খ্রিস্টাব্দে বাংলার দ্বৈতশাসনের অবসান ঘটে ।

আইনের শাসন (Rule of law) কী ?

প্রশ্ন : আইনের শাসন (Rule of law) কী ?

পিটস আইন কী ? চার্টার সনদ আইন বলতে কী বোঝায় ?

প্রশ্ন:- পিটস আইন কী ? চার্টার সনদ আইন বলতে কী বোঝায় ?

ভারতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্য বিস্তারের ক্ষেত্রে মারাঠা শক্তির পতনের গুরুত্ব কী ছিল ? কীভাবে মারাঠারা ইংরেজদের পদানত হয় সংক্ষেপে তার বর্ণনা দাও ।

প্রশ্ন:-  ভারতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্য বিস্তারের ক্ষেত্রে মারাঠা শক্তির পতনের গুরুত্ব কী ছিল ? কীভাবে মারাঠারা ইংরেজদের পদানত হয় সংক্ষেপে তার বর্ণনা দাও ।

‘স্বত্ববিলোপ নীতি’ কে প্রবর্তন করেন ? এই নীতির মূলকথা কী ছিল ? এই নীতি প্রয়োগ করে সর্বপ্রথম এবং কোন কোন দেশীয় রাজ্যকে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত করা হয় ?

প্রশ্ন:-  ‘স্বত্ববিলোপ নীতি’ কে প্রবর্তন করেন ? এই নীতির মূলকথা কী ছিল ? এই নীতি প্রয়োগ করে সর্বপ্রথম এবং কোন কোন দেশীয় রাজ্যকে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত করা হয় ?