ইন্দোচিন ও ব্রহ্মদেশ

Submitted by avimanyu pramanik on Thu, 04/26/2012 - 18:21

ইন্দোচিন : ভিয়েতনাম, কাম্বোডিয়া, লাওস, আন্নাম ও টংকিনকে নিয়ে গঠিত ইন্দোচিনে ফরাসিদের উপনিবেশ গড়ে উঠেছিল । ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দে হো-চি-মিন -এর নেতৃত্বে এখানে সাম্যবাদী আন্দোলন শুরু হয় । এই উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠিত হয় ইন্দোচিন কমিউনিস্ট পার্টি (I.C.P.) । দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপান ইন্দোচিন দখল করে নিয়ে ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত তা নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখে । জাপানি ঔপনিবেশিক অত্যাচারের বিরুদ্ধে হো-চি-মিন -এর নেতৃত্বে ভিয়েতনাম জাতীয় বাহিনীর মুক্তি আন্দোলন চলতে থাকে । ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দে জাপানের আত্মসমর্পণের পর ভিয়েতনাম বাহিনী হ্যানয় দখল করে ভিয়েতনামে স্বাধীন প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করে । হো-চি-মিন এই প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রপতি হন । ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দে ফ্রান্স আবার এই অঞ্চলে তার কর্তৃত্ব ফিরে পেতে ভিয়েতনাম আক্রমণ করে ও ভিয়েতনামের পদচ্যুত সম্রাট বাও দাই -এর নেতৃত্বে ভিয়েতনামে এক তাঁবেদার সরকার প্রতিষ্ঠিত করে । এ নিয়ে ভিয়েতনাম বাহিনী ও ফরাসিদের মধ্যে ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত সংঘর্ষ চলে । শেষে ফ্রান্স ভিয়েতনাম ত্যাগ করতে বাধ্য হয় । ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দের জেনেভা চুক্তি অনুসারে ভিয়েতনামকে দুভাগে বিভক্ত  করা হয়— উত্তর ভিয়েতনামদক্ষিণ ভিয়েতনাম । হ্যানয়, টংকিং সহ উত্তর ভিয়েতনামের কর্তৃত্ব পেলেন হো-চি-মিন -এর সাম্যবাদী সরকার । এর রাজধানী হল হ্যানয় । আর দক্ষিণ ভিয়েতনামে ফরাসি প্রভাবাধীন বাও দাই -এর নেতৃত্বে অকমিউনিস্ট সরকার প্রতিষ্ঠিত হয় । তার রাজধানী হল সায়গন । এরপর উত্তর ও দক্ষিণ ভিয়েতনামের মধ্যে একটানা কুড়ি বছর সংগ্রাম চলার পর ১৯৭৫ খ্রিস্টাব্দে দুটি দেশ পুনরায় মিলিত হয় । ভিয়েতনামের অন্তর্গত আর দুটি অঞ্চল কাম্বোডিয়া ও লাওস পৃথক মর্যাদা পায় । প্রিন্স নরোদম সিহোনুকের নেতৃত্বে ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দে কাম্বোডিয়ায় গণতান্ত্রিক সরকার গঠিত হয় ও সরকার দেশের সমস্যাগুলির সমাধানে ব্যর্থ হলে তাকে সরিয়ে কাম্বোডিয়ার সাম্যবাদী দল ১৯৭৫ খ্রিস্টাব্দে ক্ষমতা দখল করে । লাওস -এ ১৯৭৫ খ্রিস্টাব্দে প্রিন্স সুফানুভঙ্গ -এর নেতৃত্বে সাম্যবাদী প্যাথেট-লাও সরকার প্রতিষ্ঠিত হয় ।

ব্রহ্মদেশ : ১৮৮৬ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ ব্রহ্মদেশ জয় করে নিজ সম্রাজ্যভুক্ত করে । ১৯৩৭ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ব্রহ্মদেশ ছিল ভারতের ব্রিটিশ সাম্রাজ্যেরই একটা অংশ । ১৯৩৭ খ্রিস্টাব্দের ১লা এপ্রিল থেকে এই দেশকে ভারত থেকে বিচ্ছিন্ন করে আলাদা একটি ব্রিটিশ উপনিবেশে পরিণত করা হয় । ব্রিটিশ শাসিত ব্রহ্মদেশের মানুষ ঔপনিবেশিক স্বায়ত্বশাসনে অসন্তুষ্ট হয়ে ঔপনিবেশিক শাসন ও শোষণ থেকে মুক্তির জন্য মুক্তি আন্দোলনে শামিল হয় । ব্রহ্মদেশের 'থাকিন দল' জাপানের সহযোগিতায় ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন শুরু করে । দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে জাপানিরা ব্রিটিশের হাত থেকে ব্রহ্মদেশ ছিনিয়ে নিয়ে ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দের আগস্ট মাসে তাদের মনোনীত বা মাও (Ba Maw) কে দেশের রাষ্ট্রপ্রধান করে । কিন্তু যুদ্ধে শেষ পর্যন্ত জাপান পরাজিত হলে ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দের জুলাই মাসে ব্রিটিশ প্রশাসন পুনরায় ব্রহ্মদেশ দখল করে । ইতিমধ্যে জেনারেল অঙ-সান (Aung San) -এর নেতৃত্বে ফ্যাসি বিরোধী বর্মীদের জাতীয় বাহিনী দেশের স্বাধীনতার জন্য জোরদার আন্দোলন শুরু করে । এই আন্দোলনের চাপে ব্রিটিশ প্রসাশন বর্মীদের স্বাধীনতার দাবি মেনে নেয় ও ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ডিসেম্বর মাসে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে 'বার্মা ইন্ডিপেন্ডেন্স অ্যাক্ট' পাস হয় । ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দের ৪ঠা জানুয়ারি ব্রহ্মদেশ বর্তমানে মায়নমার স্বাধীন রাষ্ট্র হিসাবে আত্মপ্রকাশ করে । ইউ নু (U Nu) তার প্রথম প্রধানমন্ত্রী হন । ১৯৬২ খ্রিস্টাব্দের ২রা মার্চ জেনারেল নে উইন (Ne Win) ক্ষমতা প্রয়োগ করে দেশে সামরিক আইন জারি করেন ।

*****

Related Items

গোরা (Gora)

গোরা (Gora) of Rabindranath Tagore :-

ঔপনিবেশিক শাসনকালে ভারতবাসীদের মধ্যে জাতীয়তাবাদের বিকাশে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৯১০ খ্রিস্টাব্দে রচিত গোরা উপন্যাসটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে । এই  উপন্যাসের কয়েকটি মুখ্য চরিত্র হল— গোরা, আনন্দময়

বর্তমান ভারত (Bartaman Bharat)

বর্তমান ভারত (Bartaman Bharat) :-

'বর্ত্তমান ভারত' স্বামী বিবেকানন্দের লেখা একটি প্রবন্ধ । ১৮৯৭ সালে বিদেশ থেকে ফিরে আসার পর স্বামী বিবেকানন্দ ভারতের বিভিন্ন রাজ্য ভ্রমণ করেন । তারপর ১৮৯৯ সালের জানুয়ারি মাসে তিনি রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের বাংলা মু

আনন্দমঠ (Anandamath)

আনন্দমঠ (Anandamath):-

ঊনিশ শতকে ভারতীয় জাতীয়তাবোধের বিকাশে যেসমস্ত ব্যক্তি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করেছিলেন সাহিত্যসম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ছিলেন তাদের মধ্যে অন্যতম । তিনি তাঁর 'আনন্দমঠ' উপন্যাস রচনার মধ্য দিয়ে ভারতবাসীর মধ্যে জাতী

লেখায় ও রেখায় জাতীয়তাবোধের বিকাশ : বৈশিষ্ট্য ও বিশ্লেষণ

লেখায় ও রেখায় জাতীয়তাবোধের বিকাশ : বৈশিষ্ট্য ও বিশ্লেষণ (Expression of Nationalism in Literary Works and Paintings):-

ভারতীয়দের জাতীয়তাবোধের বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের বিরোধিতা শুরু হয় ও ক্রমে ব্রিটিশ শাসনের অবসান ঘটে । স

হিন্দু মেলা (Hindu Mela)

হিন্দু মেলা (Hindu Mela) :-

ঊনিশ শতকে বাংলায় যেসমস্ত রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন গড়ে ওঠে তাদের মধ্যে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ছিল 'হিন্দুমেলা' । পণ্ডিত রাজনারায়ণ বসুর অনুপ্রেরণা ও সহযোগিতায় নবগোপাল মিত্র ১৮৬৭ খ্রিস্টাব্দের এপ্রিল মাসে চৈত্রসংক্রান্তির